ভাড়াটে বউ

ভাড়াটে বউ —পর্ব –০৬

—- জ্বি বলুন।
— না, আসলে আপনার কথা গুলো শুনে আমার মনে
হচ্ছে আপনে যেটা আসলে আপনে সেটা নয়?
— মানে?
— না কিছুনা, আসলে মাঝে- মাঝে আপনাকে আমার
খুব রহস্যময় লাগে, খুব।
রিয়ানের এরুপ বক্তব্য শুনে রাইসা আমতাআমতা
করতে লাগলো। ঠিক সেই সময় মিথিলা রিয়ানের
শার্ট পিছন থেকে টেনে ধরে বলে উঠলো—
কী হচ্ছে এসব ভাইয়া?
— কে, ও মিথি।
— হুম, তুমি এখানে কী করছো?
–না, মানে…
—- এতো মানে, মানে না করে এখান থেকে যাও
তো আমি এখন ভাবি কে সাজাবো।
মিথিলার কথায় রিয়ান কোনো জবাব না দিয়ে বলতে
গেলে এক প্রকার পালিয়ে চলে যায়।
রিয়ান চলে যাওয়া মাএই মিথিলা রাইসার রুমে ঢুকেই
বিছানার উপর তিনটে বক্স আর একটা শাড়ি রেখে
অতঃপর রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। মিথিলাকে রুমে
ঢুকতে দেখেই রাইসা ঔষুধের পাতাটি বালিশের
তলে লুকিয়ে ফেলে, অতঃপর বিছানার উপর রাখা
গহনার
বক্সগুলো আর শাড়িটা দেখে একটু অবাক ভাবে
মিথিলা কে উদ্দেশ্য করে রাইসা বলে উঠলো—
এসব কী মিথিলা।
— কেন ভাবী , শাড়ী, গহনা।
— সে তো আমি ও দেখছি। কিন্তু এতো গরজিয়াছ
শাড়ী, আবার এতো গহনা কার জন্য।
—- কেন তোমার জন্য ভাবি।
— দেখ আমি এতো গহনা, গরজিয়াছ শাড়ী পড়াতে
অভ্যস্ত নয়।
— তো কী হয়েছে ভাবী, এখন থেকে
অভ্যাস কর। বিকজ তোমাকে এগুলোই পড়তেই
হবে বড় মায়ের কড়া নির্দেশ।
— পড়তেই হবে?
— হুম।
— কী আর করার পড়া ও তোমার যা ইচ্ছা তাই কর।
— Thank you ভাবি। এই বলে মিথিলা বিছানার উপর
থেকে শাড়ীটা নিয়ে রাইসার হাতে দদিয়ে
বললো,
— এই নাও ভাবী এটা পড়ে আস ও ।
— ঠিক আছে।
রাইসা ওয়াশরুমে গিয়ে শাড়ীটা পড়ে আসে।
রাইসা যখন ওয়াশরুম থেকে শাড়ীটা পড়ে বের হয়
মিথিলা তখন রাইসাকে দেখে পুরো থ হয়ে যায়।
অবশ্য হবেই বা না কেন। একটি মায়াবী চেহারাযুক্ত
মেয়ে যার হরিনের মতো চোখ, রক্ত জবা
ঠোট,তার উপর ঠোঁটের ডানপাশে একটি কালো
তিল আর মাথায় মেঘবরণ কেশ, সে যদি একটি গাড়
নীল গোল্ডেন পুথি দিয়ে কাজ করা
শাড়ী পড়ে, তাহলে তো তার দিকে তাকিয়ে
থেকে যে কেউই এক যুগ ও হয়তো পার করে
দিতে পারে।
— কী গো ননদী আমার এমন ভাবে কী
দেখছো?
— উফ! ভাবী এই শাড়ীটা পড়ে তোমাকে
এতোটাই সুন্দর লাগছে যে আমিই তোমার
প্রেমে পড়ে গেলাম, এবার গহনা পড়ালে আর
সাজালে তোমাকে না জানি কত সুন্দর লাগবে,
দেখবে আজকে ভাইয়া তোমার দিক থেকে
চোখ ফেরাতেই পারবেনা।
— হ্যা তোমার ওই হট টেম্পারেচার ভাই আগে
আমার দিকে তাকালে তো চোখ ফেরাবেনা।
— তাকাবে,ভাবী তাকাবে। দেখইনা তোমাকে কত
সুন্দর করে সাজাই।
মিথিলা রাইসাকে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসিয়ে,
প্রথমে গহনা পড়াতে লাগলো, তারপর নাকে নত
পড়ালো, চোখে কাজল আর ঠোঁটে লাল-খয়রী
লিপস্টিক, আর চুল খোপা করে তার মধ্যে ফুল
গেঁথে দিলো। তারপর রাইসার মুখটাকে হাত দিয়ে
আলতো করে স্পর্শ করে মিথিলা বলে উঠলো–
দেখ ভাবী কেমন সাজালাম তোমায় ?
রাইসা আয়নার মধ্যে নিজের চেহারাটা দেখে, একটু
গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো— আসলে মিথিলা
আমি না এতো সাজগোজ একদমেই পছন্দ করিনা,
আমার কেমন জানি অস্বস্তি ফিল হচ্ছে।
— এতো সুন্দর করে সাজালাম আর তুমি এই বলছো
ভাবী, একটা দিনেই তো আর তাছাড়া তুমি তো নতুন
বউ, তোমাকে তো সাজতেই হবে।
— দূত ভালো লাগেনা।
— এসব বললে আর হবে,
এই বলে মিথিলা হাসতে – হাসতে নিচে বসে
রাইসাকে জুতো পড়াতে লাগলো।
রাইসা তখন একটু লজ্জাকর ভাবে মিথিলাকে
বললো— মিথিলা কী করছো তুমি?
— ও কিছুনা ভাবী তোমাকে জুতোটা পড়িয়ে
দেই তবেই তো সাজটা পারফেক্ট হবে।
এই বলে মিথিলা রাইসাকে জুতা পড়াতে লাগলো, রাইসা
তখন মিথিলাকে ভয়ে- ভয়ে বলে উঠলো— মিথিলা,
আমি না উচু জুতো পড়ে হাটতে পারিনা।
এটা না পড়িয়ে অন্য একটা নরমাল জুতো পড়ালে
হয়না?
— আরে কিছু হবেনা ভাবী আমি আছিনা ধরে –
ধরে নিয়ে যাবো। আর তাছাড়া পড়ে যাও যদি তাহলে
ভাইয়া আছেনা।
— অ্যাঁ।
— অ্যাঁ নয় বলো হ্যা সিনেমাতে দেখোনা নায়িকা
পড়ে যেতে লাগলে নায়ক এসে তখন ধরে। উফ!
কী রোমান্টিক সিন।
— কিন্তু মিথিলা এটা সিনেমা নয় বাস্তব জিবন, আমি
সত্যিই উচু জুতো পড়ে কমফোর্টেবল নয়।
— ও কোনো সমস্যা নয় পড়ে যেতে লাগলে
ভাইয়া এসে তোমাকে ধরবে। আর পারলে প্লিজ
ইচ্ছে করেই পড়ে যেও।
— মিথিলা, আমিই মরছি টেনশনে আর তুমি আমার সাথে
মজা করছো।
— আচ্ছা স্যরি, ভাবী এখন
চলো, নিচে চলো সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা
করছে।
— যাবো?
— হুম। তো কী তুমি থাকবা।
— কিন্তু জুতোটা চেন্জ করবোনা।
— ওফ ভাবি চলোতো বললাম না আমি আছি।
— আমি কিন্তু সত্যিই হাটতে পারবোনা, আমাকে
কিন্তু ধরে নিয়ে যেতে হবে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
এই বলে মিথিলা রাইসাকে ধরে- ধরে উপর থেকে
নিচ অবদি নিয়ে আসলো। নিচে আসতেই মিথিলা
একটু অবাক হয়ে গেলো, কেননা পুরো
ড্রইংরুমে কেউই নেই, একটু বিস্মিত কন্ঠে
নিজেই নিজেকে বলে উঠলো– কী ব্যাপার
সবাই কোথায়? আমিই কী একটু বেশিই দেরি করে
ফেলেছি।
— তাই নয়তো কী হ্যা , যে সাজটা সাজালেইনা
দেরি তো আলবাত হয়েছে। দেখ সবাই হয়তো
যে যার কাজে চলে গেছে।
— আরে কোনো সমস্যা নেই ভাবী, এখনি আমি
সবাই ডাকছি।
এই বলে মিথিলা সামনের দিকে যেতেই দেখতে
পেলো
রিয়ান সোফায় বসে গভীর মনোযোগ সহকারে
পেপার পড়ছে। রিয়ানকে দেখতে পেয়ে মিথিলা
রাইসা দুজনের চোখে- মুখে হাসির জলকানি দেখা
যায়।

মিথিলা রিয়ানকে দেখা মাএই রাইসাকে ছেড়ে
রিয়ানের কাছে গিয়ে ওর হাত থেকে পেপারটা
কেড়ে নেয়। মিথিলার এরুপ কান্ডতে রিয়ান প্রচন্ড
রাগে দাড়িয়ে গেলো, তারপর মিথিলাকে বললো—
– কী হলো মিথি তুই পেপারটা কেড়ে নিলি কেন?
— সারাদিন পেপারে মুখ ঘুচে আর কতদিন থাকবি
ব্রো এবার একটু আমার ভাবীর দিকে তাকা।
— মানে?
রাইসা তখন খিলখিল করে হাসতে- হাসতে রিয়ানকে
বলে উঠলো
— হাই সোয়ামি।
রাইসার
গলার আওয়াজ রিয়ানের কানে আসতেই রিয়ান সামনে
দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো সিড়ির পাশে
রাইসা দাড়িয়ে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
রিয়ান রাইসাকে নতুন রুপে কিংবা এতো সুন্দর সাজে
দেখে ও ভালো করে ওর দিকে তাকালো না বরং
মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো — এসব
কী হচ্ছে মিথি?
— কী হচ্ছে মানে, তোর জন্য দেখ
ভাবীকে আমি এতো সুন্দর করে সাজালাম আর তুই
কোথায় প্রশংসা না করে বলছিস কী হচ্ছে এসব?
মিথিলার কথায় রিয়ান তখন হাসতে- হাসতে বলে
উঠলে– মিথি কামওন তুই বোধ হয় ভুলে গেছিস
পেত্নীকে যতই সুন্দর করে সাজায় না কেন
পেত্নীকে পেত্নীই লাগে।
রিয়ানের এমন মন্তব্যে রাইসা প্রচন্ড ক্ষেপে যায়,
এতটাই ক্ষেপে যায় যে কিছুক্ষণের জন্য ও
ভুলে ও যায় যে ওর পায়ে উচু জুতো আছে,
প্রচন্ড রাগে রিয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে
উঠলো— কী আপনে আমাকে পেত্নী
বলছেন দেখুন আপনার আমি কী হাল করি। এই
বলে দ্রুত হেটে রিয়ানের কাছে আসতেই ঠাস
করে পড়ে যেতে গেলেই, রিয়ান তৎখনাত গিয়ে
ধরে ফেলে।

রিয়ান নায়কের মতো রাইসাকে গিয়ে ধরায় মিথিলা
আনন্দজনক ভাবে বলে উঠলো— ওয়া! ও কী
সুন্দর, ভাইয়া ফাটিয়ে দিয়েছিস পুরোই সিনেমার
মতো।
রাইসা মিথিলার কথা শুনে রিয়ানের চোখে – চোখ
রেখে একটু লজ্জিত স্বরে বলে উঠলো—
Thank you মেরা সোয়ামি।
কথাটি শুনা মাএই রিয়ান — হিহি করে হাসতে- হাসতে
রাইসাকে বললো—-Welcome পেত্নী।
এই বলে হাসিটাকে বন্ধ করে অন্য দিকে তাকিয়ে
নিজের হাত দুটো গুটিয়ে ফেললো, ব্যস আর
রাইসা তখন ঠাস করে নিচে পড়ে যায়।
রাইসাকে পড়ে যেতে দেখে মিথিলা দৌড়ে এসে
রিয়ানকে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো— ভাইয়া
এটা কিন্তু সিনেমাতে হয়না, তুমি দেখি ওকে
বাচানোর বদলে উল্টে ফেলে দিয়েছ।
— উহ মা, কী ব্যাথাটাই পেলাম, মিথিলা এই বক
রাক্ষসের সাথে কথা না বলে আমাকে প্লিজ উঠা ও।
— হ্যা ভাবী।
এই বলে মিথিলা রাইসাকে উঠাতে লাগলো।
রিয়ান তখন মুচকি হেসে- হেসে রাইসাকে বলে
উঠলো— আহারে খুুব বেশি লেগেছে তাইনা,
কী করবো বলুন আপনার মতো একটা চাউলের
বস্তার ভার আমার মতো বাচ্চা কী নিতে পারে?
— কী আমি চাউলের বস্তা, দাড়ান দেখুন কী করি
আপনার, দূত এই জুতোটা আর পড়বোই না, এই
বলে রাইসা জুতো দুটো ছুড়ে ফেলে দেয় ,
তারপর রাগে গাল দুটো ফুলিয়ে আগ্নেয়গিরি
চোখে রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে।
রাইসার এই অবস্থা দেখে রিয়ান উচ্চস্বরে হাসতে
লাগলো, মিথিলা তখন টেবিলের উপর থেকে কফির
মগটা নিয়ে আসে, অতঃপর রাইসার হাতে দিয়ে বলে
উঠে— ভাবী নিজের সম্মান বাচাও।
— ইয়া নদদীনি, এই বলে মিথিলার হাত থেকে কফির
মগটা নিয়ে রাইসা রিয়ানের মাথায় পুরো কফিটা ঢেলে
দেয়।
ব্যস কফির স্পর্শে রিয়ানের হাসি মুখ আবার রাগের
চেহারায় পূর্ন হয়।
— What the…..
—- চুপ একদম কথা বলবেননা, আমাকে পেত্নী
বলা তাইনা, ইচ্ছে করছে আপনাকে, আপনাকে গলা
টিপে ধরি।
— কী?

রিয়ান রাইসার এরুপ জগড়ায়
প্রচন্ড অন্যমনস্ক হয়ে রিয়ানের মা অথ্যাৎ মিসেস
শায়লা বেগম রান্না ঘর থেকে ড্রইং রুমে আসতেই
দেখে, রিয়ানের মাথায় কফি, মুখে প্রচন্ড রাগের
ছায়া আর অন্য পাশে মাথায় একহাত ঘোমটা দিয়ে রাইসা
আর তার সাথে মিথিলা মেনি বিড়ালের মতো দাড়িয়ে
আছে।
মিসেস শায়লা বেগম রিয়ানকে এই অবস্থায় দেখে
বলে উঠলো— এ কী রিয়ান এই অবস্থা কেন
তোমার কী হয়েছে?
— কী আর হবে মম, তোমাকে দেখে যে
মাথায় একহাত ঘোমটা দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে সে
আর মিথি আমার মাথায় কফি ঢেলে দিয়েছে। কথাটি
শুনে
মিসেস শায়লা বেগম কিছু বলার আগেই মিথিলার মা,
অথ্যাৎ শিলা বেগম উপর থেকে নিচে নামতে-
নামতে বলে উঠলো— এসব কী মিথি, ও না
তোমার বড় ভাই ফাজলামির একটা সীমা আছে।
শিলা বেগমের গলার আওয়াজ পেয়ে মিথিলা একটু
ভয়ে মাথা নিচু করে ফেলে, মিথিলা প্রচন্ড রকম
ভাবে শিলা বেগমকে ভয় পায়, অবশ্য ভয় পাওয়ারেই
কথা একেই তো দানবের মতো চেহারা তার
উপরে একটু রগচটা মানুষ হিসেবে সবার কাছে
পরিচিত।
রিয়ানের মা হয়তো সম্পর্কে এবং বয়সে শিলা
বেগমের বড় কিন্তু স্বভাব আচরন আর চলাফেরা,
কর্থাবাতায় সবাই শিলাকে বড় বউ হিসেবে মনে
করে। আর শিলা বেগমের সাথে বাড়ির কেউই
সহজে কথা বলেনা, বলার আগে অত্যন্ত ১ বার
হলে ও ভাবে কিন্তু একমাএ রিয়ান যে শিলা
বেগমের চোখের মনি, রিয়ানের সমস্ত আবদার
শিলা বেগম অনায়াসে পূরণ করার চেষ্টা করে।
মিথিলা মাকে নিচে নামতে দেখে, রাইসাকে ফিশফিশ
করে বলে উঠলো — ভাবী, সাবধান যে নামছে
তার সামনে না একদম ভাইয়াকে নিয়ে মজা করোনা, না
হলে কিন্তু..
— এই মিথি কী ফিশফিশ করছিস রে।
— না মা কিছুনা।
— কিছুনা, দাড়া দেখ তোর অবস্থা আমি কী করি,
সোনা মা ও সোনা মা।
ডাকতে- ডাকতে রিয়ান শিলা বেগমের কাছে গিয়ে
বলে উঠলো— দেখ আমার কী অবস্থা
করেছে।
— এ কী তোর এই অবস্থা করেছে কে?
— কে আর করবে, ওই যে ওই একহাত ঘোমটা
দিয়ে মেনি বিড়ালের মতো এখন যে দাড়িয়ে
রয়েছে।
রিয়ানের এমন কথা শুনে শিলা বেগম প্রচন্ড
গম্বীর কন্ঠে বলে উঠলো,
— বিয়ে হয়েছে একদিন না হতেই এখনি এই
অবস্থা?
শিলা বেগমের এমন উক্তিতে রাইসা নিচু স্বরে শিলা
বেগমকে বলে উঠলো— কী করবো বলুন
কেউ যদি আমাকে চাউলের বস্তা বলে তাহলে
আমি কী তাকে ছেড়ে দিবো?
( চলবে)