তোমার আঁচলের উঠোনে

তোমার আঁচলের উঠোনে !! Part- 10

বিভাবরী ছাদের কার্নিশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার দায়িত্ব হচ্ছে সাদা টয়েটো আসলেই খবর দেওয়া। দায়িত্বটা দিয়েছে রুশা। ওয়াশরুম থেকে আসতে না আসতেই রুশা তাকে পাঠিয়ে দিয়েছে। ভেজা চুল থেকে টুপটুপ করে পানি ঝরছে। মুছার সময়ও পায়নি।
তখনই হুট করে পেছন থেকে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরে। বিভাবরী ভয়ে লাফিয়ে উঠে। আত্মা উড়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার মনে। কাঁপা গলায় বলে,
— রিশাদ, ছাড়ুন প্লিজ!
— না দেখেই চিনে ফেললে, কেশবতী?
— আপনার মতো অসভ্য জগতে আর নেই। ছাড়ুন আমায়।
— উহুঁ! অসভ্যতামী করবো।
বিভাবরীর দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলে,
— আপনার পায়ে পড়ি, ছাড়ুন আমায়।
রিশাদ তাকে ছেড়ে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলে,
— তুমি ভেজা চুলে, সেজেগুজে আমাকে ইমপ্রেস করবে। আর আমি কিছু করতে গেলেই দোষ!
বিভাবরী দাঁত চেপে বলে,
— আপনি জানেন, পৃথিবীর দ্বিতীয় কঠিনতম মানুষ?
— প্রথম জন টা কে?
বিভাবরী আমতা আমতা করে বলে,
— সেটা জেনে আপনি কি করবেন?
রিশাদ প্রত্যুত্তরে কিছু বলেনি। শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।
বিভাবরীর বুকের বা পাশে ধুকপুক করছে। থরথর করে কাঁপছে হাত-পা। এমন হচ্ছে কেন তার সাথে? ভিষণ কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু এখন এই ছেলের সামনে কাঁদার কোনো মানে নেই। তবুও তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
রিশাদ নীরবতা কাটিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— দেখতে আসছে রুশাকে। তুমি সেজেছো কেন?
বিভাবরী কোনো উত্তর দেয় না। কথা আটকে গেছে তার। এখান থেকে চলে যেতে হবে তাকে। অথচ পা নড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না সে।
বিভাবরী কে চুপ থাকতে দেখে খানিকটা ধমকের সুরে রিশাদ বলে,
— আমি তোমাকে কিছু বলছি।
— আমি ফালতু ছেলেদের সাথে কথা বলতে চাই না।
কথাটা শুনে রিশাদ কার্ণিশে জোরে আঘাত করে। বিভাবরী কেঁপে ওঠে ভয়ে। কিন্তু ভয়টা আড়াল করার জন্য বলে,
— আপনি কি পেয়েছেন আমাকে? আর আপনি কে? আমি আপনার কথা কেন শুনবো?? আপনার হামকি-ধামকি তে আমি ভয় পাই ভেবেছেন? কক্ষনো না। আপনার মতো অসভ্য…
— বিভাবরী, স্টপ!
রিশাদের শান্ত গলার স্বরে বিভাবরী ভাবে, সে বেশ জব্দ হয়েছে। আরও কঠিন কিছু কথা শুনিয়ে ইচ্ছে করছে তার। ইচ্ছাটাকে প্রশ্রয় দিয়ে সে বলে উঠে,
— স্টপ কেন? সত্যি কথা শুনতে ভালো লাগে…
বিভাবরী বাকি কথাটুকু শেষ করতে পারে না। তার আগেই রিশাদ তার গলা চেপে ধরে। সে ভয়ার্ত সুরে বলে,
— কি করছেন? ছাড়ুন..
বিভাবরী এবারেও কথা শেষ করতে পারেনি। রিশাদ তার আগেই নিজের ঠোঁট দিয়ে তার ঠোঁট জোড়া চেপে ধরে। খানিক বাদে ছেড়ে দিয়ে বলে,
— নেক্সট টাইম ভেবে চিন্তে কথা বলবে।
কথাটা বলে ধুপধাপ পা ফেলে চলে যায় সে। আর বিভাবরী? সে তো স্তব্ধ হয়ে সেখানেই বসে পড়ে।

রুশা ছাদে এসে দেখে বিভাবরী গুটিশুটি মেরে বসে আছে। তার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। গলার কাছে চামড়া ছিলে রক্ত ঝরছে সেখান থেকে। ঘনঘন দৃষ্টি পরিবর্তন হচ্ছে তার…
রুশা বিভাবরী কে ধরতেই সে চমকে উঠে। রুশার কপালে ভাঁজ পড়ে। একটু আগেও মেয়েটা কে চঞ্চলাবতী মনে হচ্ছিল। আর এখন, কেমন ধুমড়ে গেছে। সে চিন্তিত হয়ে বলে,
— তুমি ঠিক আছো, বিভু??
বিভাবরী কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
— আমাকে একটু ঘরে দিয়ে আসবে, রুশা আপু? আমি ঘরে যাবো।
— বিভু! তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? জ্বর-টর আসে নি তো?
— তেমন কিছু না। তুমি আমাকে ঘরে দিয়ে আসো, প্লিজ! আমি একা যেতে পারবো না।
রুশা কপালে হাত দিয়ে দেখে, তাপমাত্রা স্বাভাবিক। সে বিভাবরীকে ঘরে দিয়ে আসে। তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় রুশা খেয়াল করলো, বিভাবরীর শরীর কাপঁছে।
হটাৎ মেয়েটার কি হলো? এমন পরিবর্তন হলো কিভাবে? আশ্চর্য! রুশা নখ কামড়াতে কামড়াতে চলে যায় বিভাবরীর ঘর থেকে।

চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *