তুমি আমারই থাকবে

তুমি আমারই থাকবে !! Part- 20

সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে।তানহা অপেক্ষা করছে তনয়ের ফোনের। সে বেশ অবাক হচ্ছে। কারণ আজকে তনয় একবারও ফোন দিলোনা ওকে! তানহা কল দিয়েছিলো কিন্তু সে রিসিভ করেনি। হয়তো অফিসের কাজে ব্যস্ত আছে মনে মনে ভাবছে তানহা।
দুপুরে তানহা শ্রেয়ার সাথে কথা বলছিলো।
-হ্যালো শ্রেয়া
-হ্যা ভাবী। বলো কেমন আছো?
-এইতো ভালো। তুমি?
-আমিও।
-একটা কথা বলো তো ননদিনী
-একটা কেন হাজারটা বলব ভাবী ডিয়ার। বল কি হয়েছে?
-তোমার ভাই কি খুব ব্যস্ত আজকে? মানে কিছু হয়েছে কি উনার?
-ভাই? নাহ তো। ওর আবার কি হবে! কেন তোমাকে কিছু বলেছে নাকি? (এক্সাইটেড হয়ে)
-তুমি এত এক্সাইটেড হচ্ছো কেন?উনি আমাকে কি বলবেন আবার!
-ওহ,না না ভাবী। কিছু না।
-তুমি কি আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছো শ্রেয়া?
-না তো ভাবীজান। আমি তোমার থেকে কিছু লুকাতে পারি বলো?
-এবার আমি শিউর তুমি কিছু লুকাচ্ছো। বল আমায় প্লিজ!
-স্যরি ভাবী এটা বলতে পারব না।
-কিন্তু কেন? কি সমস্যা বললে? আমার কিন্তু এখন টেনশন হচ্ছে।
-আছে সমস্যা আমার। কিন্তু হ্যাঁ, এটা বলতে পারি যে তোমার জন্য টেনশনের কোন কারণ নেই। তুমি শীঘ্রই একটা সারপ্রাইজ পাবে!
-সারপ্রাইজ? কিসের সারপ্রাইজ? (অবাক হয়ে)
-উফফো ভাবী। সারপ্রাইজ কোনদিন বলতে হয় নাকি।পেলে এমনিই বুঝবে টেনশন নট।
-কিন্তু শ্রেয়া…
-আর কোন কথা নাহ। আমি বান্ধবীর বাসায় যাচ্ছি দুইদিনের জন্য। বাসায় এসে ডিটেইলস এ শুনবো তোমার থেকে সারপ্রাইজ কেমন লেগেছে। রাখছি এখন!
বলে তানহাকে কিছু বলতে না দিয়ে শ্রেয়া ফোন কেটে দিলো।
এদিকে তানহা বসে আছে ফোন হাতে নিয়ে। কেন জানি তার খুব টেনশন হচ্ছে, মনে হচ্ছে খুব খারাপ কিছু হবে!
তনয়কে আবার কল দিবে কি না ভাবছে সে। কিন্তু কল দিচ্ছে না এখনো! এদিকে তনয়ের অপেক্ষায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো।
,
,
,
,
,
,
,
,
,
,
সন্ধ্যায় তনয় না আসায় সকালে তানহা আর থাকতে না পেরে বাসায় চলে গেলো! সে রুমে গিয়ে দেখলো তনয় বসে আছে মাটিতে। সে বেডের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে নিচে বসে। তানহা অবাক হয়ে গেলো তনয়ের কি হয়েছে আবার?
তানহা আস্তে করে গিয়ে তনয়ের পাশে বসলো মাটিতে। আর আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো ওর মাথায়। তখন বুঝলো জ্বর এসেছে তনয়ের। গরম হয়ে আছে মাথা ওর! এদিকে মাথায় কারও হাতের ছোয়া পেয়ে তনয় জেগে উঠলো!
চোখ তুলে তাকাতেই সে তানহাকে দেখতে পেলো। তানহা ওর দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো, সেটা দেখে তনয়ও হাসতে ধরলো। কিন্তু হঠাৎ করেই কি মনে হয়ে তার হাসি মিলিয়ে গেলো! সে এক ঝটকায় তানহার হাত সরিয়ে দিলো আর বলল,
-তুমি কখন আসলে এখানে? (উঠে দাঁড়িয়ে)
-এইতো এখনি। আপনি নিচে কেন ঘুমাচ্ছিলেন?
-দ্যাটস নান অফ ইউর বিজনেস। (গম্ভীর গলায়)
তনয়ের কথা শুনে তানহা মনে মনে খুব অবাক হলো আর কস্ট পেলো। সে বলল,
-জ্বর তো আপনার।
-তোমাকে ওসবের চিন্তা করতে হবেনা।
-কি হয়েছে? এভাবে বলছেন কেন?আমাকে দেখে আপনি খুশি হননি? আমি তো আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চলে এসেছি!
-বেশ করেছো। আর কিছু বাকি আছে দেওয়া? তাহলে আমিও সারপ্রাইজ দিতাম তোমাকে একটা।
তানহা মনে মনে ভাবলো এবার হয়তো তনয় ওকে ওর মনের কথা বলবে। শ্রেয়া হয়ত এটাই ইংগিত করছিলো ফোনে! সে খুশিমুখে বলল,
-আর একটা সারপ্রাইজ বাকি আছে৷ কিন্তু সেটা না হয় পরে বলি! তার চেয়ে আপনি আপনার সারপ্রাইজ দিন এখন।
-ওহ ওকে। দাড়াও এক মিনিট, আমি আসছি!
তানহা এবার নার্ভাস হয়ে গেলো যে তনয় যখন প্রপোজ করবে সে কিভাবে উত্তর দিবে! প্রস্তুতি নিয়ে রাখলেও সব গুলিয়ে যাচ্ছে ওর ভিতরে। একটু পর তনয় ফ্রেশ হয়ে এলো। তানহা নার্ভাসনেসের চোটে চোখ বন্ধ করে ফেলল। তনয় বলল,
-চোখ খুলো তানহা!
তানহা আস্তে আস্তে চোখ খুললো। দেখলো তনয়ের হাতে একটি কাগজ। তানহা ভ্রু কুচকে তনয়ের দিকে তাকালো। তনয় বলল,
-খুলে দেখো। নেও।
তানহা খুব আশা নিয়ে কাগজটি খুললো। সে ভাবলো হয়তো কিছু লিখেছে তনয় ওর জন্য। কিন্তু ওর ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। কারণ কাগজ খুলে দেখে যা দেখলো তাতে যেন ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো।
তনয়ের দিকে তাকিয়ে অশ্রুসজল চোখে কাপা কাপা গলায় সে বলল,
-ডিভোর্স?
-হুম (গম্ভীর গলায়)
অশ্রুভরা চোখে তানহা খুব করে চাইছে এটা যেন তার একটা দু:স্বপ্ন হয়।
#চলবে…