স্যার যখন স্বামী

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৮

জান্নাতুল ফেরদৌস

“মেঘ,ঘুম থেকে উঠ,”
“না,”
“কেন?আজকে ভার্সিটি যাবে না।”
“না,আজকে যাব না।ঘুমাতে দেন।”
“তুমি যাবে সাথে তোমার ঘাড়ও যাবে।
উঠো বলছি।”
…..রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৭
“দাঁড়াও বলে আমার কান আর গালে কামড়
বসিয়ে দিলেন।”
“উহ্ এটা কি হল?এভাবে কেউ ঘুম থেকে
উঠায়।”
“আমি উঠায়।তাড়াতাড়ি উঠ নাহলে
আরেকটা কামড় খাবে।”
“না, না উঠছি,উঠছি।”
“হুম গুড গার্ল।”
.
.
ভার্সিটি শেষ করে গেইটের বাইরে
আসলাম।উনার জন্য অপেক্ষা করছি।
“কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলে।”
“৩০ মিনিট ধরে,”
“ওহ,আসলে আজকে একটু দেরি হয়ে গেছে।
নেক্সট টাইম এরকম আর হবে না।উঠ
গাড়িতে উঠ।”
“হুম”
“মেঘ তোমার কি বেশি মন খারাপ।”
“না”
“না বললে কি হবে। আমি কি চোখে কিছু
দেখতে পারি না।”
“আরে কোথায় নিয়ে আসছেন।”
“কেন চোখে দেখতে পারো না নাকি?
পার্কে আসছি।”
“এখানে কেন নিয়ে আসছেন আমি বাসায়
যাব।”
“চুপ থাকো আর এখনি গাড়ি থেকে নাম।”
.
.
পার্কের বেঞ্চে বসে আসি।মনটা আসলেই
ভালো নেই।কি করা উচিত।উনাকে সব
সত্যি কথা বলতে চাই।কিন্তু খুব ভয় হয়
পরে আবার আমাকে না অপমান করে
বসেন।ভালবাসার মানুষের থেকে সব দুঃখ
কষ্ট সহ্য করা গেলেও তার থেকে পাওয়া
অপমান কখনো সহ্য করা যায় না।উনাকে
যদি বলি স্যার আমি আপনাকে
ভালবাসি।তখন যদি উনি আমাকে অপমান
করে বলেন, তোমার জন্য এতদিন এত কিছু
করে আজকে আমার এত কষ্ট আর শ্রমের
এই মূল্য দিলে।আমি তোমাকে না
প্রিয়াকে ভালবাসি।আমাদের
ভালবাসার মাঝখানে তুমি ভুল করে এসে
গেছ।যদি এভাবে আমাকে কথাগুলো
শুনায়। নাহ আর যাই কিছু হোক এগুলো
আমি সইতে পারবোনা।এর থেকে চুপচাপ
থাকায় ভালো।
“মেঘ আমি অনেক্ষণ ধরে তোমাকে
দেখছি।তুমি কেমন যেন আনমনা হয়ে
আছো। সত্যি করে বলতো কি হয়েছে
তোমার।”
…….
আমার দুহাত ধরে,”দেখো মেঘ তুমি আমার
স্ত্রী হও।তোমার সাথে খারাপ কিছু হলে
সেটা আমাকে বলতে পারো।একটা
মেয়ের কাছে প্রথমে তার পরিবার এরপর
ওই মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তার
স্বামীই তার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়।
কাছের মানুষকেই তো সবকিছু শেয়ার
করা উচিত।নাহলে সে কষ্ট থেকে মুক্তি
পাবে কেমন করে।আমি শুধু তোমার সুখের
দিনের সঙ্গী নয়,তোমার দুঃখের দিনের
সঙ্গী।তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো
আমি তোমার বেস্টফ্রেন্ড হতে চাই।তাই
তুমি নির্ভয়ে আমাকে সব বলতে পারো।
কথা দিচ্ছি আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী
সব কিছু ঠিক করে দিবো।”
খুব ইচ্ছে করছে সব কিছু খুলে বলতে। কিন্তু
আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন।খুব কান্না
পাচ্ছে।এত কষ্ট হচ্ছে ইচ্ছে করছে উনাকে
একটু জড়িয়ে ধরে মন খুলে কাঁদি।কেঁদে
মনের সব দুঃখ ভিতর থেকে মুছে ফেলি।
হঠাৎ উনি নিজেই আমাকে জড়িয়ে
ধরলেন।খুব কাঁদছি উনাকে জড়িয়ে।
“মেঘ জোর করবো না তোমাকে।তবে যখন
তোমার মন চাইবে তখন আমাকে সব খুলে
বলিও।প্লিজ আর কেঁদো না।সব ঠিক হয়ে
যাবে।”
“হ্যা সব যাতে ঠিক হয়ে যায়।”
.
.
আজকেও সাগর রাতে আমাকে কল দিয়ে
অনেক কিছু বললো।শুধু ভাবছি কি করা
যায়।কি করে এই সমস্যা থেকে মুক্তি
পাওয়া যায়। হঠাৎ স্যার এসে বললেন,
“মেঘ তোমাকে কিছু বলতে চাই,”
“হ্যা বলেন,”
“আসলে তুমি ব্যাপারটা কেমন করে নিবে
বুঝতে পারছি না।অনেক আগেই এই কথাটা
তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু
অনেক হয়েছে। আর পারছি না।আমি
তোমাকে আমার কিছু গোপন কথা বলতে
চাই।”
তার মানে উনি বলতে চান উনি প্রিয়া
ম্যাডামকে ভালবাসেন।এই কথাটা এখন
উনার কাছ থেকে শুনতে হবে!
“মেঘ বলছিলাম যে,….”
উনার মোবাইলে কল আসলো।হ্যালো
প্রিয়া বলো,
মেঘ আমি একটু আসছি।প্রিয়া কল
দিয়েছে।
আমি জানতাম আমার সুখের দিন
তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে আসবে।আসলে এই
কপালে এত সুখ নেই।যখন উনাকে
ভালবাসতাম না তখন উনার মূল্য বুঝি নি।
আর এখন উনাকে ভালবেসে উনার মূল্য
বুঝছি।বুঝতে পারছি উনাকে পাওয়া এত
সহজ না।উনি এখন অন্য কারোর।আর এটা
ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছে।
“মেঘ তোমাকে বলছিলাম যে….”
“থাক আজকে আর বলার দরকার নেই।অন্য
আরেকদিন বলিয়েন।অনেক রাত হয়ে
গেছে।ঘুমাবো এখন।”
আসলে উনার কাছ থেকে সেই গোপন কথা
শুনতে চাই না। জানি উনি কি বলবেন।
আরও কয়েকটা দিন উনার সাথে থাকতে
চাই। থাক না মিথ্যা সুখের অভিনয় করে
হলেও উনার সাথে আমার দিনগুলো
কাটাতে পারলে ক্ষতি কি?এখন উনি যদি
সব সত্য কথা বলে দেন তাহলে আমি সেটা
সহ্য করতে পারবোনা।আরও কয়েকটা দিন
উনার সাথে থেকে কিছু স্মরণীয় স্মৃতি
মনের ভিতর গেঁথে রাখতে চাই।যাতে এই
স্মৃতিগুলো দিয়ে বাকি জীবনটা আমি
পাড় করতে পারি।
.
.
গাছের নিচে বসে আছি। দিন যত
আগাচ্ছে মনের ভিতরের কষ্টগুলো দিন
দিন জমে বড় হচ্ছে।আর আমার কষ্টের
মাত্রাকে আরো বাড়াচ্ছে।
“মেঘ তোর কি কিছু হয়েছে।”
…..
“মেঘঘঘ……”
“হুম”
“কি হয়েছে বলতো তোর। এত ডাকছি কথা
কানে যাচ্ছে না।”
“কিছু হয় নি।”
“দেখ একদম মিথ্যা বলবি না।সত্য কথা বল।
আমি সব সত্যি জানতে যায়।”
“বললাম না কিছু না,”
“ঠিকাছে তাহলে সাগর ভাইকে এখনি কল
করে এখানে ডাকছি।উনাকেই আমি
জিজ্ঞাস করবো?”
“পাগল হয়ে গেছিস”
“কেন পাগলের কি দেখলি তুই? তোর
হাসবেন্ডকেই না কল দিয়ে এখানে
আসতে বলছি।দাঁড়া এখনি কল দিচ্ছি।”
.
.
“তাসপিয়া দোস্ত এরকম করিস না।
সাগরকে কল দিস না”
“কেন দিবো না।একশবার দিবো। তোর
কোন কথা শুনছি না।তুই যেহেতু আমাকে
কিছু বলবি না তাহলে তোর হাসবেন্ডের
থেকেই সব সত্যি কথা জেনে নিবো।”
“তুই তখন থেকেই সাগরকে আমার হাসবেন্ড
বলে বেড়াচ্ছিস। আমার হাসবেন্ড সাগর
না তন্ময়….. তন্ময় স্যার।”
“মানে….”
তাসপিয়াকে সব সত্যি কথা বলে দিলাম।
আর পারছি না এই সত্য কথা লুকিয়ে
রাখতে।এতদিন কাউকে বলতে পারে নি
আমার হাসবেন্ড কে? কিন্তু আজকে
তাসপিয়ার সামনে নিজেকে উনার স্ত্রী
হিসেবে বলতে পেরে খুব শান্তি লাগছে।
আজকে সব সত্যি কথা বলতে পেরে এক
কষ্টের বোঝা থেকে মুক্তি পেলাম।
.
.
ইদানীং প্রায়ি দেখি প্রিয়া ম্যাডামের
সাথে উনার সখ্যতা বেশি।আর সাগরের
জ্বালাতন বেড়েই চলেছে। মোবাইলে
আমার স্বামী আর প্রিয়া ম্যাডামের ছবি
প্রায়ি পাঠাত।আমার স্বামী আর
ম্যাডাম হাত ধরে বসে আছে এমন
কয়েকটা ছবি দেখে নিজের থেকে
খারাপ লাগা শুরু করত।কিছু একটা
তাড়াতাড়ি করা উচিত।এর একটা শেষ
হওয়াই উচিত।
তার আগে তাসপিয়ার কাজটা শেষ করে
নিই।আজকে উনার সাথে বাসায় যায় নি।
বলেছি তাসপিয়ার সাথে যাব। উনাকে
বাসায় চলে যেতে বলছি।
“সাব্বির আজকে আমার সাথে পার্কে
যেতে পারবে।”
“কেন না, অবশ্যই।তুমি যেখানে যেতে
বলবে আমি সেখানে যেতে রাজি আছি।”
ওকে নিয়ে পার্কে গেলাম।যে কাজের
জন্য গেলাম সে কাজটা হয়ে গেছে।
সাব্বিরকে সব বুঝিয়ে দিলাম।এখন ওকে
যে কাজটা দিয়েছি সেটা আজকে
বিকালে করবে।এখন আরও কিছু কাজ
বাকি আছে সেটা কালকে আমাকে করতে
হবে।
.
.
“তুমি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছানোতো
মেঘ।”
“মানে, আমি আবার কি লুকাবো।”
উনার চোখের দৃষ্টি জানি আজকে কেমন।
মনে হচ্ছে অনেক বড় অন্যায় করে
ফেলেছি।
উনি কিছুই আর বললেন না।এরপর থেকেই
চুপচাপ হয়ে গেলেন।ভেবেছিলাম যাওয়ার
আগে আমার মনের জমানো সব কথা,স্বপ্ন
উনাকে বলবো কিন্তু উনার কোন পাত্তা
নেই।কেন জানি উনি বারবার আমাকে
ইগ্নোর করছেন।
সে রাতে উনি কোন কথা বললেন না
আমার সাথে। এরপরের আর কয়েকটা দিন
এভাবেই চলতে লাগল।কোন কথা বলতেন
না আমার সাথে।মনে হচ্ছিল উনি আমার
থেকে একটু করে করে অনেক দূর সরে
যাচ্ছেন।
সাগর আমাকে আর সময় দিতে পারছে না।
কালকে ওর সাথে দেখা করতেই হবে।
নাহলে ও কিছু একটা অঘটন ঘটিয়ে
ফেলবে।আর এবার সে হুমকি দিয়েছে
কালকে আমার সাথে দেখা না করলে ও
আমার স্বামীর ক্ষতি করবে।যা আমি
কিছুতেই হতে দিবো না।
.
.
আজকেই তন্ময়ের সাথে আমার শেষ রাত।
এরপর উনি নিজেই স্বেচ্ছায় আমাকে
ছেড়ে দিবেন।খুব ইচ্ছে করছে আজকে
রাতটা উনার বুকে মাথা রেখে ঘুমায়।
কয়েকদিন ধরে উনার বুকে মাথা রেখে
ঘুমায় না।এই কয়েকটা দিন ধরে আমার
চোখের ঘুম যেন হারিয়ে গেছে।ঘুমাতে
গিয়ে এইসব ভাবছিলাম।এরপর দেখি উনি
বিভোর ঘুমে আচ্ছন্ন। আজকে সারারাত
উনার এই চেহারা দেখে কাটিয়ে দিবো।
হয়ত পরে উনাকে আর প্রাণভরে দেখতে
পারবোনা।
.
.
আগে থেকে প্ল্যান করে রেখেছি
আমাকে কি করতে হবে।সকালে ভার্সিটি
এসে সবার সাথে হেসে কথা বলছি,ক্লাস
করছি।স্যার,তাসপিয়া কাউকে বুঝতে
দিচ্ছি না আমার মনে কি চলছে।আর এই
জিনিসটা হয়ত তাসপিয়া সন্দেহের
চোখে দেখে ফেলেছে।অনেক জেরা করে
শেষ পর্যন্ত আমার প্ল্যানটা জেনেই
নিলো।
“মেঘ প্লিজ এইরকম ভুল করিস না।”
“আমার আর কিছুই করার নেই।”
“তারপরও একবার ভেবে দেখ।মেঘ তুই
স্যারকে সব সত্যি কথা বলে দে।দেখবি
উনি সব ঠিক করে দিবেন।আর তুই ১০০%
কেন ধরেই নিয়েছিস যে ওইদিন স্যার
তোকে উনার আর প্রিয়া ম্যাডামের
রিলেশনের কথা বলতে চেয়েছে। তোর এই
ভাবনা, সাগরের মোবাইলে পাঠানো ছবি
সব মিথ্যাও হতে পারে।হয়ত সত্যটা অন্য
কিছু।যেটা তুই জানিস না।আমি স্যারকে
চিনি এত বছর ধরে দেখছি ঘরে বউ রেখে
অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে রিলেশন
এটা কিছুতেই হতে পারে না।তুই প্লিজ
কিছু করার আগে আরেকটাবার ভেবে নে।”
“আর ভাবার সময় নেই।ভাবার সময় শেষ।
আগে থেকে যা ভেবে রেখেছি এখন
সেটা শুধু করে দেখাতে হবে।”
ক্লাস শেষ করে উনি আজকে আমাকে কল
দিলেন।
“মেঘ, তাসপিয়ার সাথে সাবধানে বাসায়
যাও।আমার আজকে একটা জরুরি কাজ
আছে। সেটা শেষ করে আসছি।”
“আচ্ছা।”
সকালেই উনি আমাকে বলে রেখেছেন
আমি আজকে যাতে তাসপিয়ার সাথে
বাসায় চলে যায়। এখন সকালের কথাটা
উনি আমাকে আবার মনে করিয়ে দিলেন।
সাবধানে বাসায় যেও উনার কথা শুনে
মনে হল উনি আমার অনেক কেয়ার করেন।
হ্যা কেয়ারতো অনেক করেন সেটা সত্যি
কিন্তু কোনদিনও আমাকে ভালবাসেন নি।
আমাকে যদি কোনদিনও ভালবাসতো
তাহলে প্রিয়া ম্যাডামের সাথে প্রায়ি
দেখা করতেন না। হাত ধরাধরি করে কথা
বলতেন না।কালকে উনি প্রিয়া
ম্যাডামের সাথে কথা বলেছিলেন।
আজকে প্রিয়া ম্যাডাম আর উনার একটা
রেস্টুরেন্টে দেখা করার কথা ছিলো।
সেটা আমি জানতাম।তাই কালকে রাতে
আমিও সাগরকে কল করে জানিয়ে
দিয়েছি সেই রেস্টুরেন্টে চলে আসতে।
.
.
উনাদের আসার আগেই আমি আর সাগর
সেই রেস্টুরেন্টে উপস্থিত।আমাকে দেখা
মাত্রই সাগর আমাকে জড়িয়ে ধরল।
“সাগর প্লিজ ছাড়ো আমাকে।আপনি হয়ত
ভুলে যাচ্ছেন আমি এখন অন্য কারোর
স্ত্রী।”
“দেখো মেঘ আমার একটা ভুলের কারণে
তুমি তোমার স্যারকে বিয়ে করেছো তার
মানে এই নয় যে তুমি উনাকে ভালবাসো।
তুমি তো আমাকে আগে ভালবাসতে আর
এখনো আমাকে ভালবাসো।আমি সেটা
জানি।”
“আপনাকে এইসব কথা কে বলেছে।কি
আজগুবি কথা বলছেন।আমি আপনাকে আর
ভালবাসি না।আমি এখন আমার স্বামী
তন্ময়কে ভালবাসি।
“বাহ আগে তুমি করে ডাকতে আর এখন
আপনি!”
“কারণ “তুমি” করে ডাকার অধিকার অনেক
আগে আপনি হারিয়ে ফেলেছেন”
“মেঘ প্লিজ আমি আর কোন কষ্ট নিতে
পারছিনা।তোমার থেকে আপনি ডাকটা
শুনতে খুব খারাপ লাগছে।আমি তোমাকে
ভালবাসি মেঘ। কেন সেটা বুঝতে পারছো
না তুমি।”
“কিসের ভালবাসা!ভালবাসা কথাটা
তোমার মুখে শোভা পায়না।তোমাকে
আমি আগে ভালবাসতাম। শুধু আমি
ভালবাসতাম…… তুমি না।তুমি আমাকে না
কাল ভালবেসেছ না আজকে।শুধু নিজের
ইগো, স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আমাকে
ব্যবহার করেছ আর এখনি ঠিক একি কাজ
করছ।তোমার নিজ স্বার্থের জন্য আমাকে
ভালবাসার মিথ্যা বাণী শুনাচ্ছ।তোমার
মতন ছেলেরা কখনো কোন মেয়েকে
ভালবাসতে জানো না শুধু একটা মেয়ের
মন আর স্বপ্নকে নিয়ে খেলতে
ভালবাসে।”
.
.
“মেঘ আমি আর আগের মতন নেই।আমি এখন
ভালো হয়ে গেছি।মেঘ তোমাকে কষ্ট
দেওয়ার পর আমি মনে মনে অনেক খুশি
হয়েছিলাম।কারণ আমি যা করতে
চেয়েছিলাম তা পেরেছি।অবশ্য এর জন্য
আমাকে বিয়ের আগেই পালিয়ে যেতে
হয়েছিলো।কিন্তু আমার কাছে সেটা বড়
ব্যাপার ছিলোনা।তোমাকে কষ্ট আর
যন্ত্রণা দিয়ে শেষ করে ফেলা আমার
কাছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হয়ে
দাঁড়িয়েছিলো।এরপর আমি যে এলাকায়
যাই সেখানের এক অপরুপ সুন্দরি একটা
মেয়ের প্রেমে পড়ে যাই। ওকে
ভালবেসেও ফেলি।নিজের সব ইগোকে
পিছনে ফেলে ওকে প্রপোজ করি।ও
নিজেও তা একসেপ্ট করে।দিন দিন ওর
প্রতি আমার ভালবাসা বাড়তে থাকে।
কিন্তু একদিন আমার ভালবাসার মানুষটা
আমাকে জানাই সে আমাকে ভালবাসে
না। আমার সাথে নাকি এতদিন টাইম পাস
করেছে।ও অন্য আরেকজনকে ভালবাসে।
ওর কথা শুনে কি পরিমাণ কষ্ট
পেয়েছিলাম তা তোমাকে বুঝাতে
পারবোনা।কত রাত যে কেঁদেছি
তোমাকে বলতে পারবোনা।তখন তোমার
সেই কথাগুলো বারবার মনে পড়ল। সত্যিইই
কাউকে সত্যি ভালবাসলে যদি এর
বিনিময়ে কষ্ট যন্ত্রণা পেতে হয় তা যে
কতটা যন্ত্রণার তা একমাত্র ভুক্তভোগীই
বুঝে।এরপর মনে হলো তোমার মতন করে
আমাকে কেউ ভালবাসতে পারবে না।
আমি তোমাকে ভালবাসেনি সেটা সত্যি
কিন্তু তুমিতো ভালবেসেছিলে।তাই আমি
আবার তোমার কাছে ছুটে এসেছি।যে ভুল
আমি একবার করেছি দ্বিতীয়বার তা
করতে চাই না।আমাকে যে মেয়েটা
অনেক ভালবাসতো তার কাছে আজকে
আমি ছুটে এসেছি শুধু একটুকু ভালবাসার
পরশ পাওয়ার জন্য।মেঘ আমার কাছে
ফিরে আসো।বিশ্বাস করো তোমার
ভালবাসার প্রকৃত মর্যাদা দিবো আমি।
আর কষ্ট দিবো না তোমাকে আমি।সব
ফেলে ফিরে আসো আমার কাছে প্লিজ।
আমার এখন তোমাকে বড্ড প্রয়োজন।
প্লিজ মেঘ, প্লিজ।”
আমার হাত ধরে কথাগুলো বলছিলো আর
কাঁদছিলো।.
.”বাহ্ মেঘ বাহ্ এতদিন ধরে তাহলে এইসব
চলছে।আজ নিজের চোখে এইসব না
দেখলে জানতাম না।এইজন্য তো বলি তুমি
আর আগের মতন নেই কেন?কেন আর আমার
সাথে আগের মতন মিশোনা,কথা বলোনা।
পুরানা প্রেমিক এসে গেছে এইজন্য না।
এখন আর আমাকে দরকার নেই।”(তন্ময়
স্যার)
…….
“এই ছেলেটা তোমাকে আর তোমার
পরিবারকে কষ্ট দিয়েছিলো, পুরো
গ্রামের মানুষের সামনে তোমাকে আর
তোমার পরিবারকে অপমান করিয়েছে
আর আজকে তুমি আবার সেই ছেলেটার
সাথে দেখা করতে আসছো।”(তন্ময় স্যার)
“দেখুন তন্ময় সাহেব আমি মানছি আমি যা
করেছি….”(সাগর)
“you….just shut up.আমি আমার স্ত্রীর
সাথে কথা বলছি, আপনার সাথে না।
আমাদের মাঝে কথা বলার অধিকার
আপনাকে কে দিয়েছে।”(তন্ময় স্যার)
“কারণ আমি ওকে ভালবাসি।”(সাগর)
“ইউ……. আর একবার এই মুখ দিয়ে আমার
মেঘকে ভালবাসি কথাটা বললে আমি
তোকে মেরেই ফেলবো।কোথায় ছিলো
তোর এই ভালবাসা যখন তোকে মেঘের
পাশে সবচেয়ে বেশি দরকার
ছিল,কোথায় ছিলো তোর সেই ভালবাসা
যখন ওকে মরার জন্য বিশেষ গিফট বিষের
বোতল দিয়েছিস।এতদিন ওকে কাঁদিয়ে
এখন ভালবাসা দেখাতে এসেছিস।আমার
সংসারে আগুন লাগাতে এসেছিস তোকে
আজ আমি মেরেই ফেলবো।”(তন্ময় স্যার)
“ওকে ছাড়ুন বলছি।মরে যাবে ও…..”
“ও এখন ওর প্রতি মায়া উতলে পড়ছে।অবশ্য
পড়বে না কেন পুরানো প্রেমিক বলে
কথা।আজকে আমি এর শেষ দেখেই নিবো।
চলো আমার সাথে বাসায়……”(তন্ময়
স্যার)
.
.
“কি করছিলে তুমি ওর সাথে।মেঘ বলো
কি করছিলে ওইখানে…..”
…….
উনি এবার আমার গালে খুব জোরে একটা
থাপ্পড় মারলেন।
“এতদিন তোমার জন্য যা যা করে এসেছি
আজ তার এই মূল্য দিলে তুমি।ছিহ…..।স
েদিন তুমি বলেছিলে তাসপিয়ার সাথে
বাসায় যাবে।আমি তোমাকে যেতে
দিয়েছি। আমাকে মিথ্যা কথা বলে তুমি
সাব্বিরের সাথে পার্কে যাও।শুধু এই নয়
মধ্য রাতে বারান্দায় গিয়ে কথা বলো।
তুমি কি মনে করো এইসবের কিছুই আমি
জানি না।এতদিন শুধু তোমার কাহিনী
দেখছিলাম। আমি দেখতে চেয়েছিলাম
আর কতদূর তোমার এই নোংরামি চলে।আর
আজকে সাগরকে রেস্টুরেন্টে দেখে
বুঝতে পারলাম রাতে লুকিয়ে তুমি
সাগরের সাথে কথা বলতে।কেন মেঘ তুমি
কি আমাকে নিয়ে হ্যাপী থাকতে
পারছো না।তোমাকে হ্যাপী করার জন্য
কোন জিনিসের কমতি রেখেছিলাম আমি
বলো….।তোমাকে নতুন একটা জীবন
দিয়েছি,পড়ালেখা করে ভালো কিছু
করতে পারো, আমার বউও জীবনে মাথা
উঁচু করে বাঁচতে পারে সেজন্য আমি নিজে
তোমাকে পড়ালেখা করাচ্ছি।সবসময়
তোমার বেস্টফ্রেন্ড হওয়ার চেষ্টা
করেছি।কোনদিনও তোমার ইচ্ছার
বিরুদ্ধে কিছু করে নি।তোমার ইচ্ছাকে
সবসময় গুরুত্ব দিয়েছি।তোমার মা বাবা
তোমাকে এতটা বছর আগলে ধরে
তোমাকে নিরাপদে রেখেছে আমিও সে
চেষ্টা করেছি।তাহলে!তাহলে কেন এমন
করলে আমার সাথে।একজন না দুইজনের
সাথে রিলেশন চালিয়ে যাচ্ছ। আমি
এতটা বছর ধরে যে মেঘকে চিনে এসেছি
তুমি সে মেঘ নও।আমার চিনা সে মেঘের
সাথে আজ তোমার কোন মিল খুঁজে
পাচ্ছি না।তোমাকে বড্ড অচেনা
লাগছে।অনেক বদলে গেছো তুমি… অনেক
বদলে গেছো।”
“হ্যা আপনি ঠিক ধরেছেন আমি অনেক
বদলে গেছি।পরিস্থিতি আমাকে
বদলাতে সাহায্য করেছে।থ্যাংকস আপনি
নিজ থেকে সব বুঝে গেছেন।আমার মতন
মেয়েদের সাথে আর যাই হোক সংসার
করা যায় না।তাই এক কাজ করুন আমাকে
ডির্ভোস দিয়ে দিন।” আরেকটা থাপ্পড়
দিয়ে দিলেন উনি।
“ডির্ভোসতো আমি তোমাকে কখনো
দিবো না।বিয়ে করেছি তোমাকে,
সারাজীবন তোমার সাথে থাকবো বলে।
তোমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আমি
বিয়ে করেনি।এত সহজে আমার থেকে
ডির্ভোস পাবে না।এত সহজে তোমাকে
আমি মুক্তি দিবোনা।তোমার এই ধরণের
অপরাধের জন্য আমি তোমাকে তিল তিল
করে কষ্ট দিবো।তোমাকে কিভাবে ঠিক
করতে হবে তা আমার জানা আছে।”
.
.
“দেখুন এইসব বাজে কথা রাখুন।যে আমাকে
বিশ্বাস করে না,কোনকিছু না বুঝে শুনে
অবিশ্বাস করে আমাকে অনেক বাজে
কথা শুনাই তার সাথে আমি একমুহূর্তের
জন্যও থাকতে রাজি না।আর আমিও
জানি আপনি মনে মনে এই চান আমি
এখান থেকে চলে যায় কারণ আমি না
গেলে প্রিয়া ম্যাডামের সাথে প্রেম
কেমন করে করবেন তাকে বিয়ে কেমন
করে করবেন।আমি চলেই গেলেই তো
আপনার জন্য ভালো হয়।সুতরাং ভালোই
ভালোই আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দেন।
এতে আমার আপনার আমাদের জন্যই মঙ্গল
হবে।”
.
.
“আর আরেকটা বাজে কথা বললে
তোমাকে মেরেই ফেলবো। একতো নিজে
অপরাধ করো আবার আমার নামে কিসব
আজে বাজে কথা বলছো।প্রিয়ার সাথে
আমার কিসের রিলেশন। এইসব বাজে কথা
তোমাকে কে বলছে।আর ডির্ভোসের কথা
আরেকবার বললে নিজের হাতে আমি
তোমাকে মেরে ফেলবো।”
……….
“তোমাকে আজকে এই ঘরে আটকে
রাখবো। একদিন এইভাবে আটকে রাখলে
তারপর তোমার মাথার তার কাজ করবে।
আর ডির্ভোসের পাগলামিও মাথা থেকে
সরে যাবে।”
.
.
এরপর সেদিন রাতে ওনি আমাকে একটা
রুমে আটকে রাখলেন।খুব ভয় করছিলো।আর
এরপরি কারেন্ট চলে গেলো।অন্ধকারে
তো এমনিতেই ভয় পাই,তারউপর আবার মনে
হচ্ছিল এই বুঝি ভূত এসে গেল। মনে মনে
এইসব ভাবার কারণে আর ভয় পাওয়ায়
অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
এরপরে রাতে দেখি উনি আমার মাথার
পাশে বসে আছেন।চোখ দুটি লাল হয়ে
আছে।
“মেঘ কি হয়েছিলো তোমার?কত ভয়
পাইয়ে দিয়েছিলে আমাকে!”
“আপনার সাথে কোন কথা বলার ইচ্ছা
নাই।কিভাবে আপনি ওই রুমে আমাকে
আটকে রাখলেন।আপনার জন্যই আমার এই
অবস্থা।”
“আমার জন্য…”
“হ্যা আপনার জন্য। আর প্লিজ এখন আর
কোন প্রশ্ন করবেন না আমার মাথা
ব্যাথা করছে ঘুমাবো।”
উনার সাথে এইভাবে কথা বলাতে খুব কষ্ট
হচ্ছিলো।কিন্তু কিছুই করার নেই।উনি
এতদিন আমার উপকার করেছেন তাই উনার
ভালোর জন্য যা যা করা লাগবে আমি
করবো।
সকালে উনার জন্য একটা চিঠি রেখে
গ্রামের বাড়িতে চলে গেলাম।মা বাবা
এখন সেখানেই থাকেন।বাড়িতে এসে পা
রাখতে না রাখতেই মা বাবা কতবার যে
উনার নাম নিলো তা বলে বুঝাতে পারবো
না।এখন ওদেরকে কিছু বুঝতে দেওয়া
যাবে না।সময় হলে সব বলে দিবো।
সারাদিনের জার্নিতে ক্লান্ত ছিলাম।
কিছু খেয়ে একটা ঘুম দিলাম।সকালের
দিকে ঘুমের মধ্যেই মনে হচ্ছিল আমি
উনার বুকেই শুয়ে আছি।চোখ খুলে দেখি
উনি…..! এটা কি করে সম্ভব। উনি এখানে
কেন?
“আপনি” (জোরে চিল্লিয়ে)”
“মুচকি হেসে, good morning মেঘ”
“আপনি এখানে কি করে?”
“তুমিতো চিঠিতেই লিখে আসলে তুমি
বাড়িতে।তাই তোমার পিছে পিছে চলে
আসলাম।”
“দেখুন আপনি আমাকে বলেছিলেন আমি
যাতে আপনাকে না বলে কোথাও না যায়।
কোথাও গেলে আপনাকে যাতে জানিয়ে
যাই।তাই……।আর তাছাড়া আপনাকে
বলেছিলাম না আমি আপনার সাথে
থাকতে পারবোনা।”
“কালকের কথা বাদ দাও।আমি সব ভুলে
গেছি।চলো বাসায় চলো।”
“এইসব কথার মানে কি?ওইদিন আমাকে
অনেক বাজে কথা শুনিয়েছেন। তাছাড়া
আমি গেলে আপনার প্রিয়ার কি হবে।”
“মানে কি?আবারও কালকের মতন আজগুবি
কথা বলছো।”
“আজগুবি না।তাহলে এই ছবিতে এগুলো
কি?এখনো বলবেন আমি আজগুবি কথা
বলছি।”
“এই ছবি তুমি কোথা থেকে পেলে?”
“সে প্রশ্নের উত্তর আমি দিবো না।”
.
.
“দিতে তুমি বাধ্য।কারণ সে অধিকার
আমার আছে।”
“আপনি কালকেই সে অধিকার হারিয়ে
ফেলেছেন।আর কোন কথা না।আমি
আপনার সাথে থাকতে পারবো না,ব্যস।যে
অবিশ্বাস আমার জন্য আপনার তৈরী
হয়েছে তা কখনো দূর হবে না।আমি
আপনার সাথে থাকতে পারবোনা।”
“তাহলে কি চাও তুমি?”
“ডির্ভোস”
এই কথা শুনে উনি আমার গলা চেপে
ধরলেন।মনে হচ্ছিল আমাকে এখনি মেরে
ফেলবেন।এরপর কি মনে করে আমাকে
ছেড়ে দিলেন।
সারাদিন গেলো উনার কোন খোঁজখবর
পেলাম না।মোবাইলটাও অফ রাখলেন।
কোথায় গেছেন তা জানা ছিলোনা।খুব
টেনশনের ভিতর দিয়ে দিন কাটলো।রাতে
উনি বাসায় এলেন।আজব উনি এখনো
এখানে আছেন।ঢাকায় যান নি।
বাসায় এসে মা বাবার সাথে হেসে কথা
বলছেন।এমন ভাব যেন কিছুই হয় নি।উনার
এই আচরণ দেখে আমার টেনশন আরও বেড়ে
গেল।
আমি রুমে গেলাম।খুব টেনশন লাগছে।
“আরে মেঘ তুমি এখানে।শুনো কালকে
রেডি থাকিও বাসায় যাব।”
“মানে?কার বাসা?”
“কেন আমাদের বাসা।”
“আপনি কি সকালের কথা ভুলে গেছেন।”
“সকালের কথা…ও আচ্ছা…..।ভুলে নি
আচ্ছা ডির্ভোসের কথাই তো।সে দিয়ে
দিবো।এই বিষয় নিয়ে তোমাকেকে
চিন্তা করতে হবে না।তবে আমারও কিছু
শর্ত আছে।”
“কি…..”
“দেখো শর্ত হচ্ছে এই যে,ডির্ভোস পেতে
হলে আমাদের ৬মাস স্বামী-স্ত্রীর মতন
একসাথে থাকতে হবে।এর মধ্যে ডির্ভোস
পেপার তৈরি হয়ে যাবে।ডির্ভোস মুখে
বললেই তো আর হলো না।এর অনেক নিয়ম
আছে।এত সহজে ডির্ভোস হচ্ছে না।”
“তোমার সাথে আমি থাকব এটা তুমি
ভাবলে কি করে।আমি তোমার এই শর্ত
মানতে পারবোনা। ”
“তাহলে এই ডির্ভোসের চিন্তা বাদ দাও।
যদি সত্যিই ডির্ভোস চাও তাহলে এই শর্ত
মানতেই হবে।”
…..
.
.
উফ এত টেনশন আমি কোথায় রাখি।
ভাবলাম আমার প্ল্যানমতন সব হবে কিন্তু
এখন!এত ঝামেলা আমাকে পোহাতে হবে
আমি ভাবতে পারি নি।
আচ্ছা কালকে ওইখান থেকে আসার পর
সাগরতো একবারের জন্যও কল দিলোনা।
আর আমার উনি উনার মাথায় কি ঘুরপাক
খাচ্ছে বুঝতে পারছি না।উনার সুবিধার
জন্য আমি কত কি করলাম আর উনি আমার
সব কাজ পন্ড করে দিলো।
.
.
মোবাইলটা হাতে নিয়ে রাখছি।আর
বারবার মোবাইলের দিকে তাকিয়ে
আছি। সাগর কল বা মেসেজ দিলো কিনা।
ওর মনে এখন কি চলছে সেটা জানা
দরকার।কারণ আমি চাই না ও রাগের বশে
তন্ময়ের কোন ক্ষতি করুক।
“যার কল বা মেসেজের জন্য অপেক্ষা
করছ সে আর কল দিবে না।”
“মানে……”
“তোমার সিমটা আজকে সকালে আমি
নিয়ে নিয়েছি।আর সাগর আমার কোন
ক্ষতি করতে পারবে না।ওর কি ব্যবস্থা
করতে হবে তা আমার জানা আছে।ওইসব
নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে।”
“আপ…পনি…..!”
“আপনি না তুমি,সকালে আমাকে তুমি
করে ডেকেছ শুনেই ভালো লাগল।”
“আমি কখন…..”
“মুচকি হেসে…..পিচ্চি মেয়ে আমাকে
“তুমি”কখন ডেকেছ সেটা বড় কথা নয় এখন
থেকে আমাকে তুমি করে ডাকবে সেটাই
বড় কথা।”
“কি……”
“হুম,নিজেকে যত চালাক মনে করো ততটা
চালাক তুমি না।আমার কাছে তুমি আগে
যেই বোকাটা ছিলে এখনো সেই
বোকাটাই রয়ে গেছো। চাইলেও আমার
সাথে চালাকি করে নিজের কাজটা
সারতে পারবে না।”
কি বলছেন এইগুলো উনি…..উনি কি
তাহলে সব বুঝে গেলেন।কেমন করে….
আমিতো অনেক দক্ষতার সাথে কাজটা
করেছি তাহলে উনি কিভাবে টের
পেলেন।না… না এত সহজে উনার টের
পাওয়ার কথা না।নিশ্চয় আমাকে উনার
কথার ফাঁদে ফেলে বোকা বানাচ্ছেন।
সেটাই হবে।
এইসব নিয়ে চিন্তা করে ঘুমিয়ে গেলাম।
.
.
“মেঘ রেডি হও তাড়াতাড়ি,আজকে
বাসায় যাব”
“কি?”
“হুম, শাশুড়ি মাকে জানিয়ে দিয়েছি
আজকে আমরা চলে যাচ্ছি।”
“মানেটা কি?আমাদের ডির্ভোস”
“কালকে কি বললাম ডির্ভোস পেয়ে
যাবে।কিন্তু তার আগে আমার শর্তটা
মানতে হবে।”
“কোন শর্ত মানবো না।”
“দেখো ডির্ভোসটা তোমার জন্য যেমন
জরুরি ঠিক তেমনি আমার জন্য জরুরি।
কারণ এই ডির্ভোসের পর আমি প্রিয়াকে
বিয়ে করব।”
“প্রিয়াকে বিয়ে…..”
“আরে হ্যা বিয়ে,তুমিই না সেদিন বললে।
অবশ্য তুমি আগেভাগে ব্যাপারটা বুঝে
গেছো ভালোই হয়েছে।যতটা বোকা
তোমাকে ভেবেছিলাম ততটা বোকা তুমি
না।”
উনি তো দেখি আমাকে অনেক
কনফিউজডে ফেলে দিচ্ছেন।কালকে
আমাকে বোকা বললেন আর আজকে।
উফ……। আর আজকে এইসব এগুলো কি
বলছেন প্রিয়া ম্যাডামকে বিয়ে….।
আমার কথাটা একবারো ভাবলেন না।এই
কথা শুনে আমার যে কত কষ্ট হবে সেটা
একবারো ভাবলো না।পরে দিয়ে আবার
মনে হল আমি যেটা চাচ্ছি সেটাই তো
হচ্ছে তাহলে আমি এইসব কি ভাবছি?উনি
প্রিয়াকে বিয়ে করবে নাকি সীমাকে
তাতে আমার কি?যাকে খুশি তাকে
বিয়ে করুক।
.
.
“কি হয়ছে?আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে
আছেন কেন?”
…….
“মুচকি হেসে কিছু না।রাগলে তুমি যে কি
সুন্দর করে কপাল কুচকাও সেটাই দেখছি।”
“হুহ।”
“চলো এবার যাওয়া যাক।”
“না,যাবোনা।”
“সত্যিতো।”
“বুঝছি তুমি চাওনা আমি প্রিয়াকে বিয়ে
করি
কিন্তু তোমার এই প্ল্যান আমি ভঙ্গ করে
দিবো। আমি যেভাবেই হোক প্রিয়াকে
বিয়ে করবো।আর সেজন্য তোমাকে আমার
সাথে যেতে হবে।আর হ্যা এটা ভাবিও না
আমি প্রিয়াকে বিয়ে করার সাথে
তোমার আমার একসাথে থাকার সম্পর্ক
কি?আসলে তোমার মা বাবাকে আমি
এবার কথা দিয়েছি নিজেকে নিজে কথা
দিয়েছি যে করেই হোক আমার এই
অকর্মণ্য ছাত্রীকে দিয়ে ভালো
রেজাল্ট করাবো। সেজন্য ভালো করে
পড়তে হবে।ভালো করে পড়তে হলে ভালো
একজন টিচার প্রয়োজন।আর একজন ভালো
টিচারের গাইডে সবসময় থাকলেই ভালো
রেজাল্ট করা সম্ভব।আমি একজন ভালো
টিচার।সেজন্য আমার গাইডে এই ৬মাস
তুমি থাকবে।আমার কাছ থেকে ভালো
করে পড়া শিখে ৬মাস পর পরীক্ষা দিয়ে
একটা ভালো রেজাল্ট করবে।আর এরপরেই
তোমার মুক্তি।”
“আমাকে কেউ ধরো। মাথাটা ঘুরে
যাচ্ছে।” “উফ….মাথা ঘুরে যাচ্ছে।”
“আরে….আরে…..কি হলো এখনি যদি
মাথা ঘুরায় তাহলে সামনের দিকে
আগাবে কি করে।খেলা সবে মাত্র না শুরু।
আগে আগে দেখো হতা হে কেয়া।”
……..মাথা ধরে বসে আছি।জানিনা আর
কি কি দেখতে হবে।
আমাকে কোলে করে উঠালেন।
“বললাম না আমি যাব না পড়ালেখাও
করবো না পরীক্ষাও দিবো না।তারপরও
জোর করে কেন নিয়ে যাচ্ছেন।চিল্লিয়
ে চিল্লিয়ে কথা বলছি।কিন্তু উনার কোন
পাত্তাই নেই।”
“কোন কথা শুনতে চাই না।”এই বলে
গাড়িতে উঠিয়ে আমার মুখ হাত পা বেঁধে
দিলেন।রাক্ষস একটা।
.
.
বাসায় এসে একটাও কথা বলি নি উনার
সাথে।রাগ করে ছিলাম।কিন্তু উনার
কারণে রাগ করে থাকারও উপায়ও নেই।
আমার রাগ ভাঙ্গিয়েই ছাড়লেন।
দিন দিন উনার প্রেমেই পড়ে যাচ্ছি। ইশ
শুধু ৬ মাসের জন্য না হয়ে সারাজীবনের
জন্য উনার সাথে থাকতে পারতাম কতই না
ভালো হত।
দেখতে দেখতে ৬মাস কেটে গেল।এই ৬
মাসে সাগরও কল দেয় নি আর আমার উনি
প্রিয়া ম্যাডামের সাথেও কথা বলেননি।
ভার্সিটিতেও উনি প্রিয়া ম্যাডামের
সাথে কথা বলেন তবে সেটা কমই
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৯