পাথরের বুকে ফুল

পাথরের বুকে ফুল ! সিজেন 2 !! Part- 09

ওয়াসেনাতের ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ ভেসে আসে অরিত্রানের রুম পর্যন্ত। অরিত্রান চমকে কিছুটা পা ফেলে নিজের রুমের বাইরে উঁকি দেয়।ওয়াসেনাত এখনো নিজের হাত ধরে কাদঁছে। অরিত্রানের বুকে ধড়াস করে এক অদ্ভুত ব্যথার আগমন ঘটে।মানুষকে মেরে তো কখনোই তার এমন ব্যথাময় অনুভুতি হয়নি আগে।মনে হচ্ছে মেয়েটার সাথে এভাবে করা ঠিক হয়নি।অরিত্রানে এই নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত কারো জন্য এত খারাপ লাগছে।প্রথম যেদিন নিজ হাতে খুন করেছিলো সেদিনও তার খারাপ লেগেছিলো।ব্যথার ধরন ভিন্ন হলেও এই ব্যথাটা তিব্র। এই প্রথম তার আফসোস হচ্ছে। মনে হচ্ছে ভুল করেছে।কিন্তু কেনো??অরিত্রান আবার রুমে ডুকে পরে।ফোনটা বেডের চারপাশে হুল্লুর হয়ে খোঁজে।পেয়েও যায়।তবুও সে খুবই উত্তেজিত। রিমনকে কল করে।রিমন তো অরিত্রানের কল দেখেই কাঁপছে।নিশ্চুই মেরে দিয়েছে।রিমন কাপঁছে দেখে রিমি কাপল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।কাপাঁ হাতে রিমন কল রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে অরিত্রান চিৎকার করে বললো,
—” সামান্য কল রিসিভ করতেও এত সময় লাগে কেনো তোর??”
রিমন জবাবে নিশ্চুপ ভাবে ঘামছে।অরিত্রান আবার বললো,
—” তোর রুমের মেয়েটাকে নিয়ে এই মেয়েকে নিয়ে যায়।”

রিমন কোম্পিত হয়ে বললো,
—” মেরে ফেললি??”
অরিত্রান ধমকের সুরে বললো,
—” সেটআপ!!! ব্যথা পেয়েছে মনে হয়।নিয়ে যেতে বললাম নিয়ে যায়।ট্রিকম্যান্ড লাগলে দিয়ে দিবি।রাখছি।”
অরিত্রান কলটা কেটে দেয়।তার মনের ভিতরে খুসখুস করছে।আর একবার সামনে থেকে দেখলে ভালো হয়।কথাটা ভেবেই সে নিজেই চমকায়।অরিত্রান খান তো খুন করেও ফিরে তাকায় না। একে কেনো দেখতে যাবে।মেয়েটা কপালের জোরে বেচেঁ গেছে।কিন্তু এত সহজে ছেড়ে দিলো সে??কিভাবে??অরিত্রানের বাঁ পাশের অবাদ্ধ হৃৎপিন্ডটা লাফাচ্ছে।তার অধীনে থাকলে এখনি এই লাফানি বন্ধ করে দিতো সে।কিন্তু লাফানোটা নিছক বিরক্তির কারন হলেও তার অদ্ভুল লাগছে।সব কেমন ছন্ন ছাড়া টাইপের।বার বার তার ইচ্ছেরা হঠাৎ প্রজাপতির মত ডানা ঝাপ্টে বলছে একবার দেখে আসলে কি খুব ক্ষতি হবে??নিজের মনের এমন অবাদ্ধপনায় সে নিজেই অবাক।হচ্ছেটা কি??
ওয়াসেনাতের এমন অবস্থা দেখে রিমি রেগে মেগে আগুন।তেড়ে যেতে চায় অরিত্রানের কাছে।কিন্তু রিমন বুঝায়।বলে,
—” রেগে গেলে নুহাশ নিজেও জানে না সে কি করছে।আর তোমরা না বলে চুপি চুপি যাসুসি করতে এসেছিলে কেনো??দোষ তো তোমাদের আছে নাকি??এভাবে কারো আনুমতি ছাড়া তার রুমে যাওয়া মোটেও ভদ্র মেয়েদের কাজ নয়।রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক নয় কি!!
রিমি রাগে কটমট করে বললো,
—” এই আপনার মানে কি হুম!!আসব বলে এভাবে হাত গলা মুছড়ে আবার কেটেও দিবে নাকি??পাগল নাকি??দেখে নিবো আপনার ওই বন্ধুকে।আমকে চিনে না।হু….”
—” আচ্ছা সব পরে দেখা যাবে আগে একে নিয়ে তো চলো।”
রিমি কথা বললো না।হাত দিয়ে ওয়াসেনাতের হাতটা মালিশ করছে।আর ওয়াসেনাত আরো কাদঁছে। ব্যথা হয়ে আছে তার হাত।
__________________________

আজ দুইদিন ওয়াসেনাতকে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে দেখা যাচ্ছে না।অরিত্রানের মনে এত এত অনুশোচনা তার এই জীবনে আগে কখনোই হয় নি।তার কেমন জানি ভালো লাগছে না এই ক্যাম্পাস।পাশ দিয়েই শিকার চলে যাচ্ছে সে তাকাচ্ছে না।মনে শুধু একবার একটি মুখ দেখার প্রয়াশ জাগছে।কেনো??আজকের দিনটাও বাকি দিনটার মতই খারাপ যাচ্ছে। নিজের দিনের রুটিং তো সে নিজে তৈরি করে।তার খারাপ ভালোও সে নিজ হাতে গড়ে।কিন্তু আজ মনটা আগের চাইতেও বিষন্ন লাগছে।নিজের উপর রাগটা চওড়া হচ্ছে। অরিত্রান ভাবতে পারছে না সে নিজের উপর নিজে রেগে আছে!!আশ্চর্য!! সে তো কখনোই নিজের উপর রেগে থাকে না।এমন কি আজ তার মনে হচ্ছে সে মহা ভুল কিছু করেছে।যা তার জীবনের সবচাইতে বড় ভুল।সত্যিই সে ভুল করেছে??কি ভুল??একটা মেয়েকে ব্যথা দিয়েছে এটাই ভুল??এমন ভুল তো সে আহর আহর করেছে।মেয়ে ছেলেদের কলিজাও সে নিজের হাতে ছিঁড়েছে। এত ভয়ংকর কান্ড গুলো করার সময়ও তার হাত কাপে নি।আর মেয়েটা ছুঁয়ে দিতেই তার শরীর সহ ভিতরের সব কাঁপে।কেনো??কি আছে ওই মেয়ের মাঝে??আজ দু’দিন সে ঘুমতে পারছে না।একটা বাচ্চা মেয়ে তার ঘুম কেড়েছে।ভাবতেই তার নিজের নাম ডাকের উপর সন্দেহ হচ্ছে। সে!! অরিত্রান খান!!যার ভয়ে সবাই কাপে।তাকে কিনা আঠারো বছরের একটা মেয়ে এভাবে বিলুপ্ত করছে??অরিত্রান আর ভাবতে পারলো না।ক্লাসে প্রফেসর হোয়াই বোর্ডে কিছু লিখছিলো।সবাই মনোযোগী। এর মাঝেই অরিত্রান ধাপ করে উঠে রুম থেকে দ্রুত বেরিয়ে পরে।ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে হা করে তাকিয়ে আছে।সাথে রিমনও।হলো টা কি??
অরিত্রান ক্লাস থেকে দ্রুত বের হতেই তার হাতের সাথে লেগে মাদৌলি ধাম করে ফ্লোরে পরে যায়।আকর্ষীক ঘটনায় সে হতবম্ভ। আর অরিত্রানের?? সে পিছনেও ঘুরে তাকালো না।কেউ যে পরে গেছে সেদিকেও তার খবর নেই।মাথা গরম তার।খুবই গরম।মাদৌলি এখনো হা করে তাকিয়ে আছে।মনে মনে বলছে এত এটেটিউড??
______________________

অরিত্রান নিজের টেবিল লেম্পের লাইট একবার নিভাচ্ছে তো একবার জ্বালাচ্ছে।মন আর মস্তিষ্ক তার সাথে দু’ সত্তা হয়ে বিবেধ করছে।কাকে বেছে নিবে সে??মন বলছে একবার ছুটে যেতে আর মস্তিষ্ক বলছে না। কার কথা শুনবে সে??যদিও অরিত্রান যা করে সব মস্তিষ্কক খাঁটিয়ে করে।কিন্তু কি হচ্ছে তার সাথে সেটাই তার মাথায় আসছে না।একটা মেয়েকে মেরেই তার এমন দুর্দশা হচ্ছে কেনো??অরিত্রান চোখবুজে আবার খোলে।সেই ঘটনার পর থেকে চোখবুজেও তার অসস্থি হচ্ছে। চোখের পর্দায় ভেসে উঠছে ওয়াসেনাতের লাল মুখ।ব্যথায় কাতর চেহারা।আর সেই সচ্ছল চোখ ঘোলাটে হয়ে যাওয়ার দৃশ্য। কানে বাজে সেই কান্নার শব্দ।অরিত্রান আর ভাবে না।লাফিয়ে উঠে দাড়ায়।তার ভালো লাগছে না।গাড়ি নিয়ে একটু রাতের শহর ঘুড়বে। অরিত্রান নিজের গাড়িতে বসে ভাবছে কোথায় যাবে।গন্তব্য বিহিন তার গতিপথ।
_______________
NSC হসপিটালে সামনে গাড়িতে বসে আছে অরিত্রান।চোখেমুখে তার চিন্তার ছাপ।জীবনে সে এতটা দোটানায় পরেনি।যাবে কি যাবে না এটাই ভাবছে সে।অনেক ভেবে অরিত্রান গাড়ি থেকে নেমে পরেছে।কেমন নার্ভাস লাগছে তা।এই প্রথম এমন ফিলিংসের শিকার হচ্ছে সে।ভাবতে তার অবাক লাগছে।অরিত্রান হসপিটালের ভিতরে ডুকছে।প্রতিটা পা ফেলছে আর তার মনে হচ্ছে তার বাঁ পাশটা ধিকি ধিকি কাঁপছে।কি আশ্চর্য?? অরিত্রানকে ঘামাচ্ছে।হাতের উল্টা পিঠ দিয়ে সে নিজের ঘাম মুছে চাপা দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে মুখ মুছে নেয়।দীর্ঘ কিছু শ্বাস ফেলে সে নিজেকে শান্ত করে।
১০৩ নাম্বার কেবিনের সামনে এসে থমকে দাড়ায় অরিত্রান।কেবিনের বিশাল জানালার পর্দা ঠেলে রাখা হয়েছে।মাথায় উড়না পেঁচিয়ে তাতে খুবই শান্ত ভঙিতে ওয়াসেনাত ঘুমিয়ে আছে।মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে।সাদা উড়না মাথায়।গায়ে সাদা চাদুর। আর হাত প্লাস্টার করা।অরিত্রান ভাবতে পারছে না এতটা ব্যথা পেয়েছে ওয়াসেনাত।মুহূর্তেই তার চোখ ভীতু হয়।অনুশোচন জাগে তিব্র ভাবে।সে জাস্ট ভাবতে পারছে না।অরিত্রানের বুকের পাশের যন্ত্রনা বারে।মনের এক সত্তা সরে গিয়ে একটা সত্তাই কাজ করছে।যাতে শুধু অনুশোচন হচ্ছে। অরিত্রান রুমে ডুকে।ওয়াসেনাত কাত হয়ে শুয়ে আছে।নিষ্পাপ বাচ্চার মত লাগছে।আসলেও বাচ্চা মেয়ে। গলাও নিশ্চুই ব্যান্ডেজ দিতে হয়েছে।অরিত্রানের চোখমুখের ভাব পরিবর্তন হয়।ওয়াসেনাতের পাশেই টুল টেনে বসে সে।ওয়াসেনাতের বেডের পাশের টেবিলে কিছু বাচ্চাদের আঁকা কার্ড আর ফুল দেখতে পাচ্ছে অরিত্রান।হাত বাড়িয়ে একটা কার্ড নিতেই দেখে বিভিন্ন কাটুন আঁকা।একটা মেয়ে হেজাব পড়া।তার হাতে বেলুন আর পিছনে অনেক বাচ্চা।এমন অসংখ্য ছবি আছে।অরিত্রান অবাক হয়ে দেখছে। হসপিটালে এগুলো দেয় নাকি??কথাটা ভাবতে ভাবতেই কার্ড উল্টায়।তাতে কালো কালিতে লেখা।
—” ওয়াসুপু তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাও।আমার জন্মদিন কিছুদিন পরে।কেক আনতে হবে তো।আমি তোমাকে খুব মিস করি।দু’দিন তুমি আমাদের সাথে দেখা করতে আসো না।আমি হসপিটালে যেতে চেয়েছি কিন্তু নানুবু নিচ্ছে না।তাই এটা তোমার জন্য।ভালোবাসি ওয়াসুপু।”
অরিত্রান আরো কিছু কার্ড খুলে খুলে মুগ্ধ হয়ে দেখে।আর ভাবে কারা এরা।এই মেয়েকে এত ভালোবাসে কেনো??এত এত ভালোবাসা মিশ্রীত লেখা দেখে তার হৃৎপিন্ডটাই নড়ে উঠে।এভাবে একে মারা তার মোটেও উঁচিত হয়নি।মোটেও না।মেয়েটাকে দেখার পর থেকে তার ঘুম অর্ধেক গায়েব হয়েছে।আর এই দু’দিনে সম্পূর্ন গায়েব।অরিত্রান যত্নের সাথে কার্ড গুলো গুঁছিয়ে রাখে।মনে মনে প্রশ্ন জাগে এরা কারা??তবে উত্তর নেই।
অরিত্রান আগ্রহের সাথে তাকিয়ে দেখছে ওয়াসেনাতকে।লাল গোড়া মুখ।লাল ঠোঁট।চোখবুজে আছে।ডান হাত একপাশে প্লাস্টার করে রাখা হয়েছে।আর বাম হাত অপর প্রান্তে। ভুলে থাকার মত স্নিগ্ধ মুখশ্রী। সত্য তো??অরিত্রান সত্যি নিজেকে ভুলতে বসেছে। খনে খনে তার এটা মনে হচ্ছে!!অরিত্রানের অস্থিরতা বাড়ে।এতো কেনো অস্বাভাবিক লাগছে তার।মেয়েটাকে দেখার জন্য মনটা যে খসখস করছিলো দেখার পরেও তা কমছেনা।অনুশোচনা বোধ বুঝি এমনই হয়!!অরিত্রানের দৃষ্টি স্থির।মায়া মায়া মুখের ভাবমূর্তি যেনো তাকে টানছে।খুব কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দেওয়ার মত নিষিদ্ধ ইচ্ছেরাও হাক মারছে।অরিত্রান নিজের ইচ্ছে গুলোতে নিজেই হতবাক।কিছুসময়ের ব্যবধানে তার হচ্ছেটা কি??এত বিব্রত কর ইচ্ছে গুলো তার পাথরের মত হৃদয়ে আসছে কোথা থেকে??অরিত্রান নিজেকে সামলে নেয়।অপেক্ষায় থাকে ওয়াসেনাতের চোখ খোলার।চোখ সরিয়ে নেয় দেয়ালে।কিন্তু কি আজব??চোখ দৌড়ে এসে পড়ছে ওয়াসেনাতের মুখের উপর।
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় যানান দিচ্ছে কেউ গভীর ভাবে তাকে দেখছে।কথাটা তার মনে হতেই চট করে চোখ খুলে সামনে তাকায়।সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখেই আৎকে উঠে ওয়াসেনাত। ভয়ে তার শরীর কাঁপে। চোখেমুখে ফুটে উঠে অজস্র ভয়ের রেখা।ভীতূ হয়ে ওয়াসেনাত নিজের গায়ের চাদর টেনে নিজেকে মুড়িয়ে নেয়।ডেকে রাখে সব।ভয়ে তার কথা আঁটকে যাচ্ছে গলায়।মনে হচ্ছে এই বুঝি গলাটা চেঁপে ধরবে!!এই বুঝি ছুরিটা গলায় ধরবে!!হয় তো বাঁকি হাতটাও ভাঙ্গতে এসেছে!!নাকি মেরে ফেলতে!!নানান কথা ওয়াসেনাতের মনে ভর করে।চোখে জমে পানি।এই বুঝি হালকা ঝাঁকনিতে টপ করে গড়িয়ে পরবে।লোকটার হুংকার গুলো আজও তার কানে বাজছে্।ভয়ে গলায় কথা আঁটকে আসছে তার।জোড়পূর্বক গলা দিয়ে কথা এনে সে বললো,
—” আআপননি??এএখাননে!!”
আর বলতে পারলো না।ওয়াসেনাতের কাঁপাকাঁপি ভয়।হাহাকার গুলো যেনো অরিত্রানকেও নাড়িয়ে দিচ্ছে।তার মতে সারা দুনিয়া তাকে ভয় পাক।কিন্তু এই মেয়েটা যাতে তাকে দেখে ভয় না পায়।এ ভয় পেলে চলেবে না।অরিত্রান শান্ত গলায় বললো,
—” কুল।আমি তোমাকে কিছু করতে আসিনি।ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”
ওয়াসেনাতের যেনো বিশ্বাসই হলো না।সে ভ্রুকুঁচকে তাকালো।ভয় কাটেনি তবে আগ্রহের মাত্রা বেড়েছে। অরিত্রান আবার বললো,
—” এখন কেমন ফিল করছো??”

ওয়াসেনাত যেনো আকাশ থেকে পড়লো।আজব লোক তো??নিজে মেরে হস্পিটালের গন্ডিতে পাঠিয়ে আবার জিজ্ঞেস করছে কেমন ফিল করছ??সাংঘাতিক লোক বললে ভুল হবে।ওয়াসেনাতের কুচঁকে আশা ভ্রু জোড়া আরো কুঁচকে এলো।সন্দেহ নিয়ে তাকালো অরিত্রানের দিকে।অরিত্রানের শান্ত চোখ।জবাবের আশা করলেও সে জানে জবাব আসবে না।তবুও তার আজ অসাধ্য সাধন করতে ইচ্ছে করছে।মনে মনে মাপ নামক অচেনা শব্দ দয় ব্যবহার করতে ইচ্ছে হলো।সত্যিই কি সে স্যরি বলবে??ইম্পসিবল কথাটা বলে সে নিজেকে দমাতে পাড়ছে না।মন বলছে সামান্য ছোট একটা শব্দইত।বলে দে।কিন্তু গলা দিয়ে আসছে না।অরিত্রান ভাবে।কি বলবে।সেদিন সে খুবই রেগে ছিলো বলেই এমন রুড বিহেভ করেছে।এটার জন্য কি সে এখন বলবে,সে দিনের ঘটনার জন্য আমি দুঃখিত। ও মাই গড।কি ভাবছে সে??অরিত্রান নিজের চোখ আপনা আপনি বড় করে।ডান হাত দিয়ে চশমার পাশ ঠেলে তা ঠিক করে।অদ্ভুত সব চিন্তা তার মনে।এদিকে মেয়েটা তার ভয়ে কুঁকড়ে আছে এটাও সে মানতে পাড়ছে না।দোটানায় আবার আঁটকে পড়েছে সে।স্যরি নামক এই শব্দ সে কখনোই তেমন ব্যবহার করেনি।বহু আগে করলেও কিছু বছর এই শব্দটা তার কাছে বিলুপ্ত। নিজেকে উচ্চস্তরে ভাবতে ভাবতে সে এই শব্দ ব্যবহার করতেই ভুলে গেছে।
ওয়াসেনাত নিজেকে স্বাভাবিক করে। উঠে বসতে চায় সে।কিন্তু একটা হাত দিয়ে পিছনে যেতে পাড়ছে না।তারপরেও সে হাত দিয়ে ঠেসে উঠে বাসতে চায়।অরিত্রান দ্রুত বালিশ ঠিক করে।ওয়াসেনাতের দু’বাহু চেপে তাকে বসিয়ে দেয়।ওয়াসেনাত ভূত দেখার মত আরো চমকায়।আশ্চর্য আজ তো পুরা গেটাপ চেঞ্জ। ওয়াসেনাত চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে অরিত্রানের দিকে।কিছুক্ষণ পরে বললো,
—” আপনি কি আমাকে মেরে ফেলতে এসেছেন??”
অরিত্রান চোখবুজে নেয়।এটা বলবে সে যানতো। তবুও শুনতে ইচ্ছে হলো না।সে বললো,
—” তেমন কিছুই না।আসলে তুমি আমার অনুমতি ছাড়াই আমাকে অনুসরণ করেছ ব্যাপারটা আমার পছন্দ হলো না।আর রাগ চড়ে গেছে। যা হয়েছে তা মনে হয় ঠিক হয় নি।”

অরিত্রান থেমে থেমে সংকোচ নিয়ে কথা গুলো বলে।ওয়াসেনাত অবাকের আর এক ধাপ উপরে। লোকটাকে দেখার পর থেকে এই প্রথম এমন ছোট চোখ আর অনুনয়ের সুরে কথা বলতে দেখছে।এর আগে তো এত গুঁছিয়ে কথা বলতে সে দেখেনি!!হঠাৎ এত অনুশোচনা চোখেমুখে!! অদ্ভুত তো!!
অরিত্রানের গলা মিয়ে আসে।হঠাৎ তার কন্ঠ পাল্টে মিনমিনে হয়ে উঠে।মনে হচ্ছে এবার বলে দেওয়াই উচিঁত। অনেক্ষন অরিত্রান নিচের দিকে তাকিয়ে চুপ থাকলো।কিছু একটা ভেবে সে বললো,
—” আসলে এত রুড বিহেভ করতে চাইনি।”
ওয়াসেনাত সরু চোখে বললো,
—” তাহলে কি করতে চেয়েছিলেন??”
—” আসলে!!
ওয়াসেনাত খুদ্দ কন্ঠে বললো,
—” মারার সময় গলা বাজি আর এখন আসছেন আসলে আসলে করতে??”
অরিত্রান রাগি চোখে তাকিয়ে বললো,
—” সেটআপ!! ”
ওয়াসেনাত চুপসে গেলো।বললো,
—” আপনি চলে যান।আমি সত্যি আর আপনার সামনে আসবো না।আই প্রমিসস।”
অরিত্রান নিঃশ্বাস ফলছে দ্রুত।গলা ধীর করে বললো,
—” আমার সামনেই ঘুরবে সমস্য নেই।”
—” বললেই হলো। খুন করার ইচ্ছা শুধু।”
—” দেখ যা হয়েছে ভুলে যাও।তোমারও দোষ ছিলো।”
—” ও হ্যালো!!আপনি আমাকে মেরেছেন আমি না।সো এসব বলে লাভ নেই।মাপ চেয়ে বিদেয় হন।”
অরিত্রান ভেবাচেকা খেয়ে গেলো।মাপ চাইবে??হুম চাইবে।কিন্তু কিভাবে??অরিত্রান মনোযোগ দিয়ে ভাবছে।অনেক সময় চলে যাচ্ছে সে বলতে পাড়ছে না।অনেক পিপারেশন নিয়ে অরিত্রান যেই বলতে যাবে ঠিক তখনই কেউ দরজা দিয়ে হনহনিয়ে ডুকে পরে।
.
#চলবে__________