ভালোবাসা এমনও হয়

ভালোবাসা এমনও হয় Season 2 !! Part- 17

মেঘ বাড়িতে ঢুকতেই দেখলো ইশান ড্রয়িং রুমে বসে খবরের কাগজ পড়ছে।।
মেঘ দেখেও নাহ দেখার ভান করে চলে যেতে নিলো ইশান পথ আটকালো

ইশানঃ দাড়াও তোমার সাথে আমার কথা আছে

মেঘঃ কি কথা (ইশানের দিকে ঘুরে দাড়িয়ে)

ইশানঃ কাল এই ব্লান্ডার টা নাহ করলেই কি চলছিলো নাহ।।কাল সবাই কতোটা আশা করেছিলো।।সবাই একটু হেপি থাকতে চাইছে আর তুমি।।তুমি সেই আগের ব্যাথা গুলোই সবাইকে মনে করিয়ে দিচ্ছো।।কেন মেঘ।।কি চাইছো তুমি

মেঘঃ আমি কি চাইছি সেটা কি আদোও তোমাদের কারো কাছে মেটার করে।।আর আমি যা চাই তোমরা আমাকে কি তা এনে দিতে পারবে…

দুইজনের চিৎকার চেচামেচি শুনে ঈশা কিচেন থেকে ড্রয়িং রুমে এলো।

ঈশাঃ সকাল সকাল কি শুরু করলে তোমরা।।ছেলেটা মাত্রই তো এলো।।মেঘ তুই যা আগে ফ্রেশ হয়ে আয়

ইশানঃ নাহ ঈশা।।তুমি বার বার এইভাবে সব কিছু এড়িয়ে যেতে দিবে নাহ ঈশা।।মেঘকে আজ বলতে হবে ও কি চায়।।আর কতোদিন চলবে এইসব

মেঘঃ ওকে আমি শুধু আমার বৃষ্টিকে চাই ওকে।।বৃষ্টিকে আমার কাছে এনে দাও তাহলে আমি একদম গুড বয় হয়ে যাবো প্রমিজ

ঈশাঃ মেঘ তুই জানিস এটা কখনোই সম্ভব নাহ তবুও তুই

মেঘঃ আর আমার ও মুভ অন করা পসিবল নাহ মম।।আই লাভ হার।।আমি প্রতিদিন মরে যাচ্ছি মম।।আর আমি চাই মরে যেতে।।ওকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো নাহ।।আর যখন ওর ফিরে আসা সম্ভব নাহ তাহলে আমি বেঁচে থেকে কি করবো।।প্লিজ আমাকে আর কয়েকটা দিন সময় দেও।।আমি কথা দিচ্ছি চিরকালের জন্য তোমাদের মুক্তি দিয়ে দিবো।

ঈশাঃ মেঘ কিসব বলছিস তুই।। চিরদিনের জন্য মুক্তি দিয়ে দিবি মানে কি

মেঘঃ কিছু নাহ

ইশানঃ আমরা তোমার ভালোর জন্যই বলছি মেঘ।।আর হ্যাঁ মানছি তরীকে তুমি অনেক ভালোবাসো।।বাট যা হয়ে গেছে তা তো আর পাল্টানো যাবে নাহ।।আর তোমাকেও তো সব ভুলে নতুন করে ভাবতে হবে সব কিছু

মেঘঃ বাট আমি নতুন করে কিছু ভাবতে চাই নাহ ডেড।।

ইশানঃ তো আমরা কি তোমার জন্য কিছুই নাহ।।তরীর মৃত্যুর ফলে নিজের সাথে সাথে যে আমারদের কতোটা কষ্ট দিচ্ছো সেটা তুমি বুঝছো নাহ।।আমাদের প্রতি কি তোমার একটু ও ভালোবাসা নেই

মেঘঃ ভালোবাসার কথা উঠলো কেন ডেড।।আই লাভ ইউ বোথ।।তোমরা আমার থেকে আমার জীবন চেয়ে নাও দিয়ে দিবো।।বাট আমাকে মুভ অন করতে বলো নাহ

ইশানঃ তোমার জীবন আমরা চাই নাহ মেঘ তা তুমি জানো ভালো করেই।।যাস্ট অফিসে জয়েন করো এটাতেই হবে।।আমি একা কতোদিকে সামলাবো।।

মেঘঃ বাট

ঈশাঃ মেঘ রাজি হয়ে যা নাহ।। তোকে তো তরীকে ভুলতে বলেনি।।যাস্ট অফিসে জয়েন করবি।।একটু আধটু বাবাকে সাহায্য করবি

মেঘঃ ওকে কাল থেকে যাবো আমি অফিসে(মনে মনে- আমার অফিসে যাওয়া আসাতে কি হবে মম।।কয়েকদিন পরে তো আমি বৃষ্টির কাছেই চলে যাবো।।বাট যতোদিন আছি তোমাদের কথা না হয় রাখলাম)

মেঘঃ ওকে আমি উপরে যাচ্ছি

মেঘ দেরি নাহ করে উপরে নিজের রুমে চলে গেল

ঈশা আর ইশান মেঘের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

রাতে

সকালে আসার পর থেকে মেঘ আর রুম থেকে বের হয়নি।।
কারন আজ মেঘের তরীর কথা খুব বেশি মনে পরছে।।সব সময়ই পরে বাট আজ বেশি মনে পরছে।।আর তরীকে বেশি মনে পরলেই বিক্স নিতে বসে পরে মেঘ।।যার মধ্যে তরীর ছোট ছোট জিনিসগুলো যত্ন করে গুছিয়ে রেখেছে মেঘ।

প্রথমেই হাতে পরলো তরীকে দেয়া মেঘের আংটিটা যেটা মেঘ তরীকে এনগেজমেন্ট এর দিন পরিয়ে দিয়েছিলো।।তারপর খেয়াল করলো সেই লকেট টা যেটা দিয়ে মেঘ তরীকে প্রপোজ করেছিলে।।তাও আবার এনগেজমেন্টের দিন রাতে।
(চলেন আবার অতীত ঢুকি)

৪ বছর আগে এনগেজমেন্ট এর দিন রাতে

সব মেহমানরা আস্তে আস্তে চলে যায়।।তরী ও নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে লন্বা একটা ঘুম দেয়।।অবশেষে তার স্বপ্ন পুরোন হতে যাচ্ছে বলে কথা।।আজ সে শান্তির ঘুম ঘুমাবে।

হঠাৎ মাঝরাতে তরীর মনে হলো কেউ তার মুখে পানি ছিটাচ্ছে।।তরী ধরফরিয়ে উঠতে যাবে ঠাস করে উপরে কিছুর সাথে ঠুসা খেয়ে আবার বসে পরলো।উপরে তাকিয়ে খেয়াল করলো গাড়ির ছাদের মতো কিছু একটা।ভালো করে খেয়াল করে দেখলো সে গাড়ির ভিতরে আর মেঘ তার পাশে ড্রাইভিং সিটে বসে আছে পানির বোতল হাতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে

তরীঃ আমি কোথায়🙄

মেঘঃ আমার গাড়িতে😬

তরীঃ বাট আমি তো আমার রুমের খাটে ঘুমিয়েছিলাম।।এখানে আসলাম কিভাবে!!‌

মেঘঃ আমি তোকে নিয়ে এসেছি

তরীঃ মানে 🙄🙄আমাকে কেন নিয়ে এসেছো

মেঘঃ বিয়ে করবে বলে,😒

তরীঃ বাট আমাদের বিয়ে তো এক মাস পর।।আমি নিশ্চয়ই স্বপ্নে তোমাকে দেখছি তাই নাহ।।ওকে গুড নাইট (বলেই সিটে হেলান দিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ফেলতে যাচ্ছিলো)

মেঘঃ গেই বৃষ্টি তুই স্বপ্ন দেখছিস নাহ।।এটা সত্যি

তরীঃ ওহ আচ্ছা(ঘুম গলায় চোখ বন্ধ করে)

মেঘ গেল রেগে।। বোতলের সব পানি দিলো তরীর মুখে ঢেলে।।তরী আবার ধরফরিয়ে উঠতগেল মেঘ আটকালো।

মেঘঃ আই হোপ এখন ঘুম ভেঙেছে তাই নাহ।।নাকি এখনো মনে হচ্ছে স্বপ্ন?

তরী মাথা নাড়ালো।

মেঘঃ গুড।।আচ্ছা তোর এতো ঘুম আসে কোথা থেকে রে??গাড়িতে এতো ঝাকি খেলি তবুও তোর হুস আসলো নাহ

তরী মুখ ভেঙিয়ে কিছু বলতে যাবে মেঘ থামিয়ে দিলো।

মেঘঃ থাম বইন আর কথা বলতে হবে নাহ।।এখন চুপচাপ গাড়ি থেকে বের হ।

তরীঃ মানে

মেঘ কিছু নাহ বলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে তরীকে বের করলো।।তরী সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো তারা একটা মার্মিড হাউসের সামনে

তরীঃ আমরা এখানে এতো রাতে?

মেঘঃ কথা কম ভিতরে চল।

তরীকে নিয়ে মার্মিড হাউসের ভিতরে ঢুকলো।।

রাত তখন প্রায় ২ টা হবে।
এতো রাতেও খোলা রাখা হয়েছে দেখে তরী খুব অবাক হলো।
দরজা দিয়ে ঢুকার সময়ই সবাই তাদের ওয়েলকাম করলো।
মেঘ তরীকে নিয়ে লিফটে উঠলো।৭ তলায় গিয়ে থামলো।

তরী কিছু বলতে যাবে তার আগেই মেঘ তরীর হাতে কিছু দিলো।।

মেঘঃ কোন কথা নাহ বলে ঝটপট রেডি হয়ে আয়

বলেই তরীকে ঠেলে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে দিলো। একটা প্যাকেট হাতে দিয়ে দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দিলো।

তরী প্যাকেট টা খুলে দেখলো একটা ব্লাক কালারের গাউন যাতে সাদা স্টোনের কাজ করা।

তরী গাউন টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতেই দরজায় নক পরলো

মেঘঃ তাড়াতাড়ি কর।।সারারাত টাইম দেইনি

তরীঃ মনে মনে- উফফ জালিয়ে খাচ্ছে তো 😤

তরী গাউন টা পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বাইরে পা রাখতেই পিছন থেকে মেঘ তরীর চোখ বেঁধে দিলো

তরীঃ আরে কি করছো চোখ কেন বাঁধছো???!!!!!!

মেঘঃ তোকে মেরে গুম করে দিবো তাই

তরী কিছু বলার আগেই মেঘ আঙুল দিয়ে তরীর মুখে চেপে ধরলো।

মেঘঃ শিসসসস।।কোন কথা নাহ

মেঘ তরীর হাতে চুড়ি টাইপের কিছু আর কানে দুল পড়িয়ে দিলো।।তারপর তার হাত ধরে রুফটফে নিয়ে গেল।

তারপর হাত ছেড়ে দিলো।।তরী মেঘের কোন সারা শব্দ নাহ পেয়ে চোখের কাপড় টা সরাতে যাবে তখনই গিটার বাজানোর সাউন্ড পেলো।সাথে মেঘের গলা।।
মেঘ গান গাইছে।।তরী চোখের কাপড় টা নাহ সরিয়ে মেঘের গান শোনার দিকে মন দিলো

রাতের সব তারা আছে
দিনের গভীরে,
বুকের মাঝে মন যেখানে
রাখবো তোকে সেখানে,
তুই কি আমার হবি রে?

মন বাড়িয়ে, আছি দাঁড়িয়ে
তোর হৃদয়ে, গেছি হারিয়ে
তুই জীবন-মরন সবই রে..
তুই কি আমার হবি রে?

(বাকিটুকু শুনে নিয়েন😴)

ধীরে ধীরে মেঘ গান গাইতে গাইতে তরীর সামনে এসে দাড়ালো।।তরী তা বুঝতে পারলো কারন মেঘের গলা টা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছিলো।।হঠাৎ গান গাওয়া শেষ হলো।।আবার সব চুপচাপ হয়ে গেল।।
তরী চোখের কাপড় সরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো মেঘ হাটু গেড়ে একটা বক্স নিয়ে তার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে।

তরী অবাক না হয়ে পারলো নাহ।।চারদিকে ঘুরে তাকিয়ে দেখলো পুরো রুফটপ টাই সুন্দর করে সাজানো হয়েছে খুশিতে তরীর চোখ চিকচিক করে উঠলো।মেঘের থেকে কিছু শোনার আসায় তার দিকে তাকালো

মেঘঃ সব দেখা শেষ? এখন এই লকেটটা নিয়ে আমায় উদ্ধার কর।।এইভাবে বসে থাকতে থাকতে হাটু ব্যাথা হয়ে গেল।।আর কি যেন বলতে হয় এই সময় ও হ্যা মনে পড়েছে।।আই লাভ ইউ

তরীর মনটা বিতৃষ্ণায় ভরে গেল।।এতো সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি করে আসল জায়গায় গিয়েই ভুল করে ফেললো।

তরীঃ এইভাবে কেউ প্রপোজ করে একটু রোমান্টিক ভাবেও তো করা যেত।।ঢেড়স একটা(দাঁত কটমট করে)

মেঘ হেসে উঠে দাড়িয়ে তরীর গলায় লকেট টা পড়িয়ে দিলো।

মেঘঃ নিজে কি খুব ভালোভাবে প্রপোজ করেছিলেন নাকি হুম

তরীঃ তোমার থেকে ভালোই করেছি।।মেয়ে হিসেবে আগে প্রপোজ করেছি সেটাই তো অনেক।।আমি প্রপোজ করেছি বলেই বিয়েটা হচ্ছে ওকে(ভাব নিয়ে)
বাট তুমি তো মানে কি বলবো।।একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেও তো প্রপোজ করা যেত।।খালি রাগটাই দেখাতে পারে😒

মেঘ আবার হাসলো।

(বর্তমান)
সেইদিনের কথাগুলো মনে পরতেই মেঘের চোখে আবার পানি জমে গেল।।চোখ গুলো মুছে বক্সটা আবার জায়গা মতো রেখে দিলো।

পরেরদিন সকালে

মেঘ রেডি হয়ে অফিসে চলে যায়।।অফিসে ঢুকেই ধাক্কা খায় কারো সাথে।।আর হাতে ছিলো কফি।।যার পুরোটাই পরে মেঘের উপর।যারফলে মেঘ প্রচন্ড রেগে যায়।
আনফরচুনেটলি যার সাথে ধাক্কা খায় সে একটা মেয়ে।।তার নাম রিয়া।

রিয়াঃ আই এম সরি।।এক্সিডেন্টলি পরে গেছে

মেঘঃ সরি মাই ফুট এতো কেয়ারলেস হয়ে এই অফিসে এলাও হও কিভাবে।।ইডিয়েট।। তোমাদের মতো মেয়েদের এই অফিসে জায়গা দেয় কে

এইবার রিয়াও গেল ক্ষেপে

রিয়াঃ ও হ্যালো মি.।ভুল ছিলো তাই সরি বলেছি।।আর এটা তো আমি ইচ্ছা করে করিনি।। তবুও এতো তেজ দেখাচ্ছেন।।দেখে তো মনে হচ্ছে অফিসে নতুন।।আর এসেই আমার সাথে পাঙা নিচ্ছেন।।আপনি জানেন আমি কে।।আমি এই অফিসের বসের পিএ।।স্যার কে যদি আপনার নামে একবার বলি নাহ এই অফিস কেন কোন অফিসেই আর চাকরি পাবেন নাহ।

রিয়া তো আর মেঘকে চিনে নাহ।।কারন রিয়া অফিসে জয়েন করছে ১ বছর ও হয়নি

মেঘঃ ওহহ রিয়েলি তো আমিও দেখি কি করতে পারেন আপনি।।ডাক দিন আপনার বসকে।।আমিও দেখি তিনি আমার কি হাল করে

রিয়াঃ এতো সাহস।।ওকে যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।।আমি আপনার কি হাল করি

বলেই হনহন করে চলে গেল

In New York City

আমেরিকার উত্তর পূর্বে একটি ডুপ্লেক্স বাড়িতে

সার্ভেন্টঃ স্যার কাম ফাস্ট।।মেম সবকিছু ভেঙে ফেলছে বাড়ির আমরা কেউ তাকে আটকাতে পারছি নাহ

(লোকটা আর কেউ নাহ।।সবার প্রিয় আদ্র😶)

আদ্রঃ আই এম অন দা ওয়ে।।তোমাদের কাউকে আটকাতে হবে নাহ।।ওকে ওর মতো করতে দাও।

একটুপর আদ্র বাড়িতে পৌছে গেল।।গিয়ে পিছন থেকে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরলো।।
মেয়েটি মাত্র ফ্লাওয়ার ভাসটি হাতে নিয়েছিলো ভাঙার জন্য।।কারো স্পর্শ পেয়ে ঝাড়ি মেরে তাকে সরিয়ে দিলো।

মেয়েটিঃ হাউ ডেয়ার টু টাচ মি

আদ্রঃ এমন ভাবে বলছো যেন আগে কখনো টাচ করিনি।।এর থেকেও গভীরে বিচরন করেচগে আমার হাত(মেয়েটির মুখে স্কাইড করতে করতে)

মেয়েটিঃ যা করেছেন আমার নাহ থাকতে।।আর এখন আমার হুস আছে।।তা ভুলে যাবেন নাহ।

আদ্রঃ ওহহ তাই বুঝি

মেয়েটিঃ হোয়াট এভার।।গিভ মি মাই প্যাকেট

আদ্র একটা প্যাকেট মেয়েটির হাতে দিলো।।মেয়েটি তা নিয়ে রুমে চলে গেল।

আদ্র মেয়েটির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো।

আদ্রঃ

চলবে