পরিণয়ে পরিণতি

পরিণয়ে পরিণতি !! Part- 23

অবন্তিকা ডেকে চলেছে,,
— মুনতাহা আপু দাঁড়াও।
মুনতাহার লাগছে কেউ ওকে ডাকছে। পিছন ফিরে তাকাতেই দেখে অবন্তিকা একটা ছেলের হাত শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়ে আছে।
মুনতাহা কিছুটা অবাক হয় এভাবে কোন ছেলের সাথে অবন্তিকা কে দেখে।
অবন্তিকা আহানাফ কে রেখে মুনতাহা কে জড়িয়ে ধরে,,
— কেমন আছ তুমি?? কতবার কল দিয়েছি জানো তুমি নাম্বার চেঞ্জ করেছ নাকি কখনো কল যায় কখনো অফ থাকে। একবার ও কি আমাদের কথা মনে পড়েনি। তুমি কি ভেবেছো আমি সত্যি টা কখনো জানব না। সেদিন কেন মিথ্যা বলেছিলে??
— কোনটার আগে জবাব দিব!
— একটা একটা করে সব গুলোর দাও।
— আমি ভালো আছি। সেদিন মিথ্যা বলেছিলাম কারণ আমি চাইনি তোমাদের মাঝে আসতে।
— আমাদের মাঝে কি কোন দিন সম্পর্ক ছিলো?? সাইমুন শুধু তোমাকে ভালোবাসতো। তুমি চলে আসার পর থেকে একটা রাত ঘুমায় নি। সারাক্ষণ তোমার জন্য কষ্ট পেত কান্না করতো।
— তোমাকে কি বলছে আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে?? কেন বা কষ্ট পাবে আমি তো ওদের চোখের কাঁটা ছিলাম আমার জন্য কেউ শান্তি পাচ্ছিলো না।
— তুমি ভুল জানো। আর কেউ তোমায় চোখে না হারালেও সাইমুন তোমাকে চোখে হারাতো। তুমি ভালোবাসার মানুষ হয়ে বুঝলো না।
— কিভাবে বুঝবো বলো ও তো আমার ভিতরের আমি টাকে মেরে ফেলেছে তিলে তিলে।
— তুমি আসার পরে মা কে সাইমুন বার বার বলছিলো তোমার শখ পূরণ করতে গিয়ে আমার ভালোবাসা কে হারিয়ে ফেলেছি। বিশ্বাস কর সাইমুন তোমাকে খুব ভালোবাসে। এত কান্না দেখার পরে ওর মা তোমাকে খবর দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু সাইমুন সবাইকে নিষেধ করে দিয়েছে তোমাকে ফিরে আসতে যেন কেউ অনুরোধ না করে যাতে তুমি সাইমুন কে স্বার্থপর না ভাবো। কারণ সমস্যা টা সাইমুনের ছিলো।
— আমাকে ভালোবাসলে কখনো ২য় বিয়ে করতো না। আমি তো কম কাঁদিনি তখন কেন বুঝেনি। যখন চলে আসলাম। সমস্যা ধরা পড়লো তখন কেন এত কান্নাকাটি।
–আসলে মুনতাহা আপু সাইমুন বাধ্য হয়ে বিয়েটা করেছে। ও কখনো আমার ধারে কাছে আসেনি বিশ্বাস কর। সমস্যা জানার আগে থেকে মন মরা থাকতো। কখনো কখনো রাতে বাসায় আসতো না। মাঝেমধ্যে পরিস্থিতি আমাদের অনূকূলে থাকে না ঠিক ভুল বুঝার আগে সব হয়ে যায়।
— দেখো সাইমুন এখন তোমার স্বামী । আমি ওকে নিয়ে ভাবতে চাই না।
— সাইমুনের সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমার আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো যাকে আমি ভালোবাসতাম তার সাথে। বাবা নিজের ভুল বুঝেছে তাই আমার ভালোবাসার মানুষ কে আমায় ফিরিয়ে দিচ্ছে।
অবন্তিকা মুনতাহা কে সব খুলে বলেছে কি কারণে সাইমুন কে বিয়ে করেছে।
— আমি খুব খুশি হয়েছি আমার এক্স স্বামী কে ছাড়ার জন্য না। তুমি তোমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা কে পাচ্ছ। তোমার ভালোবাসা পবিত্র ছিলো। আহানাফ তোমার জন্য অপেক্ষা করেছে এমন মানুষ কয়জনের ভাগ্যে আছে। দোআ করি অনেক সুখে থাকো।
— মুনতাহা আপু তোমাকে জোর করব না। রিকুয়েষ্ট করব মানুষ তো ভুল করে। মহান আল্লাহ তো আমাদের ক্ষমা করে দেয়। সাইমুন খুব কষ্ট পাচ্ছে। শুনেছি ভীষণ অসুস্থ পারলে ক্ষমা করে দিও।
অবন্তিকা আহানাফ এর সাথে মুনতাহার পরিচয় করিয়েছে।
.
.
মুনতাহা মা কে অবন্তিকার কথা খুলে বলেছে। কিন্তু মুনতাহার মা রাগ করে বলে উঠলো,,
— এখন ওদের পোলার সমস্যা তাই এত কান্দাকান্দি। যখন তুই কাঁদছিস তখন কি তোর কান্না ওদের মন পর্যন্ত গেছে।
— মা কারো সমস্যা নিয়ে এভাবে বলা ঠিক না।
— কেন বলব না বল। আমার মেয়ে যে এত কষ্ট পেয়েছে ওরা তো মজাতে ছিলো দূর দূর করে তাড়িয়ে দিছিলো কারণ ওরা জানতো সমস্যা তোর। এখন ওদের সমস্যা ওরা বুঝুক। মরে গেলেও আফসোস করবি না।
মুনতাহা জোরে বলে উঠলো,,
— মা..আ…আ
— তুই আমাকে একটা সত্যি কথা বল তুই কি এখনো সাইমুন কে ভালোবাসিস।
— মা চাইলে সবটুকু ভালোবাসা মুছে দেয়া যায় না। কিন্তু এখন ওর সমস্যার সময় যদি আমরা এসব বলি তাহলে আমার আর ওর মাঝে কোন পার্থক্য থাকবে না। মানছি ও মায়ের কথাতে ভুল করেছে হয়তো এ জীবনে আমি ওকে মেনে নিব না কিন্তু তাই বলে এতটা স্বার্থপর হতে পারবো না।
— তুই কি চাস ওদের কাছে আবার ফিরে যাবি??
— আমি কি বলছি ফিরে যাব। প্লিজ মা আমাকে একা থাকতে দাও।
— তুই ওর কথা না ভেবে রাশেদের কথা ভাব। ওকে কি বলবি।
— মা আমি যদি সাইমুনের মত মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তোমার কথা রাখতে গিয়ে বিয়ে করি তাহলে রাশেদের জীবন টা নষ্ট হবে। সাইমুনের কাছে ফিরে না গেলেও আমি বিয়ে টা করব না। জেনে শুনে ওর ক্ষতি আমি করব না।
— তুই নিজের ভাগ্য কে নিজে তাড়িয়ে দিচ্ছিস। তোর চোখ বলছে তুই কি চাস!
— ওকে আমি বুঝিয়ে বলব। ও আমাকে ঠিক বুঝবে।
— তুই যেটা ভালো বুঝিস কর। আমি চাই না তুই ২য় বার কষ্ট পাস।
.
মুনতাহা জানেনা ওর জীবন টা কোথায় গিয়ে থামবে। শুধু জানে ২য় বার কারো সাথে জড়াতে পারবে না।। জড়ানো অনেক সহজ কিন্তু সারাজীবন জড়িয়ে ধরে রাখা কঠিন।
.
.
মুনতাহা রাশেদ কে উত্তর দিবে বলে ডেকেছে।।
রাশেদ তো মহাখুশি। কিভাবে আসবে কি পরবে ভাবতেই পারছেনা। প্রেমে পড়লে যে কেউ বাচ্চার মত আচরণ করে। মনে হচ্ছে নতুন কারো সাথে দেখা করতে যাবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বার বার দেখছে নিজেকে পরিপাটি লাগছে কিনা।
বুক ভরা আশা নিয়ে মুনতাহার সাথে দেখা করতে আসলো। মুনতাহার চোখে মুখে বিষন্নতা। রাশেদ না বলতে কষ্ট হচ্ছে কিন্তু মিথ্যা স্বপ্ন দেখানোর চেয়ে সত্যি বলে কষ্ট দেয়া অনেক ভালো। হয়ত সাময়িক ভাবে কষ্টে থাকবে কিন্তু একসময় কাটিয়ে উঠবে। জীবন কোন কিছুর জন্য থেমে থাকে না।
— রাশেদ তুমি আমাকে বলেছিলে আমি যা সিদ্ধান্ত নিব তুমি মেনে নিবে রাগ করবে না।
— হুম।
— আমি তোমাকে পারব না বিয়ে করতে। আমি চাই না তোমার জীবন টা নষ্ট হোক। আমি যদি বিয়ে করে তোমাকে সব টা দিয়ে ভালোবাসতে না পারি তখন তুমি কষ্ট পাবা। এটাও জানি তোমার মত ছেলে আমার মত ডিভোর্সি কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে এটাই অনেক। প্লিজ তুমি অন্তত আমাকে ভুল বুঝিও না।
রাশেদ এটা শুনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। কষ্ট হলেও মুনতাহার মনের বিরুদ্ধে বিয়ে করত্র চায় না। কি লাভ জোর করে বিয়ে করে যদি মনের ভিতর জায়গা না পায়।
নিজেকে শক্ত করে,,
— আরে না ভুল বুঝবো কেন। আমি বরং খুশি তুমি কোন চাপ না নিয়ে মনের কথা শুনেছ। আমি চাই তুমি যেভাবে থাকো ভালো থেকো।
রাশেদের ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। এত বছরের সুপ্ত অনূভুতি কোন পরিণয় পেলো না। থাকনা কিছু ভালোবাসা বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকুক পবিত্রতায়। একতরফা ভালোবাসা গুলো সত্যি ভীষণ পবিত্র হয়। না থাকে শারীরিক চাহিদা না থাকে মানসিক চাহিদা।
.
.
মুনতাহার মা বুঝে গেছে মুনতাহা রাশেদ কে ভালোবাসে না। তাই আর মেয়ে জোর করতে চাচ্ছেন না। বিয়ে অনেক বড় ব্যাপার জোর করে দিলে সেটার পবিত্রতা নষ্ট হয়। একি ছাদের নিচে থেকে যদি মনের ভিতর না থাকে তাহলে দুজন কষ্ট পেতে থাকবে।
মুনতাহা মা কে নিয়ে বের হয়েছে কোথায় যাচ্ছে বলছে না।
মুনতাহার মা বার বার জিজ্ঞেস করছে কোথায় যাচ্ছে,,
— কিরে মুনতাহা আমরা ব্যাগ নিয়ে কোথায় যাচ্ছি।
— আগে চলো দেখবা তখন।
নিজেদের বাড়ি গিয়ে কলিং বেল চাপ দিচ্ছে।।
— মুনতাহা আবার আমরা এ নরকে কে এসেছি। তুই কি করছিস এসব।
মুনতাহার ভাবী দরজা খুলে ওদের দেখে হা করে আছে যেন দিনে দুপুরে ভূত দেখছে।
— হা করে তাকানোর কি আছে নিজেদের বাড়িতে নিজেরা এসেছি।
— বাহ!! তোমরা আবার চলে এসেছ। না খেতে পেয়ে ঠিক আমার ঘাড়ে এসে পড়লে।
— মুখ সামলে কথা বলো। এ বাড়িটা আমার বাবা বানিয়েছেন বাবা মারা যাবার পর আমার মা এটার মালিক।
সম্পত্তি কিন্তু এখনো আমার বাবার নামে৷ আইন সম্মত ভাবে আমিও এ বাড়ির সম্পত্তির ভাগ পাব। যদি মা চায় পুরো বাড়ি আমার লিখে দিবে। তাই সাবধানে কথা বলো ওকে??
না হয় পিছলে পড়ে কোমর ভেঙে যাবে।
পপি ভাবছে এ কোন মুনতাহা কে দেখছে। এই যে আগের চুপ করে শুনে থাকা মুনতাহা না।
— সম্পত্তির ভাগ পাবা মানে কি বলতে চাচ্ছ।
— যা বলছি একদম ঠিক বলছি। আর একটা কথা মা কে নিয়ে আসার আগে আমি থানায় তোমার নামে জিডি করে এসেছি যদি আমার আর মায়ের কিছু হয় তুমি দায়ী থাকবে।
মুনতাহার ভাবী থতমত খেয়ে গেলেন। ভয়ে মুখ ফুটে কিছু বলছে না। যদি সত্যি পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়। একটা কথা সবসময় সঠিক,,
মানুষ শক্তের ভক্ত নরমের জম। যতদিন নিজেকে দূর্বল ভাববেন সবাই সব কিছু চাপিয়ে দিবে।
হুমাম এসে দাদী কে পরম মমতায় জড়িয়ে ধরেছে। দাদী নাতির চোখে মুখে চুমু খেতে লাগলো।
মুনতাহার ভাই মা বোন কে দেখে,,
— মা তোমরা এসেছ আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমি সেদিন ভুল করেছি
ছেলে একজন অন্যজন কে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলো। এ যেন সুখের কান্না।
মুনতাহার ভাবী জামাইর দিকে চোখ বড় করে তাকাচ্ছে।।
— তুমি অনেক উড়েছ আর না। এ কয়দিনে বুঝেছি তোমার জীবনে আমাদের কোন দাম নাই। আজ থেকে ইচ্ছে হলে থাকবা না হয় ব্যাগ গুছিয়ে বাপের বাড়ি রওনা দাও।
.
.
মুনতাহার সময় টা আবার খারাপ যাচ্ছে। রাশেদ কথা বলে কিন্তু আগের মত হাসিখুশি থাকে না। মুনতাহা কিছু বলে না যাতে রাশেদ নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারে।
.
মুনতাহার বাসায় আগের মতো ঝামেলা নেই তাও মুনতাহার মনে অশান্তির দানা বেঁধেছে। বার বার অবন্তিকার কথা গুলো কানে বাজছে। ভাবছে,,
আমি বেশি কঠোর হয়ে গেলাম নাতো? মানুষ মাত্র ভুল করে সাইমুন নাহয় একটা ভুল করে ফেলেছে আমার কি সাইমুন কে ক্ষমা করে দেয়া উচিত!! অবন্তিকা তো বলেছে ও একটা রাত শান্তিতে ছিলো না শুধু আমার কথা ভেবে। হয়তো ভালোবাসা টা সঠিক সময়ে প্রকাশ করতে পারেনা।
পরক্ষণেই ভাবছে,,
সে আমাকে মন থেকে ভালোবাসলে কেন আমার কষ্ট বুঝেনি। এমন তো না ও আমাকে বুঝতো না। আজ যদি আমার সমস্যা হতো তাহলে কি আমার জন্য এমন মন পুড়তো সবার?? আমার কথা কি মনে রাখতো!! অবন্তিকা কে মানুক আর মানুক বিয়ে তো করেছে। অবন্তিকা যদি চাইতো হয়ত ওর সাথে একটা সময় সুখে সংসার করতো। তখন কি আমার কথা মনে করে বুকটা চিনচিন করতো।
কই আমার চোখের জল তো তখন কারো মন কে নরম করতে পারেনি। এখন এত কান্না কিসের!!..
না কিছুই বুঝতে পারছে না মুনতাহা। কখনো পজেটিভ কখন নেগেটিভ কথা মাথায় আসছে। ভেবে যাচ্ছে কিন্তু মাথা কাজ করছে না।
হঠাৎ শুনতে পায় মোবাইল বেজে যাচ্ছে। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে এটাতো চেনা নাম্বার। হুম আর কারো না রাহির নাম্বার। রাহি কেন কল দিচ্ছে! মুনতাহা মোবাইল রেখে দিলো। না কল বেজে যাচ্ছে।
হয়তো খুব দরকার মুনতাহা কল রিসিভ করলো,,
— ভাবী কেমন আছ?
— তুমি হঠাৎ!!
— ভাবী আমি জানি তুমি রাগ করে আছ। ভাবী ভাইয়ার খুব শরীর খারাপ প্লিজ তুমি একবার আসবে।
কি???
রাহির কথায় মুনতাহার বুক কেঁপে উঠলো। নিজেকে শক্ত করে,,
–আমি পারবো না রাহি।
— প্লিজ ভাবী আমরা নিজেদের পাপের শাস্তি ভোগ করছি। বিশ্বাস কর তুমি চলে আসার পর থেকে আমরা কেউ ভালো নেই। ভাবী শুধু ভাইয়ার না আমার ও তোমাকে খুব দরকার আমি খুব বিপদে আছি।
— কিসের বিপদ কি হয়েছে??
— ভাবী একবার বাড়িতে আসো আমি তোমাকে সব বলব। তুমি ছাড়া আমি কাউকে বলতে পারছিনা। এভাবে চলতে থাকলে আমার গলা দড়ি দিয়ে মরতে হবে।
রাহির কথা শুনার পর মুনতাহা কিছুতেই আর না করতে পারলো না।
কি হয়েছে সাইমুনের বড় কোন অসুখ হয়নিতো!! রাহির বা কি এমন হলো যে গলায় দড়ি দিতে হবে।
মুনতাহা যাচ্ছে দেখে মুনতাহার মা বাঁধা দিলেন না। মন যেহেতু ছুটছে যাক। যে যাই বলুক মুনতাহার মনে এখনো সাইমুনের জন্য ভালোবাসা বিদ্যমান….
….চলবে….