যদি তুমি জানতে

যদি তুমি জানতে !! Part- 19

দৌড়ে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে গেলাম। দরকার নাই উনার সাথে কথা বলার! সবসময় আমার সাথে এভাবে কথা বলবে!আমিও অভিমান করে গাড়িতে না উঠে অন্যদিকে হাটা দিলাম। গাড়িতে ড্রাইভার আমাকে খেয়াল করেনি বের হতে।

এখনো হাটছি। পথঘাট ঠিক তেমন চিনি না। এটা কোন রাস্তা সেটাও জানি না। শুধু হেটে চলছি। হাটতে হাটতে দেখি একটা বদ্ধ কটেজ। কেউ নেই সম্ভবত। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আমি অন্যমনষ্ক হয়ে হাটতে হাটতে বেশ দূর চলে এসেছি। এখানে মানুষজনও নেই। কটেজ টার সিড়ির উপর বসে নিলাম। সামনে একটা খাল টাইপের। খুব বেশি পানি নেই। মাঝেমাঝে গাছের ফাকে ফাকে বাতাসও আসছে। কিছুক্ষণ বসে থাকতেই আমার প্রচুর ঘুম পেতে লাগল। আমার একটা বাজে অভ্যাস আছে.. যেখানে সেখানে যখন তখন ঘুম পায়। হাজার চেষ্টা করলেও আমার ঘুম কেউ তাড়াতে পারবেনা। বেতাল হয়ে হাই তুলতে তুলতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ি খেয়াল নেই…………….

.
.

নাবিলা রাগ দেখিয়ে বেরিয়েছে। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, সে কিছু জানে না।। নাবিলা যদি ক্যাপাসে না থাকে, গাড়িতে না থাকে তবে গেল কোথায়!! এ তো দেখছি আরেক বিপদে পড়লাম।

রাস্তার আশেপাশে যত অলিগলি ছিল সব জায়গায় খুজা শেষ। ওর খোজ মিলছে না! গেল কোথায় এই মেয়ে! এখানকার রাস্তা অবধি ঠিকমত চিনে কিনা ডাউট আছে, সেই মেয়ে কোথায় গেল? বাসায় কল করলাম আম্মু জানালো নাবিলা নেই ! তাহলে ও কোথায়! তুই কোথায় নাবিলা!!

এদিকে মাগরিবের আযান দিবে তাও খুজে পাচ্ছিনা। দোকান কয়েকটা জানালো এমন একটা মেয়ে নাকি এই রাস্তায় দেখেছিল। কিন্তু রাস্তার প্রায় সব খোজা শেষ!! আমিও ড্রাইভার নিয়ে বেরিয়ে পড়েছি নাবিলাকে খুজতে…আমারই ভুল হয়েছে ওকে ছাড়তে! যদি একা না ছাড়তাম তাহলে এমন হতো না…আজকালকার ছেলেরা কত্ত খারাপ, না জানি ওদের খপ্পড়… না!!খারাপ চিন্তা করা যাবে না! কি করলাম আমি! আল্লাহ এ কোন ভুল করলাম ওকে একা ছেড়ে…………..

.

.

মশার কামড়ে পা দুটো শেষ হয়ে যাচ্ছে! উফ কী মশা! চোখ কচলাতে কচলাতে চোখ খুলার চেষ্টা করি। হাই তুলে দেখি কটেজে একটা সাদা বাতি জ্বলছে। কিন্তু এখনো কটেজে কেউ নেই। সিচুয়েশন বুঝার চেষ্টা করছি আসলে এখন কি সন্ধ্যা নাকি শেষ রাতের প্রহর। খেয়াল হলো, আমি রাগ করে এখানে এসেছিলাম আর ঘুম! তার মানে এখন সন্ধ্যা। ইয়া আল্লাহ !! সেই দুপুরে বেরিয়েছি এখন সন্ধ্যা! বাড়িতে সবাই টেনশনে শেষ হচ্ছে!!

ফোন সাথে নেই গাড়িতেই ফেলে এসেছি। কটেজ ছেড়ে হাটা দিচ্ছি বাড়ির দিকে। এ জায়গাটা খুব নিরিবিলি। নিস্তব্ধ, কোনো পিন পড়ার শব্দ নেই। রাস্তায় লাইট থাকাতে রাতের অন্ধকারে হেটে যেতে কষ্ট হয়নি। মাথায় ঘোমটা দিয়ে হেটে যাচ্ছি। কিছুদূর আসতেই ব্যস্ত সড়ক নজরে পড়ে যেটা দিয়ে ক্যাপাসে এসেছিলাম। হাতে টাকাও নেই যে ভাড়া দিব। পড়ে একটা রিক্সা ঠিক করলাম, এটা বলে যে বাড়িতে নেমেই নগদ টাকা দেওয়া হবে। আমি নির্বিঘ্নে রিকশায় উঠে রওনা দিলাম। প্রায় চল্লিশ মিনিট পর বাড়ির সামনে এসে পৌছলাম।

কলিংবেল বাজাতেই দেখি খালামনি দিশেহারার মতো তাকিয়ে আছেন। আমাকে দেখে কিছু বলতে নিবেন তার আগেই আমি বললাম-

-খালামনি পরে জিজ্ঞেস করো। আগে আমাকে কিছু টাকা দাও রিকশার ভাড়া দিব।

খালামনি চটপট করে রুম থেকে পার্স এনে ভাড়া চুকিয়ে দিলেন। আর দরজা লাগিয়েই মাকে ডাক দিয়ে বললেন-

-রোকসানা, ফিহা এসে রে।

মা রুম থেকে এসেই নানারকম প্রশ্ন করছেন। কথার মাঝে মাকে বাধা দিয়ে খালামনি রাগী গলায় বললেন-

-ফিহা তোকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেই, তার মানে এটা না তুই এত দেরি করে বাড়ি ফিরবি! সভ্য ঘরের মেয়েরা এতক্ষন বাইরে থাকেনা সেটা জানিস না!
-মাফ চাই খালামনি। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি না আসলে সাঈদ ভাইয়ের ক্যাপাস থেকে একটু দূরে কটেজে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
-তুই ওখানকার কটেজে গিয়েছিলি!!
-হ্যাঁ খালামনি..মানে একটু ঘুরতে গিয়েছিলাম আরকি…
-ফিহা তুই কি জানিস ওটা যে ডাকাতের আস্তানা ! এখন যদি তোর কোনো অমঙ্গল হতো তখন কী হতো ! জবাব আছে!
-কিন্তু ওখানে কেউ ছিলনা…
-তোর কপাল ভালো কেউ ছিলনা। নাহলে খারাপ কিছু ঘটিয়ে অপহরন করে ফেলত।এখন যা হাত মুখ ধুয়ে নিচে খেতে আয়।
-আচ্ছা খালামনি।

রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলাম নিচে।সাঈদ ভাই নাকি এখনো আসেনি। আমায় খুজতে খুজতে নাকি অন্য শহরের প্রান্তে চলে গিয়েছেন। একটু আগে আমার বাসায় আসার খবর খালামনি ভাইকে জানিয়েছেন। আজ উনি বাসায় এসে একশো বার আমার পায়ে ধরে মাফ চাইলেও আমি ক্ষমা করব না! সোজাসাপ্টা কথা!

রুমে এসে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে ঘুমিয়ে আছি। অন্যসময় পুরো রুম অন্ধকার করে ঘুমালেও এখন খালামনি নিজ হাতে ড্রিমলাইট লাগিয়ে জ্বালাতে বলেছেন। রুমের দরজা লক না করে ঘুমানোর প্রবল নিষেধাজ্ঞা জারি করে দিয়েছেন খালামনি। যদিও এখন আর কোনো ভয়-ঝামেলা নেই। রাতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। ফ্যানের বাতাসে শীতশীত লাগছে। গায়ে অবশ্য কাথা দিয়েই ঘুমিয়ে আছি।

কিছুক্ষণ পর মনে হচ্ছে পায়ের কাছে কেউ কাথা টেনে ধরছে। আমি পাশ ফিরিয়ে উঠে বসি। দেখি সাঈদ ভাই আমার পায়ের কাছের কাথাটা ধরে ফুপিয়ে কান্না করছেন! আমি আশ্চর্য ! উনি কেন এইরাতে পায়ের কাছে এসে কান্না করবেন? হয়তো মাফ করবোনা দেখে আগে থেকে ড্রামা স্টার্ট করছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম-
-প্লিজ আমি এসব ঢংফং দেখতে চাইনা! উঠে যাও। আমাকে ঘুমাতে দাও! আমি ঘুমাব।।

সাঈদ এখনো ওভাবেই মাথা নুয়িয়ে কান্না করছেন। আমি উঠে কাথা রেখে উনাকে নিয়ে বিছানায় বসলাম। বসে বললাম –

-কি হয়েছে? এভাবে চুপচাপ ফুপিয়ে কান্না করছো কেন?
-………………………………………………
-আহা চুপ করে আছো কেন? বলো?
-………………………………………………
-তুমি কি প্রশ্নের জবাব দিবে না?
-……………………………………………..
-এক কাজ কর! তুমি বসে বসে কাদো আমি যাই!
-I’m sorry…..Nabila..
-আমাকে দেমাক তো ভালোই দেখাও! এখন কেন সরি বলছো!
-প্লিজ……
-হইছে এখন চুপ, কোনো কান্না না। চুপ। জুনায়েদ সাঈদের কান্নামাখা মুখ মানায় না, সে এ্যাটিটিউড নিয়ে থাকবে।এখন উঠো।

সাঈদ ভাইকে উঠতে বললে উনি আমাকে টান দিয়ে বিছানায় শুয়ে নিলেন। কাথা টেনে দিতে নিয়ে আমাকেসহ ঢেকে নিলেন। আমি ভাইয়ের এমন কিছু কর্মকান্ডে খুব অবাক!! সাঈদ ভাই আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার গলায় মুখ ডুবিয়ে চোখের পানি ফেলছেন। গলা যে আমার উনার চোখের পানিতে ভেজাভেজা হয়ে যাচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি। উনি এখনো নিশ্চুপে কান্না করছেন। আমি উনার চুলে হাত ডুবিয়ে বলি-

-কি হয়েছে? আজ তুমি জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছো?
-প্লিজ নাবিলা…আর কখনো তোর সাথে রুড বিহেব করবো না…প্লিজ আমাকে এভাবেই থাকতে দে….
-সাঈদ ভাই তুমি কখনো এরকম আচরন করোনি।। কি হয়েছে তোমার !!
-আমি অনেক খারাপ নাবিলা! আমাকে মাফ করে দিস…

সাঈদ আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছেন। উনার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে উনি ভয় পেয়েছেন। আমি একহাত পিঠের উপর রেখে বুলিয়ে দিচ্ছি, আরেকহাত মাথায় ডুবানো। সাঈদ ভাই দুহাতে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছেন, আমার গলায় উনি মুখ লুকানোতে উনার নেওয়া গরম নিঃশ্বাস অনুভব করছি। আমি উনার মাথায় ঠোট ছুয়িয়ে দিলাম। আর বললাম-

-তুমি এ অবস্থায় পাগলামি করলে খালামনি দেখো কালকেই বিয়ে করিয়ে দিবেন।
-সমস্যা নেই।
-প্রপোজ করার সাহস নেই আবার বিয়ে করবে!
-নাবিলা..
-হুম,
-প্রপোজ করা কি তোর কাছে এতই জরুরী?
-না তা কেন হবে। কিন্তু সবাই তো প্রপোজটা করে।
-আমি নাইবা করলাম।
-তোমার ইচ্ছে। কিন্তু আমি কষ্ট পেয়েছি তোমার ওই কথায়, যখন তুমি আমাকে বন্ধুদের সামনে বোন বলে পরিচয় দিয়েছো।
-sorry…….
-সরি দিয়ে কি সব ঠিক হবে?
-জানি না…
-চুপ, উঠো এখন যাও রুমে যাও। বিয়ে হোক তারপর একসাথে থাকব।
-একটু থাকি।
-না। উঠো।

সাঈদ ভাই আমাকে ছেড়ে শোয়া থেকে উঠে রুম থেকে চলে গেলেন। আমিও আবার ঘুম নিয়ে পাড়ি দিলাম।

-চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *