তোমার আঁচলের উঠোনে

তোমার আঁচলের উঠোনে !! Part- 09

রিশাদ ধমকানো সুরে বলে,
— তোমার কি মনে হয়, এখানে ভুত আছে? ভুত এসে তোমার ঘাড় মটকে দিয়ে যাবে?? নাকি তুমি আমায় রিজেক্ট করলে আমি তোমাকে ছাদ থেকে ফেলে দেবো?
বিভাবরী হতভম্ব হয়ে বলে,
— মানে? আমি এসব কখন বললাম?
— তাহলে বাড়ি যাবো, বাড়ি যাবো করছো কেন??
বিভাবরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এত দ্রুত মানুষের রূপ কিভাবে পাল্টাতে পারে? একটু আগেও কথা বলার সময় ছেলেটা আবেগের সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছিল। আর এখন! এখন ঝাল মরিচের মতো লাল হয়ে যাচ্ছে। আশ্চর্য!
— শুনো বিভাবরী! ন্যাকামো আমার পছন্দ নয়। আশা করি এখন তুমি বলবে না, আমাকে তোমার সহ্য হয় না। আমাকে তুমি বিয়ে করবে না।
— আমি আপনাকে কেন, কাউকেই বিয়ে করবো না।
রিশাদ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
— চিরকুমারী থাকার প্লান করছো? নাকি বিয়ে না করেই লিভ টুগেদার করার ইচ্ছা? অবশ্য আমার এতে প্রবলেম নেই..
— ছিঃ! আপনি সরুন তো সামনে থেকে।
বিভাবরী রিশাদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। ছাদ থেকে নামার সময় শুনতে পায় রিশাদ বলছে,
— আমার থেকে পালাতে পারবে না, কেশবতী। দিনশেষে আমারই হবে তুমি।

বিভাবরী ভার্সিটি থেকে ফিরেই শুনতে পায় আজ রুশাকে দেখতে আসছে। সে রুমে যেতেই রুশা এসে তাকে বলে,
— বিভু, জানো তো আজ কি হয়েছে??
— হুঁ!
— আমার যে কি লজ্জা লাগছে না!
— সেটা তোমার কথা শুনেই বুঝা যাচ্ছে। আচ্ছা, ভাইয়া কি জানে তুমি যে খুশি তে কথা বলতে পারো না??
রুশা লাজুক সুরে জবাব দেয়,
— হুমম! এর জন্য “ও” মাঝেমধ্যে আমাকে কপি করে, আমাকে রাগিয়ে দেয়ার জন্য। শুনো, বিভু! তুমি কিন্তু আজ আমায় সাজিয়ে দেবে। ভাবছি, শাড়ি পড়বো। ভালো হবে না??
— হু!
— বিভু, শোনো। তোমাকে একটা সিক্রেট কথা বলি। আমার না খুব হাসি পাচ্ছে। যতটা না লজ্জা লাগছে, তার চেয়ে বেশি হাসি পাচ্ছে। মনে হচ্ছে, ওর পরিবারের সামনেও আমি হেসে ফেলবো। আচ্ছা, ওরা আমায় নিয়ে কি ভাববে? বলবে, মেয়ের বিয়ের আনন্দে খুশি ধরে না। তাই না??

বিভাবরীর বুকের ভেতর ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে সেখানে। বিভাবরী দ্রুত এই বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইছে। কিন্তু অক্টোপাসের মতো স্মৃতিগুলো চিপকে আছে মনে…
রিশাদের ব্যাপারটাও মনে গেঁথে আছে। এমন অসহ্যকর অনুভূতি বয়ে বেড়ানোর ক্ষমতা তার নেই। বিভাবরী জটিলতা পছন্দ করে না। অথচ তার জীবন কুটিলতার অন্ধকারে ছেঁয়ে যাচ্ছে। জীবনের প্রতিও তার ব্যাপক মায়া। এমন বিস্ময়কর পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার ক্ষমতাও তার নেই। বিভাবরী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে রুশাকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়। মেয়েটাকে আজ বড্ড সুন্দর লাগছে। আজ এত সুন্দর লাগার কারণটা কি? শাড়ি পড়েছে বলে? নাকি প্রিয়জনের অপেক্ষায়..?
বিভাবরীও তো এমন একটা দিনে শাড়ি পড়েছিল। সেদিন কি তাকে ভালো লাগে নি? মানুষটা তো একবারও বলেনি তাকে কেমন দেখাচ্ছে। নাহ্! বিভাবরী তার জন্য আর অপেক্ষা করবে না। তার আত্মসম্মান সে আর বলি দেবে না। ভালোবাসে বলে কি সে বেহায়াদের মতো আচরণ করবে। অবশ্যই না..
বিভাবরী রুমের দরজা বন্ধ করে ধ্রুবর দেয়া সিগারেটের প্যাকেট আর তার কিছু ছবি বের করে। যেগুলো সে যত্ন করে এতদিন রেখে দিয়েছিল। কিন্তু আর রাখবে না। কেন রাখবে? কার জন্য রাখবে? রাখার প্রশ্নই উঠছে না। বিভাবরী সযত্নে সেগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
বিভাবরীর বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে। সে খুব বড় একটা ভুল করে ফেলেছে। এখানে আসাটা একদম উচিত হয়নি তার। বাবাকে বলতে হবে কথাটা। সে বাড়ি ফিরে যেতে চায়। বাবা শুনলে নিশ্চয়ই খুব খুশি হবেন। একটা ছেলের জন্য সে নিজেকে নিজের পরিবারের থেকে আলাদা রেখেছে। এখন ভাবতেই নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে তার।
পুড়িয়ে দেওয়া কাগজের ছাইগুলো বাতাসে উড়িয়ে দিতেও ভালো লাগছে তার। মনটা আজ হালকা লাগছে। ভিষণ হালকা!
লাস্ট জন্মদিনে বাবার দেওয়া একটা ড্রেস বের করে সে। সাজতে ইচ্ছে করছে তার। মন ভালো থাকলে তার সাজতে ভালে লাগে। ঠোঁটের কোণে হাসি ঝুলিয়ে, গুনগুন করতে করতে ওয়াশরুমে যায় সে।

চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *