1. নতুন গল্পঃ7. Rupkothar Golpo

রূপকথা গল্প – রাখাল ও পরীর

রাখাল ও পরীর

চারিদিকে পাহাড় ঘেরা উপত্যকার মাঝে ছিল অপূর্ব সুন্দর এক সরোবর। স্বর্গও লজ্জা পায় এমন সুন্দর পরিবেশ সেখানে। সেই সরোবরের তীরে প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে বেড়াতে আসে সাত পরী, সাত বোন। তারা ডানাগুলো একটা গাছের তলায় রেখে আনন্দ করে জলে খেলে বেড়ায়। জনশূন্য চারপাশ। ঠিক সাতদিন ধরে আনন্দ করে আবার ডানাগুলো পরে উড়ে যায় নন্দনকাননে, তাদের নিজের দেশে। (রাখাল ও পরীর)

এদিকে কাছাকাছি যে কিছু গ্রাম আছে সে খবর তারা না রাখলেও পরীদের সব খবর রাখে কিন্তু সেই গ্রামেরই এক অনাথ রাখাল ছেলে। সে গরু চরায়, বাঁশি বাজায় আর দূর থেকে দেখতে থাকে পরীদের কান্ডকারখানা। একসময় তার খুব ভালো লেগে যায় সবচেয়ে ছোট পরীটিকে। কি অপরূপ মিষ্টি চেহারা! ওকে দেখলেই রাখালের বাঁশিতে বেজে ওঠে স্বর্গীয় সব সুর। দূর থেকে পরীরা তা শোনে আর অবাক হয়ে ভাবে এমন সুন্দর সুর কে বাজায়, এ সুর তো নন্দনকাননের পাখিদেরও অজানা! তারা মুগ্ধ হয়ে শোনে, কিন্তু রাখাল থাকে আড়ালে, তাকে কেউ দেখতে পায় না।

একবার হলো কি, রাখালের মাথায় একটা দুষ্টবুদ্ধি জাগলো। পরীরা যখন স্নানে ব্যস্ত, সে চুপিচুপি এসে দাঁড়ালো সেই গাছতলাটিতে যেখানে খুলে রাখা আছে পরীদের ডানাগুলো। বেছে বেছে সব চেয়ে ছোট ডানাজোড়া নিয়ে সে লুকিয়ে রেখে দিল একটা বড় গাছের ফোকরে। তারপর ধীরে ধীরে সরে পড়ল সেখান থেকে। এখন সাতদিন পরে পরীদের যাবার সময় হলে দেখা গেল তাদের ছোটবোনের ডানাজোড়া নেই সেখানে, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তারা সেটা পেল না।

এদিকে বাবার কড়া হুকুম, একসপ্তাহের বেশি তাদের স্বর্গ ছেড়ে থাকা চলবে না। কি করে, সবচেয়ে যে বড় পরী সে তার ছোট বোনকে বুঝিয়ে বলল, ‘উপায় নেইরে বোন, আমাদের যেতেই হবে, আর গেলে পরের বছরের আগে আর আসতে পারব না। তুই বরং এখানে থেকে ডানা জোড়া ভাল করে খুঁজে দেখ, পেলেই দেশে চলে আসিস, কেমন? আমরা বাবাকে বুঝিয়ে বলব তিনি যেন রাগ না করেন’। (রাখাল ও পরীর)

ছয় পরী ছোট বোনকে একা সরোবরের তীরে ফেলে রেখে তো উড়ে চলে গেল, বেচারী ছোটপরী মনের দু:খে বসে বসে কাঁদতে লাগলো। তাকে ওভাবে কাঁদতে দেখে রাখাল সাহস করে আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। সব শুনে সে তাকে নিজের বাসায় নিয়ে গেল, তারপর অনেকক্ষণ ধরে বাঁশি বাজিয়ে শোনাল। এই রাখালের বাঁশিই যে তাকে দূর থেকে এত আনন্দ দিয়েছে ভেবে পরীর খুব ভালো লাগলো, তাদের বন্ধুত্ব হতে দেরী হলো না।

রাখাল আর পরী গ্রামের একপ্রান্তে একটি কুঁড়েঘরে থাকে, একত্রে গরু চরায়। রাখাল বাঁশি বাজায় আর পরী ঘাঘরা উড়িয়ে নাচে, দেখে গ্রামের লোকেরা ঠিক করলো এদের বিয়ে হওয়া উচিত। রাখাল তো রাজি ছিলই, পরীও কি আর করে, রাজি হয়ে গেল। তারপর একদিন বেশ একটা উৎসবের মধ্যে দিয়ে তাদের বিয়ে হয়ে গেল।

এক পলকে দেখে নিন- সহজে গল্প খুঁজে পাওয়ার সুবিধার্থে দেওয়া হল