ভালোবেসে তারে

ভালোবেসে তারে !! Part- 19 ( Last-Part )

ইসস কোনো ছেলের হাঁসিও কি এতোটা সুন্দর হয়।আমি অপলক তার দিকে তাকিয়ে আছি।আসলেই কি তার হাসিটা এতো সুন্দর?নাকি শুধু আমার কাছে সুন্দর মনে হচ্ছে?যার মুচকি হাসিটাই আমাকে পাগল করার জন্য যথেষ্ট সে প্রাণ খুলে হাসলেতো আমি বোধহয় মরেই যাবো।

যখন আমি রাফিতের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছিলাম তখন সে আমার ভাবনার মাঝখানে বলে উঠলো,

“গান শুনবে দিশা?”

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

“আপনি গান করতে পারেন?”

“হ্যা পারি।শুনবে?খালি গলায় হয়তো ততোটা ভালো শোনা যাবেনা।তাও এইরকম একটা পরিবেশে গাইতে খুব ইচ্ছে করছে।”

“হ্যা শুনবো।(খুব খুশি হয়ে)”

সে একটা হাসি দিয়ে চোখ বন্ধ করে গান ধরলো,

“আমি তোমাকে আরও কাছে থেকে,
তুমি আমাকে আরও কাছে থেকে,
যদি জানতে চাও,
তবে ভালোবাসা দাও,ভালোবাসা নাও,
ভালোবাসা দাও,ভালোবাসা নাও।
নদী কেনো যায় সাগরের ডাকে,
চাতক কেনো বৃষ্টির আশায় থাকে,
যদি বোঝতে চাও,
আমি তোমার ওই চোখে চোখ রেখে,
তুমি আমার এই চোখে চোখ রেখে,
সপ্ন দেখে যাও,
তবে ভালোবাসা দাও,ভালোবাসা নাও,
ভালোবাসা দাও, ভালোবাসা নাও।
কাছে এলে যাও দূরে সরে,
কতদিন রাখবে আর একা করে,
মনে টেনে নাও,
আমি তোমার ওই হাতে হাত রেখে,
তুমি আমার এই হাতে হাত রেখে,
চলো এগিয়ে যাই,
তবে ভালোবাসা দাও,ভালোবাসা নাও,
ভালোবাসা দাও,ভালোবাসা নাও।”

আমার চোখ যেনো আজ রাফিতের থেকে সরতেই চাইছে না।কেউ এতো সুন্দর করে কিভাবে গাইতে পারে।আজ যেনো আমার সামনে এক অন্য রাফিত বসে আছে।তাকে আমার বড্ড অচেনা লাগছে আজ।আমি তাকে বললাম,

“আপনি এতো সুন্দর গান গাইতে পারেন তা আজ জানলাম।আপনার তো প্রফেশনাল সিঙ্গার হওয়ার উচিত ছিলো।”

সে হালকা হেসে বসা থেকে উঠতে উঠতে বলল,

“চলো যাওয়া যাক।”

“এতো তারাতারি😟।আর একটু থাকিনা প্লিজ।”

“আর কিছুক্ষন পর বেশি অন্ধকার হয়ে যাবে।পরে গ্রামের রাস্তাঘাট চিনতেও অসুবিধা হবে।তাই এখনই যেতে হবে।”

আমি মন খারাপ করে উঠে দাড়ািয়ে বললাম,

“ওকে চলুন😔।”

“আরে মন খারাপ করোনা।আর একদিন আবার নিয়ে আসবো।”

“আচ্ছা।(খুশি হওয়ার চেষ্টা করে)”
,
,
,
,
গ্রামের সরু কাঁচা মাটির রাস্তা দিয়ে কিছুদূর হেটে একটা বাড়ির সামনে এসে দাড়িয়েছি।বাড়িটা টিনের তৈরি। চাল,দেয়াল সবকিছুই টিনের।একসাথে তিনটা ঘর ।শুধু উঠোনের সীমানাটুকু বাশের বেড়া দিয়ে তৈরি।বাইরে থেকেও বড়িটার ভেতরের সব বেশ স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে।যদিও অন্ধকার।তাও চাঁদের আলোতে সব স্পষ্ট।আমি রাফিতকে জিজ্ঞেস করলাম,

“এটা কার বাসা রাফিত?আর আমরা এখানে কেনো এসেছি?”

“আগে ভেতরে চলো তারপর বলছি।”

একটা ঘরের খাটে বসে আছি।রাফিত কোথায় জানিনা।একজন মধ্যবয়সী মহিলা আমাকে এখানে রেখে গেছে।শুনছিলাম রাফিত ওনাকে চাচী বলে ডাকছিলো।রুমটা ছোট হলেও বেশ গোছানো।কয়েকটা পুরনো ফার্নিচার ছাড়া আর কিছু নেই।

আমি যখন আশেপাশে খেয়াল করে দেখছিলাম এমন সময় রাফিত হাতে একটা খাবারের প্লেট নিয়ে ঘরে ঢুকলো।তারপর আমার পাশে এসে বসে বলল,

“সারদিনে তেমন কিছুই খাওনি মনে হয়।খেয়ে নাও।”

“আপনি খাবেন না?”

“হ্যা খাবো।”

“তাহলে এক প্লেট কেনো?(অবাক হয়ে)”

“এক প্লেটের মধ্যে খেলে ভালোবাসা বাড়ে।তাই আমি ইচ্ছে করেই দুজনের খাবার এক প্লেটে এনেছি।”

তার কথা শুনে আমি কিছুটা লজ্জা পেলাম।তারপর আবার জিজ্ঞেস করলাম,

“আচ্ছা ওই মহিলাটা কে?যাকে আপনি চাচী ডাকছিলেন?”

“উনি শোভা চাচী।আমরা ফেনীতে যেই বাড়িতে উঠেছিলাম আগে সেই বাড়ির দেখাশোনা করতো।পরে কি এক কারণে ওখান থেকে চলে আসে।এখানে উনি একাই থাকে।উনার স্বামী নেই।একটা ছেলে আছে দেশের বাইরে থাকে।”

“ওহহ।তা উনি কি কারো সাথে কথা বলে না?না মানে আমার সাথে তেমন কিছুই বললোনাতো তাই আর কি!”

“না বলে তবে চাচী একটু চাপা স্বভাবের।অপরিচিত কারো সাথে তেমন একটা কথা বলে না।আমাকে আবার অনেক কেয়ার করে।যখনই এখানে আসি উনার সাথে দেখা করে যাই।”

“ওহহ।”

“আচ্ছা এখন খাও।”

আমিও আর কিছু না বলে খাওয়া শুরু করি।রাফিত প্লেটের ওপাশ থেকে খাচ্ছে আর আমি এপাশ থেকে।আমার কাছেতো ব্যাপারটা বেশ ভালোই লাগছে।বলতে গেলে প্রিয় মানুষটার সাথে এক প্লেটে খাবার খাওয়ার এক অন্যরকম অনুভূতি।

রাত প্রায় ১১.০০টা,,,,,,,,,

খাটের এক সাইডে রাফিতের দিকে পিঠ করে শুয়ে আছি।বাইরে মনে হয় ফেরি ফেরি বৃষ্টি হচ্ছে ও হালকা বাতাস।টিনের চালের মধ্যে বৃষ্টির ফোটা পড়ার শব্দ পাচ্ছি।

হঠাৎই কেউ আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে চুমু দিতে লাগলো।আমি জানি এটা কে।আমি আজ তাকে আর বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলাম না।বরং চোখ বন্ধ করে তার প্রত্যেকটা ছোয়া অনুভব করছি।এভাবে কিছুক্ষণ যাওয়ার পর রাফিত আচমকা আমাকে ছেড়ে দিলো।আমি তার দিকে ফিরে দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।হয়তো আজ সকালের ঘটনার জন্য।আমি আর কিছু না ভেবে তাকে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখলাম।সে আমাকে মৃদু স্বরে জিজ্ঞেস করল,

“আমাকে কি ক্ষমা করতে পেরেছো দিশা?”

