প্রেমে পড়া বারণ

প্রেমে পড়া বারণ ( সিজন-2 ) Part- 17

আমার মন ভালো নেই।।
আমরা ফিরে যাচ্ছি একটা মাইক্রোবাসে করে। সবার মধ্যে একটা স্বস্তি।
এই ট্যুরে এসে অনেক কিছু ফেইস করলাম, যা কোনোদিন ভুলতে পারবো না। খুশবুকে নিয়ে সবাই মজা করতাম, ও ভয় পায় বলে । কিন্তু প্যারানরমাল কিছুর অস্তিত্ব অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
আমাদের সাথে এমন অনেক কিছুই ঘটে থাকে যার ব্যাখ্যা আমরা জানি না।
কিন্তু এসব প্যারানরমাল বিষয়ের জন্য আমার মন খারাপ না।
মন খারাপ অন্য একটা কারণে। একটা ত্রিমাত্রিক প্রেম কাহিনীর শুনে বুকের ভেতর টা কেমন খাঁ খাঁ করছে।
শীতল কাঞ্চনকে ভালোবাসতো! কিন্তু কাঞ্চন বুঝতে পারেনি। উল্টো ভুল বুঝেছে!
বন্ধুত্বের গভীরতাও টিকেনি শুধু প্রেমের কারণে!
দেবাশীষ বাবুর প্রেমে অন্ধ জয়িতা ফিরে দেখেনি শীতলের দুঃখ!
ঠিক একই রকম কিছু যদি আমার সাথে হয়?
যদি রেহানের জীবনে অন্য কেউ…..
কেন এসব আজেবাজে কথা মনে আসছে জানি না।
রেহানকে কি আমি ভালোবাসি??
উত্তর – জানা নেই।
রেহানের সাথে বন্ধুত্বটুকু যেন নষ্ট না হয়,এর বেশি কিছু চাইনা।
একটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নিয়ে সবাই ঢাকায় ফিরলাম।।
এমন একটা ঘটনা বাসায় না জানিয়ে থাকা যাবে না। তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম বাসায় জানিয়ে দিবো।
এসব শুনে আম্মু তো কান্নাকাটি শুরু করলেন। আর আমি, রেহান অনেক বকা খেলাম আগে কিছু জানাইনি বলে।
এক বছর পর।।
আমরা ভয়াবহ ট্যুরের কথা ভুলে গেলাম। তবে অনেক দিন মনের উপর প্রভাব ফেলেছিলো সেই ট্যুর।
এখন আর আমরা কেউ এসব নিয়ে কথাও বলি না,মনেও হয়না। হয়তো কালেভদ্রে কখনো মনে পড়বে!
সবে দুমাস হলো, আমরা ভার্সিটির পাট চুকিয়ে শিক্ষিত বেকারের খাতায় নাম লিখেয়েছি।
আপাতত একদম ফ্রি হয়ে বাসায় বসে আছি।
কিন্তু তাহসিন কাজের কাজ করে ফেলেছে।
ও আঙ্কেলের বিজনেস সামলাবে। সে বিজনেসে ঢুকে গেলো।
ফুপি তাই আর দেরি না করে আনিষার সাথে বিয়েটা সেরে ফেলতে চাইলেন।
বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে। আমরা হইচই করে বিয়ের শপিং শেষ করলাম।।
সবাই খুব এক্সসাইটেড। কত প্ল্যানিং করছি তাহসিনের বিয়ে নিয়ে।
বিয়ের দিন যত এগিয়ে আসছে, তত ব্যস্ততা বাড়ছে।
আনিষা বাবা-মার একমাত্র মেয়ে।উনারা মেয়ের বিয়েতে কিছু কমতি রাখেননি।
এদিকে তাহসিনের বিয়ে বলে কথা! আঙ্কেল আর ফুপি সব দায়িত্ব আম্মুর ঘাড়ে ছেড়ে দিয়েছেন।
আঙ্কেলের এক কথা – ভাবি, কি লাগবে না লাগবে আপনি বলবেন আমি সব ব্যবস্থা করো দিবো,কিন্তু কি কি করতে হবে, কিভাবে করতে হবে এসব চিন্তা আমি করতে পারবো না। মাফ চাই!
আর ফুপি!
– হিয়ার আম্মু,তুমি সামলাও।আমার বিপি বেড়ে গেছে!
এই হচ্ছে অবস্থা। আর আমরা বন্ধুরা যারা আছি,তারা তো সারাক্ষণ আছিই সব কিছু সেট করতে।। তবে সবচেয়ে বেশি দৌড়াতে হচ্ছে আমাকে আর রেহানকে।
আজ তাহসিনের হলুদ।
আগামীকাল মেহেন্দি, পরশু বিয়ে। আজকাল এটাই একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। হলুদের পরে আবার একদিন “মেহেদী পড়ানোর জন্য আরেকটা প্রোগ্রাম। তারপর দিন বিয়ে। মোট কথা বিয়ের অনুষ্ঠানের আমেজ ধরে রাখার জন্যই এটা করা হয়।
আনিষার বাড়ির লোকদের ইচ্ছে অনুযায়ী এভাবেই অনুষ্ঠান হবে।
তাহসিনকে হলুদ দেয়া হয় বাসায়। তারপর আমরা আনিষার বাসায় গেলাম ওকে হলুদ দিতে। তাহসিনকেও সঙ্গে নেয়া হলো।
কারণ সম্পুর্ন ভিডিও সুন্দর করার জন্য বর- কনের একসাথে হলুদ দেয়া হবে!
তো তাহসিনের সঙ্গে আমি, রেহান, অনি,খুশবু,দিয়া,রিফাত আমরা সবাই গেলাম। বড়রা কেউ আমাদের সাথে আসেনি।কারণ বিয়ের এই প্রোগ্রামগুলো মূলত কাজিন, বন্ধুবান্ধব এদের জন্য স্পেশাল হয়ে থাকে। বড়রা আসলেও তাড়াতাড়ি সরে পড়েন!
আনিষাদের বাসায় আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে ভেতরে নেয়া হলো।
আমাদের আপ্যায়ন করার পর অনুষ্ঠান শুরু করার জন্য সবাই ছাদে গেলাম। আনিষাদের বাসার ছাদে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। অনেক সুন্দর পরিপাটি করে সব কিছু সাজানো হয়েছে।
স্টেজের সামনে সবার বসার ব্যবস্থা হলো।
আনিষার কাজিনদের সঙ্গে পরিচয় হলো।
অনুষ্ঠান চলছে।
এক সময় আমি এসে বসে পড়লাম একটা চেয়ারে। খুশবুও এসে বসলো আমার পাশে।
অনুষ্ঠান দেখছি,কিন্তু মনে মনে রেহানকে খুঁজছি। আমার সাথেই ছিলো। কোন ফাঁকে হাওয়া হয়ে গেলো।
হঠাৎ খুশবু জিজ্ঞেস করলো – রেহান কোথায় রে?
– আছে হয়তো আশেপাশেই।
– সবাইকে তো দেখছি, কিন্তু রেহানকে তো দেখছি না অনেক সময় ধরে।
আসলেই রেহান কোথায় গেলো!!
– দেখ দেখ…
খুশবু আমার হাতে ধাক্কা দিয়ে ডাকছে।
– কি?
– ওই মেয়েটা…. কি সুন্দর! তাই না?
তাকিয়ে দেখি আমাদের ডান পাশে একটু দূরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। মেয়েটাকে ভালো করে দেখতে পাচ্ছি, ও আমাদের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো।
মেয়েটা ভীষণ সুন্দরী মানতেই হবে। কথা বলতে বলতে মেয়েটা হাসছে। হাসলে আরও সুন্দর লাগে মেয়েটাকে।
– হা… অনেক সুন্দরী।
– কে মেয়েটা? কেমন চেনা চেনা লাগছে!
– আমি কি করে বলবো কে! নিশ্চয়ই আনিষার কোনো রিলেটিভ হবে।
– কিন্তু কোথায় যেন দেখেছি। মনে করতে পারছিনা।
– আচ্ছা, বসে বসে মনে কর।
আমি অন্যদিকে মনোযোগ দিলাম।
আশেপাশে রেহানকেই খুঁজছি। কিন্তু রেহান নেই।
– এই চলছে তাহলে!
খুশবু কথায় চমকে ফিরলাম ওর দিকে।
– কি চলছে?
খুশবু একটু বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে বললো
– রেহানকে খুঁজছিলাম না?
– হুম। তো?
– দেখ চেয়ে…
আমি খেয়ালই করিনি। রেহান তো সামনেই ছিলো!
তাকিয়ে দেখি রেহান ওই মেয়েটার সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে। এতো সময় ওর মুখ দেখা যায়নি আর সত্যি বলতে মেয়েটাকেই দেখেছি, কিন্তু কার সাথে কথা বলছে সেটা খেয়াল করিনি।
– ওহ! রেহান তো এখন ব্যস্ত। ওকে খুঁজে লাভ নেই।
– কি মহাব্যস্ত সেতো দেখতেই পাচ্ছি। যা খুশি করুকগে।
হলুদ দেয়া শেষ। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব শেষ। এখন দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে। ওরা সেসবের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
খুশবু সেদিকে মন দিলো।
কিন্তু আমার মন সেদিকে যাচ্ছেই না। অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু চোখ বারবার রেহানের দিকেই যাচ্ছে।
খুব রাগ হচ্ছে ওর উপর।
কি এতো কথা মেয়েটির সঙ্গে?!!
আর আমারও!! বারবার চোখ ওর দিকেই কেন যাচ্ছে!
ইচ্ছে করছে চশমা খুলে রাতের বেলায় সানগ্লাস পরে বসে থাকি।
কিভাবে হাসছে দেখো! যেন কত জনমের চেনা!
মেয়েটাও! অচেনা একটা ছেলের সঙ্গে এতো কথা বলার কি আছে?
বলুক না…..
আমার তাতে কি আসে যায়? আমি কি জেলাস হবো নাকি?
আর একবারও তাকাবো না।
আমি সোজা সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। কিন্তু শালার চোখ! ঠিকই আড়চোখে দেখলাম রেহান মেয়েটাকে সাথে নিয়ে আমাদের দিকেই আসছে।
আমি কিছুই দেখিনি এমন ভাব নিয়ে, গভীর মনোযোগ দিয়ে স্টেজের দিকে তাকিয়ে অনুষ্ঠান দেখার ভান করলাম।
কয়েকটা বাচ্চা মেয়ে ডান্স করছে।
– হিয়া….. হিয়া….
রেহান আমাদের পাশে এসে আমাকে ডাকছে, কিন্তু আমি জবাব দিবো না। কারণ আমার মন এদিকে নেই!
গভীর মনোযোগ দিয়ে অনুষ্ঠান দেখছি!!
এবার খুশবু হাতে ধাক্কা দিয়ে বললো – ওই…
– কি?
– রেহান তোকে ডাকছে শুনতে পাচ্ছিস না?
রেহানের দিকে তাকিয়ে বললাম – ডেকেছিস?
খেয়াল করিনি।
বলেই ইনোসেন্ট একটা হাসি দিলাম!!
রেহান একটু ভ্রু কুঁচকে তাকালো আমার দিকে।
রেহান আমার ছেলেবেলার বন্ধু। আমার এই ইনোসেন্ট হাসির পিছনে কিছু একটা আছে, সেটা ও সহজেই অনুমান করতে পারে।
– হা ডেকেছি, কিন্তু শুনতে পাসনি। কারণ তুই তো গভী…র মনোযোগ দিয়ে নাচ দেখছিস!!
ঠিক ধরে ছিলাম!
রেহানের ভ্রু কুঁচকানোর কারণ.. ও বুঝতে পেরেছে যে আমি ইচ্ছে করে জবাব দেইনি,আর ইনোসেন্ট একটা হাসি দিয়ে বুঝাতে চেয়েছি আমি সত্যিই শুনিনি!
কিন্তু রেহান যেভাবে টেনে কথাটা বললো – মোটামুটি ভদ্রভাবে খোঁচা দিলো আরকি!
– হা… খুব সুন্দর নাচ করছে ওরা!
হেসে হেসে বললাম।
কিন্তু তুই কেন ডেকেছিস??
একটু আগ্রহ দেখিয়ে বললাম।
ওর পাশে মেয়েটা আছে ওর দিকে আমার মনোযোগ নেই বা দেখিনি এমন ভাবে রইলাম।
– তোদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে।
– কাকে?
– এইযে… ( মেয়েটিকে দেখিয়ে) ইনি হচ্ছেন আনিষার কাজিন তানিশা।
আর তানিশা, এরা আমার বন্ধু… এ হলো হিয়া… তাহসিনের কাজিন। আর ও খুশবু।
আর অনির সাথে তো পরিচয় হয়েছে।
– হ্যালো! আমি তানিশা
তানিশা এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করলো আমাদের সাথে।
– হ্যালো… আমি খুশবু।
– আমি হিয়া..
– ভালো লাগলো আপনাদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে। ( তানিশা)
খুবশু একটু টেনসড মনে হলো।
– আপনাকে কোথায় যেন দেখেছি! চেনা চেনা লাগছে!
কিছু মনে করবেন না… আপনি কি করেন বলুন তো?
মেয়েটা মৃদু হাসে।।
তানিশা কিছু বলার আগেই রেহান বললো
– উনি ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন। ডিজাইনার।।
– ওয়াও! গ্রেট! ( খুশবু)
– আমি ব্রাইডাল ফ্যাশন নিয়ে কাজ করি।মাঝেমধ্যে ব্রাইডাল মডেল হয়ে র‍্যাম্পে যাই।
– অহহহ… হা… এবার মনে পড়েছে!
ম্যাগাজিনে আপনার ছবি দেখেছি! আর পেপারেও দেখেছি কয়েকবার!
তানিশা খুশবুর উত্তেজনা দেখে মৃদু হাসে।
রেহান আমার পাশের চেয়ারে বসলো।
আমি তানিশাকে বসতে বললাম।
তানিশা বললো – আপনারা বসুন। আমার একটা কাজ আছে। আমি একটু আসছি।
তানিশা চলে গেলো।
আমি রেহানের দিকে ভালো করে খেয়াল করছি।
ওর মুখে কিছু একটা পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি।।
হা… সূক্ষ একটা পরিবর্তন!
এই মুহূর্তে ও নিশ্চয়ই অন্য কিছু ভাবছে।।
চলবে….

Comments