সেলিব্রেটি স্বামী

সেলিব্রেটি স্বামী 2 !! Season- 02 !! Part- 04

আমি আরিশা জান্নাত। আজ থেকে দু’বছর আগে উনার সাথে বিয়ে হয়েছিলো আমার।বিয়ের এক বছরের মাথায় ছোট্ট ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তান এলো আমার কোল জুড়ে।উনি আমায় খুব ভালোবাসতেন।সারাদিন আমাদের মেয়েকে নিয়ে মেতে থাকতেন।মেয়ের নাম রেখেছিলাম আমি। আমার জন্মদাত্রী মায়ের নামে “মীরা”।আমার ছোট্ট মিরার যখন ছ’মাস বয়স তখন উনি এলেন আমার কাছে আবদার করতে বিয়ের পর কোথাও হানিমুনে যাওয়া হয় নি।তাই মাইশা আর রুহানের সাথে আমাকে উনি হানিমুনে নিয়ে যাবেন।মাইশা আমার ছোট বোন।বিয়ের পর ও শিক্ষিত হয়েছে।ওর স্বামী রকস্টার রুহানের যোগ্য হয়ে ফিরে এসেছে।এখন ও একজন নাম করা সিঙ্গার।যখন জানলো আমরাও ওদের সাথে হানিমুনে যাবো অনেক খুশি হলো আমার বোনটা।আমাকে নিয়ে সারাদিন শপিং করলো।কিন্তু মেইন সময়ে আমার ফ্লাইটের টিকিট, পাসপোর্ট সব হারিয়ে গেলও।কিভাবে হারালো জানি না।তবে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাই নি।উনি আমায় এতোটা ভালোবাসতেন যে আমার উপর তখন রাগও করতে পারতেন না।যতোবারই উনি আমার উপর রাগ করেতে চেয়েছেন ততোবারই একটা না একটা অঘটন ঘটেছে আমাদের জীবনে।আমাকে কথা দিয়েছিলেন উনি আর কখনও কস্ট দেবেন না।তাই দিতোও না।আমার ভুল গুলো এড়িয়ে যেতেন।আমার মন খারাপের সময় আমাকে নিজের বুকে টেনে নিতেন।শান্ত হতে বলতেন আমাকে।এয়ারপোর্ট থেকে সেদিন ফিরে এসে পুরো খান মেনসন নিস্তব্ধ পেলাম।চারিদিকে শূর্ণতা।আর হৃদয় নিংরানো দৃশ্যায়ন দেখে থমকে আছি আমি।ক্ষত বিক্ষত ভাবে সব সার্ভেন্টরা ফ্লোরে পরে আছে।মেয়েকে উনার কোলে তুলে দিয়ে শ্বাশুড়ি মাকে চিৎকার করে খুঁজছিলাম আমি।উনি মেয়েকে কোলে নিয়ে নিচে বসে কান্না জুড়ে দিলেন।উনার গোটা জগৎটাই যে ছিলো উনার মা।আমি উনাকে সামলাতে পারছিলাম না।উনাকে এর আগে এতোটা কান্না করতে আমি কখনো দেখিনি। কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পরেছিলেন উনি।যদি কেউ উনার কাছে নিজের জীবনটাও চাই তাহলে সেটাও দিয়ে দিতে পারবে শুধুমাত্র মায়ের জন্য।আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন আমার মাকে আমার চাই আরু।আমি নিরবে মেয়েকে কোলে উঠিয়ে উনাকে শান্ত করতে চেয়েছিলাম।এমন সময় কালো মাস্কে মুখ ঢেকে ২০ জন লোক গার্ডদের মেরে খান মেনসনে ঢুকে পরলো।সবাই মিলে উনাকে আর আমাকে ঘিরে ধরলো।আমাদের পালানোর কোনো রাস্তা ছিলো না।উনি উঠে দাড়িয়ে আমাদের দুজনের কথা ভেবে নিজে ২০ জনের মোকাবেলা করলেন।
আমাদের মেয়ের গলার কাছে ছুড়ি ধরলেন একজন।তখন উনি থেমে গেলেন।উনাকে মারলেন সবাই।এতোটা মারলেন যে চাইলেও উনার কাছে যেতে পারলাম না আমি।আমার দুই হাত দুজন ধরে আছেন।আমি অনেক চিৎকার করেছিলাম সেদিন।কিন্তু পারি নি।উনাকে সবাই মেরে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে চলে যায়।পুরো বাড়িতে আগুন জ্বলছিলো। মেয়েটা আমার খুব ছোট।আমি যে মা।তাই পারি নি থাকতে। মেয়েকে বাঁচাতে রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাম।আমি অনেক কাঁদলাম উনার জন্য। অনেক চিৎকার করলাম।আসেপাশের দূরে কোথাও কাউকে পেলাম মা। যখন আমি কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসে পরলাম। একদম নিস্তব্ধ হয়ে পরে ছিলাম আমি।তখন পেছনের থেকে একটা গাড়ির শব্দ শুনতে পেলাম।ঘুরে তাকাতেই উনার মুখটা দেখলাম আমি।চার পাঁচজন লোক উনার হাত পা ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।আমি উঠে দাড়ালাম।উনার হুঁশ নেই।গাড়ির দরজা বন্ধ করা হয়েছে।ছুটে উনার কাছে যেতে গাড়িটা চলে যায়।আমি বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।অনেক ভেবে ওই রাত্রে আমি বস্তিতে চলে এলাম।আমার বাবা-মায়ের কাছে।বাবা-মাকে সব খুলে বললাম।তারা আমাকে বললেন শান্ত হতে।সকাল হতেই বাবা-মায়ের সাথে খান মেনসনে গেলাম।সেখান গিয়ে দেখতে পেলাম ঝলসে যাওয়া বাড়ির সামনে প্রেস মিডিয়া ভির করে আছে।তারা নিউজ বানাচ্ছে সুপারস্টার আহান খানের পুরো পরিবার অগ্নি দূর্ঘটনায় পুড়ে মারা গিয়েছে বলে।শুধুমাত্র হিরো বেঁচে আছেন।তার একজন ফেন নাকি এখানে এসে শুধু মাত্র তাকেই বাড়ি থেকে বের করে হসপিটালে নিয়ে যেতে পেরেছেন।লোকটাকে প্রশ্ন করা হলে সে বললেন তার একার দ্বারা একজনের বেশি মানুষকে এই ভয়ংকর আগুনের থেকে বের করে বাঁচানোর উপায় ছিলো না।তাই সে শুধু আহান খানকে বাঁচিয়েছেন।কারণ সুপারস্টার আহান খানের অনেক বড় ভক্ত সে।আমি এগিয়ে কিছু বলতে চাইলাম।বাবা-মা হাত ধরে আমাকে সামনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন।এমন সময় মাঝখান থেকে উরনা দিয়ে মুখ ঢাকা কোনো মেয়ে এসে আমার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললেন শ্বাশুড়ির খোঁজ পেতে চাইলে আমার সাথে এসো।আমি বাবা-মাকে থামতে বলে মেয়েটার পেছনে ছুটলাম।মেয়েটা একটা গাড়িতে বসালেন আমাকে।কিছুটা দূরে এসে একটা মাঠের কাছে গাড়িটা থামালেন।মুখের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে অট্টহাসি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বললেন আমাকে,
-আমি স্নিগ্ধা!
আমি চমকে উঠে তাকালাম সিন্ধার মুখের দিকে।ভয়ে ভয়ে বললাম,
-আপনি? আপনি না জেলে ছিলেন?
স্নিগ্ধা চুপ করে রইলো।গাড়ির ভেতরের বোতল থেকে কয়েক ঢোক পানি গিলে ফিসফিসিয়ে আমার কানের কাছে এসে বললেন,
-হ্যাঁ জেলে ছিলাম কিন্তু এখন নেই। জামিনে বাইরে এসেছি।
স্নিগ্ধা গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালেন।গাড়ির গ্লাসে নক করে বললেন আমাকে বাইরে আসতে।কয়েকজন লোক এসে আমার মেয়েটাকে আমার কোল থেকে কেড়ে নিলেন।মেয়েটা খুব কাঁদছিলো।আমার কাছে আসার জন্য ছটফট করছিলো।ওর কান্না সহ্য করতে না পেরে আমার দুধের শিশু মেয়েটাকে স্নিগ্ধা খুব জোড়ে একটা চড় মারে।ও আরও কাঁদতে থাকে।স্নিগ্ধা ওর মাথায় পিসতল ঠেকিয়ে বলে যেন আমি ওর কাছে না যায়।
আমাকে দূরে দাড়িয়ে রেখে স্নিগ্ধা বলতে শুরু করল,
-আমাকে জেলে পাঠিয়েছিলে না তুমি? আমার ভালোবাসা আহানকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলে আমার থেকে।তাতো আর হতে দেবো না আমি।আহান আমার। ওকে এবার আমার পেতেই হবে।তোমার থেকেও অনেক ভালোবাসবো আমি আহানকে।এমনকি আহানও আমাকে ভালোবাসবে।আমাদের বিয়ে হবে।সংসার হবে আর সন্তানও হবে।আহানকে হসপিটালে এমন ওষুধ দেওয়া হচ্ছে যেটা নিলে ওর স্মৃতি থেকে একটু একটু করে অতীতের সবকিছু মুছে যাবে।তারপর আমি ওর স্মৃতিতে নিজেকে বসিয়ে দেবো। আমি ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসবে না আহান।কাউকে না।
স্নিগ্ধা আমার সামনে একটা ভিডিও ধরে বললেন,
-তোমার শ্বাশুড়ি মা।যদি কোথাও মুখ খুলেছো না মেরে ফেলবো বুড়িটাকে আর সাথে তোমার মেয়েটাকেও।তোমাকে চাইলে এখনই মেরে ফেলতে পারি কিন্তু মারবো না।কেন জানো? তুমি আমাকে আহানের থেকে দূরে রেখেছো।তাই তোমাকেও আমি আমার কস্টটা অনুভব করাবো।তোমায় আমি আহানের থেকে দূরে রেখে বোঝাবো আমার কতোটা কস্ট হয়েছে।
আমি স্নিগ্ধাকে অনেকবার বললাম এমনটা না করতে।কিন্তু ও শোনে নি।আমার গর্ভকালীন সময় যখন নয় মাস চলে তখন ও আমাকে আর আমার সন্তানকে মারার অনেক চেস্টা করেছে।কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছি আমরা।স্নিগ্ধার ভয়ংকর রূপ সম্পর্কে আমার ধারণা আছে।তাই ওকে রাগাই নি আমি।ওর কথায় আমি আমার বাবা-মা, বোন, আহান সকলের থেকে দূরে থেকেছি।
🍁
কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
-উনি এখন যা হয়েছে শুধু মাত্র স্নিগ্ধার শেখানো।উনি সত্যি এমন না।এটা সত্যি উনার আগে প্রচুর রাগ ছিলো।কিন্তু এখন উনি যা শুধুই তা স্নিগ্ধার তৈরি করা স্মৃতি মাত্র।আপনারাই বলুন উনার নামে আমি কিবা কমপ্লেইন করবো? আর কি শাস্তি দেবো উনাকে আমি? প্রচন্ড কান্না করছি আমি।ডাক্তার আন্টি আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,
-তুমিই তাহলে সুপারস্টার আহান খানের সেই পর্দাশীল স্ত্রী? কত ইচ্ছা ছিলো আমার তোমাকে একটাবার দেখার।আজ পূরণ হয়ে গেল।
তার চোখেও পানি।মহিলা পুলিশ দুজন আমার সামনে বসে হাত ধরে বললেন,
-তারপর কি হয়েছিলো?
আমি চোখের পানি মুছে নিয়ে আবার বলতে শুরু করলাম।
আমার শ্বাশুড়ি মা আমার জন্মদাত্রী মায়ের ইচ্ছা পূরণ করতে আমার নানু বাড়ির সম্পত্তি পেলে মায়ের নামে একটা অনাথ আশ্রম খুলেছিলেন।সব কিছু থেকে পালিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম আমি।এতোগুলো দিন আমি সেখানেই ছিলাম।সবার চোখে নিজেকে আড়াল করতে আর স্নিগ্ধার কথায় আমার ভালোবাসার মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে।সেখানে ছোট ছোট অনাথ বাচ্চাদের নিজের হাতে খাইয়ে দিতাম।তাদের যত্ন নিতাম।আর আমার মেয়ের কথা খুব মনে পরতো।নিউজে উনাকে নিয়ে খবর ছাপা হলে।উনাকে জড়িয়ে স্নিগ্ধাকেও পাশে বসানো হতো।যেটা দেখতাম কিন্তু কিছু করতে পারতাম না আমি।আজ থেকে এক সপ্তাহ আগে আমার মা আর বোন এসেছিলো আশ্রমে।তখন তাদের সাথে আমার দেখা হয়। অনেক কাঁদে তারা আমাকে খুঁজে পেয়ে।আমার বোনও এখন অনেক বড় সেলিব্রেটি।ওর হাজবেন্ডও সেলিব্রেটি।সবাই আমাকে বলেছে আহান তাদের সাথে দেখাও করতে চাই নি।জোড় করে কিছু বললেও শুনতে চাই নি।আমার বোন আর তার হাজবেন্ড মিলে প্লানটা করেছে।উনার জীবনে আমাকে আরেকটাবার যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।আমাকে শুটিং সাইটের পাশের ভার্সিটিতে এডমিশন করিয়েছে।আমার বয়স কমিয়ে স্টুডেন্ট আইডি কার্ডে ১৯ দিয়েছে।মা এসবে রাজি ছিলো না।আমাকে পেয়েছে এতেই খুশি ছিলো।কিন্তু আমার যে উনাকে খুব প্রয়োজন।আমার সন্তান, উনি, শ্বাশুড়ি মা সবাইকে নিয়ে আমি আবার সেই সংসারটা ফিরে পেতে চায়। সেই সুখের দিনগুলো কাটাতে চায় একসাথে আগের মতোন।খুব ভালোবাসি আমি তাদেরকে তাই তো দূরে আছি তাদের থেকে।
সব শুনে পাশ থেকে রিপোর্টার মেয়ে দু’জনের মধ্যে একজন বলে উঠলো,
-নিউজটা কিন্তু জব্বর।এক্ষুনি দেখিয়ে দিলে আমরা প্রমোশন পেয়ে যাবো।
কথাটা শুনে পুলিশ আন্টি উঠে গিয়ে মেয়েটার গালে দিলেন এক চড়! রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বললেন,
-তোমাদের মধ্যে কি মানবতা নেই? প্রমোশন পাবা? একটা মেয়ে কস্টে আছে।এতোকিছু সহ্য করেছে।শ্বাশুড়ি, সন্তানকে বাঁচানোর জন্য এতোকিছু করেছে আর তোমরা তার বলা কথাগুলো ভাইরাল করতে চাচ্ছো?
মেয়েটা আমতা আমতা করলে তার হাত থেকে ক্যামেরাটা নিয়ে ভেঙে ফেললেন পুলিশ আন্টি।অন্য রিপোর্টার মেয়েটা বললেন,
-ঠিকই বলেছেন।কারও জীবনের থেকে নিউজ বড় হতে পারে না।আমাকে বললেন,
-আপু আমরা আছি আপনার সাথে। এই রুমের বাইরে কথাগুলো যাবে না কথা দিচ্ছি।আপনি প্রয়োজন পরলে আমাদের সাহায্য নিতে পারেন।আমরা আপনাকে হেল্প করবো যতোটুকু পারি।
পুলিশ আন্টি বললেন,
-তার আগে এই স্নিগ্ধার খোঁজ রাখতে হবে।কখন কোথায় যায়। আর কি কি করে।এমনকি কার কার সাথে কথা বলে।দু’জন মানুষকে কোথায় লুকিয়ে রাখতে পারে এই স্নিগ্ধা?
চলবে,,,,