পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 43

__________________________
—-“ হিশশ্!আমি আমি অরিত্রান।এমন মাছের মত নড়াচড়া করছো কেন??”
অরিত্রানের কন্ঠ শুনে ওয়াসেনাত কয়েক মুহূর্তের জন্য নাড়াচাড়া বন্ধ করে দেয়।চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।আবছা আলোতে অরিত্রানের মুখ হালকা হালকা বুঝা যাচ্ছে।চোখের উপরে পড়ে আছে চুল।সবুজ চোখ জোড়া দেখা যাচ্ছে।ওয়াসেনাত আবার নড়েচড়ে উঠে।উম উম করে শব্দ করে।তার মুখের দিকে ইশারা করে।অরিত্রান দ্রুত হাত সরিয়ে নেয়।বলে,
—-“ চিৎকার করবে না কিন্তু!”
ওয়াসেনাত হাপায়।রাগ দেখিয়ে তাকায়।অরিত্রানকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দেয়।তারপর বলে,
—-“ আমার তো দমই বন্ধ হয়ে এসেছিলো।এভাবে কেউ ধরে??চোরের মত এমন টেনে এনেছেন কেন??”
—-“ চোরের মত কেন আনতে যাবো??নিজের জিনিস কেউ কি চুরি করে??আমি তো এমন কিছু শুনিনি??”অরিত্রানের স্বাভাবিক কন্ঠ।
ওয়াসেনাত চলে যেতে চায়।হাত টেনে কাছে নিয়ে আসে অরিত্রান।কঠিন সুর তুলে বলে,
—-“ ওই দিকে আর যাবে না।”

ভারি অবাক হলো ওয়াসেনাত।বললো,
—-“ কেন??”
—-“ অরূপকে আমার পছন্দ না তাই।ওরে মেরে ফেললে তোমার বাবা আবার খুনি খুনি করে গলা ফাটাঁবে তাই এড়িয়ে চলছি।আমার একটা ভুল সিদ্ধান্ত তোমার আর আমার মাঝে দেয়াল হয়ে দাড়াক আমি চাই না।”
ওয়াসেনাত চোখ তুলে তাকায়।তাকিয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড।লোকটা বেশিই ভালোবাসে তাকে।কেন??প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু সে করছে না।ওয়াসেনাতের হাতটা ধরে অরিত্রান।টেনে নিয়ে আসে পিছনের দরজা দিয়ে।ওয়াসেনাত কয়েক বার প্রশ্ন করে কোথায় যাচ্ছি??অরিত্রান জবাব দেয় না।টেনে নিয়েই চলেছে সে।
রাস্তার সামনে দাড়িয়ে আছে ওয়াসেনাত।অরিত্রান গাড়ি নিয়ে আসে।চোখমুখ কুঁচকে তাকায় ওয়াসেনাত।বলে,
—-“ আপনার এই খাটারা গাড়িতে করে আমি যাবো না।”
চমকিত চোখে তাকায় অরিত্রান।কিছু সময় চুপ থেকে বলে,
—-“ তোমার কি আরো ভালো ব্র্যান্ডের গাড়ি চাই???”
বিরক্তি মুখে তাকিয়ে থাকে ওয়াসেনাত।অরিত্রান তাকিয়ে আছে তার মুখের দিকে।ফোন হাতে নিয়েছে সে।বাড়িতে কল করবে।ড্রাইভারকে বলবে আরেকটা গাড়ি নিয়ে আসতে।ওয়াসেনাত বললো,
—-“ ধেৎ!কিসের ব্র্যান্ড ফ্রেন্ড।গাড়ি থেকে নামুন।”
অরিত্রান সময় নিলো না।নেমে দাড়াঁলো।ওয়াসেনাত আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে।দুর থেকে রিকশা আসছে।হাত নাচিয়ে ওয়াসেনাত ডাকে।অরিত্রান ভ্রূ জোড়া অনেকখানি কুঁচকে বললো,
—-“ এটা কেন ডাকছো??”
—-“ কারন আমরা এতে করে যাবো।আপনি কোথায় যাবেন বলেন তো??”
রিকশা দেখেই অরিত্রান কয়েক পা পিছিয়ে যায়।আতঙ্কিত গলায় বলে,
—-“ রিকশায়??আর আমি??মানে কিভাবে??জায়গাই হবে না।আর বেঁচারা লোক??এভাবে আমাকে আর তোমাকে টেনে নিয়ে যাবে!!বাজে দেখায় পরীজা।”
ওয়াসেনাত ঠোঁট টিপে হাসে।সে বেশ মজা নিচ্ছে অরিত্রানের অবস্থা দেখে।অরিত্রান দেখছে।একদম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।লোকটাকে দেখছে।চিপচিপে ঘামে ভেঁজা মানুষটাকে দেখে অরিত্রানের এই প্রথম মায়া হলো।ওয়াসেনাত বললো,
—-“ আমরা যদি রিকশায় না যাই এদের রোজগার কিভাবে হবে বলুন তো???”
অরিত্রান শুনলো না।মাথা নাড়িয়ে বললো

,
—-“ আমি রিকশায় উঠতে পারি না।আমার দ্বারা ইম্পসিবল।”
ওয়াসেনাত উঠে বসলো।অরিত্রানের জন্য জায়গা রেখে বললো,
—-“ আমার জন্যে তো উঠতে পারেন??না কি তাও উঠবেন না!!”
মনের বিরুদ্ধে গিয়ে অরিত্রান উঠে বসে।বসতেই সে নিজেই নড়ে উঠে।ওয়াসেনাত চেপে বসে।অরিত্রান বললো,
—-“ আঙ্কেল টিএসসির দিকে চলেন।”
ওয়াসেনাত হেসে ফেলে।ফিসফিস করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
—-“ আঙ্কেল না মামা বলুন।”
অরিত্রান জবাবে কিছু বললো না।রিকশা চালক যেভাবে চালাচ্ছে রিকশা সে ভাবেই চলছে।মাঝে মাঝে পড়ে যেতে নেয় অরিত্রান।ওয়াসেনাত বাহু চাপড়ে ধরে।মিটমিট করে হাসে।বাহুতে খাঁমছি দেয়।অরিত্রান ভাবে,তার শরীরে কত দাগ ফেলেছে এই মেয়ে।একটা খামছির দাগও মুছেনি।সাদা বাহু কালো হয়েছে ওয়াসেনাতের নখের দাগে।পিঠেও আছে।বুকটাও বাদ রাখেনি।অরিত্রান খালি গায়ে আয়নার সামনে দাড়ালেই অবাক হয়।যেখানে সে মানুষের শরীর খন্ড খন্ড করে সেখানে তার শরীরে খামছির মারাত্নক দাগ।সুযোগ পেলেই লুপে নেয় ওয়াসেনাত।নখ বসিয়ে দেয় অরিত্রানের বাহুতে পিঠে।কথাগুলো ভেবে অরিত্রান হাসে।অনেক সময় নিয়ে চুপ থাকে দু’জনে।অরিত্রানের মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি চাপে।বাম হাত পিছনে নিয়ে ওয়াসেনাতের বেকে যাওয়া কোমড়ে হাত রাখে।টেনে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে।ওয়াসেনাত ভড়কায়।ঠান্ডা একটা হাতের স্পর্শে সর্বাঙ্গ কেঁপে কেঁপে উঠে।অরিত্রান শক্ত করে কাছে টেনে নেয়।ওয়াসেনাত চোখ বড় করে তাকায়।অরিত্রান মুচকি হাসে।বলে,
-“ এভাবে তাকাচ্ছো কেন??তুমি পড়ে যাবে আর সরে বসলে তাই টেনে নিয়েছি।এতে দোষের কি??”
অরিত্রানের হাতের পিঠে চিমটি কাটে ওয়াসেনাত।রাগি একটা কন্ঠে বলে উঠে,
-“ আপনার এই নির্লজ্জ পনা দিন দিন বেরেই চলেছে।শান্তচুপ চাপ থাকা মানুষের এই একটা সমস্যা!নিজের রূপ পরিবর্তন হলেই উশৃঙ্খল হয়ে উঠে। যেমন আপনি।”
অরিত্রান চোখ বন্ধ করে হাঁসে। ওয়াসেনাতের ডান হাতটা নিজের বুকের পাশটায় রাখে।ওয়াসেনাত বিমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।অরিত্রান হাতটায় হালকা চাপ দিয়ে বলে,
—” একটু নির্লজ্জ পনা দেখিয়ে যদি আমি নিজের ভয়ংকর রূপটা ছেড়ে দিয়ে নতুন রূপে হয়ে উঠতে পারি তাহলে কি আমার হিটলার হবু শ্বশুরবাবা আমাকে মেনে নিবে??”
ওয়াসেনাত মুগ্ধ হওয়া চোখ ফিরিয়ে হাত টানতে টানতে বললো,
—” একদম আমার বাবাকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলবেন না ।”
অরিত্রান ওয়াসেনাতের হাতটা আরো টেনে বুকে চেপে ধরে। ভারী ইনোসেন্ট গলায় বলে,
—” আজেবাজে কথা কই বললাম?উনার রূপের সাথে মিলিয়ে নাম দিয়েছি।এতে কি সমস্যা?”
ওয়াসেনাত চোখ রাঙিয়ে তাকায়।অরিত্রান হেসে বলে,
—” স্যরি!!যদি তুমি আমার হও!যদি নির্লজ্জ, বেহায়া, হয়েও আমি তোমাকে পাই।তাহলে আমি সেগুলোই হতে চাই পরীজা।”
ওয়াসেনাত কিছু বলে না।চোখ ঝাপসা হয়ে আসে তার।অরিত্রান মুখ ঘুরিয়ে সামনে চোখ রাখে।রিক্সা তালে তালে দুলছে।উপর নিচ হচ্ছে।যেমনটা অরিত্রানের হৃৎপিণ্ড করছে।অরিত্রান সেদিকে তাকিয়ে বললো,
—” তোমার বাবাকে হিটলার না ডাকলে কি তিনি তোমাকে আমার করে দিবে?যদি দেয় তাহলে তার গোলামি করতেও দু’বার ভাবেনা এই অরিত্রান খান।”
-“ বাবাকে আমি বলবো।” ওয়াসেনাতের শীতল গলা।
অরিত্রান ভারী অবাক হলো।তাকালো ওয়াসেনাতের দিকে।বললো,
-“ তুমি বলবে??কিভাবে??মানে তুমি যা ভীতু!!”
-“ মোটেও না।বাবা আমাকে খুব ভালোবাসে।সে আমার ভালোবাসার কথাও শুনবে।”
-“ না শুনলে তো তুমি তোমার বাবাকেই বেছে নিবে।আমার হাত ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিবে তাই তো??”
ওয়াসোনাত চোখ রাঙালো।কপাল কুঁচকে অভিমানি গলায় বললো,
-“ আমি আপনার আর বাবার মাঝে বাবাকে বেছে নিবো।এর মানে এই না যে আমি অন্য কারো হবো।আমি আপনার ছিলাম আছি থাকবো।হাত ধরে না হয় মন আকঁড়ে।আপনি কিভাবে ভাবলেন আমি বিয়ে করে নিবো??”
অরিত্রান বুঝে এটা বলা উচিঁত হয়নি।যে কোন সময় চোখ দিয়ে সাগর বেয়ে নামতে পারে।পরিস্থিতি সামলে নিতে বললো,
-“ আরে তুমি আমাকে বেছে নেও বা না নেও আমি তো তোমাকেই চাই।তোমার হিটলার বাবাকেও টপকাতে পারবো।”
-“ টপকাতে মানে??”ওয়াসেনাতের আঁতঙ্কিত গলা।
অরিত্রান হাসলো।তারপর বললো,
-“ আরে ভয় পাচ্ছো কেন?তোমার বাবার ক্ষতি করবো না।তার বিরুদ্ধে গিয়েও তোমাকে নিজের করবো বলেছি।”
রিক্সা থেমেছে।অরিত্রান আগে নামলো।হা

ত বাড়িয়ে দিলো।ওয়াসেনাত মুচকি হেসে হাত ধরলো।অরিত্রান মনে মনে বললো,এই হাত যেন আমার হাতেই থাকে সারাজীবন।
____________________________
রিমি দীর্ঘ একটা শ্বাস নিলো।সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে।গেটে অপেক্ষা করছে রিমন।আজকের দিন কতক্ষাণি ভালো যানা নেই কিন্তু সন্ধ্যাটা খুবই খারাপ হতে চলেছে রিমির।এটা সে যানে।ভয়ে হাত পা হিম হয়ে এসেছে।কাঁপা হাতে কলিং বেল চাপে।এক চাপেই দরজা খুলে দেয় তৌফিক সাহেব।রিমি প্রচন্ড ভয় পায় তৌফিক সাহেবকে।শ্বাসরুদ্ধ কর অবস্থা হয় তার।তারপরও হালকা হেসে বললো,
-“ আঙ্কেল আমাকে ডেকে ছিলেন??”
তৌফিক সাহেব মুখ গম্ভীর করে বললো,
-“ ওয়াসেনাত কোথায়??”
রিমি ঢোক গিলে।ভীতু গলায় বললে,
-“ আঙ্কেল ও আছে।মানে আসছে।”
-“ ভিতরে এসো কথা আছে।”
রিমির এবার কাঁপা কাঁপি অবস্থা।ভিতরে এসে দাড়াঁয় সে।ওয়াসেনাত যে তাদের সাথে নেই এই খবর লামিয়া দিয়েছে।তার পরই কল করেছে তৌফিক।রিমিকে দ্রুত বাড়িতে আসতে বলেছেন তিনি।রিমি রিমনকে নিয়ে এসেছে।লামিয়া আর অরূপ শপিংমলে।তৌফিক সাহেব বললেন,
-“ অরিত্রানের সাথে ওয়াসেনাতের দেখা কোথায় হয়েছে??”
রিমির মুখটা হা হয়ে আছে।কথাটা শুনে যেন সে ভারী অবাক।ভিতু গলায় সে বললো,
-“ ঠিক বলতে পারছি না আঙ্কেল।”
-“ মিথ্যা বলবে না।আমি একদম মিথ্যা পছন্দ করি না।তুমিও আমার মেয়ের মতো।ছোট থেকে চিনি তোমাকে।মিথ্যা বলছো আমাকে??বোকা ভেবেছো??”
রিমি কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না।ওয়াসেনাতের ব্যাপারে না জানলেও অরিত্রানের ব্যাপারে তৌফিক সাহেব জানে।এটা সেও জানে।
-“ বলতে বলছি।চুপ থাকতে নয়।”
রিমি ভয়ে ভয়ে বললো,
-“ ভার্সিটিতে।”
-“ অরিত্রান ভার্সিটিতে কি করছিলো??”
-“ তা ঠিক জানি না।”
তৌফিক সাহেব দাঁতে দাঁত চাপে।রাগে ফস করে উঠে বললো,
-“ অরিত্রানের মতলবটা কি?আমার মেয়েকেই কেন?অরিত্রান ইচ্ছে করে এগুলো করছে।আমার মেয়েকে ফাঁসাতে চাচ্ছে।
রিমি সাথে সাথে বলে,
-“ না না আঙ্কেল।অরিত্রান জিজু !!
রিমি থেমে যায়।জিভ কেটে বলে,
-“ অরিত্রান ভাইয়া খুব ভালো।আসল কথা উনি ভালোবাসে ওয়াসুকে।ওয়াসুও সেম।ফাঁসাবে কেন?এমন কিছুই তিনি করবে না আমি নিশ্চিত।আরে পুরো একবছরের কাছাকাছি সময় নিয়ে চিনি তাকে।”
তৌফিক সাহেব ভ্রু কুঁচকে তাকায়।রাগি গলায় বললো,
-“ তাহলে অনেক দিন গড়িয়ে বছর!!
আর কিছু বললো না তৌফিক।দরজার সামনে থেকে সরে নিজের রুমে চলে যায় তিনি।রিমি ভয়ে ভয়ে শেষ।দ্রুত বড় বড় পা ফেলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।ওয়াসেনাতের কপালে কি আছে কে জানে।নিচে নেমে আসতেই রিমন বললো,
-“ কেন এতো জরুরি ভাবে ডেকেছে??”
-“ অরিত্রানের কাছ থেকেই শুনিও ।কত কি যে হবে।তৌফিক আঙ্কেলকে আমি চিনি।ভয়ংকর মানুষ।”
রিমন গাড়ির দরজা খুলে দেয়।কথার আগামাথা কিছুই বুঝে না।
_______________
ঢাকা শহরের নামকরা ফুলের মার্কেট রাস্তার পাশ ঘেঁষে।সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে।সূর্য ডুবেছে বহু আগে।তবুও আকাশ জুড়ে লাল ছাপ।রাস্তার পাশে ঝুঁড়ি ভর্তি চুড়ি নিয়ে বসে আছে মহিলারা।অরিত্রান বেশ আগ্রহের সাথে তাদের দেখছে।ওয়াসেনাত তাকিয়ে আছে লাইটের দিকে।এ দিকটায় সন্ধ্যার সময়ে তেমন আসা হয়নি তার।পরিবেশটা সুন্দর সন্ধ্যার সময়ে।অরিত্রান একটা মহিলার সামনে দাড়ায়।ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে ওয়াসেনাত,
-“ এখানে কেন নিয়ে এসেছেন??”
-“ দাঁড়াও দাঁড়াও।”

অরিত্রান হাঁটু ভেঙ্গে বসে পরে।বেছে বেছে চুড়ি নেয়।মেয়েদের জিনিস পছন্দ করা মশকিল।তবুও অরিত্রান অভিজ্ঞ ভাবে খুঁজে বেরকরে।সাদা,লাল,নীল,হলুদ,গোলাপি,কালো হরেক করমের চুড়ি কিনে দেয়।ওয়াসেনাত অনেক অবাক।কেন কিনে দিচ্ছে সে জানে না।কিন্তু ভালো লাগছে।প্রিয় মানুষের থেকে উপহার পেতে সবারই ভালো লাগে।তা যদি প্রিয় কিছু হয় তাহলে তো কোথায় নেই।অরিত্রান কিছুদূরে যায় ওয়াসেনাতকে দাড়িঁয়ে থাকতে বলে।সে দাড়িয়ে দেখে।দূরে দেখা যাচ্ছে অরিত্রানকে।কিছুক্ষণ করে অরিত্রান আসে।হাত কিছু আছে।পিছনে হাত রেখেছে সে।ওয়াসেনাতের হাতটেনে বাস্তার পাশে বসে।হাত ভর্তি সাদা গোলাপ এগিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বলে,
-“ আমার পরীজা!মাই প্রিন্সেস!মাই লাইফ।তোমাকে কিছু বলতে চাই।তুমি কি আমার সাদা গোলাপ হবে??”
আসেপাশের কিছু লোক চমকে তাকায়।ওয়াসেনাত লজ্জিত হয়।হেসে বলে,
-“ আপনি কি পাগল?এখানে প্রপোজাল দিতে নিয়ে এসেছেন??”
-“ না প্রেম নিবেদন তো অনেক হলো।আমি তোমাকে আমার সাদা গোলাপ হওয়ার নিবেদন করছি।বিয়ে করতে চাই তোমাকে??”
এবার চমকালো ওয়াসেনাত।চারপাশের আমজনতা উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে।কেউ তুলছে ছবি।ওয়াসেনাত আনন্দিত হবে না কি লজ্জায় মিইয়ে যাবে সে বুঝে উঠতে পারছে না।মুখে হাত দিয়ে কিছুসময় চুপ করে দাড়িয়ে থাকে সে।দু’জনের চাইতেও তাড়া বেশি আশেপাশের মানুষের।তাদের চিৎকার শিশ বাজানোর শব্দ আসে কানে।ওয়াসেনাত হাত বাড়িয়ে ফুল গুলো নেয়।খুশিতে মানুষ কাঁদে।ওয়াসেনাত কাঁদলো না।হাসলো।হাতে ফুল নিয়ে অরিত্রানের কাঁধে মাথা রাখলো।বাম হাতের বাহু জড়িয়ে পাশে আর একটু চেপে বসে পড়লো।সাদা চুড়ি বের করে অরিত্রানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
-“ পড়িয়ে দিবেন??”
অরিত্রান ভীতু হয়।কাঁচের চুড়ি যদি ভেঙে হাতে ঢুকে যায়।সেই ভয়ে সে পরাতে চায় না।বলে,
-“ তুমি পড়ে নেও।আমার হাতে পড়লে যদি ব্যথা পাও।”
-“ পেলে আমি পাবো।আপনার কি?পড়িয়ে দেন না।”
ওয়াসেনাতের আবেগি গলা।অরিত্রান পরিয়ে দেয়।খুব ধিরে।এতো ধিরে সে তার জীবনের আর কোন কাজ করেনি।ওয়াসেনাত হাসে।বলে,
-“ আপনি এতো ভীতু কেন?”
-“ আমার সাদা গোলাপের গায়ে হালকা দাগ লাগুক আমি চাই না।নিজের দ্বারা তো একটুও চাই না।দাদা বাহিরে গেছে।রিমনের বিয়ের দিন আসবে।শেষ বারের মত তোমার বাবাকে আমি বুঝিয়ে বলবো।না মানলে আমি কিন্তু তোমার মতের বিরুদ্ধে চলে যাবো।”
ওয়াসেনাত হাসলো।বললো,
-“ পালিয়ে বিয়ে করতে মজা আছে।বাবা রাজি হলে আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো।”
অরিত্রান ভারি অবাক হয়ে বললো,
-“ তোমার বাবা রাজি হলে সেটা আর পালানো কিভাবে হলো??পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে পালিয়ে বিয়ে করতে হয়।এটা তুমি যানো না?”
-“ আমি নতুন ইতিহাস গড়বো।বাবার অনুমতি নিয়ে পালিয়ে যাবো।দরকার পরলে অর্ধেক পথ বাবাকে নিয়ে আসবো।”
ওয়াসেনাত খিলখিল করে হাসে।অরিত্রান তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে।চোখ গভীর।সন্ধ্যার লাল আভা এসে পরছে ওয়াসেনাতের গালে,ঠোঁটে,মুখে,চোখে।হাসতে হাসতে কেউ কাদেঁ ওয়াসেনাতকে না দেখলে অরিত্রান বুঝতে পারতো না।হাসির চোটে চোখের কার্ণিশে পানি জমেছে।নীল চোখের পানি দেখতে মন্দ লাগে না।কিন্তু অরিত্রান দেখতে চায় না।কান্নার চাইতেও হাসিই মানায় এই চোখে।নীল চোখে নীলাভময় হাসি।
____________________
ওয়াসেনাতের বাসার সামনে এসে রিক্সা থামে।বাড়ির গেটের দিকে তাকিয়েই আঁতকে উঠে ওয়াসেনাত।গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে তৌফিক সাহেব।চোখেমুখে রাগ নেই আছে গাম্ভীর্য।ওয়াসেনাত ভীতু চোখে অরিত্রানের দিকে তাকালো।অরিত্রানও তাকায়।তার জানা মতে রিমন বলেছে তারা এখনো শপিংমলে।তাহলে তৌফিক সাহেব বাহিরে কি করছে।ভয় উত্তেজনায় ওয়াসেনাতের হাত পা কাঁপছে।আজ তার অনুভব হচ্ছে প্রেম করতে গিয়ে যারা ধরা পরে তাদের অবস্থা কেমন হয়!এ যেন দম বন্ধকর অবস্থা।বুক কাঁপছে তুমুল বেগে।বৃষ্টি ভেজা চারপাশের ঠান্ডা হওয়া বইছে।তাতেও ঘামছে ওয়াসেনাত।চোখ স্থির করতে পারছে না।এলোমেলো হয়ে চলেছে মাথার ভেতরের সব।কি থেকে কি করবে যানে না।কি বলবে খুঁজে চলেছে!!হেজাবের পাশ ঘেঁষে গড়িয়ে পরছে ঘাম।কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম হাতের উল্ট পাশ দিয়ে মুছে নিয়ে বার কয়েক জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলল।অরিত্রান নিজেকে সামলে রিক্সা থেকে নেমে পরে।ওয়াসেনাতকে হাত ধরে নামায়।তৌফিক তীক্ষ্ন চোখে সব দেখে।কিন্তু টু শব্দটুকু করে না।ওয়াসেনাতের দিকে তাকিয়ে ছোট করে অরিত্রান বললো,
-“ ভয়ের কিছু নেই।মনের কথা বাবাকে বলে দিও।”
ওয়াসেনাতের কাঁদো কাঁদো অবস্থা।অরিত্রানের গলায় ভরসার সুর।বলে,
-“ আরে ভয় কিসের পরীজা।”
কানের একটু কাছে এসে বললো,

-“ তোমার বাবা তোমাকে সত্যি খুব ভালোবাসে।হিটলার তো আমার জন্য।আর বড় কথা প্রেম করলে ধরা পড়তেই হয়।সো কুল।যাও।”
ওয়াসেনাতের ইচ্ছে করছে এই সময়টাকে পিছিয়ে দিতে।বাবাকে সে নিজেই বলতো।কিন্তু এভাবে দেখাটা একদম উঁচিত হয়নি।নিজের চোখে এভাবে দেখার চেয়ে তার মুখে শুনাটা বেটার হতো।কিন্তু এখন কি হবে??বাবা যে খুব রাগ করবে!!ওয়াসেনাত চুড়ির পেকেট নিলো না।রিক্সায় রেখে দিলো।এখন তো তার এগুলোর দিকে মনই নেই।নিজের হাত কচলাতে কচলাতে ওয়াসেনাত তৌফিকের দিকে যায়।সামনে দাড়াঁয়।তার হাত পা কাপঁছে।অরিত্রানের বুক আরো বেশি কাঁপছে।সে ভাবছে চড় টর যদি দেয়??অরিত্রান এগিয়ে যায়।যদি চড় দেয় সেই ভয়।
ওয়াসেনাত কাপঁছে ভূমিকম্পের মতো।তৌফিক সাহেব মেয়ের হাতটা আলতো করে ধরে।বলে,
-“ এতো রাতে ছেলেদের সাথে ঘুরা ঘুরি আমি পছন্দ করি না যানো তো??”
ওয়াসেনাত চমকালো।অরিত্রানো খানিকটা চমকেছে।তৌফিক সাহেবের গলা স্বাভাবিক।অরিত্রান চোখ ছোট করে তাকায়।তৌফিক সাহেব অরিত্রানের দিকে তাকিয়ে সহজ গলায় বলে,
-“ আমি বিয়ের আগে এভাবে ঘুরাঘুরিকে ভালো চোখে দেখিনা।বিশেষ করে বাবা হিসেবে তো একদমই না।নিজের মেয়েকে তেমন কিছু শিক্ষা দিয়েছি বলে আমার মনে হয় না।বিয়ে করে যত ইচ্ছে ঘুরতে পারো।এখন সামনে থেকে যাও।”
এতো স্বাভাবিক কন্ঠ শুনে ওয়াসেনাতের চাইতেও অরিত্রান বেশি চমকালো।এতো সহজ গলা কেন??এতো দ্রুত মেনেও নিলো??অদ্ভুত তো!!ভারী অবাক করা ব্যাপার।আসল কাহিনীটা ধরতে পারলো না অরিত্রান।কি হলো তাও বুঝলো না।তৌফিক সাহেব সামনে থেকে মেয়েকে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে।অরিত্রান তাকিয়ে আছে সেদিকে।ওয়াসেনাত মাঝে একবার উঁকি দেওয়ার মত করে তাকালো।তারপর হোচট খেয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে সোজা হয়ে হাঁটা শুরু করে।যত দূর দেখা যায় তাকিয়ে থাকে অরিত্রান।রিক্সাওয়ালা বিরক্ত গলায় বললো,
-“ ভাই যাইবেন না??”
অরিত্রান মনোযোগী খুব।রিক্সা চালকের কথা কানে গেলো না।রিক্সাচালক অধৈর্য গলায় বললো,
-“ আপনি কি যাইবেন??ও ভাই!!”
-“ হুহ আমাকে বলছেন??” হকচকিয়ে বললো অরিত্রান।
-“ হ ভাই আমনেরেই কইছি।যাইবেন ,না কি এইডাই আপনের বাড়ি??বাড়ি এইডাই হইলে ভাড়া মিটাই দেন।আমি যামু।”
-“ এটা আমার বাড়ি না।ভাগ্যে থাকলে শ্বশুর বাড়ি হবে।আপনি চলেন।” রিক্সায় উঠে বসতে বসতে বললো অরিত্রান।আবার পিছন ফিরে তাকায়।বাড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে।ভাবে,সত্যি কি উনি মেনে নিয়েছে??না কি নতুন কিছু হতে চলেছে??অরিত্রান মনে মনে বলে,যত যাই হোক পরীজা আমার হলেই হবে।শুধু আমার।”
#চলবে…