মিশে আছো আমার অস্তিত্বে

মিশে আছো আমার অস্তিত্বে !! Part-16

আকাশ এখন তৃষার বাবার সামনে দাঁড়িয়ে আছে,,তৃষার বাবা চুপচাপ বসে আছে সোফার উপর।আকাশ কোনো রকম ভনিতা না করে বলে উঠলো-;
-:তৃষা কোথায় বাবা?
-:কি ব্যাপার তুমি এখানে কি করছো??
-:আমার উত্তর এটা নয় বাবা,,তৃষা কোথায় প্লিজ বলুন।
-:একজন দুশ্চরিত্রা মেয়ের খোঁজ তোমাকে করতে হবে না।
-:বাবা!!প্লিজ এমন বলবেন না।আ..আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।
-:ওও প্রমাণ দেখার পর নিশ্চয় বুঝতে পেরেছো।
নাজমুল শেখের এমন কথায় আকাশ চুপ হয়ে গেল।মাথা নিচু করে বলে উঠলো-;
-:আমার অনেক বড়ো ভুল হয়েছে তৃষা কে অবিশ্বাস করে প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিন।তৃষা কোথায় প্লিজ আমাকে বলুন?আমি ওকে আবার হারাতে চায় না।
নাজমুল শেখ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন-;
-:এই ব্যাপারে তৃষা কাউকে বলতে বারণ করেছে।
আকাশ তৃষার বাবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো,,তারপর তৃষার বাবার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে উঠলো-;
-:প্লিজ বাবা বলুন আমার তৃষা কোথায়?আমি যদি দেরি করে ফেলি তবে ওকে আমি সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলব,,আমাকে একবার বলুন ও কোথায়,,ওকে যে আমি খুব ভালোবেসে ফেলেছি এ কয়দিনে।আসলে রিনার আনার প্রমাণে আমি এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে সত্যি মিথ্যে যাচাই করতেই ভুলে গিয়েছিলাম।
বিশ্বাস করুন আমি কখনো ভাবতেই পারিনি যে রিনা আর তার বাবা এতটা নিচু মানসিকতার মানুষ হবে।বাবা আমাকে একবার বলুন তৃষা কোথায় প্লিজ।
নাজমুল শেখ এক প্রশান্তির হাসি দিয়ে বলে উঠলেন-;
-:তৃষা এয়ারপোর্টে গিয়েছে আর এক ঘন্টার মধ্যেই ওর ফ্লাইট,,কানাডা যাওয়ার।বাবা যদি তুমি ওকে নিজের করে রাখতে চাও সারাজীবনের জন্য তাহলে এক্ষুনি বেড়িয়ে পড়ো।
আকাশ ছলছল চোখে মুচকি হেসে নাজমুল শেখের দিকে বলে উঠলো-;
-:আমি এক্ষুনি যাচ্ছি বাবা আর আমি আপনার মেয়েকে নিয়েই ফিরবো।
এই বলে আকাশ বেড়িয়ে পড়লো এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।
এয়ারপোর্টের ভিতর একদম কর্নারের একটা সিটে তৃষা বসে আছে।চোখ থেকে তার অনবরত পানি পড়ছে,,বারবার হাত দিয়ে পানিগুলো মোছার ব্যর্থ চেষ্টা করছে সে কিন্তু অবাধ্য অশ্রু বিন্দু গুলো পড়তেই থাকছে বাঁধাহীন ভাবে।আর একঘন্টা!!তার পর‌ই তাকে এই দেশ ছেড়ে,,তার পরিবার ছেড়ে আর..আর আকাশকে ছেড়ে চলে যেতে হবে সারাজীবনের মতোন।ভাবতেই কান্নাগুলো আবার দলা পাকিয়ে আসছে কিন্তু সেটা গলা পর্যন্ত‌ই সীমাবদ্ধ থাকছে‌ সেগুলো এখন আর বাইরে বেরিয়ে আসছে না।
আকাশ খুব তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাচ্ছে কারণ তার গন্তব্যে এখন তাকে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে হবে নইলে সে তার সবচেয়ে কাছের মানুষকে হারিয়ে ফেলবে চিরতরের জন্য।এয়ারপোর্টের সামনে গাড়ি থামিয়ে সে খুব দ্রুত গতিতে এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকে গেল,, এয়ারপোর্টের ভিতর তৃষাকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু সে কোথাও তৃষাকে খুঁজে পেলো না,, আকাশের মাঝে এখন একটাই ভয় কাজ করছে তৃষাকে সে হারিয়ে ফেললো না তো। তাড়াতাড়ি করে সে চেকিং সেন্টারে গিয়ে সেখানে থাকা এক মহিলাকে জিজ্ঞেস করল-;
-: আচ্ছা কানাডা যাওয়ার ফ্লাইট কি টেক অফ করে নিয়েছে??
-:না স্যার আর আধঘন্টার মধ্যেই ফ্লাইট টেক অফ করবে।
-: ও থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ সো মাচ।
এই বলে আকাশ হন্তদন্ত হয়ে আবার তৃষাকে খুঁজতে লাগলো,,,হঠাৎ তার নীল রঙের কুর্তি পরা একজন মেয়ের উপর নজর আটকে গেল,, হ্যাঁ এটাই সেই কাঙ্খিত ব্যক্তি যাকে আকাশ পাগলের মতন এতক্ষন খুঁজছিল।আকাশ উপরের দিকে তাকিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আর মনে মনে আল্লাহ্ কে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানালো তার প্রিয় মানুষটিকে খুঁজে দেওয়ার জন্য। আকাশ আস্তে আস্তে গিয়ে তৃষ্ণার পাশে বসে বলতে লাগলো-;
-:একটা ভুলের জন্য এত বড়ো শাস্তি দিতে যাচ্ছিলে আমাকে??
হঠাৎ চেনা মানুষের কন্ঠ এমন একটা পরিবেশে পেয়ে তৃষা অবাক হয়ে গেল,,অবাকের মাত্রাকে আরও এক কাঠি উপরে ঠেলে দিয়ে আকাশ আবার বলে উঠলো-;
-:আমাকে কি একটি বারের জন্যও ক্ষমা করা যায় না তৃষা??
এবার তৃষা পাশে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেল। আকাশ!!হ্যাঁ সত্যিই এটা আকাশ। কিন্তু সে এখানে কি করে এলো?? তৃষা যে এখানে তা আকাশের জানার কথা নয় কারণ একমাত্র তার বাবা ছাড়া আর কেউ জানে না এই বিষয়ে।তাহলে তার সাথে এই বিশ্বাসঘাতকতা কি তার বাবাই করল?? তৃষার মনে তৈরি হওয়া প্রশ্নগুলো হয়তো কোন উপায়ে আকাশ বুঝতে পেরে গিয়েছিল তাইতো সে পরক্ষণেই বলে উঠলো-;
-: হ্যাঁ তুমি এখানে আছো এটা আমি বাবার কাছ থেকেই জানতে পেরেছি।আর এটাও জানতে পেরেছি যে তোমার এই ছোট্ট মাথায় কি ভয়ানক কুবুদ্ধি খেলা করছিল আমার থেকে সারা জীবনের জন্য দূরে চলে যাওয়ার।
আকাশের কথায় তৃষা আকাশের দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠল-;
-: এটা আমার পার্সোনাল ম্যাটার। আর আপনার লাইফ থেকেই বা আমি কেন চলে যাব আর তাছাড়াও আমি কি কোনোদিন‌ও ছিলাম আপনার লাইফে?? হ্যাঁ কিছুটা সময় ছিলাম আপনার লাইফে কিন্তু সেই সময় টুকু আপনার জীবনে একটা কালো অধ্যায় হিসাবে ছিলো,, আর আজ সেই কালো অধ্যায়ের শেষ দিন কারণ আপনাকে মুক্তি দিয়ে সারা জীবনের মতন চলে যাচ্ছি। আপনার পছন্দ মতন কোন সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করে নেবেন।
তৃষার কথা আকাশ বেশ রেগে গিয়ে বলে উঠলো-;
-: তুমি আগে বাসায় চলো,, একটা ভুলের জন্য তুমি আমাকে বেশ বড়োসড়ো শাস্তি দিতে যাচ্ছিলে,, আরেকটু দেরী করলে তোমাকে হয়তো সারা জীবনের মতন হারিয়ে ফেলতাম,,চলো এক্ষুনি আমার সাথে।
এই বলে আকাশ তৃষার হাত ধরে উঠে দাঁড়াতেই,,তৃষা এক ঝটকায় আকাশের হাত নিজের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলো-;
-: আমি আপনার সাথে কখনোই যাবনা,, আর আমি আজ এই ফ্লাইটেই কানাডা যাচ্ছি।আর এইটাই আমার শেষ কথা।
আকাশ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে উঠলো-;
-: তাহলে আমারও শেষ কথা শুনে নাও,,তুমি কোথাও যাচ্ছো না,,তুমি এখন আমার সাথে আমার বাসায় যাবে আর এটাই আমার শেষ কথা।
-: আচ্ছা তাই নাকি??
-: হ্যা তাই দাঁড়াও তুমি এমনি এমনি শুনবে না।
এই বলে আকাশ তৃষাকে কোলে তুলে নিল,, আকাশের এমন কাজে তৃষা চেঁচিয়ে বলে উঠলো-;
-: আকাশ কি করছেন কি ছারুন,,এটা এয়ারপোর্ট আপনার বাসা নয়।
-: হ্যাঁ আমিও জানি সুইটহার্ট,,এটা এয়ারপোর্ট আমার বাসা নয়,, তাইতো নিজেকে সংযত রেখেছি এখনও।
এই বলে আকাশ তৃষার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো আর তৃষাকে নিয়ে এয়ারপোর্টের বাইরে বেরিয়ে গেল।
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]