প্রাক্তন

প্রাক্তন 2 !! Part- 17

আমি ভাবছি স্পর্শ চৌধুরী কে নিয়ে। ভাবতে ভাবতেই কপালে কারো ছোয়া পেলাম।আতকে উঠলাম। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি সমুদ্র কপালে ঠোট ছুঁয়েছে। আমি চোখ বন্ধ করে ওর কপাল ছোয়া অনুভব করছি।হাত দিয়ে মুখ টা উঁচিয়ে চোখে চোখ রেখে বললো!

“এত্ত ভয় পাওয়ার বা ভাবনার কিচ্ছু নেই।আমি আছি না? আমি আছি তো!”(সমুদ্র)

আমি কিছুই বললাম না।তাকিয়ে আছি তার দিকে।ও একটু হাসি দিয়ে আবার কপালে চুমু দিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।হঠাৎ করেই কেনো জানি নিজেকে খুব উৎফুল্ল মনে হচ্ছে।সব চিন্তা খুব সহজ মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে এই স্পর্শ কে তুরি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যাবে। এই জন্য ই হয়তো বলে কাছের মানুষ টা পাশে থাকলে পুরো পৃথিবী জয় করে নেওয়া যায়।আমি গাড়ি স্টার্ট দিলাম দেখি স্পর্শ এর ফোন।ধরবো কি না? নাহ ধরবো না।আগে এই ব্যাটার সব খবরাখবর বের করি তার পর।আমি আপন গতিতে চলছি।হঠাৎ করেই পিছন থেকে সামনে একটা অন্য গাড়ি এসে ব্রেক করলো?আমি আজ সময় মত ব্রেক না করলে আল্লাহ্‌র পেয়ারে হয়ে যাইতাম।এম্নে কেউ গাড়ি চালায় কিছু হইলেই তো আবার আমার ই দোষ হইতো।মেয়ে রা ড্রাইভ করতে পারে না ব্লা ব্লা ব্লা!

মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেলো গাড়ি থেকে বেরিয়ে ওই গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম কি বজ্জাৎ মানুষ রে বাবা গাড়ি থেকে বের তো হয় এ না উলটো গাড়ির গ্লাস ও নামায় না।গ্লাসে টোকা মেরে বললাম,

এই যে? বের হোন তো? ভাই এম্নে কেউ গাড়ি চালায়?কিছু হয়ে গেলে তো আমার দোষ হতো!মেয়ে মানুষ গাড়ি চালাতে পারে না। ব্লা ব্লা!এই শুনছেন? বের হন?আজব তো কি মানুষ রে বাবা!এই যে?(গ্লাসে আবার টোকা মেরে)

__কে মানুষ দেশ চালাচ্ছে আর তুমি বলছ মেয়েরা গাড়ি চালাতে পারে না আমি এই টা বলবো?(স্পর্শ গাড়ি থেকে বের হয়ে এসে)

আপনি? এভাবে গাড়ির সামনে আসার মানে? এখনি তো একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারবো!মানে মাথায় কি ডেনড্রন নেই?(আমি বেশ রাগ আর ধমক দেখিয়ে)
__কি করবো বলো? কল দিচ্ছি কিন্তু রিসিভ করছ না।ভাবলাম এত জনবহুল শহরে আবার হারিয়ে গেলে নাকি। তাই খুঁজতে বের হয়েছিলাম।কিন্তু দেখি সত্যি ই তুমি পথ গুলিয়ে ফেলেছো।

মানে?(অবাক হয়ে)
__মানে তুমি তো উলটো রাস্তায় চলে এসেছো? ওই দিক দিয়ে বাড়ি যায় তোমার।

হ্যা আমি তা জানি!
__তাহলে এই রাস্তায় কেনো তুমি?
কাজ ছিলো।
__কি কাজ?(চেহারায় বেশ রাগ প্রকাশ পাচ্ছে)

এই লোক টা কে কি রাগিয়ে দিবো আরো?
কিন্তু এই লোক টার রেগে যাওয়ার কারণ কি হতে পারে? তো নীরা আর একটু রাগিয়ে দে?না থাক আগে এর সব ইনফরমেশন হাতে পাই তারপর।আমি আর কোনো জবাব দিলাম না চলে এলাম গাড়িতে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে হয়তো উত্তর আশা করেছিলো।আমি চলতে লাগলাম! ব্যাক মিরর এ দেখি তার গাড়ি আমার পিছনে।আমি আর দেরি না করে নিসান নে কল দিলাম,

হ্যালো!(নিসান)
__কই তুই?(আমি)
আমি তো বাসায়।কেনো?(নিসান)
__আমি আসতেছি কোথাও জাইস না।
ওকে কিন্তু হয়েছে কি?
__এসে বলছি।

দেখি এখনো সে আমার পিছন পিছন ই আসছে।

একটা আন্নন নাম্বার থেকে এসএমএস এলো!

“স্টপ লুকিং বিহাইন্ড”

নাম্বার টা চেক করে দেখি স্পর্শ চৌধুরীর।

আমি বাসায় ঢুকা পর‍্যন্ত সে আমাকে ফলো করছিলো।আমি বাসায় ঢুকেই নিসান এর রুমে গেলাম।দেখি রুমে কেউ নেই!

নিস স স স! নিসস?কই তুই?(আমি)
__আমি ওয়াশরুমে!
ওয়াশরুমে কি করিস?
__আজব মানুষ ওয়াশরুমে কি করে?
তাড়াতাড়ি বের হো!

নিসান এর ফোন বেজে উঠলো!রেখি রাহার কল।প্রথম বার ধরলাম না।সে আবার দিলো!তাও ধরলাম না।সে আবারো দিলো! কি অস্থির মেয়ে রে বাবা! কল কেটে গেলো।কিন্তু না সে আবার কল দিলো।আমি ধরে বললাম,

নিস ওয়াশরুমে আছে।বের হলে কল দিতে বললো!(আমি)

__কে বলছেন আপনি?(রাহা)
নীরা!
__অহহ। আপনি ওর রুমে যে?
কিহ? (বেশ অবাক হয়ে)
__না মানে আপনি এত রাতে ওর রুমে!
কত রাত?
__এখন তো ১০ টা মত প্রায়।এত রাতে ওর রুমে!
কুতকুত খেলতে আসছি। তুমি খেলবা?ও আসলে কল দিতে বলবো।বলেই কল কেটে দিলাম!

নিসান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বললো,
কে কল দিয়েছিলো রে?
__তোর গফ!রাহা!(আমি)
অহহ।কি বলে?
__বলে এত রাতে আমি তোর রুমে কি করি!
কিহ?(বেশ অবাক হয়ে)
__হ্যা। আচ্ছা যাই হোক।সেটা বলার জন্য তোকে থাকতে বলেছিলাম!
হ্যা বল! কি হয়ে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
__স্পর্শ। স্পর্শ চৌধুরী নামে এক ছেলের সব ইনফরমেশন লাগবে!
কে এই ছেলে?(চোখ গুলো গুল্টুস গুল্টুস ভাবে দেখে আছে)
__আব্বুর বন্ধুর ছেলে। এর সাথে দেখা করতে বলেছিলো আব্বু।দেখা করে তো আহাম্মক হয়ে গেছি।ব্যাটা প্রচুর ঝানু মাল।আবার ঘাড় ত্যাড়া ও।

কিচ্ছু বুঝতেছিনা।খুলে বল?কথা কোনো মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝি না।

আমি নিসান কে সব বললাম সকাল থেকে কি কি হয়ে সব। নিসান কিচ্ছুক্ষন চুপ থেকে বললো,

হয় সে আসলেই ভালো না হয় জঘন্য। (নিসান)
__হুম আমার ও তাই মনে হয়।
হয় সে সব সত্যি বলছে নিজের ব্যাপারে না হয় সব কিছুই ঢেকে রাখছে।মানে ব্যাপার টা হয়েছে……(আমি)

কথা শেষ না হতে আবার রাহার কল এলো। নিসান বার বার কল কাটছেই। এমনি ই মাথা গরম তার উপর আবার সমস্যা করে যাচ্ছে এই মেয়ে টা। ফোন টা ছু মেরে নিয়ে রিসিভ করে বললাম।

এই মুহূর্তে যদি আর একটা কল আসে আই সোয়ার নিসান তোমার ভাগ্য থেকে টাটা বাই বাই হইলো😒।ভাই রে ভাই ইন্সিকিঊরিটির একটা লিমিড থাকে।কল কাটো!(ধমক দিয়ে কল কেটে দিলাম)

ফোন টা প্রায় আছাড় মেরেই নিসান এর হাতে ধরিয়ে দিলাম।নিসান আমার দিকে ১মিনিট তাকিয়ে হাহা করে হেসে দিলো!

নিস হাসবি না বললাম!(আমি)
__(সে হেসেই যাচ্ছে)
নিস চুপ করবি?

আবার রাহার কল এলো!নিসান হাসছে আর ফোন এর দিকে তাকালো। ফোন এর দিকে তাকিয়ে আরও জোরে জোরে হাসছে আর আমাকে ফোন টা উলটো করে দেখালো! আমি ভালো মানুষের মত হাতে ফোন টা দিলাম আর সজোরে আছাড় মারলাম।নিসেন হাসি থেমে গেলো।আর সে হায় হায় করে চেঁচিয়ে উঠলো!

আল্লাহ্‌ আমার ফোন? আছাড়া মারলি কেন? (নিসান)
__এইবার হাসো তো বাবু আর একটু হাসো?দেখি তো? হাসো হাসো?

নিসান আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার হো হো করে হেসে উঠলো!আমিও এইবার হেসে উঠলাম।ও এত টাই হাসতেছে যে ও পেটে হাত দিয়ে হাসতে হাসতে পরে থাকা ফোন এর কাছে বসে গেলো!

আমি ও হাসতে হাসতে বললাম,

এই গাধার বাচ্চা হাসতেছিস কেনো?
__হিহিহি! তোকে আবার আগের মত করে মেলা দিন পর পাইলাম।আমার আগের নীরু।যে একটু তেই রেগে যেতো।জিনিষপত্র আছাড় মারতো!একে বারে আমার নীরু!

তাই না কফি খাবি?
__হুম খাওয়া যায়।কিন্তু আমার ফোন টার কি হবে?(মুখ টা প্যাঁচার মত করে)
তা তো জানি না।আয় চাঁদ দেখি আর কফি খাই।
__আচ্ছা।(ও ভাঙা ফোন টা তুলে বিছানায় রাখলো)

আমি কফি নিয়ে এলাম।দুজনে চাঁদ দেখতে দেখতে খাচ্ছি। হালকা বাতাস বাইরে।

__নীরু?(নিসান)
হুম।(আমি)
__টেনশনে আছিস?
কিছু টা।ছেলে টা আসলেই সাইকো টাইপ্স।
__চিন্তা করিস না কাল ইনফরমেশন দিবো তরে।
হুম।

খাওয়া শেষে নিচে ডিনারের জন্য ডাকলো।খাইতে খাইতে শুনলাম কাল কের পার্টির কথা।নিসানের মুখ দেখে বুঝলাম ও ওত টা খুশি না।খাওয়া শেষে সবাই সবার রুমে চলে এলো আর আমি গেলাম নিসানের রুমে!

নিস?(আমি)
__হুম বল।
কালকের পার্টি টা নিয়ে কি তুই খুশি না?
__না সেরকম না।আসলে ব্যাপার টা কেনো জানি আমার ভালো লাগলো না।
কেনো?
দেখ সুবহা তো ওই বাড়িতে বউ হয়ে যাচ্ছেই আর এতে আবার পার্টি দেওয়ার কি দরকার।আর ও মেয়ে মানুষ এত রাতে বাইরে থাকা টা ভালো দেখায় না।

মেয়ে মানুষ বলতে?মেয়ে রা রাতে বাইরে থাকতে পারে না?(বেশ রাগ হয়েই বললাম)।আমরা তো আগে অনেক বাইরে ছিলাম।তুই ছিলি আমি ছিলাম তার মানে আমি খারাপ? বাজে চরিত্রের মেয়ে?

__নীরাহ! থাপ্পড় মারবো একটা।আমি সেটা বলছি?(আমার থেকেও বেশি রেগে)
তো কি বলছিস শুনি?

__শোন,আমরা আগে যেখানে ছিলাম মানে আমরা সে জায়গা টা আর এই জায়গাটা সেম না।এদের সমাজের নিয়ম আলাদা। মানুষ গুলো আলাদা চিন্তা ধারা আলাদা।এরা এখনো সব কাজে মেয়েদের দোষ খোজে।ছেলেদের না।এখন সুবহা ওখানে যাবে ওর কোনো তো তো সম্পর্ক এর কেউ এইটা শুনবে আমার বোন টাকে খারাপ বলবে।তাদের ছেলের কোনো দোষ ধরবে না।ছেলে মানুষ ভুল তো করতেই পারে।কিন্তু সেটাই মেয়ে রা করলে অপরাধ হয়।আর এই সমাজের নিয়ম ই এইটা। আমি কিছু করতেও পারবো না।চাইলেও না।কারন কেউ ই সমাজের বাইরে না আমিও না তুই ও না।আমি এইটা বলছি।(সব গুলো কথা এক সাথে বলে ফেললো) আর শোন তুই আমার কাছে কি আমি মুখে বলতে পারবো না।

স্যারি!
__হুম যাহ আমি ঘুমাবো।গুড নাইট।

ছেলে টা বেশ রাগ করেছে।আমি সবাই কে রাগিয়ে দেই। নীরা তোর দারা কিচ্ছু হবে না।ধুরু!!
আমি রুম থেকে বেরিয়ে আমার রুমে এলাম।এসে দেখি অনেক গুলো মিসড কল।সাইলেন্ট থাকায়

বুঝতে পারি নি। পরেই আমার সমুদ্রর কল,

হ্যা বলো?আই মিন বলেন?(আমি)
__কাল ড্রেস থিম কালার ব্লাক।(সমুদ্র)
অহহ।যাবো কিনা সিয়র না।
__কেনো?
এমনি।ইচ্ছে নেই!
__সুবহা একা আসলে ব্যাপার টা খারাপ দেখায় আর জানোই তো সমাজ কটু কথা বলতে দ্বিতীয়বার ভাববে না।
তাহলে এইটা করার কি দরকার?
__জারিফ চাইছিলো সুবহা ও চাইছিলো তাই আর কি।তো কাল শাড়ি পরবে?
কিহ?
__বললাম কাল শাড়ি পরবে?
নাহ আমার কাছে নেই!
__অহহ।
হুম।এই ফোন টা রাখেন তো।কল আসছে!
__কে কল দিয়েছে?
মনে হয় স্পর্শ। রাখেন তো ফোন টা!
__কল কনফারেন্স করো!
কিহ? (বেশ জোরে)
__বললাম কল কনফারেন্স করো।
কেনো?
__আমি বলেছি তাই।
না। কোনো করবো?
__এই রাতে তোমার বাসায় হানা দেওয়া টা ঠিক হবে কিনা বলো তো?
করছি কনফারেন্স!!

চলবে…..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *