00

তারা দুজন !! Part- 04 (Last-Part)

– আমি জানতে চাই না এই ছেলেটার সাথে তোমার সম্পর্ক কতদূর, তোমরা একে অপরকে আদৌ কত ভালোবাসো নাকি বাসো না, আমি শুধু জানতে চাই হয় তুমি কি আমার বউ হয়ে সারাজীবন থাকবে?? যদি আমার বউ হিসেবে না থাকতে চাও আমি আজই ফ্যামিলির সবাইকে জানাতে বাধ্য হবো।

কেবিনে ঢুকে আফসারাকে দাঁড় করিয়ে অরিন্দম নামক ছেলেটির সামনেই কথাটা বলে অর্ক। অর্কের কথায় আফসারা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে। আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,
– আমি তো আপনাকে জানিয়েছি, ফ্যামিলিকে জানানোর কি দরকার?
– আমি তোমাকে পালতে রাজি যদি তুমি আমার বউ হিসেবে সারাজীবন থাকো। ইনফ্যাক্ট তোমার কাছে উপায় একটাই। এই ছেলেটার সাথে সম্পর্ক শেষ করে আমার সাথে আমার বাসায় যাবে। আর যদি এই ছেলেটার সাথে থাকতে চাও তবে জানিয়ে দাও, আমি সেই ব্যবস্থা ও করবো। ইনফ্যাক্ট, আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তোমাদের বিয়ে দিবো। এটা কোনো ইস্যু না।

হুট করে বিয়ের কথা বলায় আফসারা খাবি খাওয়া মাছের মতো ছটপট করতে লাগলো। মুখ ফসকে বলে দিলো,
– আমি ওকে বিয়ে করবো না।
– কেনো?
– ন..না মানে ও তো বেকার।
– সেটা প্রবলেম না, আমি আমার বন্ধুদের বলে চাকরির ব্যবস্থা করিয়ে দিবো।
– দোস্ত বিয়ের কথা তো ছিলো না। আমি তোকে বিয়ে করতে পারবো না, অবন্তি জ্যান্ত চিতায় দিবে আমাকে। (অরিন্দম)

অরিন্দম ভয়ের চোটে কথাটা মুখ ফসকে বলে দিলো। অর্কের বুঝতে বাকি রইলো না, আজ অবধি বয়ফ্রেন্ড, বাড়ি থেকে পালানো সবই তার নাটক ছিলো। শুধুমাত্র এই বিয়েটা না করবার উছিলা। আফসারার ভাই, আবরার গল্পের ছলেই এটা অর্ককে জানিয়ে দিয়েছিলো। অর্ক মুচকি হেসে, আফসারার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
– গেম ওভার, আফসারা ইসলাম। আমি গাড়িতে ওয়েট করছি, আর অরিন্দম তুমি চাইলে কালকে ডিসচার্জ হয়ে যেতে পারো।তোমার বোনের ফ্রাকচার সেরে গেছে।
– আমার কোনো দোষ নেই, ও আমাকে এই নাটকটা করতে বলেছিলো।
– বললাম তো, কালকে ডিজচার্জ হয়ে যেয়ো।

বলেই অর্ক বাহিরে চলে গেলো। আফসারার ইচ্ছে করছে অরিন্দমকে যদি ইচ্ছেমতো মারতে পারতো তাহলে বোধহয় শান্তি হইতো। কিন্তু তার ও উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। গাড়ির কাছে আসতেই দেখলো অর্ক গাড়ির ড্রাইভিং সিটে গা এলিয়ে বসে আছে। অর্কের মনে এখন কি চলছে বুঝা বড্ড কঠিন। বড় সড় ঢোক গিলে অর্কের পাশের সিটে বসে আফসারা। আফসারার দিকে না চেয়েই অর্ক জবাব দিলো,
– এই সব করে লাভটা কি হলো?
-….
– এখন থেকে আমি যেমন চাইবো, ঠিক তেমনি তোমাকে চলতে হবে। আমি ভালোর সাথে ভালো, খারাপের সাথে খারাপ। তাই এখন থেকে পাগলামি করলে মনে রেখো, আমার কাছে আছো তুমি!!
– আপনি আমাকে কি ট্রেড দিচ্ছেন?? আমি যেমন আমি তেমনই। আমাকে জোর করে বদলাতে চাচ্ছেন কেন আপনি??
– তুমি আগে ছিলে আফসারা হক এখন তুমি মিসেস আফসারা অর্ক ইসলাম। সো বদলাতে তো তোমার হবেই। গাধা পিটিয়ে কিভাবে ঘোড়া বানাতে হয় অর্ক ইসলামের বেশ ভালো করেই জানা আছে।

আফসারা রাগে লাল হয়ে আছে। যেকোনো সময়ে ধুমধাম অর্ককে পিটিয়ে দিতে পারে। বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে যাতে ব্রেইনে অক্সিজেন সাপ্লাই হয়। গাড়ি ছুটছে আপন মনে, আফসারার সব প্লানে অর্ক এভাবে পানি না একেবারে কেরোসিন ছিটিয়ে দিবে কে জানতো।

সন্ধ্যা ৯টা, অর্করা নিজেদের বাড়ি চলে এসেছে। আফসারা সেই যে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর থেকে চুপ করে আছে, এখনো সেম অবস্থা। এবাড়িতে আসার পর ও তার মুখ থেকে রা টা বের হয় নি। নিজের রুমে যেতে ওয়াশরুমে চলে গেলো সে। মাথা কাজ করছে না, ঠিক কি করলে এই বিয়ে নামক জাল থেকে সে বের হবে উপায়টা তার জানা নেই। বাহিরের কাপড় নিয়েই ঝর্ণার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে অর্ক রুমে দেখে আফসারা রুমে নেই। আফসারা মেয়েটা যে বড্ড বেশি জেদী সেটা বুঝতে বাকি নেই অর্কের। জেদের বসে সে সব করতে পারে। অর্ক মনে মনে ঠিক করে, আপাতত ওকে ঘাটাবে না। মেজাজ ঠান্ডা হলে নিজেই এসে কথা বলবে। অর্কের কাল থেকে ডিউটি। সেই কারনে তার কিছু স্ট্যাডি করতে হবে। তাই সময় নষ্ট না করে বই নিয়ে বসে পড়ে সে। ঘন্টা খানিক পর, অর্ক খেয়াল করলো আফসারা এখনো বের হচ্ছে না ওয়াশরুম থেকে। বেশ কিছুক্ষণ ধাক্কা দিয়ে যখন দেখলো আফসারা সাড়া দিচ্ছে না তখন বাধ্য হয়ে দরজাটি ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় অর্ক। ভেতরে গিয়ে যা দেখলো তাতে রাগে ওর মেজাজ বিগড়ে গেলো। মেয়েটি অচেতন অবস্থাতে ফ্লোরে পড়ে রয়েছে। তাড়াতাড়ি সেখান থেকে পাঁজকোল করে বের করে আফসারাকে। আফসারার বডি টেম্পারেচার খুব লো। দ্রুত জামাটা বদলিয়ে যদি ড্রাই না করা হয়, ফারদার প্রব্লেম হবে। এখন বাড়ির কাউকে জানানোটা খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলে ধারণা অর্কের। কিন্তু আফাসার ড্রেসটা কে বদলাবে। হাসবেন্ড ওয়াইফ তারা দুজন যদি ভাবী অথবা বোন্দের কাউকে ডাকলে ব্যাপারটা খারাপ হবে। তাই বাধ্য হয়ে নিজেই তার ভেজা কাপড় গুলো বদলে দিলো। এতোক্ষণ ভেজার কারণে প্রচুর কাঁপছিলো আফসারা। উপায়ন্তর না পেয়ে ঘরে যত কম্বল আছে সব কিছু দিয়ে মুড়িয়ে দেয় ওকে অর্ক। আফসারা যত উষ্ণতা পাবে সেটা তার জন্য তত ভালো।

রাত ২ টা,
আফসারা তখন ঘুমে বিভড়। অর্ক বাসায় বলে দিয়েছে, আফসারার শরীরটা ভালো নেই তাই সে ঘুমাচ্ছে। কষ্ট করে হালকা খাওয়িয়েই তাকে স্লিপিং পিল দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিলো তখন। অর্ক খেয়াল করলো, আফসারা থেকে থেকে কাঁপছে। মাথায় হাত দিতেই চমকে উঠলো অর্ক। ভীষন জ্বর, যেনো উত্তাপে অর্কের হাত পুড়িয়ে দিবে। তাড়াতাড়ি উঠে জলপট্টি দিতে আরম্ভ করলো আফসারাকে। আফসারা অচেতন অবস্থাতেই অর্কের হাত আঁকড়ে ধরলো। সারারাত নির্ঘুম কাটলো অর্কের।

সকাল ৮ টা,
আফসারার চোখ খুললে, কিছুক্ষণ আশেপাশে চোখ ফিরালো সে। মাথাটা যন্ত্রণায় ছিড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ খেয়াল করলো কেউ একজন তার রাত ধরে অর্ধ শোয়া অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে, আর তার নিঃশ্বাস আফসারার মুখে আছড়ে পরছে। আফসারার বুঝতে বাকি নেই সারারাত তাকে যত্ন কে করেছে। আচ্ছা, এই সম্পর্কটাকে একটা সুযোগ দিতে ক্ষতি কি কিছু হবে!!

সারাদিন অর্ক ছুটি নিয়ে বাসায় আফসারার দেখভালেই কাটিয়েছে। কেনো জানে লোকটাকে বেশ ভালো লাগছে আফসারার। আচ্ছা তবে কি সে প্রেমে পড়লো। পড়তে কি খুব ক্ষতি হবে!! রাতে খাবার বারান্দায় অর্ককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, চুপিচুপি এগিয়ে যায় সেখানে। আফসারার অস্তিত্বের সাড়া পেয়ে অর্ক বলে উঠে,
– কিছু বলবে?
– আচ্ছা, একদিনে প্রেমে পড়া যায়?
– কেনো বলতো?
– জানি না, তবে মনে হলো আপনার প্রেমে পড়ে গেছি আমি।

আফসারার কথা শুনে ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো অর্ক। ওকে এভাবে হাসতে দেখে আফসারা জিজ্ঞেস করলো,
– আপনি হাসছেন কেন? ভুল তো কিছু বলি নি।
– না, এমনি হাসছি। তোমার বাচ্চামিগুলোই আমার বেশ লাগে বুঝলে। প্রেমে পড়ার রুল জানো তো। পালাতে পারবে না আমার কাছ থেকে।
– বেশ আমি পালাবো না, তবে আমাকে আমার স্বপ্ন পূরণ করতে দিতে হবে বলে দিলাম।
– আচ্ছা, তোমার স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিলাম আমি। এবার কি এই সম্পর্কে থাকবে?
– সেটা সময় বলে দিবে।

এভাবেই তারা দুজন দুজনের খালি জায়গাগুলো নিজেদের দ্বারা পূরণ করেছে। অর্ক আর আফসারার মাঝে হয়তো ভালোবাসা না থাকলেও ভালোলাগা তৈরি হয়েছে। তাদের আগামী ভবিষ্যতে এই ভালোলাগাটা যেনো ভালোবাসায় পরিণত হয় সেটার অপেক্ষা।

সমাপ্ত

[ আমি আন্তরিকভাবে ক্ষমাপার্থী। গল্পটা তাড়াহুড়ো করে শেষ করে দিয়েছি। আসলে আমি এবং আমার বাসার সবাই করোনা আক্রান্ত। কিন্তু কাল থেকে আমার বাবার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। ওপেন হার্টের প্যাসেন্ট বলে ক্ষনে ক্ষনে স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছে। প্রথমে ভেবেছিলাম গল্পটা লেখা ছেড়ে দিবো। কিন্তু পড়ে ভাবলাম গল্পের ইতি টানাটাই উত্তম হবে। প্লিজ আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন। আমার মন ভালো নেই তাই গল্প লেখার মতো সুস্থতা আমার নেই। বাবা সুস্থ হলে ইনশাল্লাহ আমার লিখবো। প্লিজ ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ]