ভাড়াটে বউ

ভাড়াটে বউ —পর্ব –০৯

এই বলে রিয়ান রাইসার হাতটা ধরে ওকে বিছানার
উপরে নিয়ে বসায়, তারপর টেবিলের উপর
থেকে খাবারটা নিয়ে রাইসার মুখের সামনে খাবার
তুলতেই মেয়েটি নিজের চোখের
জলগুলোকে হাজারো আটকাতে চেয়ে ও
পারেনি। রিয়ান রাইসার চোখে পানি দেখে এক
প্রকার রাগান্বিত স্বরে বললো– এতে কান্নার কী
হলো, কেউকী কখনো খায়িয়ে দেয়নি।
— না, কখনো কেউ খায়িয়ে দেয়নি।
— আপনার বাবা- মা ও কখনো আপনাকে খায়িয়ে
দেয়নি।
—- বাবা- মা থাকলে তো খায়িয়ে দিবে।
— এই কী বলছেন আপনি।
— ইয়ে না মানে কিছুনা, আসলে ইমোশন হয়ে
গেছি তো একটু তাই আবোলতাবোল বলছি ,
যাইহোক মুখের সামনেই কী খাবারটা ধরে
রাখবেন খাওয়াবেন না?
রাইসার আবদারে,চলাফেরায়য়,আর কথাবার্তায় রিয়ান
বারবার রিয়াকে খুজে পাচ্ছে, একটুকরা সুখ পাচ্ছে,
যেই সুখটা তিন বছর আগে তার থেকে হারিয়ে
গিয়েছিলো।
কোনো কথা না বলে রিয়ান সমস্ত জড়তাকে দূর
করে রাইসাকে খায়িয়ে দিলো।
তারপর বললো–আপনে ঘুমান।
—- আপনে?
— আমার কথা বাদ দিন, আর রাত আমার জন্য বড্ড বেশি
যন্ত্রনাদায়ক ও আমাকে ঘুমোতে দেয়না।
—- আপনার কীসের এতো কষ্ট।
–কষ্ট আর আমি, হা,হা আসলে আমার কোনো কষ্ট
নেই শুধু হারিয়ে যাওয়া একজন মানুষকে ফিরে
পাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছা হয় আর কী বলুন তো,
রাত যত গভীর হয় আমার এই খামখেয়ালী ইচ্ছাটা
ক্রমশ আর ও বেড়ে যায়।
— কাকে হারিয়ে ফেলেছেন যে ফিরে
পেতে চান?
রিয়ান তখন রিয়ার ছবিটাকে ইশারা করে বললো— ওই
যে ফ্রেম বন্ধ মানুষটাকে যে একগাল হাসি নিয়ে
আমার দিকে চেয়ে আছে ।
রাইসা অবাক দৃষ্টিতে তখন রিয়ার ছবিটার দিকে তাকিয়ে
রইলো, আর নিজের অজান্তে বলে ফেললো–
তুমি অনেক লাকি, অনেক, অনেক বেশি।
রাত ১ টায় রাইসা শুয়ে পড়ে, বাইরে তখন প্রচন্ড
বাতাস বইছিলো, আর সেই বাতাস জানালা দিয়ে
প্রবেশ করে রাইসার শরীরকে বারবার শিহরিত
করছে, রিয়ান তখন সোফায় বসে কী যেনো
গভীর চিন্তায় মগ্ন রইলো আর কিছুসময় পর, পর
রাইসার দিকে তাকিয়ে দেখছে ও ঘুমিয়েছে কিনা?
এই ভাবে দেড়টা অবদি পার করার পর হঠ্যাৎ রিয়ান
উঠে দাড়ালো, তারপর ড্রয়ার থেকে এক প্যাকেট
সিগারেট বের করে টেবিলের উপর রাখলো,
অতঃপর আলমারিটা গিয়ে খুললো।রিয়ানকে আলমারি
খুলতে দেখেই রাইসা বুঝতে পারলো, ও কেন
আলমারী খুলেছে,রাইসা উঠে বসলো তারপর
রিয়ানকে জিজ্ঞাসা করলো— আপনে কী এখন
ড্রিংক করবেন?
— তা জেনে আপনার কী করবেন , আর তাছাড়া
আপনে এখন ও ঘুমান নি কেন?
এই বলে রিয়ান ব্যস্ত হয়ে গেলো, মদের বতল
গুলো খুজতে।
ঠিক তখনি রাইসা বললো— আপনে যা খুজছেন
সেটা ওখানে নেই।
রিয়ান রাইসার এরুপ কথায় প্রচন্ড রেগে যায়, ধুম
করে আলমারিটা লাগিয়ে রাইসার কাছে এসে উচুগলায়
বলতে লাগলো– আপনার সাহস কিভাবে হলো,
আমার জিনিসে হাত দেওয়ার, ওগুলো আমাকে দিয়ে
দিন বলছি।
— না, আমি দিবোনা, দেখুন এগুলো খাওয়া…
— সেটআপ জাস্ট সেটাআপ এন্ড প্লিজ আমাকে
ওগুলো দিয়ে দিন।
— আমি বলছিনা, আমি দিবোনা।
— ওকে ফাইন দেওয়া লাগবেনা।আমি এখনি বাইরে
যাবো, বাইরে তো আর আপনে আটকাতে
পারবেননা।
রিয়ানের এরুপ অতিরিক্ত বাড়াবাড়িতে রাইসা একটা মদের
বতল নিয়ে এলো, তারপর রাগান্বিত স্বরে রিয়ানকে
জিজ্ঞাসা করলো– আপনে কী সত্যিই এখন এসব
ছাইপাস খাবেন।
— হ্যা।
— আমি লাস্ট বার জিজ্ঞাসা করছি সত্যিই খাবেন।
— আমি ও লাস্ট এন্ড ফাইনাল আনসার বলছি ইয়েস,
ইয়েস। understand.
রিয়ান কথাটা বলার পর রাইসা মুচকি হাসতে লাগলো,
তারপর বলতে লাগলো– আপনে এটা খাবেন
তাইতো, ওকে দেখি আপনে খান কী করে।
এই বলে রাইসা মদের বতলটা খুলে বললো —
আপনে যদি এটা খান তাহলে আমি ও খাবো।
রিয়ান অট্টহাসি হেসে বললো,— কী! আপনে
খাবেন, দেখি সাহস থাকলে খেয়ে দেখান তো।
— আমি কিন্তু সত্যি সত্যিই খাবো।
— খান না, আপনাকে মানা করছে কেউ।
কথাটি বলা মাএই রাইসা মদের বতল টা খুলেই
একডোক মুখে নিয়ে নিলো,অতঃপর না খেয়ে
গালদুটো ফুলিয়ে অবাকভাবে রিয়ানের দিকে
তাকিয়ে রইলো।
রিয়ান রাইসার এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে
গেলো– একি আপনে সত্যি,সত্যিই,….. নিন এবার
গিলুন তো দেখি খেতে পারেন কিনা।
— রাইসা রিয়ানের কথাগুলো শুনা মাএই মুখে যেটুকু
মদ নিয়েছিলো তা পুরোটাই রিয়ানের মুখে ছুড়ে
ফেললো।
—– ইয়াক কী বিশ্রী গন্ধ, কী বিশ্রী স্বাদ
আপনে এটা খান কী করে?
— হে ইউ কী করলেন আমার মুখে ছুড়ে
মারলেন তা ও আবার আপনার মুখের টা।
এই বলে রিয়ান প্রচন্ড ক্ষেপে রাইসার হাত টাকে
চেপে ধরতেই দেখে রাইসা হাসছে।
–একি আপনে হাসছেন কেন?
রাইসা রিয়ানের শার্টের কলার টেনে ধরে বলে–
এই হট টেম্পারেচার আমার মাথাটা কেমন জানি বনবন
করে ঘুরছে।
— এই এসব কী বলছেন,?
— আমি, আমি এটা খাবো, এই বলে রাইসা বতলটা নিয়ে
গড়গর করে খেতে লাগলো, রিয়ান রাইসার হাত
থেকে বতলটা নিয়ে কোনো ভাবে ওকে
সামলালো,বতলটা নিতেই অমনে অবুঝ শিশুর মতো
রাইসা রিয়ানকে শক্ত করে দুহাত দিয়ে ধরে বলে
উঠলো— এই ছেলে তুই এমন কেন, সারাদিন
এতো রাগ করিস কেন?
— এ কী আপনে আমাকে তুই বলছেন, গেছে,
গেছে কেন যে খেতে বললাম, এ তো দেখি
সত্যিই, সত্যই খেয়ে ফেললো.
— হি,হি।
,—- হাসছেন কেন পাগলের মতো।
রাইসা রিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো— হাসবোনা,
এই তুই জানিসনা বউকে আপনে বলতে নেই তুমি
বলতে হয়।
— না, একে আর বেশিক্ষন এভাবে রাখা যাবেনা,না
হলে পরে বিপদ পড়তে হবে।
রাইসা রিয়ানের গালে আলতো করে একটা থাপ্পড়
দিয়ে, খিলখিল করে হাসতে লাগলো, রিয়ান ও তখন
ওকে কন্ট্রোল করার জন্য ও পাগলের মতো
হাসতে লাগলো।
রাইসা বাচ্চাদের মতো কাঁদতে — কাঁদতে তখন
বললো—এই টেম্পারেচার তুই সকালে আমায়
চাউলের বস্তা বলে ফেলে দিয়েছিস এখন তুই
আমায় কোলে নিবি।
-অ্যাঁ।
—- অ্যাঁ নয় হ্যা নাহলে আমি, আমি।
–আপনে কী করবেন?
— আমি, হিহি, আমি এখন সোজা মায়ের কাছে চলে
যাবো।
— এই না, নিচ্ছি কোলে নিচ্ছি।
রিয়ান বিরক্তিকর ভাবে নিজেই নিজেকে বলতে
লাগলো — বুঝ রিয়ান চাউলের বস্তা বলায় এখন কতটা
কষ্ট করতে হচ্ছে
এই বলে রিয়ান রাইসাকে কোলে নিলো, রাইসাকে
কোলে নেওয়া মাএই রাইসা উচ্চস্বরে হাসতে
লাগলো আর বাচ্চাদের মতো ন্যাকামি করতে —
করতে বললো–+ এই, এই ছেলে তোার
কীসের এতো কষ্ট তুই কেন এসব খাস।
রাইসার প্রশ্নটা শুনে রিয়ান অনেকক্ষণ রাইসার দিকে
তাকিয়ে রইলো, তারপর বললো– জানিনা, ব্যস
বুকের মাজখানটায় ব্যাথা করে বিধায় খাই।
— একটু তোর কষ্টের ভাগটা আমায় দিবি।
রিয়ান কোনো উওর দিলো না শুধু বারবার রাইসার
দিকে তাকিয়ে রইলো, তারপর রিয়ান রাইসাকে গিয়ে
বিছানায় শোয়ালো, — দেখুন আপনে….
কথাটি বলা মাএই রাইসা একটা থাপ্পড় দিয়ে বললো– এই
ছেলে আবার আপনে।
— হিহি, তুমি। তা আমি বলিকি তুমি একটু এখন ঘুমা ও।
আর হ্যা সকালে তোমার সাথে আমি কথা বলবো।
ঠিক আছে।
— ওকে আমি ঘুমাই।
রাইসা রিয়ানের কথায় মানিয়ে যাওয়ায় রিয়ান দীর্ঘনিশ্বাস
ফেলে বলে উঠলো– যাক বাবা বাচলাম।
কিন্তু পরক্ষনে রিয়ানের দীর্ঘনিশ্বাসটা নিস্তব্ধ
হয়ে যায়, নিচের দিকে তাকাতেই রিয়ান দেখে রাইসা
ওর হাটুতে মাথা রেখে ওর হাতটাকে শক্ত করে
আকড়ে ধরে ঘুমের দেশে ডুব দিয়েছে।
বাইরে তখন ঝিঝিপোকার ডাক, আর হিমহিম বাতাস,
নিস্চুপ পরিবেশ রিয়ানকে ও বাধ্য করলো রাইসার
এভাবে ঘুমিয়ে থাকাটাকে উপভোগ করতে। রিয়ান ও
তখন মায়ার দৃষ্টিতে রাইসার মুখের দিকে চেয়ে
রইলো, বাইরে তখন আকাশে চাঁদেরহাট
বসেছিলো আর সেই চাদের হাটের চাদটার
আলো জানালা দিয়ে একদম রাইসার মুখের উপর
এসে পড়লো, সেই চাদের আলোয় যেনো
মেয়েটিকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে, আর
এতটাই সুন্দর লাগছিলো যে কিছুসময়ের জন্য রিয়ান
হয়তো নিজের বাস্তবতার কাছ থেকে কল্পনা
আকাশে ডুব দেয়, যেই আকাশ মানুষকে
একটুকরো সুখ দেয় আর মানুষ ও সুখ বিলাসী
হয়ে সেই সুখটাকে হাত পেতে নেয়।
( চলবে)