আমি কিছু না বলে তার বুক থেক শার্টের একটা বোতাম খুলে সেখানে আলতো করে একটা চুমু একে দিলাম।যার অর্থ ‘হ্যা পেরেছি’।সে এবার আমাকে খুব শক্ত করে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো।আমি তার বুক থেকে মাথা তুলে তার ঠোঁটে আমার ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম।সেও আজ আমাকে আপন করে নিলো।এই প্রথম তাকে আমি এতোটা এতোটা কাছ থেকে অবুভব করছি।আজ তার প্রতিটা ছোয়ায় আমার জন্য তার মনে ভালোবাসাটা অনুভব করছি।ভালোবাসার মানুষের ছোয়াগুলো বুঝি এমনই শিহরন জাগায়?
♥♦♥♥
♥♦♥

একবছর পর,,,,,,,

আজ আমার ডেলিভারির ডেট।হসপিটালের বেডে করে আমাকে যখন অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো তখন রাফিতের হাতটা খুব শক্ত করে ধরে আছি।ঝাপসা চোখে তার চোখের দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট পানি দেখতে পাচ্ছিলাম।কিন্তুু মুখ ফুটে বলতে পারছিলাম না যে ‘রাফিত আমার ও আমাদের বাচ্চার কিচ্ছু হবেনা।আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন।’ নিজেকে বড়ই হতভাগিনী মনে হচ্ছে আমার।এই আশ্বাসটুকুও তাকে আমি দিতে পারছিলাম না।যন্ত্রণায় ক্রমাগত ছটফট করছি।আমার শ্বাশুড়ির কান্নার আওয়াজও পাচ্ছিলাম।তবে উনার মুখটা দেখার ভাগ্য হয়নি আমার।

অবশেষে রাফিতের হাত থেকে আমার হাতটা ছুটে গেলো।বার বার চেষ্টা করছিলাম হাতটা ধরে রাখার।তবে হতভাগা কপালে আর সেটা জুটেনি।


তিনঘন্টা পর,,,,,,,,,,,,

হসপিটালের কেবিনে বেডে আধশোয়া হয়ে রোগীদের আকাশী রঙের একটা ড্রেস পরিহিত অবস্থায় বসে আছি।আমার পাশেই রাফিত টুলে বসে তার কোলে একটা ফুটফুটে মেয়ে বাবুকে নিয়ে তার ছোট ছোট হাতদুটো নিয়ে খেলা করছে।হ্যা আমার একটা মেয়ে হয়েছে।নাক আর ঠোঁটটা পুরোই রাফিতের মতো ও চেহারাটা আমার মতো।পিচ্চিটাও কি বোঝলো কে জানে রাফিতের হাতের এক আঙ্গুল মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে আছে।

আমি বসে বসে বাবা-মেয়ের কান্ড দেখছি।এমন সময় আমার শ্বাশুড়ি আম্মা কেবিনে ঢুকে ও রাফিতকে বলে,

“কিরে নিজের মেয়েকে একাই নিয়ে রাখবি বুঝি।আমারও তো নাতনী।এখন আমার কাছে দে ওকে একটু কেবিনের বাইরে নিয়ে যাই।”

রাফিত একটা মুচকি হাসি দিয়ে তাহিয়াকে আম্মার কোলে দিয়ে দিলো।হ্যা বাবুর নাম তাহিয়া রাখা হয়েছে।কারন তাহিয়াকে ঘিরেই আমার ও রাফিতের জীবনটা শুরু হয়েছিলো।

আম্মা চলে যাওয়ার পর রাফিত আমার ডান হাতটা তার হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

“থেংকস দিশা।থেংকস ফর এভরিথিং।তুমি না থাকলে হয়তো আমার জীবনটা এতোটা আনন্দময় হতোনা।(অশ্রুমাখা চোখে)”

আমার চোখ দিয়ে দু ফোটা খুশির অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।আজ নিজেকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছে আমার। আমার ভালোবাসার ঝুড়িটাও আজ পূর্ণ।যেখানে ভালোবাসার কোনো অভাব নেই।একজন নারীর এর থেকে বেশি আর কি-ই বা চাই।যদি তার ভালোবাসার মানুষটা সবসময় তার পাশে থাকে।সার্থক আজ আমার ভালোবাসা।সার্থক আজ আমি #ভালোবেসে তারে।

♦সমাপ্ত♦

(পুরো গল্পটা আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে ও গল্পটা পড়ার সময় আপনাদের অনুভূতি কেমন ছিলো জানাবেন।আর এতো সময় ধরে আমার গল্পটা কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ😊)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *