বধুবরন

বধুবরন-সিজন-2 ! Part- 16

ফজরের নামাজ পড়েই মাথায় ওড়না ঢেকে শুভা প্রবালদ্বীপের নির্মল বায়ু গ্রহণের জন্য নিরিবিলি এক নারিকেল গাছের নিচে বসলো।সামনে সাগরের নীল জল।চক্ষু শীতল করার জন্য আল্লাহ পাকের কি অপূর্ব সৃষ্টি।সকালের মৃদুমন্দ বাতাসে শুভার মাথার ওড়না বার বার পড়ে যাচ্ছে। শরীরে প্রশান্তির ছোঁয়া লাগছে।শুভা চোখ বন্ধ করে নিজেকে এই পবনের সাথে মেলাতে চাই।কিন্তু না মেলে না।চোখ বন্ধ করলেই চার বছর আগের সেই কালরাত মনে পড়ে।ঐরাতে শুভা জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে একটি নৌকায় পায়।শুভা তখনো জানে না ১২ টা ঘন্টা পার হয়ে গেছে এরই মধ্যে। শুভা চোখ খুলতেই শুনতে পাই ছেলেটা কারো সাথে কথা বলছে,
“-আরে এহন কেমনে আমু? টেকনাফ আইয়া পড়ছি তো।এই মাইয়্যা অলরেডি বেচা হয়ে গেছে।সেহানেই সাপ্লাই দিতে যাইতাছি।আপা! কইলাম তো সম্ভব না।এই মাইয়্যারে ফেরাই দেওয়া কোনোমতেই সম্ভব না।
শুভা বুঝতে পারে মোবাইলের ওপাশে মায়া হয়তো।এতো নীচ কি করে হয় এই মহিলা? আমি কালো, অজাত হতে পারি তবুও তো মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের এতোবড় সর্বনাশ করবো না।এরা সুন্দরী, সুজাত তাহলের এদের কর্ম এতো খারাপ কেন? সারাটাদিন না খাওয়ার কারনে শরীরে শক্ত নেই শুভার।তবুও শুভাকে বাঁচতে হবে।এই পাপের জীবনে শুভা কোনোদিন যাবে না।নীলের প্রতি একরাশ অভিমান নিয়ে চোখে জল ছেড়ে আসন্নমৃত্যুর পথে পা বাড়ায়। বহুকষ্টে শিষ্টে নৌকা থেকে পানিতে ঝাপ দেয় শুভা।সকালে যখন জ্ঞান ফেরে তখন নদীর পাড়ে মুখ থুবড়ে নিজেকে পায়।উঠতেই পারছিল না এই প্রবালদ্বীপের বালুময় তীর থেকে।তখনই কেউ শুভার সাহায্য করার জন্য ছুটে আসে।মালেকা খালার আশ্রয়ে সেবা যত্নে শুভা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে।৩ মাস পর বুঝতে পারে শুভা এখন আর একা নয়।গর্ভে বড় হচ্ছে শুভার ভালোবাসার শেষ চিহ্ন। শুভা সেদিন খালাকে ধরে নীল! নীল! বলে চিৎকার করে কেদেছিল।একেতো অল্প বয়স তার উপর টুইন বেবি শুভার শরীর অনেক ভেঙে পড়ে।তবুও শুভা মনোবল হারায় না।নিজের পরিশ্রম আর স্বামী পরিত্যক্তা মালেকা খালার সহযোগিতায় এই নীলাশ হোটেল তৈরি করে।এই হোটেল দাড় করাতে বহু ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে শুভাকে।অবশেষে সফল হয় শুভা।অতীতের যন্ত্রনাদায়ক স্মৃতি মনে পড়তেই হাটু মুড়ে বসে কাঁদে শুভা।উঠে এই নীল জলের পানিতে নেমে যায়।ডুব দিয়ে কাঁদতে থাকে।
|
|
নীল সকালের ফ্লাইটেই কক্সবাজার এসে পৌঁছায়।খেয়ে দেয়ে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের একটু আগেই সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে বের হয়।সেন্টমার্টিন নামতেই অয়ন ছুটে এসে ভাইকে জড়িয়ে ধরে।নীল অনুষ্ঠান স্থলে পৌঁছে দেখে বাড়ির সবাই নাচে গানে মত্ত। মিরা,মায়া ওকে দেখে এগিয়ে আসলেই ও হাত উচিতে থামতে বলে হুইলচেয়ারে বসা রোদির কাছে যায়।রোদি ৫ মাস পর ভাইকে দেখে নীলের গলা জড়িয়ে কাদে।
“- কাদছিস কেন পাগলী। আশিক তুমি কি আমার বোনকে মারছ?
“- আরে ভাই কি যে বলেন?রোদির মতো এতো মিষ্টি একটা মেয়েকে ভালোবাসা ছাড়া অন্য কিছু দেওয়া যায় নাকি?
আশিকের দুষ্টু কথা শুনে রোদি আশিককে চিমটি কাটতেই নীল আশিক হো হো করে হাসে।
নীল মা চাচীর সাথে কথা বলে চলে আসতেই মেহরাজ পিছু নেয়,
“- ভাই! আমিও তোমার সাথে যাবো।
“- কই যাবি?
“- তুমি যেখানে যাও।
“- যদি সমুদ্র লাফ দিতে যাই
“-তাহলে আমিও দিবো।নীল ভ্রুকুচকে মেহরাজকে হাতে দিয়ে আকড়ে ধরে।
পেছন থেকে অয়ন নীলকে ডাকতে গেলে শর্মি বাঁধা দেয়।
“- এখানে এসেছে এই তো অনেক অয়ন।ভাইয়াকে এই শয়তানগুলোর মাঝে রেখে কষ্ট দিও না।আশেপাশেই তো থাকবে থাকুক।মুক্ত পরিবেশে থাকলে ভাইয়ার মন ভালো হবে।
“- হুমম! আজ তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে শর্মি।একদম হলদে পরি।একটা দেই।
“- এই না! পাগল তুমি? দেখছ না চারপাশে সবাই।
“- তাহলে সন্ধ্যা নামুক।সবার আড়ালে উম্মাহ!
“- এই সরো! ফাজিল একটা।অয়ন হাসতে হাসতে শর্মির লজ্জা রাঙা চেহারাটা দেখে।এই মেয়েকে অয়ন এতো ভালোবাসে কেন অয়ন জানে না।শুধু জানে শর্মি ছাড়া জীবন কিছুই না।অয়নকে নেশা নেশা চোখে তাকাতে দেখে শর্মি লজ্জায় দৃষ্টি অবনত করে বসে থাকে।
|
|
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার অপেক্ষা।দূরে আজানের মধুর ধ্বনি শোনা যাচ্ছে।অয়নরা টেকনাফ ফিরে গেলেও নীল এখানে রাত কাটানোর জন্য থেকে যায়।হাঁটতে হাটতে পাশের মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।নামাজ পড়ে চুপচাপ বসে জিকির করতে থাকে।শুভা কে যখন না পেয়ে পাগল প্রায় তখন ঈমাম চাচায় নীল কে বুঝিয়ে আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনে।নীলকে বলে তার কাছে চাও।একমাত্র সেই পারে তোমাকে তোমার পথ দেখাতে।যে পথে গেলে তুমি তোমার হারানো সবকিছুই পাবে।নীল প্রথম যেদিন ঐ মহামহিয়ান সৃষ্টি কর্তার উদ্দেশ্যে সেজদায় অবনত হয়ে শুভাকে ফিরে পেতে চেয়েছিল।আশ্চর্য তার দুদিন বাদেই নীল খোঁজ খবর করে জানতে পারে এর পেছনে ওর পরিবারের লোক জড়িত।কে সেটাও জানে তবে মায়ের অনুরোধে চুপ থাকে।যারা শুভাকে কিডন্যাপ করে তারাও ধরা পরে।শুধু শুভাকেই নীল ফিরে পায় না।নীল সেদিন থেকে নামাজ রোজা,তাহাজ্জুদ বাদ দেয় না।প্রতিটি মোনাজাতে শুভাকে চাই।নীলের এখন দৃঢ় বিশ্বাস আল্লাহ নীলকে খালি হাতে ফেরাবে না।অতীত রোমন্থন করে নীল উঠে মসজিদের ঈমামের সাথে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে ফিরে আসে।এখানে ইলেক্ট্রিসিটি নেই।বড় বড় হোটেল আর রেস্টুরেন্ট গুলোতে জেনারেটরের আলোয় যা ভরসা।স্বল্প আলো আধারে নীল দ্বীপের কোল ঘেষে হেটে চলছে।ক্ষুধা পায় নীলের। কিন্তু কি খাবে? এদিক ওদিক তাকাতেই অদূরে বোর্ড টানানো দেখে।বড় করে লেখা নীলাশ নিচে লেখা সুলভ মূল্যে খাবার পাওয়া যায়।দেশি,বিদেশী খাবার।”নীলাশ”শব্দটায় নীল সাথে শুভা শ আছে। নীলের নামটা দারুন পছন্দ হলো।কিন্তু হোটেলটা বন্ধ হয়ে গেছে।শুধু বোর্ড টার উপর ছোট্ট লাইট জ্বলছে।নীল কি মনে করে এগিয়ে গেল।শূন্য চেয়ার টেবিল।চারপাশে গ্রামীন ঐতিহ্য ছিকে,নকশা করা মাটির কলস, ঝিনুক সহ নানা জিনিস সাজানো।দারুন সাজানো হোটেলটা।নীল ঘুরে ঘুরে দেখছিল তখনই ২০/২১ বছরের একটা ছেলে বের হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
“- হোটেল তো বন্ধ হয়ে গেছে।কাল আইসেন স্যার।
“-হুমম।নীল আবার ঘুরে দাড়িয়ে বললো আবার বললো।আমি এখনই কিছু অর্ডার করতে চাচ্ছি।দ্বিগুন দাম দেবো।ব্যবস্থা করা যাবে?
“- আসলে নিয়ম তো নাই।মজনুর কথা শেষ হওয়ার আগেই শুভা চুল বাঁধতে বাঁধতে ওড়না মাথায় দিয়ে বেরিয়ে আসে।
“- কে রে মজনু ?তুই দাড়িয়ে আছিস কেন? বাড়ি যা।
নীল অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে। পুরোটা শরীর আবেগের শীতলায় জমে যায়।মনে মনে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ জিকির করতে থাকে।নিজের চোখকে বিশ্বাস হচ্ছে না নীলের।কিছুতেই না।হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। এ স্বপ্ন না সত্যি!নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহু আকবার বলে চিৎকার করে ওঠে।শুভা কৌতূহলে এগিয়ে এসে সামনে অশ্রুসিক্ত চোখে দাড়ানো নীলকে দেখে থমকে যায়।হাত পা কাপছে শুভার।ওড়না জামা ঠিক করতে থাকে মাথা নিচু করে।পায়ের হাতের আঙুলগুলো বাকা করবে নাড়াবে সে শক্তিও পাচ্ছে না।মজনু হা করে আছে সামনে দাঁড়ানো এই দুজনকে দেখে।নীল সব বাধা বিপত্তি, জড়ডা ঠেলে ছুটে গিয়ে শুভার কম্পনরত ঠোঁট দখল করে নিল।মজনু খালা গো! বলেই ভেতরে ছুটে খালাকে ডাকতে শুরু করলো।
নীল শুভার চুল পেছন থেকে মুঠ করে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে চিৎকার করে উঠলো।
“- এমন কেন করলি তুই? কেন করলি আমার সাথে?
শুভা নিশ্চুপ চোখের জল ফেলছে।নীল শুভার গলায় ঘাড়ে ঠোঁট ছোয়াতে ছোয়াতে কামড় বসিয়ে দেয় রাগে।শুভা আহ! টুকু উচ্চারণ করে না।
“- বল না! কেন ছেড়ে দিলি একা আমাকে? আমার একটা চড়ের শাস্তি তুই আমাকে জিন্দা লাশ করে কেন দিলি শুভা? নীলের চিৎকার শুভা কেঁপে ওঠে।নুরভি, শৌর্য মালেকা নানির সাথে দরজায় এসে দাড়িয়ে দেখে ওদের মাকে কেউ ধমকাচ্ছে চুল টেনে।
নুরভি রেগে নীলের টিশার্ট টেনে ধরে ইচ্ছা মতো লাথি কিল মারতে থাকে।শৌর্য মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। নীল শুভার নত চোখের পাতার নিচের গড়ানো জল দেখে ঠোঁটের আবেশে জলমুছে নেয়।মালেকার বুঝতে বাকি থাকে না কে এই লোক।চোখ ঘুরিয়ে দাড়িয়ে নুরভিকে টানতে থাকে।কিন্তু নুরভি তো নুরভি চিৎকার করে বকছে।
“- ঐ ব্যাডা ছাড় আমার মাম্মীকে।বদ ব্যাডা ছাড়।তোরে আমি কুত্তা দিয়া দৌড়ানি দেব।কামড় দিয়ে গোশত তুলে ফেলবো। ছাড় আমর মাম্মীকে।ছাড়!
নীল নুরভির কথা শুনে ভ্রুকুচকে নিচে তাকাতেই দেখে ৩ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে নীলের টিশার্ট টেনে রাগে ফোসফাস করছে।নীল শুভার মুখের দিকে তাকাতেই শুভা শব্দ করে কেঁদে ওঠে।নীলের বুঝতে বাকি থাকে না এই পিচ্চি কে ওর।শুভাকে ছেড়ে হাটুমুড়ে বসে মেয়ের গালে হাতে চুমো দিয়ে জড়িয়ে খুশির জল ফেলে।
নুরভি ভয়ে আরও জোরে চিৎকার করে।
“- ভাই! আমাকে এই ব্যাডা ধরে নিয়ে যাবে। ভাই মার এই ব্যাডাকে।বোনের ডাকে শৌর্য ছুটে এসে নীলের গলা জড়িয়ে ধরে চুল টানতে থাকে।
“- তুই চিন্তা করিস না বোন! আমি এই লোককে মেরে বস্তা ভরে সেন্টমার্টিনের সাগরে ভাসিয়ে দেব।
নীল পেছনে ঝুলে থাকা শৌর্যর কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠে। হাতে ঘুরিয়ে শৌর্য কে সামনে নিয়ে দু সন্তান কে মন ভরে দেখে।নীলের মনে হচ্ছে আজ বুঝি খুশিতে মরেই যাবে।শুভার উপর রাগ হচ্ছে নীলের খুব।শৌর্যের গালে কপালে চুমু দিয়ে বলে।
“- তোমাকে কঠিন শাস্তি দেবো শুভা! কঠিন শাস্তি। আমাকে চারটা বছর প্রানহীন করার দায়ে তোমাকে এই শাস্তি পেতেই হবে।শুভা কাঁদতে কাদতে ঘরের ভেতর চলে যায়।মালেকাও শুভার পেছন পেছন যায়।
নুরভি,শৌর্য মা আর নানিকে ভেতরে চলে যেতে দেখে ভয়ে সাদা হয়ে যায়।মজনুকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
“- ও মজু মামা! আমাদের তো ছেলেধরা ধরে নিয়ে যাবে গো!
“- শৌর্য তুই তো ভারি ভীতু! এই পঁচা লোক ছাড় আমাদের।নয়তো ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দেবো।
ছেলে মেয়ের কথা শুনে নীল হাসে।হেসে দুটোকে দুহাতে জড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর হোটেল থেকে বের হয়ে যায়।
“- এই মজু মামা! নিয়ে যাচ্ছে তো সত্যি সত্যি। বাঁচাও না।নুরভি নীলের গায়ে আঘাত করতে গিয়েও পারছে না নীলের হাসি দেখে চুপচাপ তাকিয়ে আছে।
“-ছেলেধরা বাচাও! বাচাও! মাম্মী বাচাও! শৌর্য চিৎকার করে মাকে ডাকে।
নীল বাচ্চা দুটোকে নিজের হোটেলে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে দেয়।এতোক্ষনে শৌর্য নুরভি চুপচাপ হয়ে গেছে।ওরা বুঝতে পারছে নিশ্চয়ই এ পরিচিত কেউ।তাইতো মাম্মী কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।কেউ বাধাও দিলো না।নীল ওদের বসিয়ে রেখে খাবার অর্ডার করে রুমে আসলো।নীলকে দরজা বন্ধ করে চোখের জলে হেসে কাছে আসতে দেখে নুরভি শৌর্য চোখাচোখি করলো।
“- তোরা জানিস আমি কে? শৌর্য নুরভির সামনে বসে ওদের হাতদুটোকে চুমু দিয়ে বলে নীল।
শৌর্য নুরভি মাথা না সূচক নাড়ায়।
“- বাবাই!তোদের অধম বাবাই আমি রে।সন্তান দুটোকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে ওঠে নীল।
শৌর্য নুরভি নীলের ঘাড়ে মাথা রেখে একে অপরের দিকে আশ্চর্য হয়।কি করা উচিত ওরা বুঝতে পারে না।খুশিতে ওরাও বাবাইয়ের গলা জড়িয়ে কেঁদে ওঠে।শৌর্য কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“- বোন দেখ আমাদের বাবাই ফিরে এসেছে।আমাদের বাবাই বোন।বাবাই তুমি এতোদিন কই ছিলে? আমরা তোমাকে কতো মিস করেছি?
“- তুমি একটা পঁচা বাবাই! অনেক পচা!মাছ পচা,ডিম পচা বাবাই।আমাদের মাম্মী কে শুধু কাদিয়েছ।নুরভির কথা শুনে নীল সন্তান দুটোকে মুখোমুখি বসায়।নুরভি, শৌর্যের চোখের জল মুছিয়ে নীল ওদের গালে চুমু দিয়ে বলে,
“- তোদের মাম্মী যে আমাকে কাদিয়েছে! এই যে তোদের থেকে দূরে রেখেছে তার কি হবে? শাস্তি দেবো না ওকে? অনেক পিটুনি দিব।
নুরভি নাক ফুলিয়ে বলে,
“- আমার মাম্মী বেস্ট মাম্মী!মাম্মী কে পিটানি দিলে তোমাকে আমরা বাবাই বলবো না।তুমি আমাদের কেন দেখতে আসো নি।কেন খুজে বের করো নাই? আমার মাম্মী তোমার জন্য খালি কাঁদে।
“- আর কাঁদবে না।বাবাই এসে গেছে।এখন মাম্মী আর কাঁদবে না।
“- সত্যি! ও বাবাই তাহলে মাম্মীর কাছে চলো?
“- না! সোনা!এখন না।কাল সকালে।আজ তোমরা আমার বুকে ঘুমাবে।শুধুই আমার বুকে।ঘুমাবে না?
শৌর্য হ্যাঁ বললেও নুরভি বলে না।ও চুপচাপ থাকে।নীল নুরভির মনের কথা বুঝতে পেরে মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলে,
“- মাম্মীর মন একটু ভালো হোক! সকালেই তো যাবো।এখন থাক না আমার সাথে মা!
“- আচ্ছা!
নীল আজ নিজে হাতে খায় না।শৌর্য নুরভি বাবাইকে খাইয়ে দেয়।নীল সন্তান দুটোকে সাথে নিয়ে মসজিদে যায়।নুরভি বাইরে বসে থেকে বাবাই ভাইকে নামাজ পড়তে দেখে।রাতে বাবাইয়ের গলা জড়িয়ে অনেক কথা বলে দুজন।নীল মনোযোগ দিয়ে শোনে সন্তানদের কথা। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করার ভাষা নেই নীলের।বুকের মাঝে শৌর্য নুরভির মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে রাতে।সকালে উঠে শৌর্য নুরভি মায়ের কাছের যাওয়ার জন্য জেদ শুরু করে।নীল সন্তানদের নিয়ে নীলাশের উদ্দেশ্যে যায়।
শুভা সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছে কেদে কেদে। ভোরের নামাজ শেষে সাগর জলে ডুব দিয়ে ভেজা শরীরে বাড়ি ফিরতেই দেখে নুরভি শৌর্য নীলের গলা ঝুলে হাসছে।নীলকের চোখে চোখ পড়তেই শুভা মাথা নুয়ে ঘরে চলে আসে।দরজা বন্ধ করতে যাবে তখনই নীলে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়ে।নীলকে দেখে শুভা দরজার আড়ালে চুপচাপ দাড়িয়ে রয়।নীল দরজা লাগিয়ে শুভার মুখ চেপে ধরে।
“- আমার নুরভি বলেছে মাকে কষ্ট না দিতে।আচ্ছা দিলাম না।কিন্তু আমার কষ্টের জবাব আমি চাই শুভা।
“- কিসের কষ্ট আপনার? আমি কে যে আমার থাকা না থাকাতে আপনার কষ্ট হয়েছে।আমাকে আমার মতো থাকতে দিন মি. খান।চলে যা এখান থেকে।নীলের দিকে রক্তচোখে তাকিয়ে বলে।
“- আবার বল কি বলেছিস? বল!
“- চলে যান এখান থেকে মি. খান।শুনেছেন না আবার শুনবেন?
রাগে নীলের হাত উঠে যায় কিন্তু চড় মারতে পারে না।হাত মুঠ করে শুভার চুল টেনে মুখটা কাছাকাছি নিয়ে আসে।
“- খুব তেজ বেড়েছে তোর? খুব! আমাকে মি. খান বলিস? এতো পর হয়ে গেছি তোর যে চলে যেতে বলিস।যাবো না আমি।
“- ছাড়ুন আমাকে!
“- ছাড়বো না।কি করবি?
“- কোন অধিকারে ছাড়বো না বললেন?স্বামীর অধিকারে! খাতা কলমে সাক্ষর করলেই কি স্বামী হওয়া যায়?
“- বড্ড বেশি বলছিস তুই! আজ তোকে দেখাবো স্বামী কেমনে হয়।সামান্য একটা ভুলের শাস্তি এভাবে দেওয়ায় কতোটা কষ্টের হয় আমার বুক ছিড়ে দেখ শুভা।শুভাকে কোলে তুলে নেয় নীল।বিছানায় বসিয়ে শুভার ভেজা শরীরের কাপড় পাল্টে বুকে জড়িয়ে ধরে।শুভার চোখের জল মুছে ভালোবাসায় অবগাহন করে।দীর্ঘ দিনের মান অভিমানের অবসান ঘটে।

চলবে,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *