তুমি আমারই থাকবে

তুমি আমারই থাকবে !! Part- 25

পরেরদিন বিকেলে তানহা ছাদে গাছে পানি দিচ্ছিলো। আদিব এসে বলল,
–বনু, এভাবে বাসায় থাকতে বোর লাগছে না তোর?
–লাগছে তো ভাইয়া কিন্তু কি করার।
–তোর ভাই আছে কি কাজে তাহলে?
–মানে? (ভ্রু কুচকে)
–চল, আমার সাথে ঘুরতে যাবি আজকে।
— কিন্ত হঠাৎ করেই কোথায় যাব আমরা?
–উফফো তোকে এত চিন্তা করতে কে বলেছে? আমি আছিনা।
–তাও বলো না ভাইয়া কোথায় যাব আমরা?
–রেস্টুরেন্টে যাব আমরা দুইজন। এখন রেডি হ।
–থাক ভাইয়া, এটার কোন দরকার নেই।
–তোর দরকার না থাকলেও আমার আছে, পাটকাঠির সামনে প্রেস্টিজ নস্ট হয়ে যাবে আমার (বিড়বিড় করে)
–এই ভাইয়া,কি বিড়বিড় করছো?
–কিছুনা। তুই আমার সাথে যাচ্ছিস এটাই ফাইনাল। এবার যেয়ে রেডি হ। তোদের মেয়েমানুষদের তো আবার দেড় ঘন্টা লাগে রেডি হতে।
–ভাইয়ায়ায়া (চিল্লিয়ে)
.
.
.
তানহা রেডি হয়ে সোফায় বসে আছে, আদিবও আসলো ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বাবা-মাও খুশি যে বাইরে থেকে ঘুরে আসলে ভালো লাগবে।ঘুরুক ভাইবোন মিলে আজ।
রেস্টুরেন্টে পৌঁছাতেই তানহা বাইরে শ্রেয়াকে দেখে অবাক। ওর কাছে গিয়ে বলল,
–আরে শ্রেয়া, তুমি এখানে?
–হ্যাঁ ভাবী। শুধু আমি না, ভাইয়াও এখানে।
–মানে? উনি কেন এখানে? তোমাদের কে বলেছে আমরা এখানে আসব?
শ্রেয়া আদিবের দিকে চেয়ে আছে কাচুমাচু মুখ করে। তানহা এবার আদিবের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে মাথা নিচু করে আছে।
–ভাইয়া, তুমি ওদের বলেছো আমাদের কথা?
–না ভাবী,আসলে এটা ভাইয়ার প্ল্যান ছিল।
–কিহ? আমি থাকবো না এখানে। ভাইয়া চলো বাসায় যাবো।
–প্লিজ ভাবী, যেয়ো না। এই আপনি কিছু বলুন ভাবীকে! (আদিবের দিকে তাকিয়ে)
–তানহা, এইরকম করিস কেন? একবার কথা শোন ওর।
তানহা অবাক হয়ে একবার আদিবকে দেখছে আর একবার শ্রেয়াকে দেখছে। শ্রেয়া তো ভালোই নিজের সাইডে নিয়ে নিলো ওর ভাইকে!
অগত্যা তানহাকে ভিতরে যেতে হলো। তানহা যেতেই আদিব শ্রেয়াকে বলল,
–এখন আমরা কি করব?
–আমি তো শপিং এ যাচ্ছি। আপনি কি করবেন আমি জানিনা।
বলে শ্রেয়া চলে যেতে নিলো। আর আদিব ওর হাত টেনে ধরে বলল,
–বাহ ভালোই তো। আমি কাজে হেল্প করলাম তোমাদের আর আমাকে এখন বলছো আপনি কি করবেন জানিনা।
শ্রেয়া হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
–আপনার অন্য কাজ নেই? আমি কিভাবে বলব আপনি কি করবেন এখন!
–নাহ।এখন নেই কাজ আমার। তুমি চাইলে আমি তোমার সাথে শপিং এ যেতে পারি। একা ঘোরার চেয়ে দুইজন মিলে ঘোরা ভালো।
–আচ্ছা চলুন তাহলে।
বলে ওরা যেতে নিলো। এমন সময় এক ওয়েটার জুস নিয়ে ভেতরে ঢুকতে ধরছিলো যার সাথে ধাক্কা লেগে একটু জুস শ্রেয়ার ড্রেসে পড়ে যায় আর আদিব ওয়েটারকে বলে,
–দেখে নিয়ে যেতে পারেন না আপনি?? যদি জুসের জায়গায় গরম কিছু থাকতো?
–স্যরি স্যার, স্যরি ম্যাম। আমি ইচ্ছা করে ফেলিনি।
–নাহ ইটস ওকে। আপনি যান সমস্যা নেই।
–ড্রেস নস্ট হয়ে গিয়েছে কি তোমার? (আদিব)
শ্রেয়া হা করে চেয়ে আছে আদিবের দিকে। ছেলেটা ভালোই কেয়ার করছে ওর!
–না, আমি ঠিক আছি। চলুন।
ওরা তো চলে গেলো। এদিকে তানহা রেস্টুরেন্টের ভিতরে গিয়ে তনয়কে খুজছে কিন্তু পাচ্ছেনা। হঠাৎ করেই তনয়কে দেখলো কিন্তু সে কাউকে জড়িয়ে ধরে আছে। তানহা ভালো করে তাকিয়ে দেখে ওটা মিশা। দুইজনই খুব খুশি কোন ব্যাপার নিয়ে মনে হচ্ছে তার! এবার তানহার আবার রাগ হয়। একেতো নিজে ডেকে এনেছে তার মধ্যে অন্যজনের সাথে রং-তামাশা করছে। এটা দেখানোর জন্য ডেকেছিলো ওকে?
রাগে অভিমানে তানহা বের হয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে। বাইরে বের হয়ে আদিবকে কোথাও পায়না সে। এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হতে ধরেছে।
তানহা যখন ওদের দেখছিলো তখন মিশার চোখ হঠাৎ করে তানহার দিকে যায় যে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হচ্ছে। সে তনয়কে ছেড়ে দিয়ে বলে,
–তনয়, দেখো তানহা চলে যাচ্ছে।
–কি বলছো? ও তো আসেইনি এখনও।
–কিন্ত আমি এই মাত্র দেখলাম ওকে বের হতে।
–ওহ নো। আল্লাহ। ও মনে হয় ভুল বুঝেছে এবার।
–তুমি তাড়াতাড়ি যাও, এইবার ভুল বুঝলে সব শেষ। গো ফাস্ট।
–হ্যা, ঠিক বলেছো। আল্লাহ এইবার তো হেল্প করো আমার! সব ঝামেলা আমার ঘাড়েই এসে পড়ে ধুর! এই তানহা কোথায় গেলা তুমি..
বলতে বলতে তনয় বের হয় রেস্টুরেন্ট থেকে।
.
.
এদিকে সন্ধ্যা প্রায় হতে চললো। তানহা বিরক্ত হয়ে হাটছে। আশেপাশে রিকশাও নেই যে নিবে। আদিবকে কল দিচ্ছে, ও ধরছে না। কি জ্বালা!
অবশ্য বেচারা ধরবেই কি করে? শ্রেয়ার সাথে শপিং এ ব্যস্ত সে! মার্কেটে মানুষের ভীড় আর আওয়াজে সে ফোনের সাউন্ড শুনতে পাচ্ছেনা।
হঠাৎ করেই সামনে রাস্তার পাশে কয়েকটা ছেলে আড্ডা দিচ্ছিলো, তানহা ওইদিক থেকে উল্টোদিকে চলে আসছিলো। হঠাৎ করেই একটা ছেলে বলে উঠে,
–মামা, মালডা জোস না?
ওর দেখাদেখি বাকি ছেলেগুলাও চলে আসে ওখানে। ব্যস, এটারই ভয় পাচ্ছিলো তানহা। সে দ্রুত চলে যেতে নিবে এমন সময় এক ছেলে বলে,
–এই কামাল দেখ তো, এই মাইয়াডারে চেনা চেনা লাগেনা?
–হ মামা,তবে এরে কই জানি দেখছি মনে হইতাছে।
–আরি এডা তো ওই মাইয়া যার জন্য ধোলাই খাইছিলাম কয় মাস আগে রাস্তায়। মনে আছে? কামালের হাত ভাংগে গেছিলো না ওইবার? (পাশের জনকে জিজ্ঞেস করে)
–আরে তাই তো। ওইবার তো খুব তোর হিরো আইছিলো বাচাইতে। এইবার কেডা আসবো? (বিশ্রিভাবে হেসে)
ওদের কথা শুনে তানহা পুরো জমে গেলো ভয়ে। জোরে একটা দৌড় দিবে তাও যেন পাচ্ছেনা সে। ছেলেটা ওর দিকে হাত এগিয়ে নিয়ে আসতেই ভয়ে চোখ বন্ধ করলো সে।
#চলবে…🍁