পেইন

পেইন !! লেখাঃ এপিস ইন্ডিকা !! Part- 03

খাটের উপর বসে কেঁদে যাচ্ছে বিন্দু।।আর ভেবে যাচ্ছে কি থেকে কি হয়ে গেল তার জীবন।।৭২ ঘন্টা আগেও সব ঠিক ছিল তার।।এই ৭২ ঘন্টায় তার জীবন পুরুটাইপাল্টে দিয়েছে শিশির নামক ব্যক্তি।।যে কিনা বর্তমানে তার স্বামী।।কিছুক্ষন আগেই তাদের বিয়ের কার্য শেষ হয়েছে।।বিন্দু না চাইতেও এ বিয়ে করতে রাজী হয়েছে।।নয় তো তার বাপ-ভাই এখন জেলে থাকতো।।

(কি হয়েছিল কিছুক্ষন আগে চলেন যেনে আসি।।আমি ও জানি না কি হইসিল🤔।আপনাদের সাথে জানবো আরকি 😁😁)

ঘুমন্ত বিন্দুর মুখে এক জগ পানি ঢেলে দেয় শিশির।।চোখে মুখে এভাবে পানি পড়াতে ধড়ফড়িয়া উঠে বসে বিন্দু।। হটাৎ এমন হওয়ায় হতভম্ব হয়ে গেল বিন্দু।।কিছু বুঝে উঠার আগেই হাতে টান পরে তার।।হাতের দিক তাকিয়ে বুঝতে পারে এ কাজটি সামনে থাকা লোকটির।।বিন্দু শিশিরের এভাবে হাত টান দেয়া যেন রাগ লাগছে।। সে সাথে সাথে হাতটা ঝারা মেরে শরিয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠে,,

—–আপনার সাহস তো কম না,,বলা নেই কওয়া নেই একজন পুরুষ হয়ে অপরিচিত মেয়ের হাত ধরে টানাটানি করছেন!!ভদ্রতা জানেনা নাকি??

শিশির কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে বলতে লাগে,,

—–ভদ্রতা জানি।।আর এ ও জানি আমি কোনো পর নারীর হাত ধরি নাই!!আমার হবু বউয়ের হাত ধরেছি।।

বলে আবার হাত ধরে বিছানা থেকে টেনে নামালো।।
বিন্দু অবাক শিশিরের কথায়।।সে বলল,,

—-কি যাতা বকে চলেছেন?আমি আপনার হবু বউ হবো কোন দুঃখে।।আর আমার বিয়ে অল রেডি ঠিক হয়ে আছে।।

শিশির সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে হাত টেনে যেতে যেতে বলতে লাগে,,,

—–চল!

বিন্দুরএবার আর চেষ্টা করেও হাত ছাড়াতে পারছে না।।বিন্দু হাত ছুটাতে ছুটাতে বলতে লাগলো,,,

—–কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন??আর আপনি কে?? কেনই বা আমাকে নিয়ে এসেছেনঁ??প্লিজ যেতে দিন! কোথায় আমি??

শিশিরের এবার যেন খুব রাগ লাগছে।।সে এবার বিন্দুকে তার বরাবর দাড় করিয়ে বলতে লাগে,,

—-বিয়ে করতে!!

বিষম খেল বিন্দু।।কিছু বুঝে উঠার আগেই আবার যেতে লাগলো শিশির।।তখনি বিন্দু তার সকল শক্তি প্রয়োগ করে ধাক্কা মারে শিশির কে।।শিশির কিছুটা আন ব্যালেন্স হয়ে পরে যেতে নেয় কিন্তু পরে না।।
তখনি বিন্দু বলে উঠে,,

—-আপনি আমার কথা বুঝেন না!! নাকি অবুঝ আপনি? বার বার বলছি আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।। আর কে আপনি?? এতো কিসের অধিকার খাটাচ্ছেন আপনি আমার উপর!! খবরদার আরেক বার আমাকে স্পর্শ করেছেন তো…!

—-তো…?

—-জানে মেরে ফেলবো আপনাকে!! আপনি জানেন আমি কে?? যদি জানতেন তাহলে আমাকে স্পর্শ করার সাহস পেতেন না আপনি।।

শিশির এবার হো হো করে হাসিতে মেতে উঠলো।।বিন্দু এক ভ্রু উচু করে চেয়ে ভাবছে লোকটি বুঝি পাগল হেয়ে গেছে।।মুহুর্তেই গম্ভীর হয়ে উঠে শিশির আর বলতে লাগে,,

—-অনেক বলেছ।।আর আমিও অনেক শুনেছি।।এবার চল।। আর দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।।

শিশিরের কথায় ২ পা পিছিয়ে গেল বিন্দু।।এতক্ষন পর্যন্ত নিজেকে শক্ত রাখতে পারলেও এখন আর পারছে না সে,,,কান্না আসচ্ছে তার।।বুঝতেই পারছে এ লোক খুব তেড়া এর সাথে সে পারবে না।।তাও সে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে ।।
তখনি শিশির হুমকির সুরে বলে উঠে,,

—-যদি নিজের বাবা-ভাইয়ের ভাল চাও,,! তাহলে চল।।

বিন্দু চমকে তাকালো।।শিশির মুচকি হেসে আবার হাত টান দিতে নেয়।।বিন্দু হাত শরিয়ে নেয়।।আর তাচ্ছিল্য একটা হাসি দিয়ে বলতে লাগে,,

—-আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন।।রাহিন সরকারের বোনকে?? আপনি চিনেন তাদের হুম! একবার জানতে পেল আপনার মাথাটা থাকবে না।।

রাহিন সরকার নামটা শুনার সাথে সাথে রাগ চেপে বসে মাথায় শিশিরের।।সে সাথে সাথে বিন্দুর কিছু চুল হাতের মুঠে টেনে ধরে বলতে লাগে,,

—-রাহিন সরকারের নামটা না নিলেই পাড়তিস।।ভালো খাতির করছিলাম ভাল লাগেনি তোর!! এখন দেখছি তোকে আমার খারপ দিকটা দেখাতেই হবে।।খুব তেজ না তোর শরীরে সেই ছোট থেকে।।পাই পাই হিসেব নেবো আমি আজ।।একবার বিয়েটা হতে দে।।

বিন্দু ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে।।বার বার হাত ছোটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু ব্যর্থ হচ্ছে প্রতিবার।।চোখ দিয়ে পানি পরছে টপটপ করে।।বিন্দু কাঁদ কাঁদ গলায় বলে উঠে,

—–প্লিজ ছাড়ুন।। অনেক পেইন হচ্ছে।।

শিশির আরো জোড়ে টান দিল, ব্যথায় আরো জোরে চিৎকার করে উঠলো সে।।
শিশির এবার চুলে টেনেই নিচে নামাতে নিল,,
কিন্তু বিন্দু হার মানতে রাজী নয়।।এবার রাগ বেরে গেল শিশিরের।।বিন্দুকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিল।।
সাথে সাথে ফ্লোরে পরে গেল বিন্দু।।তখনি শিশির বলতে লাগে,,

—-তোরা ভাল কথা, কাজ কোনোটারি দাম দিতে যানিস না।।বা শিক্ষিস ও নি।।কি ভাবিস তোরা।।উপরে হাদীস কোড়আন দেখাবি।। আর নিজ দিয়ে পাপ কাজ করে বেড়াবি কেউ কিছু বলবে না।।

শিশিরের কোনো কথার অর্থ বিন্দু বুঝলো না।।না বুঝারি কথা,,।। বিন্দু বলে উঠলো,,

—-কি যাতা বলছেন??

শিশির সাথে সাথে দু হাতে তালি বাজালো।। সঙ্গে সঙ্গে টিভির স্ক্রিনে বিন্দুর বাপ ভাইয়ের ছবি ভেসে উঠলো।।ছবিটি দেখে সাথে সাথে হাসি ফুটলো বিন্দুর ঠোঁটে।।কিন্তু হাসিটা ছিল ক্ষনিকের।।যা পর মুহুর্তে আরেকটি ছবি দেখে মিশে গেল।।ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে তার ভাই কাউকে জবাই করছে,, আর তার বাবা সেই লোকের পা দুটি চেপে ধরেছে।।
ধপ করে বসে পরে ফ্লোরে বিন্দু।।আর কাঁদতে লাগে,,
আর ভাবতে লাগে,,
তার বাবা আর ভাই আল্লাহওয়ালা মানুষ তারা এটা কিভাবে করছেন।।ছবিটি দেখে ভয়ে কেঁপে উঠছে বার বার বিন্দু।।কি নির্মম ভাবেই না হত্যা করছে লোকটিকে।।তখনি শিশির বলে উঠে,,

—-বিয়ে করবে নাকি জেলের ভাত খাওয়াবো তোমার রাহিন ভাইকে।।

ছল ছল চোখে তাকালো শিশিরের দিক বিন্দু আর বলল,,

—-আপনি মিথ্যা বলছেন না!

শিশির মাথা নাড়ালো।।

যে না।। সে বলল,,

—-এমন অনেক প্রুব আছে তোমার পরিবারে এগেনস্টে।।এখন তোমার হাতে সব।।আমি নিচে যাচ্ছি,, ১০মিনিটে নিচে না আসলে এসব কিছু আমি পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দেব।।

কথা শেষ শেষে বের হয়ে গেল শিশির ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি।।
শিশির যেতেই হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে বিন্দু।।তার বাবা-ভাই এমন হবে ভাবতে পারেনি সে।।কতই না গর্ব ছিল তাদের নিয়ে সব ভেঙ্গে চুরমার।।আর যাই হোক ভালবাসে তাদের।।জেলে দেখতে পারবেনা সে।।নিজের মনকে বুঝিয়ে নিচে নেমে আসে বিন্দু।।
নিচে কাজি এসে বসে আছেন।।বিন্দু যেতেই রীতিনীতি মেনে বিয়ে হয়ে যায় বিন্দুর।।কাজিকে রাহুল নিয়ে চলে যায়।।আর শিশির বিন্দুর হাত চেপে ধরে টেনে নিয়ে যায় তার ঘরে।। আর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বিছানায়।।আর বলতে লাগে,,

—-কি এইটুকুতেই তেজ ফুড়ুয়ে গেল।।এখনো সাপ নচুনি বাকি আছে।।এভাবে তাকিও না সোনা বুকে লাগে খুব।।যাও রাতের জন্য তৌরি হয়ে নেও আজ তো আমাদের বাসর রাত।।

শিশিরের দিক ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে থাকে বিন্দু।।
শিশির মুচকি হেসে চলে যায়।।
সেই তখন থেকে বিছানায় বসে কেঁদে যাচ্ছে বিন্দু।।

প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসচ্ছে।। বিন্দুর এদিকে ছটফটানি বাড়ছে।।তখনি আযান দিল সন্ধ্যার।। বিন্দু হাত মুখ ধুয়ে ওযু করে নামাজ পরে নিলো।। তারপর দোয়া করতে বসলো।।অনেক দূর্বল থাকায় জায়নামাজেই শুয়ে থাকে বিন্দু।।

রাত প্রায় ১২ টা।। শরীরে কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে শিহরিত হতে থাকে বিন্দু।।স্পর্শ গভীর হতেই জেগে যায় বিন্দু।।চোখ মেলে শিশির কে দেখে উঠে যেতে নেয় বিন্দু।।দুর্ভাগ্য বিন্দুর পারে না।। কারণ তার হাত – পা চারদিক দিয়ে বাঁধা খাটের সাথে,,।বিন্দু মিনতির সাথে বলতে লাগে,,

—-প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন।।আমার কোনো ক্ষতি করবেন না।।

শিশিরের যেন সে দিকে খেয়াল নেই।।নেশাগ্রস্তদের মতো সে বিন্দুর পায় তার ঠান্ডা হাত দিয়ে ছুয়ে দিয়ে যাচ্ছে বার বার।।ধীরে ধীরে তার হাত উপরে উঠতে লাগলো।।আর স্পর্শ গুলো গাড়ো হতে লাগলো।।তখনি,,,

চলবে,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *