তারে আমি চোখে দেখিনি

তারে আমি চোখে দেখিনি !! Part- 21

সকালে ঘুম থেকে উঠে মায়া আর মাহিরের দেখা পাই না।মায়া সারা বাড়িতে মাহিরকে খোঁজে কিন্তু মাহির বাড়িতে কোথাও নেই।এমন কি মায়ার ফোনটাও রিসিভ করছে না।মায়া চিন্তায় পরে যায়। ভাবে এমনটা কেন করছে মাহির? দুপুরের দিকে লাঞ্চ নিয়ে মায়া হসপিটালে চলে আসে।মাহিরের কেবিনে ঢুকতেই দেখে স্নিগ্ধা মাহিরকে ঝাপটে ধরে আছে।আর মাহির স্নিগ্ধার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর বলছে, আমি আছি তো জান সব ঠিক হয়ে যাবে।মায়া এগিয়ে গিয়ে মাহিরকে টেনে স্নিগ্ধার থেকে দূরে সরিয়ে আনে।তারপর জানতে চায়, এগুলো কি করছেন? তখন মাহির কিছু না বলেই সজোরে মায়ার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।থাপ্পড়টা মারার পর মায়া গালে হাত রেখে তাকিয়ে থাকে মাহিরের দিকে।তারপর মাহির বলতে শুরু করে,

মাহিরঃ তোমার জন্য আমাকে আমার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে হয়েছিলো।যেই বাবা আমার গায়ে কখনো হাত তুলি নি তোমার জন্য সে আমার গায়ে হাত তুলেছিলো।এমনকি আমার মামাও আমাকে ভুল বুঝে মেরেছে তোমার জন্য।অনেক অপমান করেছো তুমি আমাকে আর তাই তোমার থেকে সেইসব অপমানের শোধ তুললাম। মাত্র একটা দিন তোমাকে ভালোবাসার নাটক করে।

মাহির কথাটা বলে মায়ার দিক থেকে মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে স্নিগ্ধার পাশে এসে হাতটা ধরে দাড়ায়। আর মায়া থ হয়ে মাহিরের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।কিছু বুঝতে পারে না মায়া।মাহির আবার বলে,

মাহিরঃ যতো দ্রুত সম্ভব তোমাকে আমি ডিভোর্স দিয়ে স্নিগ্ধাকে বিয়ে করবো।

এবার মায়ার রাগ হতে থাকে।এগিয়ে এসে মাহিরের শার্টের কলারটা টেনে ধরে।

মায়াঃ ফাজলামু মারছেন?

মাহিরঃ মানে?

মায়াঃ মানে বুঝছেন না? আমাকে মেরেছেন তাতে আমার কোনো দুঃখ নেয়। কিন্তু আপনি এটা কিভাবে বললেন যে আমাকে ভালোবাসেন না?

মাহির মায়ার থেকে শার্টের কলারটা ছাড়িয়ে নিয়ে মায়াকে এক ধাক্কা দিয়ে দূরে ছুড়ে ফেলে দেয়। তারপর বলে,

মাহিরঃ না ভালোবাসি না।একটা সাদামাটা, আন-স্মার্ট, খ্যাত তুমি।নিজের দিকে কখনো তাকিয়ে দেখেছো? আর স্নিগ্ধাকে দেখো।কখনো পারবে ওর মতো হতে? কি যোগ্যতা আছে তোমার? তাছাড়াও কতোটুকু জানি তোমাকে আমি? মাত্র দুইদিনই তো হয়েছে আমাদের বিয়ের।আর স্নিগ্ধাকে তো আমি কলেজ লাইফ থেকেই ভালোবেসে এসেছি।এতোদিনের ভালোবাসা মাত্র দুইদিনে আমি ভুলে যাবো এটা তোমার মনে হয়?

মায়াঃ তাহলে কাল রাতে যেসব কথা বলেছিলেন সেগুলো?

মাহিরঃ তুমি আসলেই একটা বোকা মায়া।আমি একজন আরজে।শুধু তুমি কেন! কত্ত মেয়ে আমাকে শুনে ভালোবাসি বলে তা যানো? আমিও তাদেরকে খুশি করার জন্য ভালোবাসি বলি।তার মানে তো এই হয় না যে তাদের সবাইকে নিয়ে আমি সংসার করবো!

মায়াঃ অনুভব এসব কি বলছেন আপনি?

মাহিরঃ কেন ভালো লাগছে না শুনতে? ভালো না লাগলে চলে যাও।আমি এখন একটু স্নিগ্ধার সাথে সময় কাটাবো।তাই না জান? স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে বলে।

স্নিগ্ধাঃ হ্যাঁ জান।তোমার যদি কোনো অসুবিধা না থাকে তাহলে ওকে আমি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এই হসপিটাল থেকে বের করে দিতে চায়।

মাহিরঃ হ্যাঁ অবশ্যই। এর জন্য অনুমতি নেওয়া লাগে?

স্নিগ্ধাঃ থ্যাংকস জান।বলে খুশিতে লাফাতে লাফাতে এসে স্নিগ্ধা মায়ার হাতটা ধরতে যায় আর মায়া স্নিগ্ধাকে থামিয়ে দেয়।

মায়াঃ তার কোনো প্রয়োজন নেয়। আমি চলে যাচ্ছি স্নিগ্ধা। মাহিরের কাছে গিয়ে বলে, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি এতোটা খারাপ। এটা সত্যি আমি আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু এই মেয়েটার সামনে যেই অপমানটা আমাকে করলেন তারপর আর আমি আপনাকে কোনোদিনও ক্ষমা করতে পারবো না।

কথাটা বলে মায়া কাঁদতে কাঁদতে হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে আসে। আর মায়া চলে যাওয়ার পর স্নিগ্ধা বলতে শুরু করে।

স্নিগ্ধাঃ বাহ্! দারুন হয়েছে অভিনয়টা।এভাবেই অভিনয়টা চালিয়ে যাও।

মাহিরঃ এসব তুমি কেন করছো স্নিগ্ধা?

স্নিগ্ধাঃ প্রতিশোধ নিতে। কাল অপমান করেছিলো ওই মেয়েটা আমাকে।তাছাড়াও তোমাকে আমি ভালোবাসি জান।

মাহিরঃ এভাবে ভালোবাসা হয় না স্নিগ্ধা।প্লিজ, ছেড়ে দাও ওনাদেরকে।স্নিগ্ধার সামনে দুই হাত জোড় করে বলে মাহির।

স্নিগ্ধাঃ ছেড়ে দেবো? কাল রাতে কতো প্লানিং করার পর কৌশলে গুন্ডাদের দিয়ে ওদের কিদনাফ করিয়েছি তুমি যানো? আচ্ছা ঠিক আছে তোমার সাথে আমার বিয়েটা হয়ে যেতে দাও তারপর ছেড়ে দেব। এখন আমি যেমন যেমন বলবো একটু মন দিয়ে তেমন তেমন করো তো দেখি।নইলে মুফতি খান আর সাহেদ খানের অবস্থা কি হবে সেটা তুমি কল্পনায়ও আনতে পারবে না।আর একটা কথা পুলিশের সাহায্যে নেওয়ার চেস্টাও করো না।তাহলে পরিণাম খারাপ হবে।আর তুমি নিশ্চয় যানো তোমার জন্য মায়ার বাবা-মায়ের কিছু হলে মায়া তোমাকে ভালোবাসবে না, শুধুই ঘৃণা করবে। হাজার হোক এতো বছর ধরে মায়া তাদের বাবা-মা বলে ডেকে এসেছে বলে কথা।

কথাগুলো বলে কোমড়টা হেলিয়ে দুলিয়ে স্নিগ্ধা মাহিরের কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়।

চলবে,,,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *