1. নতুন গল্পঃ3. রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প গুলোঃপ্রেমে পড়া বারণলেখাঃ তাসলিমা মুন্নি

প্রেমে পড়া বারণ 2 !! লেখাঃ তাসলিমা মুন্নি ( সিজন-2 )

প্রেমে পড়া বারণ 2

দরজায় ধুমধাম শব্দে মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সেই কখন থেকে একটু পরপর দরজায় বিভিন্ন ধরনের শব্দ! বুঝাই যাচ্ছে কেউ হাতে ধাক্কা দিচ্ছে, আবার লাথিও দিচ্ছে!!
– ভেতরে ঢুকে কি মরে গেছিস? দরজা খুলে বেরিয়ে আয়!
খুল বলছি….! না হলে ভেঙে ফেলবো দরজা!
– উফফফ! ভাল্লাগে না!শান্তিতে শাওয়ার নিবো তারও উপায় নেই!

(বিঃ দ্রঃ “প্রেমে পড়া বারণ! লেখাঃ তাসলিমা মুন্নি ( সিজন-1+2 )” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)

কিছুক্ষণ পরে দরজা খুললাম।
– কি হয়েছে? দরজা ভেঙে ফেলবে নাকি ?!
– কি হয়েছে?!! আবার জিজ্ঞেস করছিস?তুই শাওয়ার নিতে ঢুকিস নাকি ঘুমাতে?
আম্মুকে পাশ কাটিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে বললাম
– শুনো আম্মু,ওয়াশরুম বিষয়টা একটা অন্যরকম বিষয়, ওটা তুমি বুঝবে না।
– বুঝা, আমিও বুঝি অন্যরকম বিষয় টা কি!
একটু সরে গিয়ে আম্মুর হাতের দিকে তাকিয়ে বললাম
– হাতের খুন্তিটা নামাও।আমার তাড়া আছে। এসে সব বুঝিয়ে বলবো।
– আগে বল,না বলে এক পা ও নড়তে পারবি না।
– চুলায় কি চাপিয়ে আসছো! দেখো পোড়া গন্ধ আসছে!!
– পুড়ে যাক। আজ পোড়া খাবার ই খাওয়াবো।তুই বল,আমি ভালো করে বুঝে নিই!
– ছাড়বেই নাহ!!
আচ্ছা শুনো , তোমরা শাওয়ার নিয়ে চলে আসো! কিন্তু আমার কাছে এটা কি জানো?
চিন্তাগার! গবেষণাগারে হয় গবেষণা আর চিন্তাগারে চিন্তা!!
শাওয়ার নেয়ার সময় সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে চিন্তা করি, তারপর সিদ্ধান্ত নিই।।এটাকে সোজাসাপটা করে বললে চিন্তার ল্যাব বলতে পারো!
– ল্যাব! গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিন্তা করিস?!!
– হা! করি তো।
কারণ তখন আমি বিশিষ্ট চিন্তাবিদ হয়ে যাই।।
– কি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?
– অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়! কোন ক্লাস করা যাবে, কোন স্যারের এসাইনমেন্ট কবে সাবমিট করতে হবে ! কোন ক্লাস না করলেও চলবে!
কোন ছবিটা প্রোফাইলে দিবো!
তারপর মনে করো আমার তো সিনেমার নায়িকা হবার খুব ইচ্ছে! কিন্তু তুমি সেটা শুনলেই তো জুতা খুলে দৌড়াও! আমার মনে তো একটা আক্ষেপ থেকেই যায়! তাই না?
এক শ্বাসে কথাগুলো বলে ফেললাম।।
– সিনেমার সাথে শাওয়ারের কি সম্পর্ক?!!
– আছে আছে! শাওয়ার নেবার সময় আমার নিজেকে নায়িকা মনে হয় ।।
আর বাংলা সিনেমার নায়িকারা গাছ ধরে, ঝুলে কিভাবে গান গায়! আমি সেভাবে স্ট্যান্ডে ঝুলে গাইবার চেষ্টা করি।
আমি কিন্তু দারুণ অভিনয় করি আম্মু,কিন্তু তুমি কোনো দিন পাত্তাই দিলে না!
– ফাইজলামি করিস আমার সাথে!!হে….নিজেকে নায়িকা মনে হয়???
– ওমা! ফাজলামু করবো কেন?? তুমিই তো জিজ্ঞেস করলে!
– জুতা চিনছ?
আমি জানি এবার নির্ঘাত মাইর খাবো আম্মুর হাতে।কিন্তু ভাগ্য ভালো, এমন সময় আব্বু এসে উদ্ধার করলেন।
– কি হয়েছে? এতো চেঁচামেচি কিসের?
– তোমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করো।
শাওয়ারে ঢুকলে দুই ঘন্টার আগে বের হয় না। এতো বড় দাড়ি মেয়ে! ঘরের কাজে একটু সাহায্য করবে তা না! দুই ঘন্টা ধরে শাওয়ার নিবে তারপর খেয়ে চলে যাবে!
আমি তো আছি কাজের বুয়া!
– বাদ দাও তো। তাড়াতাড়ি নাস্তা দাও। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
– যাও দিচ্ছি।
– আর শুনো কালকে একটা ফাইল দিয়েছিলাম। কোথায় রেখেছো খুঁজে পাচ্ছি না।
– তা পাবে কেন? আমি তো আছি!!
সারাদিন তোমার রান্নাঘরে পড়ে থাকবো আর সেখানে থেকে তোমার অফিসের ফাইল সামলাবো!
রাগে গড়গড় করতে করতে আম্মু চলে গেলেন।
হিহিহিহি… আব্বু..
এবার ঘূর্ণিঝড় মনে হচ্ছে তোমার উপর বয়ে যাবে!!
– কেন এসব করিস? কথা শুনিস না কেন??তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
– আচ্ছা তুমি যাও।পাঁচ মিনিটে আসছি।।
যার যা কাজ থাকুক নাস্তা সবাই একসাথে বসে করবে।এটাই আমাদের বাসার নিয়ম।
নাস্তা করে আব্বু অফিসে চলে যাবার পর রুমে এসে ভার্সিটিতে যাবার জন্য রেডি হচ্ছি।
– আপু, তুই কি ভার্সিটিতে যাচ্ছিস এখন?
– নাহ তো! কেন??
– কোথায় যাচ্ছিস তাহলে?
চোখে কাজল দিতে দিতে বললাম
– বলা যাবে না, সিক্রেট!
– প্লিজ বল না! কই যাবি?
– বললাম না সিক্রেট! সিক্রেট কাউকে বলতে নেই!
– আমি তোর একটা মাত্র ভাই আমাকে বলবি না?
– একমাত্র ভাই হবি কেন? আমার কি কোনো বোন নেই?
– তাতে কি? ভাই তো একা আমিই!!
– ওহহহ! তাই তো!! একদম ভুলে গিয়েছিলাম।।
– ধ্যাৎ!! বল না কোথায় যাবি?
– বলবো?
– হুমম।।
– কাউকে বলবি না তো??
– কাউকে বলবো না।
– পাক্কা?
– একদম পাক্কা।।
-আজকে তেমন ইম্পোর্টেন্ট ক্লাস নেই,২-১ টা আছে, তবে করবো না। আজকে একটা প্ল্যান আছে।
– কি প্ল্যান?
– সিনেমা দেখবো, তারপর বাইরে লাঞ্চ করবো।
– তাহসিন ভাইয়ার সাথে?
– হা।।
– আর কেউ যাবে না?
– ধ্যাৎ!! আমি আর তাহসিন যাবো আর কাউকে নিবো কেন? তুই-ই বল নেয়া উচিত?
রিফাত মাথা নেড়ে বললো
– না
-এইজন্যই কাউকে নিবো না।উচিত হলে নিতাম। তুই কিন্তু কাউকে বলবি না। পাক্কা কথা দিয়েছিস।
– আরে নাহ! কাকে বলবো?? কাউকে বলবো না।।
– That’s like a good boy!!
আচ্ছা, আমি গেলাম।
তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম।
– আপু তোর মোবাইল নিবি না?
– ওহহহ… ভুলেই গিয়েছিলাম।
উল্টো দৌড়ে গিয়ে রিফাতের হাত থেকে মোবাইল নিয়ে আম্মুকে বলে বেরিয়ে এলাম।
হিয়া… অই হিয়া….
পিছনে ফিরে দেখি তাহসিন ফাঁপাতে ফাঁপাতে আসছে।
– এভাবে ফাঁপাচ্ছিস কেন?
– তোর পেছনে দৌড়ে! কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাস না?
– পেয়েছি।।
– তাহলে দাঁড়ালি না কেন?
– ইচ্ছে হয়নি তাই।
– উহহহ…!!! ইচ্ছে হয়নি তা-ই!! কানে কম শুনিস সেটা তো স্বীকার করবি না।
– আমি নাহয় কম শুনি,কিন্তু তুই ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়ে ডাকছিস কেন? ফোন করলেই তো হতো।
– তাই তো!! আমি কি বোকা!! ইসস… একবার যদি মনে হতো তাহলে তো এভাবে দৌড়াতে হতো না।
তো মহারানী, আপনার মোবাইল খানা কোথায় রাখিয়াছেন? দয়া করে সেটা একবার দেখালে এই বান্দা বড়ই কৃতার্থ হতো!!
তাহসিনের কথায় মনে হচ্ছে কিছু একটা গন্ডগোল আছে।ফোন বের করে দেখি ৮ টা মিসড কল!!
অহহ.. এই কাহিনী।।
– ফোন সাইলেন্ট ছিলো। এবার বল।
– চলে বসে বলছি। হাঁপিয়ে গেছি।
– চল।
ফিরে হাঁটা শুরু করলাম।
– অইদিকে কই যাচ্ছিস?
– ক্লাসে যাবি না?
– এই ক্লাস অফ রে..
– কেন?
-মেম চলে গেলেন। কিছু আর্জেন্ট বোধহয়।
– ইসসরে… তোর তো আজ কপাল খারাপ।
– কেন?
– এইযে মেম ক্লাস নিবেন না।মিস হয়ে গেলো মেমের সাথে ক্লাস!!
– তো কি হয়েছে? ক্লাস তো মিস হতেই পারে।
– একি শুধু ক্লাস মিস! কারো যে হার্টবিট ও মিস হয়ে যায় সে খবর কি আমরা জানি না?
– ওহহ… মেম তো আমার ক্রাশ! সেটা তো সবাই জানে।উনার মতো মেম এর স্টুডেন্ট হতে পেরেছি, এইজন্য নিজেকে লাকি মনে করি।
– তা যা বলেছিস।
চল ক্যান্টিনে যাই।
– নাহ,বাইরে চল। চা খাবি?
– চল।
ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের বাইরে অনেক গুলো চায়ের টঙ দোকান আছে। এগুলো তো সারাক্ষণ স্টুডেন্টদের আড্ডা চলছেই।।
আমি আর তাহসিন আমাদের প্রিয় দোকানটায় এসে বসলাম।
ফাইভ স্টার রেস্টুরেন্ট আর যত ভালো ফাস্টফুড গ্যালারি, ক্যাফেটেরিয়া থাকুক একদিন এই ছোট্ট চায়ের দোকান টা বড্ড মিস করবো।
রাস্তার পাশে বেঞ্চে বসে এমন একটা দোকানের চা খেতে খেতে কতশত আড্ডা দিয়ে প্রায় চার বছর কেটে গেছে।আর এই একটা বছরের দিনগুলো কেটে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ চুকে যাবে।।
কত হাসি কান্না ভালবাসা মিশে আছে এই ছোট চায়ের দোকানে!!
– খোক্ন…. দুইটা চা দে। আমার কিন্তু স্পেশাল টা,কড়া লিকার।
– ভাই আপনার স্পেশাল আমার মুখস্থ আছে, তারপর ও আপনার মুখে না শুনলে খালি খালি লাগে।।
বলেই খোকন হাসিমুখে চা বানাচ্ছে।
খোকনের বয়স প্রায় পনেরো-ষোলো হবে। খুব হাসিখুশি একটা ছেলে।।
– নিন আপা….
হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিলাম।
– আহহ…
তাহসিনের তৃপ্তি এই এক চুমুকেই। খোকনরে… কি চা বানাসরে ভাই??!! একদিন তোর চা না খেলে আমার মাথা ধরে যায়।
– কি যে বলেন ভাই!!
– কি যেন বলবি?
– ও হা! ভুলেই গেছি। শোন তোকে জরুরি একটা কথা বলবো। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনবি।।
– হা। বল।
– আরে বলছি তো।মন দিয়ে শুনবি।।
চায়ের কাপ টা সামনে রেখে গালে হাত দিয়ে বললাম
– মন দিলাম। এবার বল।
– শুন, আমি একটা সিরিয়াস সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। তোর একটা পরামর্শ দরকার।
লাইফের খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত!!
চলবে….

বিঃ দ্রঃ ” লেখাঃ তাসলিমা মুন্নি ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন

👉আমাদের ফেসবুক পেজ

প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2 প্রেমে পড়া বারণ 2

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *