1. নতুন গল্পঃ3. রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প গুলোঃধ্রুবতারালেখাঃ নিলাঞ্জনা রহমান

ধ্রুবতারা !! লেখাঃ নিলাঞ্জনা রহমান

ধ্রুবতারা
লেখাঃ নিলাঞ্জনা রহমান

কেনো এমন করলেন স্যার?কী দোষ ছিলো আমার? বলতে পারেন?

কান্না করতে করতে এসব বলছে তারা।
ধ্রুব জানালার বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। চোখে এক ধরনের অনুভূতি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কোন অনুভূতি তা স্পষ্টভাবে বোঝা মুশকিল।

(বিঃ দ্রঃ “ধ্রুবতারা !! লেখাঃ নিলাঞ্জনা রহমান” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)

তারা আবার বললো -স্যার আমি আপনাকে বলছি আপনি কোনো উত্তর কেনো দিচ্ছেন না?
ধ্রুব কিছু বলছেনা। তারা আর নিতে পারছেনা। তাই খাট থেকে উঠে ধ্রুবর কাছে গেলো। ধ্রুবর সামনা সামনি দাড়িয়ে বললো -আপনার কথা কানে যায় না?আমি আপনাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি?
ধ্রুব এবার জানালা থেকে চোখ সরিয়ে তারার দিকে তাকালো। ধ্রুব একবার উপর থেকে নিচে তাকালো তারার দিকে। খয়েরী রং এর লেহেঙা, তার সাথে গায়ে স্বর্ণের হালকা গহনা, চোখে লেপ্টে থাকা কাজল, ঠোটে লাল খয়েরী লিপস্টিক যা একটু হালকা হয়ে গেছে। তবুও ভালো লাগছে দেখতে। কিন্তু ওর চোখগুলা লাল হয়ে আছে। মনে হচ্ছে আগুন ঝরছে। চোখ বেয়ে জল পরতে পরতে তা শুকিয়ে আছে। চোখের পাপড়িতে এক ফোটা জল লেগে আছে। অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে ।
তারাঃস্যার!!!!!!!
তারার চিৎকারে ধ্রুবর ধ্যান ভাঙে।
ধ্রুবঃআমার মনে হয় তোমার ফ্রেশ হওয়া উচিত।(খুব শান্ত ভাবে কথাটা বললো ধ্রুব)
তারাঃআমি আপনাকে কিছু বলছিলাম?
ধ্রুবঃআমি তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই।
তারাঃআপনি অবশ্যই বাধ্য। আপনি কেনো আমাকে বিয়ে করলেন? তার উত্তর আমার চাই??
ধ্রুবঃআমি বললাম তো আমি উত্তর দিতে বাধ্য নই।
তারাঃআপনি কিন্তু……
ধ্রুবঃ তারা তুমি যদি আমার কথা না শুনো তাহলে তোমার ফ্যামিলির জন্য ভালো হবে না। আমি কি করতে পারি তা তুমি এতোক্ষনে বুঝতে পেরেছো।আমি যদি তোমাকে বিয়ে করতে পারি তাহলে আমার অধিকারও আদায় করতে পারি। আর এই কাজ করলে তোমার ভালো নাও লাগতে পারে তাই আমার মাথা গরম হওয়ার আগে যা বলছি তা করো। আমি বাইরে যাচ্ছি, কিছুক্ষন পর আসবো তোমাকে যদি এই অবস্থায় দেখি তাহলে তোমার জন্য ভালো হবে না।
এই বলে ধ্রুব রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তারা সেখানেই দাড়িয়ে আছে। কি করবে কিছু বুঝতে পারছে না। তার জীবনে কি এটা হওয়া এতো প্রয়োজন ছিলো? তারা ভাবতে পারছেনা। ধ্রুবর কথামতো বাথরুমে গেলো। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে একবার ভালো করে দেখে নিলো। বৌ এর সাজে নিজেকে দেখে আবার ক্ষতটা মনে পড়ে গেলো।
তারা এবার ঝরণার নিচে গিয়ে ঝরণাটা ছেড়ে দিলো। শীতল পানি যখন তারার শরীর বেয়ে পড়ছে তখন তারা কান্নায় ভেঙে পড়লো। তারা ভিজতে ভিজতে মেঝেতে বসে পড়লো। আর ভাবতে লাগলো তার অতীত এর কথা।

অতীত…………………

তারার মাঃতারা!!!!!!!!!!!(চিৎকার দিয়ে)
তারাঃআআআআআআ ভূমিকম্প হচ্ছে আমাকে কেউ বাচাও!!!!!আমার এখনো বিয়ে হয় নাই আআআআআআআ 😣😣😣😣😣😣
তারার মাঃ😕😕😕😕😕😕😕😕
তারা এতক্ষন ঘুমের ঘোরে এসব কথা বলছিলো।
তারার মাঃতারা????
তারা এবার চোখ খুললো।
তারাঃমা তুমি???😑😑😑😑
তারার মাঃহুমমম আমি। আর কতক্ষন ঘুমাবি। সারারাত পেঁচার মতো চোখ দুইটা খুইলা খুইলা ফিল্ম দেখস আর সকালে উঠার খবর নাই।,😡😡😡তোর না আজকে অফিসে বসের ছেলে আর তোদের নিউ এমডি আসবে। তুই লেট করলে তোকে তো প্রথম দিনেই গেট আউট করে দিবে সে খেয়াল কি আছে?😠😠😠
তারাঃশীতল আম্মু শীতল।এতো হাইপার কেনো হও? আংকেল থাকতে নো প্রবলেম আর আমার দেরীও হবে না। আর হলেও আংকেল তা দেখে নিবে।
তারার মাঃহুমমমম তোর এই বস আংকেল তোকে এতো আস্কারা দিয়ে মাথায় তুলেছে। আমি বস হলে তোকে কত আগে অফিস থেকে বের করে দিতাম।
তারাঃএজন্যই তো তুমি বস না😂😂😂😂
তারার মাঃ😒😒দেখবি তোর নতুন বস হিটলার হবে।
তারাঃমা??? 😯😯😯
তারার মা ঃযা রেডী হয়ে নে।
তারাঃ😣😣😣😴😴😴

তারা ইসলাম। বাবা মায়ের দুই ছেলে মেয়ের বড় মেয়ে। ছোট ভাই প্রবল। ক্লাস সিক্স এ পড়ে। তারার জান ও। ওর জন্য তারা সব করতে পারে।

তারা অফিসে পৌছালো। আজ ১৫ মিনিট লেট।
তারাঃউফফ আজকেও লেট। কি জ্বালা মায়ের,মুখের কথা লেগে গেলো আজকেও লেট হয়ে গেলাম।
তারা অফিসে ঢুকেই দেখলো সবাই চুপচাপ কাজ করছে। তারা কিছুটা অবাক হলো কারণ সচারচর এই টাইমে অফিস স্টাফরা সবাই চুপচাপ তো থাকে না বরং এই অফিসে হৈ চৈ করে কাজ করা হয় তাহলে ব্যাপারটা কি?
তারা ঢুকতেই সব স্টাফরা ওর দিকে তাকালো প্রিয়া তারাকে দেখেই কিছু বলতে যাবে তার আগেই পিয়ন এসে বললো তারাকে নাকি নতুন বস ডাকছে।
তারা একটু ভয় পেলো।কি হবে আল্লাহ মালুম। ঢোক গিলে তারা বসের কেবিনের দিকে অগ্রসর হলো।
মেই আই কাম ইন স্যার??
হুমমমম

তারা কেবিনে ঢুকলো।নতুন এম ডি অন্যদিকে মুখ করে বসে আছে।
বসঃতো মিস তারা আপনি আমার বাবার পি.এস ছিলেন?
তারাঃজ্বি স্যার।
বসঃতো সে অনুযায়ী আপনি আমারও পি.এস।
তারাঃজ্বি স্যার।
এবার তারার বস ওর দিকে ফিরলো। তারা বসকে দেখেই ছোটখাটো একটা ক্রাশ খেলো।
বসঃতাহলে আজ আমার অফিসে আসার প্রথম দিনেই লেট কেনো হলেন আপনি?
তারাঃআসলে স্যার রাস্তায় জ্যাম……
বসঃ স্টপ ইট!!!!!(চিৎকার দিয়ে)
চিৎকার শুনে তারা ভয় পেয়ে গেলো।
বসঃএটা আপনার বাসা নয় যে যখন ইচ্ছা তখন এখানে আসবেন আর ইচ্ছানুযায়ী কাজ করবেন। এটা আমার কোম্পানি । এখানে টাইম মেন্টেইন করে কাজ করতে হবে। আর আপনি এখানে লেট করে আসছেন?😤😤
তারাঃ কিন্তু স্যার?
বসঃনো মিস তারা আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না। আজ আপনাকে ফাস্ট এন্ড লাস্ট টাইমের মতো বলছি আপনি যদি আর একদিনও লেট করেন তাহলে আপনার জব এর জন্য তা ভালো হবে না। সো পরেরবার থেকে মনে রাখবেন। আর এই নিন এই ফাইগুলো। আজকের মধ্যে আমাকে কমপ্লিট করে দিবেন।
তারাঃ এতোগুলো?? 😲😲
বসঃকোনো প্রবলেম?থাকলে বলতে পারেন আপনার রেজিগনেশন লেটার রেডী করতে আমার বেশি সময় লাগবে না 😏😏
তারাঃস্যার??😟😟😟
বসঃইউ মে লিভ নাও।
তারাঃ কিন্তু স্যার!!
বসঃ মিস তারা ইউ মে লিভ! 😡
তারা কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়লো।
তারা কেবিন থেকে বের হতেই প্রিয়া এসে তারাকে ধরলো।। প্রিয়াঃকিরে স্যার কিছু বলেছে?
তারাঃ খালি কি বলেছে?পুরো ওয়াশিং পাউডার দিয়ে ধুয়ে দিয়েছে। কি জালিম বস রে এতোদিন কি ভালো ছিলাম। কিন্তু আজ😭😭😭😭
আমি বুঝেছি সব আম্মুর কারণে। আম্মু আমাকে বলেছিলো আমি যাতে একজন জালিম বস পাই। 😢😢 আআআআআআআ আমার কি হবে এখন😭😭।ঐ জল্লাদ , জালিম, জলহস্তী, কালা কুমির, নাইজেরিয়ান বান্দর, শেওড়া গাছের ১০ নম্বর ভূত
প্রিয়াঃচুপ কর বইন
তারাঃনা আমি চুপ হমু না। আমার মুখ আমি বলমু তুই আমারে চুপ হইতে কইতাসস কেনো?
বসঃকারণ আমি আছি তাই।
তারাঃঐ কে রে?
বলে পিছনেই ফিরতেই তারা অবাক ।
বসঃতো কি বলছিলেন মিস.তারা?😒😒😒
তারাঃসরি স্যার। আর জীবনেও মুখ খুলবো না। মাফ করেন স্যার।
বসঃ😒😒😒😒😡😡😡
তারাঃস্যারররর আমি কাজ করতে যাচ্ছি। এই দেখেন কত কাজ।
বলে তারা দৌড় দিলো।
ধ্রুব অবাক এতো বড় মেয়ে এভাবে দৌড় দিলো।

প্রিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না।
প্রিয়াঃস্যার আমিও যাই। 😅😅😅
বলে প্রিয়াও এক প্রকার দৌড় দিয়ে চলে গেলো।

ধ্রুব এখনো ওখানে দাড়িয়ে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না।

ধ্রুব, আমাদের গল্পের হিরো। আবার তারার কাছে ভিলেন। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। প্রচুর রাগী আর বদমেজাজী। সব কাজ ঠিক ঠিক টাইমে হতে হবে আর তা না হলে অবস্থা টাইট। আগে এমন ছিলো না। সাধারণ ছেলের মতো ধ্রুবও মজা করতো হাসতো, গান করতো। বলতে গেলে এখন এর ধ্রুবর পুরো অপজিট।ধ্রুবর এমন পরিবর্তনের মূল কারণ তার মা। ধ্রুবর মা কয়েকবছর আগে একটা এক্সিডেন্ট এ মারা যান। এরপরই ধ্রুবর এমন পরিবর্তন হয়। সবসময় হাসি আর কথা দিয়ে মাতিয়ে রাখা ছেলেটি একা একা থাকতে লাগলো। কারো সাথে কথা বলতো না৷ ফরিদ সাহেব ছেলের এমন অবস্থা আর মেনে নিতে পারছিলো না আর তাই তিনি ধ্রুবকে পড়ালেখার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেন৷
কথায় আছে অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর। ধ্রুবর ক্ষেত্রেও তাই হলো। একা থাকতে থাকতে ধ্রুব পাল্টে গেলো। ফরিদ সাহেব অনেক চেয়েও ধ্রুবকে আগের মতো করতে পারেননি । ফরিদ সাহেবও অপেক্ষায় আছেন কখন এমন কেউ একজন আসবে আর তার ছেলেকে আগের মতো করে তুলবে।
বিকাল ৪টা ১৮ মিনিট

তারাঃউফফফ ফাইনালি কাজ শেষ হলো। বাপরে বাপ কোমরটা একদম ভেঙে যাবে মনে হচ্ছে । এতক্ষন এক জায়গায় বসা যায়। উফফ শালা খচ্চর, বান্দর, হনুমান, কালা খরগোশ, ডান্সিং পেঁচা 😤
পিছন থেকে প্রিয়া বললো-কিরে কোন মহাপুরুষকে এতো বকা দিচ্ছিস?😂😂😂
তারাঃকে আবার ঐ জালিম দ্যা হালিম বসকে দিতাসি ।
প্রিয়াঃ 😲😲বইন আজ সকালেই বকা দিতে গিয়া এতো ঝারি খাইলি তোর পেট ভরে নাই?
তারাঃ😒😒😒😒😒বেশি বকস তুই।
প্রিয়াঃবুঝিনা বাপু তোর এতো সাহস কোথা থেকে আসে যে তুই স্যারকে বকা দেস।
তারাঃ ইউ হেভ টু বুঝন পরিবো সব কিছু সবার জন্য আসে না। সো চাপ নিস না। 😁😁
প্রিয়াঃ😒😒😒।
তারাঃওকে আমি যায় রে, ফাইলগুলা ঐ মিশা সওদাগরকে দিয়া আসি।
প্রিয়াঃমিশা….??😧😧😧
তারাঃআরে আমাদের বসের কথা কইতাসি বুঝসও না।
এই বলে তারা চলে গেলো।

কেবিনে…..

তারাঃআসতে পারি স্যার??
ধ্রুবঃইয়েস।
তারা কেবিনে ঢুকেই অবাক কারন ফরিদ সাহেব রুমে বসে আছে।
তারাঃআংকেল??😃😃😃
ফরিদ সাহেবঃ আরে তারা মা যে কেমন আছো?
তারাঃআমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো?
ফরিদ সাহেবঃঐ তো ভালোই৷ তো কাজ কেমন চলছে?
তারাঃ(আর কাজ!তোমার পোলা তো আমারে কাজ দিতে দিতে মাইরা লাইবো। ও আংকেল গো আমি অনেক দুঃখে আছি।তোমারে কেমনে কইতাম। শালা নাগিন টাইপ থুক্কু নাগ টাইপ পোলা তোমার,। মনে হয় এখন ছোবল মারবে। 😭😭)
আংকেল ভালোই চলছে।
ধ্রুবঃমিস. তারা আপনার কথা শেষ হলে আমাকে ফাইলগুলো দেখান।
তারাঃওহহ সরি স্যার। এই নিন।
তারা ধ্রুবকে ফাইলগুলো দিলো।
ধ্রুব ফাইলগুলো দেখছে।
তারাঃ আল্লাহ গো এই লোক এমনভাবে ফাইল দেখতাসে মনে হইতাসে মাটি থেকে খাজানা বাইর করতাসে। আল্লাহ অনেক কষ্টে ফাইল নিয়া কাজ করসি প্লিজ যাতে কোনো ভুল না থাকে। এবারের মতো বাঁচায় দাও 😥😥😥
ধ্রুবঃহুমমম ঠিকঠাক আছে।
তারাঃযাক বাবা বাঁচলাম 😯😯😯
আংকেলঃহুমম আমি জানি আমার মেয়ে ভালো কাজটাই করবে।😊😊😊
ধ্রুবঃ হুমমম তা তো আরো কয়টা কাজ দিলে বোঝা যাবে।
তারাঃমানে??
ধ্রুবঃ হুমম এই নাও এখানে আরো দুইটা ফাইল আছে। যাও কমপ্লিট করে নিয়ে আসো।
তারাঃ স্যার!!!!!😢😢😢😢
তারা অসহায় দৃষ্টিতে একবার ধ্রুব আরেকবার ফরিদ সাহেব এর দিকে দেখলো।
ফরিদ সাহেব বুঝতে পারলো তাই বললো-
আহা্ ধ্রুব ওকে আর কাজ দিস না বেচারী অনেক কাজ করেছে ।
ধ্রুবঃ কিন্তু বাবা??
ফরিদঃনা আমি আর শুনছিনা। তারা তুমি যাও আমি দেখছি।
তারাঃওকে আংকেল । 😀
বলে তারা দৌড় দিলো কারণ এখানে থাকা নিরাপদ নয়।
তারা চলে গেলো।
ধ্রুবঃবাবা তুমি এই মেয়েকে এতো ইম্পরট্যান্স দাও কেনো?😕
ফরিদঃকারণ আছে রে বাবা কারণ এই মেয়ে…….
এমন সময় ধ্রুবর একটা কল আসে।
ধ্রুবঃবাবা আমি একটু পরে কথা বলছি একটা ইম্পরট্যান্ট কল এসেছে।
বলে ধ্রুব কল নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো।

তারার বাড়িতে…………
তারাঃমাআআআআআ!!!😣😣😣😣
তারার মাঃ আল্লাহ রে কি হইলো??এমন বাইরাবাশ এর মতো গলা ফাটাইতাসোস কেনো?
তারাঃমা গো তোমার মুখখানা দেখাও গো।
মাঃ কেনো?😟😟
তারাঃমা তুমি কোন মুখ দিয়া বলছিলা আমার বস জালিম হইবো একটু সেই মুখখানি মোরে দেখাও।😣😣
মাঃকেনো রে কি হইলো তোর?
তারা তার মাকে সব বললো। আজ সারাদিনের কথা।
সব শুনার পর তারার মা-
😂😂😂😂😂😂😁😂 আল্লাহ কি হাস্যকর ব্যাপার। তাইলে বলা যায় তোর ব্যান্ড বাজাতে কেউ একজন আসলো। 😀😀😀😀
তারাঃ😒😒😒😒😒মাআআআআ
মাঃ😥😥😥
এক কাজ কর চাকরিটা ছেড়ে দে। তোর বাবার চাকরী তো আছে আর কি লাগে।
তারাঃমা তুমি জানো আমি চাকরিটা কেনো করছি। বাবা কিছুদিন পর রিটায়ার হবে। বাবা যা পেনশন পাবে তাতে আমাদের সংসার ভালোভাবে চলবে ঠিক কিন্তু প্রবল। ওর তো একটা ক্যারিয়ার আছে। আমি চাই আমার ভাই অনেক বড় হোক আর এজন্যই আমি এখন থেকে টাকা জমা করছি। 😊😊😊
মাঃ প্রবল এর প্রতি তোর ভালোবাসা দেখে আমার জ্বলন হয়। আমাকেও তুই এতো ভালোবাসিস না। 😒😒
তারাঃমা তুৃমি তো দিন দিন হিংসুক হয়ে যাচ্ছো । যাও খাবার দাও আমার অনেক জোরে ক্ষুধা লাগছে।
মাঃদিতাসি যা হাত মুখ ধুয়ে আয়।
তারাঃওকে।😊😊😊

৭দিন পর…………………….

এই ৭ দিনে তারা, ধ্রুবর রাগ,জেদ সব কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তারা আগেও কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান ছিলো কিন্তু ধ্রুব আসার পর তারা আরও কাজে মনোযোগী হয়েছে। তারা চায় না ধ্রুবকে কোনো অভিযোগের সুযোগ দিতে। কারণ চাকরিটা তারার জন্য দরকার। তার ভাইয়ের ক্যারিয়ার করার জন্য তারা এখন থেকে টাকা জমাচ্ছে। আর তার এই স্বপ্ন পূরণের জন্য এই চাকরি অপরিহার্য।

অন্যদিকে, ধ্রুবও তারার কাজে খুশি যদিও ওদের তেমন কথা হয় না। কিন্তু ধ্রুব এটা বুঝেছে যে, তারা প্রচুর চঞ্চল। যদিও তারা ধ্রুবর সামনে চঞ্চলতা না দেখানোর প্রয়াস করে,কিন্তু তবুও তারার অভ্যাসগত চঞ্চলতা চলে আসে। যেমন সেদিন সকালে ধ্রুব তারাকে একটা ফাইল এর সম্পর্কে জানার জন্য বাসায় কল করলে তারা ঘুমের ঘোরে ধরে –
তারাঃহ্যালো। (ঘুম জড়ানো কণ্ঠে)
ধ্রুবর তারার কখনো এমন কণ্ঠ শুনেনি। এমন ঘুম জড়ানো কণ্ঠে কেমন যেনো এক ধরনের অন্যরকম অনুভূতি কাজ করলো ধ্রুবর মনে। তাই সে কিছু বলতে পারছিলো না।
তারাঃহ্যালো!ঐ কথা না বললে কল করস কেনো? সকাল সকাল মাইয়া মানুষরে কল দিয়া ডিসটার্ব করস।তোর কাজ কাম নাই? নাকি কোষ্ঠকাঠিন্য হয়সে যে বাথরুৃম করতে পারতাসস না তাই সকাল সকাল কাজ নাই তাই আমারে কল দিতাসোস। তোর ঘুম আসতাসে না তাই বলে আমার আরামের ঘুম নষ্ট করবি। এমনেও অফিসে বসের কারণে প্যারায় আছি। এখন তুইও কি আমারে ঘুমাইতে দিবি না। কথা বলস না কেনো?😤😤😤😤😤
ধ্রুবঃমিস.তারা আমি আপনাকে ডিসটার্ব করি,আপনাকে প্যারা দিতাসি😡😡😡😡
ধ্রুবর আওয়াজ শুনে তারার যায় যায় অবস্থা।
তবুও অনেক কষ্টে বললো-
স্যা..স্যার আপনি??হিহিহি ভালো আছেন স্যার?গুড মর্নিং স্যার। আজ সকালটা কি সুন্দর , মনোরম। এমন পরিবেশে হাটা স্বাস্থের জন্য প্রচুর ভালো। তাই না স্যার। ওকে স্যার আমি হাটি আসি৷ গুড নাইট স্যার থুক্কু গুড মর্নিং স্যার থুক্কু গুড বাই স্যার। 😫😫😫😫
বলে তারা জলদি ফোন কেটে দিলো।তারার বুকে এখনো ধুক ধুক করছে ভয়ে আল্লাহ বেঁচে গেসি নইলে কি বকাটা না খেতাম😧😧😧
তারার এমন পাগলামি কথা শুনে প্রথমে রাগ আসলেও পরে নিজের অজান্তেই হেসে উঠলো ধ্রুব। ধ্রুব নিজেও জানে না কেনো হাসি পেলো ধ্রুবর তার তো রাগ হওয়ার কথা।

ধ্রুব তার কেবিনে বসে কাজ করছিলো এমন সময় তারা দরজায় নক করলো
তারাঃআসতে পা….
ধ্রুবঃহ্যা আসো
তারাঃযা বাবা আজকেও পুরাটা বলতে পারলাম না। তারা এই কয়দিন ধরে মে আই কাম ইন স্যার পুরাটা বলতেই পারছেনা তার আগেই ধ্রুব চলে আসতে বলছে তাই আজ বাংলায় বললো কিন্তু তাতেও কাজ হলো না আজকেও পুরাটা বলতে পারলো না।
তারা ধ্রুবর সামনে দাড়িয়ে আছে।ধ্রুব একটা ফাইল দেখছে খুব মনোযোগ দিয়ে। অনেকটা সময় হয়ে গেলো তারা দাঁড়িয়ে আছে।
তারাঃউফফ পায়ে ব্যাথা হয়ে গেলো স্যার এর পড়া শেষ হয় না কেনো?এমনভাবে ফাইলটা দেখছে মনে হচ্ছে বিসিএস এর এক্সাম দিতাসে। কি প্যারা। 😣😣😣😣
অনেকটা সময় পর ধ্রুবর ফাইল পড়া শেষ হলো ।
ধ্রুব ফাইলটা টেবিলে রাখলো।
ধ্রুবঃসব ঠিক আছে তবে ২য় পৃষ্ঠার ৮নং প্যারায় কমা দিতে ভুলে গেছো। পরেরবার যাতে এমন না হয়।
ধ্রুবর কথা শুনে তারার ইচ্ছা হচ্ছে ধ্রুবর চুলগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে। তারা অনেক কষ্টে নিজের রাগ গিলে বললো -ওকে স্যার পরেরবার খেয়াল রাখবো।
তারা চলে যেতে লাগলে ধ্রুব তারাকে বলে-কোথায় যাচ্ছো? আমি তোমাকে যেতে বলেছি?
তারাঃনা স্যার আসলে
ধ্রুবঃ আমি যেহেতু তোমাকে যেতে বলিনি এখানে থাকা তোমার দায়িত্ব।
তারাঃজ্বি স্যার।
ধ্রুবঃশুনো পরশু আমাদের কোম্পানির সাথে R.K কোম্পানির মিটিং হবে। আর এই মিটিংটা সিলেটে হবে।
তারাঃসিলেটে কেনো??
ধ্রুবঃ তুমি তো জানো RK industries এর সাথে আমাদের একটা প্রোডাক্ট নিয়ে পার্টনারশিপ চলছে। তাই ওদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুললে পার্টনারশিপটা দৃঢ় হবে। তাই সিলেটে মিটিংটা করাই ভালো হবে। তাই কাল সকালের ফ্লাইটে ওখানে যাবো। সব আ্যরেন্জ করে পরশু সকাল ১০টায় মিটিং।
তারাঃওহহহহ।
(ভালোই হলো এই ব্যাটা সিলেটে গেলে কয়দিন আরামে থাকবো) 😀😀
ওকে স্যার আমি আপনার ফ্লাইট এর টিকেট ম্যানেজ করে দিচ্ছি ।
ধ্রুবঃওয়েট একটা না দুইটা টিকেট ম্যানেজ করো।
তারাঃদুইটা???
ধ্রুবঃহুমম তুমিও যাচ্ছো আমার সাথে।
তারাঃকি???স্যার আমি গিয়ে কি করবো আমি অনেকবার সিলেটে গেছি আর যাওয়ার ইচ্ছা নাই স্যার আপনি যান ওকে😅😅😅
ধ্রুবঃতারা!!!আমি যা বলেছি তাই করো আর কোনো কথা নয় তুমি যেতে পারো।
তারাঃকিন্তু স্যার!!
ধ্রুবঃতারা জাস্ট গো।
তারাঃওকে স্যার।
আল্লাহ আমি কি দোষ করছিলাম। এই ব্যাটার সমস্যাটা কি। আমারে এতো জ্বালায় কা???😭😭😭😭😭জীবনটা ফাটা ত্যানা কইরা দিলো।

পরেরদিন-
এয়ারপোর্টে ধ্রুব দাড়িয়ে আছে,কিন্তু তারার কোনো খবর নেই।
ধ্রুবর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ।
অনেকটা সময় পর তারা আসলো।
তারা এসেই ধ্রুবর চেহারা দেখে বুঝে গেলো ধ্রুব রেগে আছে।
তারাঃও খোদা ধুমকেতু তো রেগে ফায়ার। যেকোনো সময় রাগের গুলির বর্ষন করবে ঠুস!ঠুস!ঠুস! মারাত্মক ব্যাপার।
কিছু একটা কর তারা।
ধ্রুব কিছু বলতে যাবে তার আগেই তারা বললো -দেখুন স্যার আমি জানি অনেক লেট হয়ে গেছে কিন্তু আমার কিছু করার ছিলো না রাত ২টা পর্যন্ত প্রেজেন্টেশন নিয়ে কাজ করসি। তারপর ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠছি। সব ঠিক ছিলো। বাসা থেকে ঠিক টাইমে বের হয়সি কিন্তু রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে লেট হয়সে,।আর ট্রাফিক পুলিশ আমার খালু না যে আমারে
স্পেশিয়াল ট্রিট দিবে আর বলবে তারা ম্যাডাম তোমার জন্য আমি আলাদা রাস্তা দিচ্ছি তুমি এই রাস্তা দিয়া যাও। তাই লেট হয়সে। এতো কথা বইলেন না চুপচাপ চলেন লেট হয়ে যাচ্ছে । টাইমের কোনো খেয়াল থাকে না হুু।
বলে তারা হাটা শুরু করলো। ধ্রুবকে কিছু বলতেই দিলো না
ধ্রুব অবাক এটা কি ছিলো। নিজে লেট করে আমাকে বকা।😕😕😕

দরজার ঠক ঠক আওয়াজে তারার ধ্যান ভাঙে। তারা এখনো ভিজছে। শরীরের সমস্ত শক্তি লোপ পেয়েছে। দরজারটুকু খোলার শক্তি নেই ঐ দিকে ধ্রুব দরজায় টোকা দিচ্ছে কিন্তু তারা খুলছেনা।
ধ্রুবর গলা শুকিয়ে যাচ্ছে । তারা কোনো ভুল কিছু করলো না তো??
ধ্রুব চিৎকার দিয়ে তারাকে ডাকছে। কিন্তু তারা খুলছে না দরজা।
তারা ধ্রুবর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে কিন্তু জবাব দেওয়ার শক্তি নেই। তারার শরীর ধীরে ধীরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ঝরনার পানি অনবরত পড়ছে।
তারার কাছে ধীরে ধীরে সবকিছু অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।

চলবে…… ধ্রুবতারা ধ্রুবতারা ধ্রুবতারা

বিঃ দ্রঃ ”লেখাঃ নিলাঞ্জনা রহমান  ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন…………

👉আমাদের ফেসবুক পেজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *