সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী 2 !! Season- 02 !! Part- 06 (Last-Part)

হাত পা বাঁধা অবস্থায় পরে রইলাম আমি।এখানে চিৎকার করলেও কেউ আসার নেয়।উনি চলে গেলেন। উনার যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আসলো নাইরা।আমার বাঁধন খুলে খুব চুপিচুপি এখান থেকে বাইরে নিয়ে যেতে চাইলেন সে।আমি নাইরাকে বললাম যাবো না।নাইরা আমায় শ্বাশুড়ি মা আর মীরার সন্ধান দিতে চাইলেন।তাই রাজি হয়ে গেলাম।
অন্ধকার গলি দিয়ে হাঁটছি। বুঝতে পারছি না আমি কোথায় যাচ্ছি।চারিদিকে শুধু ঘুটঘুটে অন্ধকার।একটা গোডাউনের কাছে এনে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলেন নাইরা।বাইরে থেকে দরজা টেনে দিলেন আর হেসে উঠে বললেন,
-ম্যাম এখানে পাবেন আপনার শ্বাশুড়ি, বাচ্চাকে।
ভেতর থেকে অন্ধকারে কিচ্ছু দেখতে পেলাম না।দরজাটা খোলার চেস্টা করলে পেছনের থেকে কেউ বাতি জ্বালিয়ে দিলেন। ঘুরে তাকিয়ে দেখতে পেলাম স্নিগ্ধা দাড়িয়ে রয়েছে।স্নিগ্ধা একটা সয়তানি হাসি দিয়ে আমার সামনে এগিয়ে আসলেন।আমার গালে কষিয়ে মারলেন এক চড়। ছিটকে পরে আমার কপালটা কেটে গেলো।আমাকে উঠিয়ে সজোরে চড় মারতে লাগলেন স্নিগ্ধা।মারতে মারতে বললেন,
-কি ভেবেছিস তুই? আমার এতোদিনের বানানো সব প্লান নস্ট করে দিবি? আমার ভালোবাসা আহানকে কেড়ে নিবি আমার থেকে?
মার খেতে খেতে বললাম আমি,
-উনি কখনো তোমার ভালোবাসা ছিলোই না।
স্নিগ্ধা আমার চুলের মুঠি টেনে ধরলেন।আমার মাথা সজোরে ফ্লোরে আঘাত করতে করতে দাঁত খিটমিট করে পাগলের মতো বললেন,
-আজ তোকে আমি মেরে ফেলবো।কেউ বাঁধা দিতে পারবে না।তুই জানিস না আহানের জন্য আমি কি কি করতে পারি।আমি আমার ঘড়, পরিবার সব ছেড়েছি শুধু আহানকে পাবো বলে।আর তুই, দুইদিনের মেয়ে হয়ে আমার আহানকে কেড়ে নিতে চাস? তা আমি হতে দেবো না।আজ আমি তোকে মারবো।নিজের হাতে মারবো।সাথে তোর শ্বাশুড়ি, সন্তানকেও মেরে মাটিতে পুতে ফেলে রেখে দেবো।আমার মুখে গরম চা ঢেলেছিস না তুই? তোকে আমি ফুটন্ত পানিতে চুবাবো।না হলে আমার শান্তি নেই। এএএ কে কোথায় আছিস তোরা? এক্ষুনি আগুনে গরম পানির কড়াই বসা।
আমার সামনে আগুন জ্বালিয়ে অনেক বড় কড়াইয়ে পানি বসিয়েছে স্নিগ্ধার পোষা গুন্ডারা।এখান থেকে যে আমার পালানোর আর কোনো রাস্তা নেয় সেটা খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারলাম। একটা হুইল চেয়ার ঠেলে মুখ ঢাকা অবস্থায় একটা মেয়ে আমার শ্বাশুড়ি মাকে নিয়ে আসলেন সামনে।বাচ্চা কান্নার আওয়াজ পেয়ে পিছনে ঘুরে তাকালে আমার সন্তানকে দেখতে পেলাম।আমি ছুটে ওর কাছে যাবো স্নিগ্ধা আমার হাতটা টেনে ধরলেন।চোখ রাঙিয়ে লোকটাকে বললেন,
-দাড়িয়ে দেখছো কি এক আছাড় মেরে বাচ্চাটাকে এখানেই মেরে ফেলো।
স্নিগ্ধাকে সম্মতি জানিয়ে লোকটা ওকে উঁচু করে মাথার উপরে ধরলেন।আমি খুব জোড়ে চিৎকার করতে লাগলাম।মীরাও কাঁদতে লাগলো।আমি আর পারছি না স্নিগ্ধার এই জঘন্য রূপ সহ্য করতে।চিন্তা আর ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম আমি।মাটিতে পরে গিয়ে চোখদুটো আস্তে করে বন্ধ করে নিলাম।যখন চোখ খুললাম চোখে মুখে পানির ছিটা অনুভব করলাম।উনার কোলের উপর আমার মাথাটা।আমি উঠে উনাকে দেখেই শার্টের কলারটা হাতের আঙুলে পেচিয়ে টেনে ধরে ঝাঁকিয়ে বললাম,
-আপনার কি কিছু মনে পরে না।আমার মীরা কোথায়? স্নিগ্ধা কি করেছে ওর সাথে? বলুন আমার মেয়ে কোথায়? বলুন না।
উনি আমায় জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে নরম গলায় বললেন,
-কিচ্ছু হয়নি আমাদের মেয়ের।ওই তো দেখও নাইরার কোলে আছে মীরা।
আমি ছুটে গিয়ে নাইরার কোল থেকে মীরাকে নিয়ে কষিয়ে নাইরার গালে কতোগুলো চড় বসিয়ে দিলাম।চড় মারতে মারতে বললাম,
-ডায়েনি, বেঈমান।কোন সাহশে আমার কলিজার টুকরাকে তুই কোলে নিয়েছিস?
উনি এসে আমাকে টেনে ধরলে উনাকে বললাম,
-এখন আপনার মনে পরেছে আমাকে? আজ যদি আমার সন্তানের কিছু হতো আপনাকে আমি কখনো ক্ষমা করতাম না।কক্ষনো না।আমি চলে যাবো আমার মীরা আর শ্বাশুড়ি মাকে নিয়ে। থাকুন আপনি নিজের এই এসিস্টেন্ট এর সাথে আর ওই স্নিগ্ধা ডাইনির সাথে।
উনি আমাকে টেনে ধরলেন। শান্ত হতে বললেন আমাকে।নাইরাকে দেখিয়ে বললেন,
-কোনো দোষ নেই নাইরার। ভুল বুঝছো তুমি ওকে।সেদিন হসপিটালে স্নিগ্ধার থেকে দশগুণ বেশি টাকা নাইরা ডাক্তারকে দিয়েছিলো যেন আমার স্মৃতি না হারায়।ও স্নিগ্ধার হয়ে কাজ করতো না।স্নিগ্ধার প্লান আমাকে বলতো।আমি জানতাম না তুমি কোথায় ছিলে এতোদিন।তবে এটা জানতাম স্নিগ্ধা তোমাকে পেলেই মেরে ফেলবে।স্নিগ্ধা বুঝে ফেলেছিলো আমার স্মৃতি হারায় নি তাই ওকে বোঝাতে সেদিন তোমাকে ভার্সিটির রাস্তায় কস্ট দিই আমি।বিশ্বাস করো আরু এছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিলো না।স্নিগ্ধার লোকজন সব সময় আমাকে ফলো করতো।তোমার সাথে দেখাও করতে যেতে পারতাম না।আর নাইরাও জানতো না আমার মা আর সন্তান কোথায় আছে।তাইতো তোমার কিডনাপ এর নাটকটা সাজায়।নাইরাকে দিয়ে স্নিগ্ধার মন জয় করিয়ে তোমাকে স্নিগ্ধার এইখানে নিয়ে আসি।তারপর নাইরা খবর দিতেই পুলিশ এনে দেখি তোমরা এখানে।পুলিশ নিয়ে আসতেই তুমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছো।আজ নাইরার সাহায্য ছাড়া আমি কিছুই করতে পারতাম না আরু।
উনি থামলেন।উনার কথা শেষ হতেই আমি চোখ ঘুরিয়ে শ্বাশুড়ি মাকে দেখতে পেলাম।তিনি হুইলচেয়ারে বসে আছেন।কোনো সাড়া শব্দ নেই। আমি এগিয়ে এসে ডাকলাম তাকে মা বলে।তিনি কোনো কথা বললেন না।
শ্বাশুড়ি মাকে নিয়ে আমরা হসপিটালে আসলাম।কিছুদিন সেবা-যত্ন করার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠলেন। আমাদের পরিবার আবার আগের মতো আনন্দে ভরে উঠলো।আর স্নিগ্ধা জেলে নিজের প্রাপ্য শাস্তি পেতে লাগলো।
।।।সমাপ্ত।।।
সবাই ভালো থাকবেন।আল্লাহ হাফেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *