পূর্ব রোদ

পূর্ব রোদ !! Part- 37 [সমাপ্তি পর্ব]

#লেখিকা_আমিশা_নূর
সময় যেমন কারো জন্য থেমে থাকে না তেমনি প্রকৃতিও যেনো নিজের গতিতে পরিবর্তন হয়।দেখতে দেখতে তিন’টা বছর পার হয়ে যায়।পূর্ব তার পড়ালেখা কানাডা’য় সমাপ্ত করে আজ নিজ দেশের মাটিতে পা রাখবে।তার বাড়ি’তে গমগম একটা ভাব লেগেই আছে।আজ সকাল থেকে রোদ কোন শাড়ি পড়বে তা নিয়ে বেশ চিন্তিত।কার্বাডের সব শাড়ি সে বিছানায় রাখলো।রোদ ভিষণ ভাবে কনফিউজড কোন শাড়ি পড়বে?
ভাবান্তর হয়ে থুতনিতে হাতের আঙ্গুল লাগিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলো কী করা যায়?তখন তার পরণে থাকা শাড়ি’র আচলে টান পড়লো।রোদ পেছন ফিরে দেখলো তার দু বছরের “নক্ষত্র” কাঁদো কাঁদো চেহেরায় ঠোঁট উল্টিয়ে আছে।এখন সে গুটিগুটি পায়ে হাটতে পারে।নিজের মেয়ে’কে দেখে রোদ আহ্লাদ করে বললো,”আমার মেয়ের কী হয়েছে?কে বকেছে মা?”

নিজের মায়ের আহ্লাদ দেখে নক্ষত্র তার কান্না শুরু করে দিলো।বাচ্চাদের সাথে কেউ আহ্লাদ করে কথা বললে তাদের কান্নার বেগ যথেষ্ট বেড়ে যায়।রোদ “ও ও” বলে নিজের সন্তান’কে বুকে জড়িয়ে নিলো।এই সন্তান আসার পর থেকে রোদের আর একা অনুভব হতো না।নক্ষত্র দেখতে হুবহু পূর্বের মতো হয়েছে।বাড়ির বড়’রা এটাই বলে।
যেদিন পূর্ব’কে সন্তানের কথা জানানো হয় পূর্ব তখন টানা দু’মিনিট চুপ ছিলো।রোদ বেশ ভয় পেয়েছিলো।না জানি কথা বলা না অফ করে দে।কিন্তু ঠিক হলোও তাই রোদের সাথে এক সপ্তাহ কথা বলেনি।তবুও রোদের খোঁজ খবর,তার মেয়ের খবর সবটা পূর্ব তার অন্য আপনজনদের থেকে নিতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে পূর্ব নিজের রাগ’কে কমিয়ে রেখে সব ঠিক করে নেয়।তবে রোদের উপর তার ভিষণ ক্রোধ!সন্তান জন্মানোর সময় একটি বারের জন্যও পাশে থাকতে দিলো না।যদি পূর্ব জানতো সে বাবা হবে তাহলে কানাডা থেকে চলে আসতো।তার বাচ্চা পৃথিবীর আলো দেখেছে জানার পর পরই আসতে চেয়েছিলো।কিন্তু বাড়ির সবাই বকেছে বলে একেবারে তিনবছর কর আসতে হয়।

“ফুলা মেলেছে মা…” নক্ষত্রের কান্নার বেগ বেড়ে গেলো।কান্নার শব্দে রোদ ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে এলো।নক্ষত্র স্পষ্টভাষী এখনো নয়।আলতো আলতো করে কথা বলে।সবাই তার কথা না বুঝলেও রোদ সবটা বুঝে।তাই তো নক্ষত্র তার মা ছাড়া কিছু বুঝে না।এখানে নক্ষত্র ‘ফুলা’ বলে রাফিয়া’কে সম্মোধন করছে।ফুলা বলে ডাকার জন্য রাফিয়া শিখিয়ে দিয়েছে।রাফিয়া’র কথা অনুযায়ী সে পূর্বের বোন হলে ডাকতো ‘ফুফি’ আর রোদের দিক থেকে ‘খালা’।তাই দু’টো মিলিয়ে ডাকে ‘ফুলা’।
রাফিয়া নক্ষত্র’কে মারায় রোদ বেশ রেগে গেলো।আজ রাফিয়া প্রথম মেরেছে তা না মাঝেমধ্যে নক্ষত্র’কে একা পেলেই মারে।তবে আজ তার একটা হস্তক্ষেপ করবেই।
রোদ তার মেয়ে’কে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।নিচ তলায় গিয়ে দেখলো আলো,রাফিয়া আর তিহান আড্ডা দিচ্ছে।রান্নাঘর থেকে টুংটাং আওয়াজ আসছে।চাঁদনি মোহাম্মদ আর ছায়া আহমেদ তাদের ছেলের জন্য রান্না করছে।
রোদ গিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ালো।ওমনি সুরসুর করে রোদের কোল থেকে নক্ষত্র নেমে তিন জনের মাঝখানে বসে গেলো।নক্ষত্রের চোখে জল নেই।রোদ রাগি ভাব নিয়ে রাফিয়া’কে বললো,”তুই আমার মেয়ে’কে মারলি ক্যান?”
রোদের কথা শুনে রাফিয়া দাঁত কেলিয়ে হাসলো।এতে রোদ আরো রেগে আলতো করে চড় দিলো।অমনি নক্ষত্র ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো।নক্ষত্রের সামনে কাউকে বকলে বা মারলে সবসময় কেঁদে দেয়।রোদ শাসানোর স্বরে রাফিয়া’কে বললো,
“দেখছিস?তোকে মারছি দেখে নক্ষত্র কাদে।তুই শুধু শুধু মারিস ক্যান?”
“কই মারি শুধু শুধু?তুই স্কুলে থাকার সময় আমাকে যে মারতি তা তোর মেয়ে’কে মেরে উসুল করি।কিন্তু এখন তোর মেয়ে আমার কী হাল করছে দেখ…”
রাফিয়া নিজের কাঁধা দেখালো যেখানে ছোট ছোট দাঁতে ছাপ স্পষ্ট!রোদ নক্ষত্রের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।নক্ষত্র আলোর পেছনে মুখ লুকালো।রাফিয়া আর নক্ষত্র দুজনে কারো থেকে কেউ কম না।নক্ষত্র আজ অবধি রাফিয়া ছাড়া কাউকে কামড় দেইনি।তাই রাফিয়াও যা ইচ্ছে করে।
রোদের দৃষ্টি তিহানের দিকে গেলো।সে চুপচাপ ফোন টিপছে।এই তিনবছরে তিহানের মাঝে অনেক পরিবর্তন এসেছে।আগের মতো এলোমেলো না।গুছানো স্বভাবের আছে।আর একটু মোটাও হয়েছে।রোদ তিহান’কে উদ্দেশ্য করে বললো,”নাবিলাপু’র সাথে কথা হয়েছে ভাইয়া?”
রোদের কন্ঠস্বর পেয়ে তিহান মোবাইলেড স্কিন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রোদের দিকে তাকালো।যতবারই রোদের সাথে তার দেখা হয়েছে প্রতিবার রোদ একটা প্রশ্নই করে।আর উত্তর টাও তিহানের মুখস্থ।সে নির্দ্বিধায় বললো,
“হুম হয়েছে।”
“কেমন আছে আপু?”
“ভালো আছে।”
“ওহ।”
রোদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললো।নাবিলা আমেরিকা গিয়েছিলো তিনবছর আগেই।আমেরিকা যাওয়ার পর থেকে নাবিলা আর বাংলাদেশে আসেনি।রোদ ফোন করে যখন কান্নাকাটি করতো তখন নাবিলা কল কেটে দিতো।নাবিলা থেকেও কঠিন হয়ে গেছে।কেউ যদি তাকে বাংলাদেশ আসার কথা বলে তাহলে তখনি কল কেটে দে শুধু তার মা ছাড়া।নাবিলা’র এমন ব্যাবহারে রোদ আর নাবিলাকে কল দে না।প্রথম কয়েকদিন নাবিলা করতো কিন্তু রোদ রিসিভ করতো না।তারপর একসময় নাবিলাও আর কল করে না।তখন রোদ-নাবিলা’র মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়।তবে নাবিলা বাড়ির বাকি সদস্যের সাথে ঠিকই কথা বলে।
হঠাৎ তিহান উচ্চস্বরে বলে উঠলো,”ইন্না-লিল্লাহ!এখন তো বারোটা বাজতে চললো।ভাবি তুমি যাবে এয়ারপোর্টে?”
“এয়ারপোর্ট?নাহ।রাফিয়া আর তুমি যাও।”
“ইন্না-লিল্লাহ।কেনো ভাবি?”
“নক্ষত্র আর আমি থাকি।তোমরা যাও।”
রোদের কথার বিপরীতে তিহান আর কথা বললো না।রাফিয়া-তিহান এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেলো।রোদ নক্ষত্র’কে আলোর কাছে রেখে আবারো রুমে গেলো।শাড়ি পরার উদ্দেশ্য….
পাক্কা আধ ঘন্টা সময় নিয়ে রোদ শাড়ি ঠিক করে রাখলো।সিলেক্ট করা শাড়ি’টা বিছানায় রেখে রোদ রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।গিয়ে দেখলো চাঁদনি মোহাম্মদ চুলায় থাকা চিংড়ি বোনা নেড়ে দিচ্ছে আর সাথে ছায়া মোহাম্মদ কথা বলছে।তাদের দৃষ্টি রোদের উপর পড়তেই জিজ্ঞেস করলো,
“তুই এখানে কী করিস?বাকিরা কই?নক্ষত্র কই?”
“আলোর কাছে নক্ষত্র।তিহান ভাইয়া আর রাফিয়া এয়ারপোর্টে গেলো।”
“তুই যাসনি?”
“নাহ।কী করছো তোমরা?


রোদের প্রশ্নে চাঁদনি মোহাম্মদ উত্তর দিলেন,”রাঁধছি।”
“কতো করে বললাম আমি রান্না করি।”
“তুই নক্ষত্র’কে সামলা।”
“বাবা কোথায়?”
“বাইরে গেছে।”
“ওহ।”
রোদের কানে ভেসে আসলো নক্ষত্রের কান্নার আওয়াজ।রোদ জানে নক্ষত্রের খুদা লেগেছে এখন।তাই প্লেটে করে ভাত নিয়ে গেলো।


রোদের আজ অনুভূতি’টা অন্যরকম।কতো বছর পর দেখবে পূর্ব’কে!রোদের মনে হয়েছিলো এক-একটা দিন যেনো কারো দেওয়া অভিশাপ!কিন্তু নক্ষত্রের দিকে তাকালে সব কষ্ট ভূলে যেতো।রোদের ভাবতেই খুশি লাগছে পূর্ব আসলে তার ছোট্ট কুঁড়ে ঘরের অপূর্ণতা পূর্ণ হবে।আচ্ছা,পূর্বের রিয়াকশন কেমন হবে তাকে দেখে?
রুমে থাকা কাঁচের আয়না’র দিকে তাকিয়ে রোদ তার চোখে কাজল পরে নিলো।ঠোঁটে শুধু হালকা লিপস্টিক দিলো।আর গায়ে পরলো নীল-কালো কাতান শাড়ী।সাজা সম্পূর্ণ হলে রোদ আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে বললো,”বাহ পূর্বে শঙ্খপুষ্পি!তোকে দারুণ লাগছে।”
রোদ ‘শঙ্খপুষ্পি’ র মানে জানে।কেরালায় নীলকন্ঠ ফুল’কে শঙ্খপুষ্পি বলে ডাকে।তার পূর্ব তাকে সেদিন নীল শাড়ি পরায় ‘শঙ্খপুষ্পি’ নাম দে।
রোদের কানে ভেসে আসলো গাড়ির হর্ণ।হয়তো তারা এসে গেছে।রোদ দ্রুত গতিতে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে নিজেকে বললো,”রোদ রিলাক্স!উত্তেজনা দেখাস না।”
রোদের আর সামনে এগোতে হলো না।পূর্ব’কে সাথে করে রাফিয়া আর তিহান ভিতরে প্রবেশ করলো।পূর্ব’কে দেখে রোদ থমকে গেলো।ভিতরে চলতে থাকা স্পন্দনের গতি বেড়ে গেলো।আগে থেকে পূর্বকে অনেকটা ভদ্র দেখাচ্ছে।গালে থাকা সুন্দরময় দাঁড়ি।রোদ যেনো অন্য এক পূর্বের দেখা পেলো।কিন্তু পূর্বের সেই ঘায়েল করা চাহনি এখনো একই রকম।রোদের চোখ জলে ভর্তি হয়ে এলো।ধীরে পায়ে সে বাকি সিঁড়ি পার করলো।পূর্ব এখন তার কাছে।তার সামনে!যাকে ধরা যাবে,ছোঁয়া নেওয়া যাবে,মনভরে তাকিয়ে তাকা যাবে।
রোদ শুধু চেয়ে আছে তার হরিচন্দনের দিকে।পূর্ব আলতো করে তার হাত রোদের গালে ছোঁয়ালো।অমনি রোদ পূর্ব’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।পূর্ব রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।রোদকে সে নিজের থেকে আর কোনোদিনও আলাদা করবে না।কোনোদিনও না।
“এহেম এহেম।”
রাফিয়া’র গলা ঝাঁকানো শুনে ওরা একে অপরকে ছেড়ে দিলো।পূর্ব শীতল কন্ঠে রোদকে জিজ্ঞেস করলো,”নক্ষত্র কোথায়?”
শীতল কন্ঠ!তিন বছর পর।পাক্কা তিন বছর পর এই কন্ঠস্বর কাছ থেকে শুনে।রোদ আগের মতো চাহনিতেই তাকিয়ে রইলো।তখন রাফিয়া বললো,”ভাই পূর্ব,রোদ এখন অন্যজগতে আছে।”
রাফিয়া’র কথায় রোদ বেশ বিরক্ত হলো।কথার মাঝখানে শুধুই বিরক্ত করে।রোদ পূর্বের উদ্দেশ্যে বললো,”নক্ষত্র ঘুমিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।”
পূর্ব বাড়ির সবার সাথে হালকা কথা বলে নিজের রুমে চলে এলো।চৌকাঠে পা রেখে ভিতরে দৃষ্টি ফেললো।বিছানায় চারপাশে কৃত্রিম পুতুলের মধ্যে প্রকৃত পুতুল ঘুমিয়ে আছে।পুতুলটা তার মেয়ে!নিজের মেয়ে!পূর্বের আফসোস হয় খু-ব।নক্ষত্রের জন্মের সময় সে রোদের পাশে ছিলো না।
পূর্ব রুমে হালকা পা টিপে টিপে ভিতরে ঢুকে নক্ষত্র থেকে কয়েক ফুট দূরত্বে গিয়ে বিছানায় বসলো।ভিডিও কলো যখন তার মেয়ে’কে দেখতো তখন ইচ্ছে হতো একটু ছুঁয়ে দেখি।পূর্বের ইচ্ছে আজ পূরণ করে নিলো।ঘুমন্ত নক্ষত্রের কপালে চুমু দিলো।পূর্ব পিতৃত্ব অনুভব করছে।প্রত্যেকটা সম্পর্কের অনুভূতি মনে হয় আলাদাই হয়।
পূর্ব ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে সবার দৃষ্টি দরজার দিকে।সবার দৃষ্টি অনুসরণ করে পূর্ব দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো নাবিলা সুটকেস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মুখে গম্ভীর একটা ভাব!পূর্ব তাকে দেখে এগিয়ে এলো।নাবিলা’কে উদ্দেশ্য করে বললো,
“কখন এলি?আন্টি আর মেঘ কই?”
“আসছে।এখন এলাম।”

“ভিতরে আয়।”
নাবিলা ভিতরে ঢুকতেই তিহান তার কাছে এসে বললো,”ইন্না-লিল্লাহ মোটি,তুই চিকনা হয়ে গেছিস।”
তিহানের কথা শুনে নাবিলা রেগে বললো,”কবে মোটি ছিলাম আমি?তুই মোটা হয়েছিস।”
নাবিলা পূর্বের মা,রোদের মা সবার সাথেই কথা বলে নিলো।রোদের সাথে কথা বলতে চাইলে রোদ মুখ ঘুরিয়ে নে।এতে নাবিলা অবাক হয় না।সে আগে থেকে জানতো এমন কিছু একটা হবে।নাবিলা দুহাতে রোদকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,”সরি বোন!কিন্তু আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারিনি।”
নাবিলার কথা রোদ অভিমানি কন্ঠে বললো,”এখন কেনো এসেছো?চলে যাও।”
“বাংলাদেশে এসেছি দু’দিন আগে।মেঘের বিয়ে উপলক্ষে।”
“মেঘের বিয়ে?”
“হ্যাঁ।কেনো তুমি জানো না?সবাই তো জানে।”
“আমাকে কেউ বিন্দুমাত্রও জানায়নি।”
রোদ সবার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো।তখন পূর্ব বলে উঠলো,”আমি বলেছিলাম তোমাকে না বলতে।নাবিলা এসে সারপ্রাইজ দিবে তাই।”
রোদ কিছু বলার আগে বাড়ির ভিতর মেঘ আর নিনা হাসান প্রবেশ করলো।রোদের সাথে মেঘের দেখা হয়েছিলো নক্ষত্রের জন্মের পরে।নিনা হাসান যখন রোদকে দেখতে আসে তখন মেঘও সাথে করে এসেছিলো।কিন্তু মেঘ রোদের সাথে কোনোরকম কথা বলেনি আর রোদও তার কথা শুনার অপেক্ষা করেনি।
নিলয়ের মৃত্যুর কথা সবাই জানে।তাই নাবিলা’র আমেরিকা চলে যাওয়াতে সবাই ওর অবস্থা বুঝতে পারে।কিন্তু রোদের অভিমান ছিলো যা নাবিলা’কে কাছে পেয়ে এখন আর বিরাজ করছে না।নিনা হাসান জানিয়ে দিলেন সামনের ৩০তারিখ মেঘের বিয়ে।মেঘের বিয়ে শুনে রোদ খুব খুশি হয়েছে।এতোদিন যে সামান্য অপরাধবোধ ছিলো তা আর নেই।


“কী দেখছো শঙ্খপুষ্পি?”
“চাঁদ!”
“কী দেখো চাঁদে?”
“সুখ!”
“কী সুখ?”
“আমাদের চারপাশ কেমন দেখছো?শুধু অপেক্ষা!টানা তিন বছর পার করার পর আমাদের কপালে সুখ লিখনটা ভেসে উঠেছে।”
“সুখটাকে হারিয়ে যেতে দিলে বারবার লুকোচুরি খেলে।জানো তো?”
রোদ স্নিগ্ধ ভাবে পূর্বের দিকে তাকালো।চাঁদের আলো’তে বারান্দা জলমলে হয়েছে।চাদের আলো পূর্বের সারা শরীরে পড়ছে।রোদের হিংসে হয় প্রকৃতি’র উপর।তারা কতো সুন্দর করে পূর্বের সারা শরীরে মিশে যেতে পারে অথচ রোদ পারে না।
এসব আবোল-তাবোল চিন্তা ভাবনা করছিলো রোদ।পূর্ব তার সামনে তুড়ি বাজিয়ে বললো,”ভাবো কী?”
“নাবিলা আপু কী আবার আমেরিকা চলে যাবে?”
“ওর যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো।”
“কেনো?”
“নিলয়ের স্মৃতি দিন দিন ও কে নিখুঁত ভাবে কষ্ট দিচ্ছে।ও সেটা নিতে পারছে না।সবার আড়ালে কাঁদে।এখন ওর রুমে গিয়ে দেখো ও কাঁদবে।একটা রাতও ভালে করে কাটেনি ওর।”
“কিছু ভালোবাসা এমন কেনো হয়?”
“ভালোবাসায় সুখ,দুঃখ,অভিমান,রাগ সব আছে।সময়ের গতিতে ঘুরে ঘুরে সব দেখা দে।এক না একসময় যেকোনো একটা স্থায়ী হয়।যেমন আমার-তোমার সুখ,নাবিলা’র দুঃখ।”
“আগের নাবিলা আপু’কে মিস করি খু-ব।”
“আন্টি নাবিলাকে যেতে দিবে না।একবার মেঘের বিয়ে হোক নাবিলা’র বিয়ের ব্যবস্থা করবো।”
“আচ্ছা,মেঘের বিয়ে কীভাবে ঠিক হলো?আর তুমি সব জানতে?”
“আমাকে আন্টি আর নাবিলা বলেছে।মিহু নামের একটা মেয়ের সাথে বিয়ে হচ্ছে।সম্পর্কে ওর ফুফির মেয়ে হয়।”
“ওহ।”
রুম থেকে নক্ষত্রের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো।পূর্ব তাড়াতাড়ি গিয়ে নক্ষত্র’কে নিয়ে আসলো।কিন্তু নক্ষত্র হাত টেনে তার মায়ের কাছে চলে গেলো।পূর্ব বিড়বিড় করে বললো,
“শুধু মা’কে চিনোস।আমাকে চিনোস না?আমি তাের বাপ।”
পূর্বের কথা শুনে রোদ দাঁত কেলিয়ে হেসে দিলো।নক্ষত্র তার মায়ের হাসি দেখে নিজেও হেসে উঠলো।তখন পূর্ব অবাক হয়ে বললো,”মা হাসলে বাচ্চাও হাসে?”
“পূর্ব কী শুরু করেছো?ঘুমাতে দাও ও কে।”
রোদ তার মেয়ে’কে কাঁদে নিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করলো।রোদের চেহেরায় এখন মা স্বাভাবের ভাব!এরকম ভাবটা রোদকে খু-ব বেশি মানিয়েছে।পূর্ব এক ধ্যানে পূর্বের দিকে তাকিয়ে রইলো।এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রোদ বললো,
“কী দেখছো?”
“তোমাকে শঙ্খপুষ্পি।”
“আজ নতুন দেখছো নাকি আমাকে?”
“উহু।”
পূর্ব ঘোর লাগা কন্ঠে কথাটি বলে রোদের চুল বেঁধে রাখা রাবারটা খুলে দিলো।সাথে সাথে রোদের ঢেউখেলানো চুল ছড়িয়ে পড়লো সারা পিঠময়।রোদ কিছু একটা বলতে গেলে পূর্ব তার ঠোঁট জোড়ায় আঙ্গুল দিয়ে কপালে চুমু দিলো।তাদের মেয়ে নক্ষত্র তখনো রোদের কাঁধে ঘুমিয়েছিলো।কী সুন্দর দৃশ্য!
চাঁদের গম্ভীর আলো ছড়িয়ে পড়েছিলো তাদের বন্ধনের উপর।আজ তারা খুশি!পূর্ব-রোদ খুশি!
[সমাপ্ত]
বি.দ্রঃআসসালামু আলাইকুম!{সালামের জবাব আশা করছি}এই গল্পটা লিখতে গিয়ে অনেকটা ভালোবাসা পেয়েছি।জানিনা আপনাদের কতোটুকু ভালো লেগেছে।তবুও ধৈর্য্য ধরে এতোদিন গল্পটার পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ❤।সাইলেন্ট রিডার এবারো গঠনমূলক মন্তব্য করেন😐।