স্যার যখন স্বামী

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—২

জান্নাতুল ফেরদৌস 
“অতিরিক্ত কান্নাকাটি করার কারণে
ঠিকভাবে দাঁড়াতেও পারছি না।অনেকটা
দুর্বল হয়ে গেছি। হাঁটতে গিয়ে যেই পড়ে
যাব ওমনি স্যার আমাকে ধরে ফেললেন।
তিনি আমার সমস্যাটা বুঝতে পেরেছেন।
তাই আমাকে কোলে তুলে নিলেন।”
“স্যার একি করছেন?”
“দেখতেই তো পারছো কি করছি।”
“হ্যা… পারছি,, আমাকে কোলে নিতে
হবে না।আমি হেঁটে যেতে পারবো।”
“হুম সেটা আমি দেখতে আর বুঝতে
পেরেছি।তাই কোলে নিয়েছি।আর কোন
কথা বল না।বোকা মেয়ের মতন
কান্নাকাটি করে শরীরের কি হাল করেছ
সেটা বুঝতে আমার বাকি নেই।চুপ করে
থাক।যা করছি আমাকে করতে দাও।”
“আমিও আর বাড়াবাড়ি করলাম না।
আসলেই কান্নাকাটি করে এমন অবস্থা
হয়েছে আমাকে এখন কোল থেকে
নামিয়ে দিলে বাকিপথটুকু হেঁটে যাওয়ার
অবস্থা থাকবে না।সাথেসাথে মাথা
ঘুরিয়ে পড়ে যাব। তাই চুপটি মেরে
রইলাম।”
.
.রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—১
মেহমান ভর্তি বাড়িতে,,নিচে গিয়ে
পৌঁছালে স্যার আমাকে তার কোল
থেকে নামালেন। আমাকে দেখে মা
পাগলের মতন কান্নাকাটি শুরু করে
দিলেন।মেঘ এ কি হল রে?মা আমরা বুঝতে
পারি নি সাগর এরকম হবে।বিয়ে যদি
করবেই না সেটা আমাদের কালকে হলেও
বলতে পারত।তাহলে আমাদের
মানসম্মানটা বেঁচে যেত। আজ যখন বিয়ে
করতে আসার কথা ছিল ঠিক তখনি বিয়ে
করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কেন
ঘরভর্তি আত্মীয় আর মেহমানদের সামনে
ওই শয়তানটা আমাদের নাক কাটালো?
মায়ের এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতন
ভাষা আমার কাছে নেই।কি করে বলবো
এইসব কিছুর মূলে দায়ী আমি নিজেই।
বাবাকে দেখলাম চুপটি করে বসে আছে।
এতক্ষণ ধরে যে কান্নাকাটি করছিল তা
উনাকে দেখলে বুঝাই যাবে না।কি
সান্তনা দিবো ওদের? এটাই বলব তোমরা
টেনশন কর না।যা হওয়ার তাতো হয়ে
গেছে।এখন আর কান্নাকাটি করে কি
হবে? কিন্তু এইসব বললেই কি সব ঠিক হয়ে
যাবে।আমাদের হারিয়ে যাওয়া
মানসম্মানতো আর ফিরে আসবে না।ঘরে
আর বাইরের বয়স্ক গুরুজনরা বলেই চলছে,
বিয়ে না করে বর পালিয়ে গেল,, নিশ্চয়
মেয়ের চরিত্রে কোন দোষ আছে। বর
ভালো মানুষ তাই হয়ত মেয়ের সবদোষ
জেনেই বিয়ে করতে রাজি হয়েছিল, পরে
হয়ত ছেলে ভেবে দেখেছে মেয়ের দোষ
মেনে নিয়ে বিয়ে করে নিজের জীবন নষ্ট
করার মানেই হয় না।তাই হয়ত মেয়ের দোষ
থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য ছেলে
বাধ্য হয়ে পালিয়ে গেছে। এই গ্রামের
বয়স্ক লোকেরা কিছু একটা হলেই
মেয়েদের চরিত্রের দোষ তুলে ধরে।ছেলে
পালিয়ে গেল আর দোষ হল মেয়ের।
মেয়ের চরিত্র দোষের কারণে ছেলে
পালিয়ে গেছে, ছেলে পালিয়ে যাওয়ার
কারণ এতক্ষণ পরে তারা নিজেরা নিজে
গবেষণা করে উদ্ধার করল।আর সব দোষ
আমার উপরে চাপাল।সাগর পালিয়ে
যাওয়ায় একদিকে মার কান্নাকাটি,
বাবার চুপচাপ হয়ে বসে থাকা আমাকে
অস্থির করে তুলছে আর অন্যদিকে বয়স্ক
লোকেরা আমার চরিত্র নিয়ে কথা
বলছে। কোন দিশা পাচ্ছি না, কি করব?
আমি হচ্ছি ঘরকোনো মেয়ে,, কোন ঝগড়া
বিবাদ হলে আমি সেখান থেকে কেটে
পড়ি,, তাদের সাথে তাল মিলিয়ে ঝগড়া
বা প্রতিবাদ করার ক্ষমতা আমার
কোনকালেই ছিল না।এই পরিস্থিতিতে
আমার কিছু বলা উচিত, বলা উচিত আমার
চরিত্রে কোন দোষ নেই,নিজেকে বেকসুর
প্রমাণ করতে ইচ্ছে করছিল,মুখ খুলে কিছু
বলতে ইচ্ছে করছিল,কিন্তু আমার মুখের
কথা মুখে আটকে রইল,কোন টুশব্দ ও বাইরে
আসলো না। আশেপাশে সবাই যারা
আমাকে চিনে তারা চুপ করে আছে কারণ
গুরুজনদের মুখের উপর দিয়ে কথা বললে
তাদের অপমান করা হয়।তাছাড়া যে
প্রতিবাদ করতে যাবে বয়স্কলোকেরা
তারও দোষত্রুটি তুলে ধরবে সাথেসাথে।
তাই এই মূহুর্তে তাদের এই অপবাদ হজম
করা ছাড়া উপায় নেই।আমি
নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে আছি আর
তাদের কথা শুনছি,, না চাইতেও চোখের
পানি ঝরে পড়ছে। অন্যদিকে ঘরে আমার
মা পাগলের মতন প্রলাপ বকে যাচ্ছে এখন
আমার মেয়েটার কি হবে?ওর জীবনটা
শেষ হয়ে গেল।আমার মেয়েটাকে এখন কে
বিয়ে করবে?
.
.
এতক্ষণ ধরে তন্ময় স্যার সবকিছু দেখছিল
আর শুনছিল। কিন্তু এইবার তিনি আর চুপ
করে থাকতে পারলেন না,তিনি বলে
উঠলেন,মেয়ের চরিত্রে কোন দোষ নেই,
চরিত্রে যদি কারো দোষ থেকে থাকে
তাহলে সেটা ছেলের চরিত্রে ছিল।
ছেলের অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল।
কিন্তু বিয়ের আগে সেটা ছেলে বা
ছেলেপক্ষের পরিবার মেয়েপক্ষকে
জানায় নি।বিয়ের দিনে ছেলের মাথায়
আক্কেল হয়েছে এখন বিয়ে করলে আগের
মতন অন্য মেয়েদের সাথে প্রেমলীলায়
মজে থাকতে পারবে না। তাই বিয়ের
দিনে বর কনেকে বিয়ে না করে
পালিয়েছে।এরপর তিনি প্রমাণস্বরুপ
কয়েকটা ছবি দেখালেন।সাগরের সাথে
অনেক মেয়ের ছবি ঘনিষ্ঠভাবে তুলা।
আমি নিজেও অবাক।হ্যা আমি জানতাম
সাগরের পিছনে মেয়েরা ঘুরত,,কিন্তু
সেসইব মেয়েদের সাথে সাগরের
এরকমভাবে তুলা ছবি!!তার মানে আমার
অজান্তে আরও অনেক মেয়ের সাথে ওর
রিলেশন ছিল।মাথাটা ব্যাথা করছে
স্যারের কাছ থেকে এইসব কথা শুনে।
আমি দাঁড়ানো থেকে সোজা মাটিতে
বসে গেলাম। পুরোপুরো নিস্তব্ধ হয়ে
গেলাম। একটা শকড কাটতে না কাটতে
আরকটা!! কানে আর কোন কথা ঢুকছে না।
.
.
আপনারা পুরো ঘটনাটা না জেনে ছেলের
দোষ না দিয়ে মেয়ের চরিত্র নিয়ে
আঙ্গুল তুলেছেন।নিজের চোখে তো
দেখলেন কার চরিত্রে দোষ। আর কিছু
বলবেন আপনারা। কোনকিছু না বুঝে শুনে
বিচার না করে কিছু একটা হলেই সব দোষ
মেয়েদের উপর চাপিয়ে দেন।সবসময়
আপনারা শুধু মেয়েদের চরিত্রে দোষেই
দেখেন। আমি নিজে একজন ছেলে হয়ে
বলছি, কেন ছেলেরা কি দোষ করে না?
নাকি ওরা ধোয়া তুলসী পাতা যে ওরা
কোন দোষ করতে পারে না বা জানে না।
দেখেন ছেলে হোক বা মেয়ে, দোষ যে
কারো হতে পারে।আমরা আল্লাহর সৃষ্টি
সেরা জীব। দোষ যারই হোক না কেন
আমরা নিজেরা তা ভালোভাবে না বুঝে
নিজের বিবেকবুদ্ধি দিয়ে তা ভালভাবে
বিচার বিবেচনা না করে শুধুশুধু মেয়ের
চরিত্রে দোষ লাগিয়ে তাকে কথা
শুনাবো সেটা কেমন বিচার?নিজের
বিবেকবুদ্ধি কাজে না লাগিয়ে যদি শুধু
মেয়ের চরিত্রে দোষারোপ করা হয় আর
ছেলের দোষ থাকলে ও তাকে সে কটুক্তি
কথা থেকে বিরত রাখা হয় তাহলে সেটা
আল্লাহর সৃষ্টিকেসহ নিজেদেরকে
অবমাননা করা হয়। আপনারা মেয়ের
চরিত্র সম্পর্কে না জেনে কতকিছু বলে
ফেললেন কয় মেয়েপক্ষতো একবার ও তো
এখন ছেলের চরিত্র সম্পর্কে জানার পর
তাকে নিয়ে কিছু বলে নি।বিয়ের দিন
ছেলে পালিয়ে গেছে কেউ কিছু বলছে
না কারণ সে ছেলে।ছেলে পালিয়ে গেল
এতে ছেলের দোষ আছে কিনা তা যাচাই
করলেন না কিন্তু বিয়ের দিন মেয়ে
পালিয়ে গেলে পুরো সমাজ সে মেয়েকে
নিয়ে কত কথা শুনায় আর রটাই।একবারও
আপনাদের মনে হয় না এর সত্যতা যাচাই
করে দেখি আসলে সমস্যাটি কার? এবার
আর কেউ কথা বলছে না।চুপ হয়ে গেছে
সবাই।
.
.
স্যার এবার আমার মা বাবাকে বলেলন,
প্লিজ অযথা এভাবে আর চোখের পানি
ঝরাবেন না।আপনারা যদি অনুমতি দেন
তাহলে আমি কিছু বলতে চাই।আমার মা
বাবা স্যারের দিকে নির্বিকারভাবে
তাকিয়ে আছে।
“আমি মেঘকে বিয়ে করতে চাই যদি
আপনাদের কোন আপত্তি না থাকে।”
“এই কথা শুনে আমার মা সাথেসাথে বলে
উঠলেন, বাবা সত্যি বলছ।”
হ্যা আমি সত্যি বলছি আমি মেঘকে বিয়ে
করতে চাই। বাবার চোখে এবার সুখের
অশ্রু নেমে এল। স্যারের কথা শুনে মনে হল
তারা দুইজনেই আকাশের চাঁদ হাতে
পেয়েছেন।তারা আর কোন দ্বিমত করেন
নি।স্যারের সাথে আমার বিয়ে দিতে
রাজি হল। অবশেষে স্যারের সাথে আমার
বিয়ে হয়ে গেল।কিন্তু বিয়েতে আমার
শরীরটা উপস্থিত ছিল মাত্র কিন্তু মনটা
আমার সাথে ছিল না।কি হল না হল কিছু
বলতে পারবো না।একটা ঘোরের মধ্যে
ছিলাম।বিদায়ের সময় আর কান্নাকাটি
করলাম না।অনেক কেঁদেছি। বিদায়ের
জন্য জমানো পানিও ফুরিয়ে গেছে।
কাঁদতে কাঁদতে এখন চোখ দুইটা অসম্ভব
জ্বালাপোড়া করছে।
.
.
ইতিমধ্যে স্যার এত কম সময়ে বিয়ের
গাড়ি ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখার ব্যবস্থা
করে ফেলেছেন।সবাইকে বিদায় দিয়ে
গাড়িতে বসলাম। আমার বর্তমান আর
ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বুঝতে
পারছি না। স্যারের মুখের দিকে
তাকালাম দেখি মুখটাই একটা বিষাদ
নেমে পড়েছে। বেচারা!!আমার জন্য কত
কি না করল। এসেছিলেন বিয়ে খেতে
কিন্তু বিয়ে খেতে এসে তিনি নিজে
ফেঁসে গেলেন। যে সম্পর্কে কোন
ভালবাসা নেই সে সম্পর্কে এত সহজে
টিকে না। ওনিতো আমাকে কখনো
ভালবাসার চোখে দেখেননি,, সবসময়
স্টুডেন্টের চোখে দেখতেন।
স্যার আমার কাঁধ ঝাকিয়ে বললেন,, মেঘ,,
“হ্যা,,”
“শুন আলতোফালতো চিন্তা মাথা থেকে
বাদ দাও।আমাদের সম্পর্ক কোথায়
দাঁড়াবে সেসব নিয়ে এতকিছু ভেবো না।
সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।”
“উনি কেমন করে জানলেন আমি এইসব
ভাবছি। উনার কথা শুনে থতমত খেয়ে
গেলাম।”
“মেঘ শুন,,”
“জ্বী,, ”
“আরও ৩ ঘন্টার রাস্তা বাকি আছে।তুমি
চাইলে গাড়িতে ঘুমাতে পারো।খুব
ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে।”
“না,, আমি ঠিক আছি।”
এরপর আর কেউ কোন কথা বলে নি
গাড়িতে।চুপচাপ ছিলাম উভয়ে
অবশেষে কয়েকঘন্টার লং জার্নির পর
স্যারের বাসায় আসলাম।ইতিমধ্যে
বাসাটাও সুন্দর করে সাজিয়ে ফেলা
হয়েছে।আমি জিজ্ঞাসুদৃষ্টিতে স্যারের
দিকে তাকিয়ে আছি।স্যার আমার এই
দৃষ্টির মানে বুঝলেন।তিনি নিজের
থেকেই বলতে লাগলেন,আসলে এখানে
আসার আগে পাশের বাসার
প্রতিবেশীকে বলে রেখেছি যাতে তারা
সুন্দর করে বাসাটাকে সাজিয়ে রাখে।
আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি
আর ভাবছি এইসব করার মানেটা কি?সুন্দর
করে বাসাটাকে সাজিয়ে উনি কি
প্রমাণ করতে চাচ্ছে আমাদের যে
বিয়েটা হয়েছে সেটা স্বাভাবিক বিয়ে।
আমি এই বিয়ে মানি না,শুধু নিজের আর
পরিবারের মানসম্মান বাঁচানোর জন্য
আমি উনাকে বিয়ে করেছি।এই বিষয়
নিয়ে আজকেই উনাকে কিছু বলতেই
হবে,,সম্পর্কটা বেশিদূর গড়াক তা আমি
চাইনা। সাগরের কাছ থেকে যেভাবে
আমি প্রতারিত হয়েছি আর কোন
ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারব না।
“মেঘ কি ভাবছ? কতক্ষণ ধরে ডাকছি।”
“হ্যা…”
“বলছি রুমে যাবে চল।”
“হ্যা…,রুমে গিয়ে দেখি বিছানাটা সুন্দর
করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।
বিছানাটা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে
কেন?”
“দেখ আমি এইসবের কিছু জানি না।
আমিতো শুধু বাসাটা ফুল দিয়ে সাজাতে
বলেছি কিন্তু এরা এতকিছু করবে সেটা
আমার জানা ছিল না। প্লিজ কিছু মনে
কর না।আচ্ছা তুমি বরং ফ্রেস হয়ে এসো।
সারাদিন তোমার উপর দিয়ে অনেক ধকল
গেছে।”
“জ্বী…আচ্ছা,,”
“তুমি যাও আমি একটু পর আসছি।”
“কোথায় যাচ্ছেন?”
“আরে,,এইখানেইই আছি,,,ভয় পাওয়ার
দরকার নেই।যাও,,”
.
.
উনার আলমারি খুলতে গিয়ে দেখি
আলমারির অর্ধেক অংশ জুড়ে মেয়েদের
কাপড় রাখা আছে। সেখানে শাড়ীসহ
থ্রিপীস রাখা আছে।ওনিতো ব্যাচেলর
থাকেন তাহলে ওনার আলমারিতে
মেয়েদের কাপড় কেন?তারমানে ওনি
কাউকে পছন্দ করতেন।তার জন্য আলমারি
ভর্তি মেয়েদের কাপড় কিনে এনে তা
সাজিয়েছেন।আমিই ওনার আর ওনার
পছন্দ করা মেয়ের মাঝখানে এসে
পড়েছি।আমার জন্যই ওনি সমস্যায় ফেসে
গেলেন। নিজের থেকেই খারাপ লাগছে।
আমার জন্য এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এখন
আমিই এই সমস্যার সমাধান করে দিব।
শাড়ী বাদ দিয়ে হাল্কা বেগুনী রঙের
থ্রিপীচ পড়ে নিলাম। বাসার পাশে খুব
সুন্দর একটা বারান্দা আছে।দেখলাম
সেখানে অনেকগুলে টব ভর্তি ফুলের গাছ।
এইগুলোতো সব আমার পছন্দের ফুলের গাছ।
বারান্দার পাশে দোলনা ঝোলানো
আছে। বাইরে থেকে খুব সুন্দর বাতাস
বইছে। বারান্দা পাশে ফুলের টব,আর এই
ঝোলানো দোলনা দেখে আমার সাগরের
কথা আবার মনে পড়ে গেল।সাগরকেও
আমি বলেছিলাম আমরা যে রুমে থাকবো
সে রুমটার বারান্দাতে যেন আমার
পছন্দের ফুলগুলো লাগানো হয়,আর
সেখানে যাতে একটা দোলনা ঝোলানো
থাকে যেন অবসর সময়ে আমরা সেই
দোলনাতে বসে আমাদের সারাদিনের
ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো,জমে থাকা
কথাগুলো একে অপরকে বলে সময় কাটাতে
পারি। কিন্তু আমার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে
গেল।
.
.
“এই যে মিস সরি মিসেস,,”
“হ্যা…”
“আচ্ছা মেঘ তোমার কি কোন রোগ আছে?

“নাতো…স্যার…কেন কি হয়েছে,,হঠাৎ
এমন প্রশ্ন কেন করলেন?”
“এই যে মেয়ে শোন একতো আমি এখন
থেকে তোমার স্যার না,,তোমার
হাজবেন্ড। তাই আমাকে আর কখনো স্যার
বলে ডাকবে না। আর দ্বিতীয়ত তোমার
বয়সতো এত বেশি না তাহলে কথা বলতে
বলতে বা একলা থাকলে তুমি কিসব
ফালতো কথা ভেবে কোথায় জানি
হারিয়ে যাও,অনেকবার ডাকার পরও
তোমার কোন হুশ থাকে না,,তাহলে
এটাতো একটা রোগের মধ্যে পড়ে তাই নয়
কি?”
….
“শোন মেঘ এইসব ফালতো চিন্তা ভাবা
প্লিজ বাদ দিয়ে দাও।যেসব কথা ভাবলে
তোমার কষ্ট হয় অযথা সেসব ভেবে
নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানেটা কি
আমাকে সেটা বলতে পারো।এখন থেকে
এইসব ফালতু কথা ভাববে না আর,সামনে
তোমার অনেক রঙিন দিন আসবে,তাকে
বরণ করে নিয়ে নিজের স্বপ্নগুলোকে পূরণ
কর,,অতীতের খারাপ দিনগুলোর কথা ভুলে
গিয়ে নিজেকে ভালবাস,,নিজের আপন
মানুষ যারা তোমাকে ভালবাসে তাদের
জন্য নিজেকে শক্ত কর,,তাদের
ভালবাসাকে আপন করে নাও,দেখবে
তোমার ভিতরে আর কোন কষ্ট বাসা
বাঁধবে না,,তখন নিজেকে পরিপূর্ণ হবে।
একটা খারাপ মানুষের জন্য জীবনটা
কখনো থেমে থাকে না। জীবন ঠিকই তার
গতিতে চলবে। আশা করি আজকের পর
থেকে তুমি সাগরের কথা ভেবে আর
আনমনা হবে না,অযথা নিজের চোখের জল
ফেলবে না।যে তোমাকে বুঝে না শুধু শুধু
তার জন্য নিজের চোখের জল ফেলার
মানেটা কি?”
আমি কাদঁছি,,আশ্চর্য আর আমি সেটাই
টের পেলামনা।গালে হাত দিয়ে দেখি
আমার গাল বেয়ে চোখ থেকে নোনা জল
পড়ছে আমার অজান্তে।
স্যার এবার আমার কাছে এসে আমাকে
জড়িয়ে ধরে আমার চোখের জল মুছে
দিলেন। আজকের পর থেকে তোমার চোখ
দিয়ে যাতে আর কোন অশ্রু পড়তে না
দেখি আমি।এই চোখের জল দেখে আমার
খুব কষ্ট হয়।এরপর তিনি আমার মাথাটা
এনে তার বুকে রাখলেন।জানি না কেন
ওনার বুকে মাথা রেখে কান্নার
পরিমাণটা আগের থেকে আরও বেড়ে
গেল।ওনি আমার চুলে বিলি কেটে
দিচ্ছেন।
“কিছুক্ষণ পর মেঘ,,,”
….
“এই মেঘ,,, ”
“হুম (ফুঁপিয়ে)”
“চল খাবার খাবে…অনেক আগে খাবার
গরম করে রেখেছি,,,দেরি করলে ঠাণ্ডা
হয়ে যাবে।চল,,”
“এখন কোন কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা, এই
প্রথম কোন পুরুষের এত কাছে এলাম।ওনার
বুকে এই প্রথম মাথা রেখে কান্নাকাটি
করার পর এখন খুব হালকা লাগছে।একটু
আগে কোন শান্তি খুঁজে পাচ্ছিলাম
না,,কিন্তু এখন আপনাআপনি আমার মনে
শান্তি চলে এসেছে উনার বুকে মাথা
রেখে। এই শান্তিটা এখন হারাতে চাচ্ছি
না।”
“মেঘ প্লিজ,,চল নাহলে তোমার শরীর
খারাপ করবে।”
….
“এরপর উনি উনার বুক থেকে আমার
মাথাটা উঠিয়ে আমাকে কোলে তুলে
নিলেন।আর তাতে আমার হুশ এল।”
“আরে কি করছেন..”
“তুমি যে কি অলস মেয়ে,,, এতবার ডেকেই
চলেছি অথচ তোমার কোন পাত্তা নেই।
এইদিকে খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। তাই
বাধ্য হয়ে কোলে নিলাম।চুপ করে থাক।”
“আরে,,নামান,,আমি হেঁটে যেতে
পারবো”(চিল্লিয়ে)
“চিল্লিয়ে লাভ কোন লাভ হবে না,যা
করছি করতে দাও,,,”
“কিন্তু….”
“বললাম না চুপ” (ধমক দিয়ে)
….
“এরপর উনি আমাকে বিছানায় বসিয়ে
টেবিল থেকে খাবারের প্লেট তুলে
নিলেন।মেঘ হা কর..আমি তোমাকে
খাইয়ে দিচ্ছি।”
“দরকার নেই,আমি খেয়ে নিতে পারবো।”
“হ্যা আমি সেটা জানি,,তুমি নিজ হাতে
খেতে পারবে,,,কিন্তু আজকে আমি
তোমাকে খাইয়ে দিব। নাও হা কর।”
“বললাম তো এইসবের কিছু লাগবে না,,,”
“এত বকরবকর কর কেন বলত,,,হা করতে বলছি
হা কর,,”(ধমক দিয়ে)
“ধমক খেয়ে বাধ্য হয়েই হা করলাম।নিজ
হাতেই শেষ পর্যন্ত আমাকে খাইয়ে
দিলেন। তাই বলে বকা দিয়ে,,খুব খারাপ
উনি,,আবার কান্না পাচ্ছে,,স্যার বলে
কিছু বলতে পারছি না,,সইতেও পারছি
না,,”
“এখনতো ঠিকই খেলে মেঘ,আমার হাত
দিয়ে,,কেন শুধুশুধু বকাটা খেলে,,আসলে
তুমি যতক্ষণ না পর্যন্ত বকা খাও ততক্ষণ
পর্যন্ত তোমার শান্তি লাগে না,,বকা
খাওয়ার পর ফটাফট কাজটা করে
ফেল,,ভাল করে বললে জীবনেও সেটা
করবা না।এখন থেকে আমার কথা না
শুনলেই এরকম বকা খেতে হবে।
.
.
“ও…আল্লাহ উনি এমন কেন?(কেঁদে),,উন
িতো ক্লাসে আমাকে প্রতিদিন পড়ার
জন্য যেভাবে বকা দিতেন আজকে ও ঠিক
সেইভাবে বকা দিচ্ছে উনার হাতে খাবার
না খাওয়ার জন্য।ক্লাসে সবসময় সবার
প্রথমে আমাকে দাঁড় করিয়ে পড়া প্রশ্ন
করতেন আর না পারলে খুব বকা দিতেন।
জানি না কেন আমাকে দিয়েই তিনি
প্রশ্ন ধরার কাজটা শুরু করতেন।কেন অন্য
স্টুডেন্টকে আগে প্রশ্ন করলে কি
দুনিয়াটা উল্টে যেত,,আজকে আবারও
ঠিক একিভাবে খাবার খাইয়ে দিতে
গিয়ে বকা দিলেন,,মনে হয় যেন খাবার
খাওয়াচ্ছেন না,, আমার ক্লাস
নিচ্ছেন,,পড়া পাড়ছি না দেখে আমাকে
বকা দিচ্ছে।”
“মেঘ,,, ও আল্লাহ এই মেয়েটাকে নিয়ে
আমি কোথায় যাব,,, কি ভাবছ?”
“হ্যা… হ্যা কিছু বলছেন,,,”
“না বাবু কিছু বলেনি,,,বলছি যে ভাবনার
দুনিয়া থেকে বেরিয়ে আস,,,আর লক্ষ্মী
মেয়ের মতন ঘুমিয়ে যাও,,”
“বাবু,,,, আমি এখন ছোট নাই,,,আমি বড় হয়ে
গেছি,,”(কেঁদে)
“আচ্ছা,,আচ্ছা তুমি বড় হয়ে গেছ প্লিজ
এখন ঘুমিয়ে যাও,,”(আদুরে কণ্ঠে)
“হুম,,”
.
.
“উনি সবকিছু গুছিয়ে এলেন।রুমে এসে,,মেঘ
এখনো ঘুমাও নি।”
“না।”
“কেন?”
“কিছু কথা ছিল,,”
“এখন কোন কথা না,,ঘুমিয়ে যাও।কালকে
বলিও”
প্লিজ খুব সিরিয়াস কথা,,”
“বললাম না যা বলার কালকে বলবে,,,
(মন খারাপ করে),,আপনি খুব খারাপ স্যার,,
আমাকে শুধু বকা দেন”(কেঁদে)
“এই কি স্যার..কখন থেকেই স্যার কথাটা
বলা লাগিয়ে রাখছ হ্যা..আমাকে স্যার
ডাকতে নিষেধ করছি না?হয় আমাকে তুমি
বলে ডাকবা,,নাহলে আমার নাম ধরে।একটু
আগে তোমাকে আমি কি বলছি,,বলছি না
আর কাঁদবা না তাহলে আবার কাঁদছ কেন?”

“আচ্ছা বল কি বলবে?”(শান্ত হয়ে)
“আপনি আমাকে ডির্ভোস দিচ্ছেন কবে?”
“মানে? মেঘ তুমি ঠিক আছোতো”
“হ্যা আমি ঠিক আছি”
“আমার কাছে এসে,,আমার হাত শক্ত করে
ধরে,,না তুমি ঠিক নেই।কিচ্ছু ঠিক নেই।
ঠিক থাকলে এইসব কথা বলার মানেটা
কি?ডির্ভোস দেওয়ার জন্য আমি
তোমাকে বিয়ে করেছি?”(চিল্লিয়ে)
“স্যার,,”
“আবারও..স্যার”
“…মানে স্যার বলছি যে…”
“আমার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে,,”
“ওনি যেভাবে আমার হাত ধরে
আছেন,,হাতে খুব ব্যাথা
পাচ্ছিলাম,,আবারও আগের থেকে বেশি
পানি চোখ দিয়ে নেমে পড়ছে।আমার
চোখের পানি দেখে ওনার হুশ আসলো।হাত
ছেড়ে দিলেন।”
“মেঘ ঘুমাও গিয়ে যাও,,
“না,,ঘুমাবো না,,আগে বলেন,ডির্ভোসটা
কবে দিচ্ছেন?”
“মেঘ তুমি বারবার একি কথা কেন টেনে
আনছো?”ডির্ভোসের কথা এখন কেন
আসছে।”
“কারণ আমাদের বিয়েটা স্বাভাবিক
ছিলনা,,তাছাড়া যেখানে ভালবাসা
নেই,শুধুশুধু মিথ্যা ভালবাসার নাটক করে
শুধু বিয়ের দোহাই দিয়ে সংসার করলে
সে সংসার টিকে থাকতে পারে না।আমি
সাগরকে বিশ্বাস করে ভালবেসে ঠকেছি
আর দ্বিতীয়বার আমি নিজের সাথে
এইভুল হতে দিবো না।”
“মেঘ,তুমি সাগরের সাথে আমার তুলনা
করছ?”
“স্যার,আমি,”
“আবারও স্যার,”
“আসলে,,আমি কারও সাথে কারও তুলনা
করছি না,আমি বলছি আর কাউকে আমি
বিশ্বাস করতে আর ভালবাসতে
পারবোনা,,আর আপনাকেতো নাই,,কারণ
আমি আপনাকে স্যারের চোখে দেখি।
তাছাড়া আমি জেনে গেছি,,”
….
“(স্যারের দিকে তাকিয়ে) আপনি অন্য
কাউকে পছন্দ করেন।আমার জন্য আপনি
তাকে বিয়ে করতে পারেন নি।আমি
আপনাদের দুজনের মাঝখানে এসে
পড়েছি।”(চলবে)
রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প “স্যার যখন স্বামী” পার্ট—৩