প্রেমময় প্রদীপ

প্রেমময় প্রদীপ !! Part- 10 (শেষ পর্ব)

সাফা বাড়িতে আসতেই সামিনা রশিদ বললেন-
তুই বাইরে গেলি কবে?
দেখলাম না তো!
-এখুনি ।
-কেন?
-এমনিতেই ।
-এমনিতে! একটা অঘটন ঘটেছে তিনদিন পার হয়নি, আর তুই লুকিয়ে বাইরে বেরুচ্ছিস!
.
সাফার খালা সামিনা রশিদকে শান্ত করলেন ।
সামিনা রশিদ শান্তস্বরে বললেন-
এভাবে হুটহাট বের হবিনা । আজ নিউজে কি দেখিয়েছে জানিস? রবিন নামক ছেলেটা সিলেটের ওই একটা খুনই করেছে । মেয়েটা ওর প্রেমিকা ছিল । পারসোনাল শত্রুতার জন্য খুন করে ।
আগের খুনগুলোর সুযোগ নিতে চেয়েছে সে । ভেবেছে ওভাবে খুন করলে পুলিশের সন্দেহ থেকে বাঁচবে । এখন ধরা পড়াতে এসব জানায় । তার মানে সিরিয়াল কিলার অন্য কেউ । কি সাংঘাতিক বিষয় ভেবেছিস? সাবধানে থাকতে হবে সবাইকে ।
.
সাফা জানে আসল খুনী কে । তাই সে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল-
এখন থেকে এমন খুন আর হবেনা ।
.
সামিনা রশিদ মেয়ের কথার মানে বুঝতে না পেরে চেঁচিয়ে বললেন-
মনগড়া কথা বলে দিলি! তাও সাবধানে থাকবিনা? তোর বিপদ না হয়ে কার হবে!
.
.
রুমের দরজা বন্ধ করে চুপচাপ বসে রইল সাফা ।
বুকের মাঝে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে সে । এমনটা তার সাথে না হলেও পারতো!
তার ফোন বেজে উঠল । শফিকুলের ফোন এসেছে ।
সাফা রিসিভ করতেই শফিকুল বলল-
আমি সরি সাফা ৷ তখন তোমার ফোন রিসিভ করতে পারিনি ।
-ইটস ওকে ।
-তাইফের মুখে সব শুনেছি আমি । প্রেম একটা দৈত্য আর সে মানুষ খুন করে!
-হুম ।
-দুজনের কাছ থেকেই কষ্ট পেলে তুমি ।
-দুজন?
-হ্যাঁ । প্রেমের কাছে তাইফ তো একরাতের জন্য তোমাকে চেয়েছিল । এমন একটা ইচ্ছে পোষণ করা ওর একেবারেই উচিত হয়নি ।
.
শফিকুলের কথা শুনে অবাক হলো সাফা । সে তাইফের সাথে প্রেমের কথপোকথন শুনেছে । শুধু শুনেছে, প্রেম মানুষ খুন করে । দেখেছে প্রেমের আসল রূপ ও তাইফকে মারতে চাওয়া ।
.
সাফা রেগেমেগে বলল-
তাইফ এমন জঘন্য আমি আগে ভাবিনি!
-তুমি তাকে ভালো না বেসে ঘুরিয়েছ এটা সে মেনে নিতে পারেনি । দোষ সবার ছিল সাফা ।
-তাই বলে…
-হ্যাঁ, তাইফের এই চাওয়াটা অন্যায় ছিল । এটা আমি মানছি ।
-হুম ।
-তুমি ঠিক আছো তো সাফা?
-হু । রাখছি এখন ।
-ভালো থেকো ।
.
ফোন রাখতেই সাফার মন আরো অশান্ত হয়ে উঠল ।
এমন একটা ইচ্ছে পূরণের কথা বলতে তাইফের বুক কাঁপলো না!
.
.
রাত গভীর হলেও সাফার চোখে ঘুম নেই । নানারকম ভাবনায় অস্থির হয়ে আছে তার মনটা । এত কিছুর পরেও প্রেমকে সে ভুলতে পারছেনা । প্রেমের সাথে কাটানো এই কয়েকটা দিনের স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে আসছে বারবার ।
নাহ, আজ রাতে আর ঘুম হবেনা তার ।
এই ভেবে শোয়া থেকে উঠে পড়লো সাফা ।
রুমের মাঝে অনেকক্ষণ পায়চারি করার পর ক্লান্ত হয়ে পড়লো সে । চেয়ার টেনে বসলো সাফা ৷ টেবিলের এক পাশ থেকে ডায়েরিটা টেনে নিলো সে । মন খারাপ থাকলে আঁকিবুঁকি করলে মনটা কিছুটা হলেও শান্ত হয় তার ।
ডায়েরির পাতা উল্টাতেই সাফার চোখ আঁটকে গেল । সুন্দর হাতের লেখা দেখে অবাক হলো সে । তার ডায়েরিতে এসব লেখা কিভাবে এলো!
সাফা পড়া শুরু করলো-
প্রিয় ম্যাডাম,
আমার জীবনের বিশাল এক কাহিনী রয়েছে । যা শুনে আপনার বিশ্বাস নাও হতে পারে । তবুও জানাতে চাই আমি ।
প্রায় হাজার বছর আগের কথা!
আমার জন্ম মিশরে । ওখানেই কাটে ছেলেবেলা । আমার বাবা ছিলেন ফারাও রাজার দাস । সেই সুবাধে রাজপ্রাসাদে প্রায় যাওয়া হত আমারো । ছেলেবেলায় ফারাও রাজার মেয়ের প্রেমে পড়ি আমি । তবে কাউকে বুঝতে দিতাম না । মেয়েটির নাম ছিল সুহেলি । সুহেলিকে দেখার জন্য বারবার নানা বাহানায় রাজ প্রাসাদে যেতাম আমি । সময় প্রবাহিত হতে থাকে । একসময় সুহেলিও আমার প্রেমে পড়ে । একথা রাজার কানে গেলে তিনি ক্ষেপে যান । একজন দাসের ছেলেকে তার মেয়ে পছন্দ করেছে, এটা তিনি মানতে পারেন নি ।
ফারাও রাজা যাদু জানতেন । তিনি তার যাদুর মাধ্যমে আমাকে দৈত্য বানিয়ে দেন । যাতে আমাকে দেখে সুহেলি ভয় পায় । কিন্তু এমন কিছুই হয়নি । ভালোবাসা হয় মন থেকে, এটা তিনি বুঝতে পারেন নি । দৈত্য বানিয়েও যখন সুহেলির কাছ থেকে আমাকে দূরে সরাতে পারেননি, তখন তিনি আরো রেগে যান । তার যাদুর শক্তিতে আমাকে প্রদীপের মাঝে বন্দী করেন । এর আগে তিনি জানান, এখন থেকে আমি মানুষের দাস হিসেবে থাকব আজীবন । একজন মানুষের তিনটে ইচ্ছে পূরণ করাই হবে আমার কাজ ।
আমি এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তির জন্য ছটফট করব । এর থেকে মুক্তি লাভের উপায়ও আছে । কেউ যদি তার একটি ইচ্ছে পূরণের পরিবর্তে আমায় মুক্তি দেয়, তবেই আমি মুক্তি পাব ।
এসব বলেই তিনি প্রদীপের মাঝে আমাকে আবদ্ধ করে সেটি নদীতে ফেলে দেন।
সেদিন থেকেই আমি মুক্তির জন্য ছটফট করি । তোমাকে যেভাবে জানালাম, সেভাবে সবাইকেই জানিয়েছি ।
কিন্তু স্বার্থপর মানুষেরা তাদের ইচ্ছে পূরণের জন্য আমাকে মুক্তি দেয়না!
আমি বছরের পর বছর মানুষের ইচ্ছে পূরণ করে চলেছি । কিন্তু যেসব মানুষ আমার কাছে অন্যায় দাবি করে, আমি তাদের হত্যা করি । ওসব মানুষের পৃথিবীতে থাকার কোনো আবশ্যিকতা আছে বলে আমি মনেকরি না । এরা পৃথিবীর জন্য হুমকিস্বরূপ ।
একসময় দেখা পাই তোমার । তোমাকে দেখেই আমার শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে গেল ৷ কারণ তুমি দেখতে ঠিক আমার সুহেলির মতো!
দুজন মানুষের এতটা মিল কিভাবে থাকতে পারে আমি জানিনা ।
তবে তোমাকে দেখে এত বছরের দুঃখ অনেকাংশে কমে গিয়েছে আমার । মনে হতো নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি আমি!
তুমি আমাকে মুক্ত না করলেও আমার কোনো আফসোস থাকবেনা । বরং আমি খুশিই হব, তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করতে পেরে ৷
জানিনা তুমি কখন আমার লেখটি পড়বে ।
হয়তো সেদিন আমি তোমার পাশে থাকব নয়তো অনেক দূরে!
–প্রেম!
.
আর কিছু লেখা নেই!
তার মানে তাইফকেও এই কারণে মারতে চেয়েছিল প্রেম!
সবটা বুঝে কান্নায় ভেঙে পড়লো সাফা । তার চোখের জলে ডায়েরির পাতা ভিজে একাকার হয়ে গেল ।
এটা কি করলো সে!
এত সহজে প্রেমকে ভুল বুঝলো সাফা!
আর দেরী করলোনা সাফা । জানালার পর্দা আড়াল করে দেখলো, ভোর হয়ে এসেছে ।
সবাইকে ফাঁকি দিয়ে আবারো বেরিয়ে পড়লো সে । ছুটতে লাগলো কলেজের দিকে ।
.
.
মাটি খুড়িয়ে প্রদীপটি হাতে নিলো সাফা ।
মনের মাঝে ভয় ছিল তার, যদি প্রদীপটা না পায়!
প্রদীপ পেয়ে সাফার মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটলো ।
চটজলদি প্রদীপটি নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসলো ।
রুমে এসে তিনবার প্রদীপের গায়ে ঘষতেই বের হয়ে এল দৈত্যরূপী প্রেম!
তাকে এভাবে দেখেও সাফার মনে ভয় কাজ করলো না । বরং সে মুখে হাসিয়ে ফুটিয়ে বলল-
প্রেম!
.
অভিমানী সুরে প্রেম বলল-
আমি জানতাম আপনি আমাহ উদ্ধার করবেন ম্যাডাম!
-কিভাবে?
-কারণ আরো একটি ইচ্ছে বাকি রয়েছে আপনার ।
.
প্রেমের কথা শুনে মুচকি হেসে বলল সাফা-
হ্যাঁ আমি এজন্যই এসেছি । আমার ইচ্ছে পূরণ না করেই কিভাবে যেতে দিই তোমায়?
-তবে বলুন আপনার তৃতীয় ইচ্ছে ৷ আমি পূরণ করতে প্রস্তুত ।
.
সাফা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল-
আমি চাই তুমি এই অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পাও ।
.
সাফার কথা শুনে প্রেমের দুচোখ ছলছল করে উঠল । কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলল-
আপনি আমার লেখা পেয়েছেন ?
-হু ।
-আপনি সত্যিই চান আমি মুক্ত হই এই জীবন থেকে?
-হ্যাঁ । এটাই আমার ইচ্ছে!
-তবে আপনার ইচ্ছে পূরণ হবে ম্যাডাম ।
.
মুহুর্তের মধ্যেই চারদিকে ধোঁয়া দেখতে পেল সাফা ।
একটু পরে সে দেখলো, যে প্রেম এতক্ষণ শূন্যে ভাসছিল সে এখন মেঝেতে দাঁড়িয়ে আছে ।
সাফার দিকে তাকিয়ে প্রেম বলল-
ম্যাডাম আপনি প্রদীপটি ঘষবেন প্লিজ?
.
সাফা প্রদীপ ঘষলো কিন্তু প্রতিবারের মতো এবার প্রেম ভেতরে প্রবেশ করলো না!
প্রেম চেষ্টা করে দেখতে লাগলো, তার যাদুর শক্তি কাজ করে কিনা ।
যাদুর শক্তি কাজ করছেনা দেখে প্রেম লাফিয়ে বলে উঠল-
আজ থেকে আমার অভিশপ্ত জীবনের সমাপ্তি হলো ।
.
সাফাও হেসে বলল-
হ্যাঁ!
.
প্রেম কিছুটা বিষন্ন হয়ে বলল-
অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্ত হলেও, আমি আমার রূপ বদলাতে পারব না ম্যাডাম । এখন আমার যাদুর শক্তিও নেই যে রূপ বদলে রাখব । আপনি আমায় এই রূপে দেখে ভয় পাচ্ছেন না?
-নাতো! তোমায় দেখে ভয় পাবো কেন! তুমি তো আমার বন্ধুই ।
.
সাফার চোখেমুখে ক্লান্তির ছাপ ভেসে উঠেছে । তা বুঝতে পেরে প্রেম বলল-
আপনি একটু ঘুমোবেন ম্যাডাম । শরীর ভালো নেই আপনার ।
-না, আমার তোমার সাথে অনেক গল্প করার আছে ।
চিঠিতে সব ক্লিয়ার না । সবটা আমি তোমার মুখে শুনতে চাই ।
-তা বলব । তবে আপনার এখন ঘুমানো উচিত । তাই আপনি এখন ঘুমোবেন ।
-ওকে । বাট একটা কথা ।
-কি?
-তোমার আসল রূপ ফিরে পাওয়ার কি কোনো উপায় নেই?
যদি থাকে আমায় বলো, আমি তোমার আসল রূপ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করব তোমায় ।
-সব বলব । আপনি এখন রেস্ট করুন ।
.
প্রেমের জোরাজোরিতে সাফা শুয়ে পড়লো ।
প্রেম ওয়ারড্রবের উপরে পা ঝুলিয়ে বসে, সাফার দিকে তাকিয়ে রইল ।
সাফাও কবে যে ঘুমিয়ে পড়লো টের পেল না ।
ঘুম ভেঙে দেখল, প্রেম নেই!
সাফা সারাঘরে খুঁজেও তাকে পেল না ।
সে খেয়াল করলো, বালিশের পাশেই ডায়েরি ও প্রদীপটি রাখা । সাফা ডায়েরি খুলতেই সেই সুন্দর হাতের লেখা দেখতে পেল-
আজ পর্যন্ত আমি কেবল মানুষের ইচ্ছে পূরণ করে এসেছি । কেউ আমার ইচ্ছে পূরণ করবে ভাবিনি! মানুষকে আমি স্বার্থপর মনে করতাম । কিন্তু আমার ধারণা ভুল এটি আপনি প্রমাণ করলেন ম্যাডাম ৷ আপনার মতো ভালো মেয়ে খুব কমই আছে পৃথিবীতে । যদি থাকতো, আমার হাতেই এত মানুষ খুন হত না ।
আমি চাইনা আমার জন্য আপনার কোনো ক্ষতি হোক । তাই চলে যাচ্ছি । আমি থাকলে আপনার কি অসুবিধে হত ভাবছেন? হত ম্যাডাম ৷ কারণ আমার যাদু শক্তি হারিয়ে ফেলেছি । যে কারণে রূপ বদলানো আমার পক্ষে সম্ভব নয় । যাদু শক্তি চলে যাওয়ার কারণে আমি এখন অদৃশ্যও হতে পারব না । আপনার মতো সবাই আমায় দেখবে । নিশ্চয় আপনার আম্মু আব্বু এতবড় একটা দৈত্যকে আপনার সাথে থাকতে দিবেনা? আর আমি আপনার পাশে থাকলে, বন্ধুবান্ধবসহ কেউ মিশতে চাইবেনা আপনার সাথে ভয়ে ৷ সবটা বিবেচনা করে আমি চলে যাচ্ছি । না জানিয়ে যাওয়ার জন্য আমি দুঃখিত । ভালো থাকবেন ।
.
লেখাটি পড়তে অঝর ধারায় চোখের জল ফেলতে লাগলো সাফা ।
প্রেম এমনটা না করলেও পারতো! সবটা নাহয় সামলে নিতো সে!
.
.
প্রায় ছ’মাস হয়ে গেল…
এই ছয়মাসে একটা দিনের জন্যও প্রেমকে ভুলতে পারেনি সাফা ।
তার দুচোখ সারাক্ষণ খুঁজে চলেছে প্রেমকে ।
সাফা জানে, সে বর্তমানে একটা দৈত্য । তবুও তার প্রতি ভালোলাগা বিন্দুমাত্রও কমেনি । বরং দিনদিন বেড়েছে! প্রতিটা দিন প্রেমের সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো ভেবেছে সাফা ।
কি সুন্দরই না ছিল দিনগুলো!
এই কয়েকটা দিন তার পুরো জীবনটা এলোমেলো করে দিলো । প্রেম কি আর কখনো ফিরে আসবেনা!
ভাবতে ভাবতে বারান্দায় এলো সাফা । আজকের চাঁদটা অনেক সুন্দর । তাকিয়ে থাকতে বেশ ভালো লাগছে । পাশে যদি প্রেম থাকতো…
প্রেম? কেনো সে প্রেমকে নিয়ে এতটা ভাবে! কেন সে একটাবারের জন্যও প্রেমকে ভুলতে পারেনি! কেনো সে চায়, দৈত্য রূপে হলেও প্রেম তার সাথেই থাকুক? তবে কি সত্যিই প্রেমকে মন থেকেই ভালোবাসে? দৈত্যরূপী প্রেমের সাথেই আজীবন সে কাটিয়ে দিতে পারবে অনায়াসে!
মুখে এক চিলতে হাসি ফুটলো সাফার । চোখ জোড়া বন্ধ করে বলল-
প্রেম আমি তোমায় ভালোবাসি ৷ যেখানেই থাকোনা কেন, আমার কাছে ফিরে এসো!
.
.
কয়েকদিন পর…
সকালে মায়ের বকুনিতে ঘুম ভাঙলো সাফার ।
ঘুমঘুম কন্ঠে সে বলল-
কি হলো মা? এত চেঁচামেচি করছো কেন?
-চেঁচামেচি করছি আমি! কলেজ টাইমও চলে গিয়েছে । তোর ঘুম এখনো কাটছেনা ।
-আরেকটু ঘুমোতে দাওনা মা!
-আর ঘুম নই । উঠে পড় ।
.
সাফা উঠতেই সামিনা রশিদ বললেন-
এখন থেকে নিচে যখন তখন যাবিনা ।
-কেন?
-তোর বাবা ব্যাচেলর ছেলেকে নিচের একটা ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছে । সে আজকে আসবে । জানিস না?
-নাতো!
-কতবার বলেছি ব্যাচেলর ছেলে দিওনা । ঘরে একটা যুবতী মেয়ে আছে । কে শুনে কার কথা । তোর বাবা কি বলে জানিস? ছেলেটা ভীষণ ভালো । দেখলেই বোঝা যায় ।
-বাবা যখন দিয়েছে, নিশ্চয় বুঝেশুনে দিয়েছে । তুমি এত ভেবো নাতো ।
-আমি ওয়াশরুমে যাচ্ছি । আজ অনেক কাপড় ধুতে হবে । ছেলেটা এলে ফ্ল্যাটের চাবি টা দিয়ে দিস । আর হ্যাঁ, বেশি কথা বলার কোনো দরকার নেই । দিয়েই মুখের উপরে দরজা আঁটকে দিবি । ঠিক আছে?
-হু ।
.
একটু পরেই কলিংবেল বেজে উঠলে, সাফা চাবি নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে এল । দরজা খুলতেই সে বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে চলে গেল । এই যে মানুষরূপী প্রেম দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে!
সাফা আনন্দে আত্মহত্যা হয়ে বলল-
প্রেম তুমি!
.
মৃদু হেসে প্রেম বলল-
হ্যাঁ আমি ।
-তোমার এই রূপ কিভাবে ফিরে পেলে?
-তোমাকে সবটা জানাইনি সাফা । রাজা বলেছিলেন, আমি অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পেলেও সহজে নিজের আসল রূপ ফিরে পাব না । যদি আমায় দৈত্যরূপে কোনো সুন্দরী যুবতী ভালোবাসে, তবেই আমি আমার আসল রূপ ফিরে পাব । তোমার ভালোবাসার জোরে আজ আমি ফিরে এসেছি সাফা! ওহ সরি ম্যাডাম!
.
সাফার চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো ।
প্রেম বলল-
কাঁদছো কেন?
.
সাফা কিছু বলতে যাবে, তখনি ওয়াশরুম থেকে সামিনা রশিদ চেঁচিয়ে বললেন-
কে এসেছে সাফা?
.
সাফা কি বলবে বুঝতে পারছেনা ।
প্রেম বলল-
বলো যে নিচের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া এসেছে ।
.
সাফা অবাক হয়ে বলল-
তুমিই সেই ব্যাচেলর ভাড়াটিয়া?
-জ্বী ম্যাডাম, আমি ।
-এখনো ম্যাডাম বলবে?
-তবে কি বলব?
-সাফা, শুধুই সাফা ।
-আমি তোমাকে ভালোবাসি সাফা ।
.
সাফা লজ্জা পেয়ে প্রেমের হাতে চাবি দিয়ে বলল-
যাও এখন ।
-তুমি বলবেনা?
-আমিও তোমায় ভালোবাসি ।
.
কথাটি বলেই সাফা চটজলদি দরজা আঁটকে মায়ের উদ্দেশ্যে বলল-
ভাড়াটিয়া এসেছে ।
.
এদিকে দরজার ওপর পাশে দাঁড়িয়ে প্রেম এক রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল-
বেচারি সাফা!
.
সমাপ্ত
.
বি:দ্র: নতুন এক রহস্য নিয়ে কোনো একসময় গল্পটির সিজন ২ লেখার ইচ্ছে আছে। 💕

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *