তুই যে শুধুই আমার

তুই যে শুধুই আমার ! সিজন- ২ !! Part- 18

সেইদিন🍂
সায়রা আর জান্নাত কথা বলতে বলতে সায়রাদের বাসায় ঢুকছিল।

সায়রাঃ কিরে তুই তহ দেখি এখন বেশির ভাগ সময়ই ওই আয়ান ভাইয়ার সাথে কাটাস। তলে তলে কিসব চলছে শুনি!! দুষ্টুমি সুরে।

জান্নাতঃ কি চলবে হুহ!!

সায়রাঃ বুঝি বুঝি।।

জান্নাতঃ চকলেট বুঝোস।
এই বলে হাসতে হাসতে বাসায় ঢুকে পড়লো তখন ইমা বেগম পিছন থেকে বলে উঠে।

ইমা বেগমঃ সায়রা শুন।

সায়রাঃ হ্যাঁ মা বলো।

ইমা বেগমঃ কাল কোথাও বের হোস না ঠিক আছে।

সায়রাঃ কেন??

ইমা বেগমঃ কাল আমরা এয়ারপোর্টে যাচ্ছি একজনকে পিক করতে তাই।

সায়রাঃ কেউ কি আসছে??

ইমা বেগমঃ হ্যাঁ।

সায়রাঃ কে??

ইমা বেগমঃ রিসাব। রিসাব আসছে কাল। ওকেই রিসিভ করতে যাব আমরা। হাসি মুখে।

সায়রাঃ মা আমি যাব না।

ইমা বেগমঃ আমি তোমার কোন কথা শুনছি না ব্যাস। তুমি যাবে মানে যাবে।
এই বলে ইমা বেগম হনহনিয়ে চলে গেলেন। আর সায়রা রাগে ফুসতে ফুসতে রুমে চলে যায়। পিছে পিছে জান্নাতও। সায়রা খাটের উপর নিজের ব্যাগ আর মোবাইল ছুড়ে মারে। কি করবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।

জান্নাতঃ তুই এমন করছিস কেন?? আর এই রিসাবই বা কে??

সায়রা এইবার চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে।

সায়রাঃ রিসাবই সেই ছেলে যার সাথে মা আমার বিয়ে ঠিক করেছিল।

জান্নাতঃ হোয়াট!!!

সায়রাঃ হুম

জান্নাতঃ ওই গুই সাপ থুক্কু পিসাব থুক্কু রিসাব কেন দেশে আসছে??

সায়রাঃ আমায় বিয়ে করতে আর কি! আমায় তহ বিয়ে করার জন্য একদম বেকুল হয়ে আছে। কিন্তু আমিই কখনো পাত্তা দেয় নি। বলেছিলাম আমার টাইম দরকার। সে দিয়েও ছিল আর বলেছিল ৫ মাস পর ও দেশে আসবে তখন সব একদম পাকা করে যাবে। কিন্তু ওর যে এই মাসেই আসার কথা ছিল তা আমি একদম ভুলেই গিয়েছিলাম।

জান্নাতঃ এখন!! তুই তহ বিবাহিত। আঙ্কেল আন্টিকে কিভাবে বলবি তোর আর ভাইয়ার বিয়ের কথা??

সায়রাঃ ওইটা বাদ দে। আরুশকে কিভাবে বলবো তা ভাব! আরুশ যদি একবার জানে যে ওই পিসাব থুক্কু রিসাব দেশে আসছে আর ওকে রিসিভ করতে আমি যাচ্ছি তাহলে তহ কেলেঙ্কারি লেগে যাবে। তুই তহ জানোসই ওই আমার জন্য কতটা পজেসিভ তার উপর যে রাগী😰। আমারে তহ জিন্দা কবর দিয়া দিব। কি করুম বল এখন।

জান্নাতঃ ওই পিসাব থুক্কু কি বলি😑। ওই রিসাবের কথা বাদ দে। ওই গেলে বস্তিতে যাক তাতে আমাদের কি?? তুই শুধু এখন এইটা ভাব আঙ্কেল আন্টি রে কিভাবে বলবি??

সায়রাঃ চকলেট আছে তোর কাছে??

জান্নাতঃ হ্যাঁ কেন?

সায়রাঃ তাইলে এখন দে। আপাতত আমার চকলেট খাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই।

এই বলে গালে হাত দিয়ে ধাপ করে সোফায় বসে পড়ে।

🍁
পরেরদিন,,

এয়ারপোর্টের সামনে সায়রা মুখ বাংলা পেঁচার মত করে দাড়িয়ে আছে আর চকলেট খাচ্ছে। সায়রা তহ ভিতরে ভিতরে টেনশনে মরে যাচ্ছে। আরুশ যদি একবার জানতে পারে যে ওই এই পিসাব থুক্কু(বার বার ভুল বলি কেন বুঝি না😑) রিসাবকে পিক করতে আসছে ওর খবর আছে।
সায়রা যখন এইসব চিন্তা করছিল তখন সায়রার পাশে থাকা ইমা বেগম চেঁচিয়ে উঠে।

ইমা বেগমঃ এই সায়রা দেখ দেখ রিসাব এসে গেছে।

ইমা বেগমের কথায় সায়রার ধ্যান ভাঙে এবং সে সামনে তাকিয়ে দেখে খানিকটা উঁচা লম্বা ছেলে তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। গাঁয়ের রং শ্যামলা। দেখতে আছে ঠিকঠাক। কিন্তু তাতে সায়রার কি??

[[ রিসাবের সম্পর্কে সবাইকে কিছুটা জানিয়ে রাখি। রিসাব ও তার বাবা মা দুবাইতেই থাকে। রিসাবের বয়স যখন ১০ বছর তখন ওরা দুবাইতে শিফট হয়ে যায়।
রিসাবের বাবা মা কিছু কাজের জন্য আসতে পারে নি। তাই রিসাব একাই এসেছে আর ওই সব কথা পাঁকা করবে। পরবর্তীতে সকল ফাংশনের ডেট ফিক্সড হলে রিসাবের বাবা মাও এসে পড়বে। এমন কথা হয়েছে দুই পরিবাবের মধ্যে। যেহেতু রিসাব একা এসেছে তাই ওর থাকা খাওয়ার চিন্তা করে ইমা বেগম ওকে নিজের বাসায় থাকতে বলেছে। যেহেতু রিসাবের সাথে সায়রার বিয়ে হচ্ছে তাই রিসাবকে তাদের সাথে রাখতে কাউরো কোন আপত্তি নেই। ]]

এইদিকে।
সায়রা আপন মনে চকলেট খেয়েই চলেছে। রিসাব সামনে এসে আমিনুল সাহেব আর ইমা বেগমের সাথে কুশল বিনিময় করে সায়রার দিকে তাকিয়ে বলে।

রিসাবঃ হায় সায়রু!!

সায়রাঃ মায় নেমটা হচ্ছে সায়রা। নোট সায়রু পায়রু😕।

রিসাবঃ ওকে। তা সায়রা কেমন আছো??

সায়রাঃ দেখতে পারছেন না কেমন আছি নাকি লুলা আপনি?? অসুস্থ থাকলে কি আর এইখানে আরামসে দাড়িয়ে চকলেট খেতাম!!

রিসাবঃ আব তা না।।😅

ইমা বেগমঃ আহা কি শুরু করেছিস। ভদ্রতা সভ্যতা সব ভুলে গেছিস নাকি??

সায়রাঃ 😕😕

রিসাবঃ ইটস ওকে আন্টি। বাচ্চা মানুষ দুই একটু এমন করেই।

সায়রাঃ তাইলে কোলে নেন👶!!

সায়রার এমন কথায় রিসাব বিষম খেল। কোন মত নিজেকে সামলিয়ে অবাক চোখে বলে।

রিসাবঃ মানে!!

সায়রাঃ আমি যখন বাচ্চা তাইলে আমায় কোলে নেন!! বাচ্চা মানুষদের তহ কোলে নিতে হয়🐸

রিসাবঃ হাহা ভেরি ফানি।😅 জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে।

আমিনুল সাহেবঃ সায়রা!! একটু বেশি করছো। রিসাব বাবা তুমি কিছু মনে করো না ঠিক আছে ও একটু এমন এই। আসো গাড়িতে আসো।

সায়রাঃ হুহ!!

🍁

দুপুরের কড়া রোদের পরে বিকেলের হাল্কা মিষ্টি রোদ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। পরন্ত বিকেলে এক হাল্কা হাওয়া বয়ে চলেছে। পাখির কিচিরমিচিরের মধুর ধ্বনি শুনা যাচ্ছে। একদম মন ভালো করার মত পরিবেশ। কিন্তু এইসব যেন একজনের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। সে বরং আর কেউ নও আমাদের চকলেট পাগলি সায়রার।
ছাদের এক পাশে দাড়িয়ে আছে সায়রা আর রিসাব। সায়রা বেশ বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়েই দাড়িয়ে আছে। আজ যেন সায়রা সব কিছুতেই বিরক্তিবোধ করছে। আর তার সবচেয়ে বড় বিরক্তির কারণ হচ্ছে তার পাশে দাড়িয়ে থাকা মানুষটি।
রিসাব সেই কখন থেকে বকবক করেই চলেছে। মাথাটা একদম ধরিয়ে দিয়েছে। মানুষ এত বাঁচাল কেমনে হয় বুঝে না!! অবশ্য সায়রার কথা আলাদা। ও বাঁচাল না তবে অনেক বেশি কথা বলে।
( এক কথায় একে বাঁচালই বলে😒😑 কিন্তু নায়কাকে তহ আর এইসব বলা যায় না তাই না। নাইলে তহ ওর মান সম্মান সব শেষ😓)

রিসাবঃ আচ্ছা তুমি এত চুপচাপ কেন??

সায়রাঃ আমি যে পিপড়া তাই🐜।।

রিসাবঃ হাহা ফানি!!

সায়রাঃ আমাকে কি হিরো আলম লাগছে নাকি যে ফানি বলছেন??

রিসাবঃ হিরো আলমকে??

সায়রাঃ ও ভাই মারো মুজে মারো। ( ওই সবাই কিন্তু সত্যি মারতে আসবেন না😒। ৩ হাত দূরে যান সবাই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। সু সু কাছে আসবেন না🚯🚯)

রিসাবঃ আব কি!!

সায়রাঃ না পিসাব থুক্কু রিসাব ভাই কিছু না।

রিসাবঃ আমি তোমার ভাই কেমনে হই হ্যাঁ?? নিজের হবু বরকে কেউ ভাই বলে??

সায়রাঃ তোরে যদি ভাই না বলি আরুশ আমায় চকলেটের মত কাঁচা চিবিয়ে গিলে ফেলব। আরুশ যদি এইসবের কিছুই জানতে পারে তাহলে তোকে ডিটারজেন্ট পাউডার ছাড়া
শিলপাটায় পিশবো। বিরবির করে।

রিসাবঃ কিছু বললে??

সায়রাঃ আল্লাহ!! আপনি দেখি কানে বেশি শুনেন দেখছি। তা তহ হওয়ারই কথা। আপনার যা বয়স। কিছুদিনের মধ্যেই সিনিয়র সিটিজেনের নামের তালিকায় নাম লিখাবেন।

রিসাবঃ হোয়াট!! লাইক সিরিয়াসলি!!

সায়রাঃ হ্যাঁ হ্যাঁ। মিথ্যা বলছি নাকি। আপনারাই তহ এই দেশের অতীত এর আদিবাসী। আপনারাই তহ কিছুদিনের মধ্যে দেশকে বিদায় দিয়ে চলে যাবেন।

রিসাবঃ আমি বয়স মাত্র ২৯ বছর। আর তুমি আমায় এই বয়সেই সিনিয়র সিটিজেন বানাচ্ছো??

সায়রাঃ আচ্ছা তাহলে আপনাকে কিছু প্রশ্ন করি। তার জবাব গুলো শুধু হ্যাঁ বা না তে দিবেন ওকে।

রিসাবঃ ওকে।

সায়রাঃ দেখেন আমার বয়স ২১ বছর। আর আপনার ২৯ মানে আপনি আমার থেকে প্রায় ৮ বছর আগে এই পৃথিবীতে আসছেন। রাইট।

রিসাবঃ হ্যাঁ

সায়রাঃ তার মানে আমার হওয়ার ৮ বছর আগে থেকেই এই দুনিয়া দেখছেন। আমার না টেস্ট করা চকলেট গুলিও আপনি খেয়েছেন রাইট।

রিসাবঃ হ্যাঁ।

সায়রাঃ তাহলে এইটাও জানেন যে কেডবেরির বহুত আগে লজেন্স এসেছিল। আর আপনারা তখন কেডবেরি খেতেনই না। বেশির ভাগ লজেন্সই খেতেন। আপনার পারদাদাও লজেন্সই খেত। তার পারদাদারও পারদাদার মামাতো ভাইয়ের চাচাতো ভাইয়ের দূর সম্পর্কের ফুপাতো ভাইয়ের পোলাপানও এই লজেন্সই খেত। তাই না।

রিসাবঃ আব,,হ্যাঁ। কিছুটা কানফিউসড হয়ে।

সায়রাঃ লজেন্স তাহলে পারদাদার আর কেডবেরি তার নাতিপুতি। তার মানে লজেন্স সিনিয়র সিটিজেন আর কেডবেরি হলো জুনিয়র সিটিজেন।
তাইলে ওই হিসাবে আপনি আপনার পারদাদার জমানার মানে সিনিয়র সিটিজেন আর আমি এই জমানার মানে জুনিয়র সিটিজেন। তাহলে হলেন না আপনি সিনিয়র সিটিজেন।

রিসাবঃ আব,, আম,, হ্যাঁ।😵 পুরা কানফিউসড হয়ে।

সায়রাঃ তহ ব্যাস প্রমাণ হয়ে গেল আপনি সিনিয়র সিটিজেন। তাই এখন থেকে নিজেকে সিনিয়র সিটিজেনই বলবেন। বুঝলেন!! ইউ সুড বি প্রাউড আপনি একজন দেশে অকেজো সিনিয়র সিটিজেন।

রিসাবঃ আম,, আব,,

সায়রাঃ থাক থাক আর বলতে হবে না। আম,,,

সায়রা কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠে। সায়রা বেশ বিরক্তির সহকারে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায়। তাকিয়ে দেখে আরুশের ফোন। সায়রা তহ রীতিমতো কাপাকাপি শুরু করে দেয়। সায়রা কাপা কাপা হাতে ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই এক হুংকার ওর কানে ভেসে আসে।

— এখনই তোমায় আমি আমার বাসায় ২০ মিনিটের মধ্যে দেখতে চাই। কাম হিয়ার রাইট নাও।। এন্ড নো মোর ওয়ার্ডস।

এই বলে টুট করে ফোনটি রেখে দেয়। সায়রা এইবার তারাহুরো করে ছাদ থেকে নেমে আসে আর রওনা দেয় আরুশের বাসার দিকে।
আর এইদিকে রিসাব হাবলার মত দাড়িয়ে থাকে।

আরুশের বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে সায়রা। সকল টাইপের দোয়া দুরুদ পড়ে তারপর আল্লাহ এর নাম নিয়ে আরুশের বাসার ভিতর ঢুকে। বাসায় ঢুকে চারদিক নিস্তব্ধ। সায়রা তহ এইবার ভয়ে শেষ।

সায়রাঃ এতনা সান্নাটা কিউ হে ভাই থুক্কু পাঠকগন।
সায়রা আরুশকে সারা বাড়ি খুঁজে না পেয়ে ওর রুমে যায়। যেই না রুমে যেতে নিবে কেউ ওকে হেচকা টান দিয়ে ভিতরে নিয়ে আসে আর সোফায় ফেলে ওর হাত দুটো চেপে ধরে। সায়রা সামনে তাকিয়ে ভয়ে একদম জমে যায়। আর পিন পিন করে বলে।

সায়রাঃ আব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া থুক্কু সায়ুপাখি। আবতো তু গেয়া।



#চলবে