ডেড বডি

ডেড বডি ! Part- 05

গিয়ে দেখি রহিম সাহেব পৌর লেকের পাড়ে একটি লোকের সাথে দেখা করছে এবং সেই লোকটার থেকে কিছু টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে।
আমিও কিছুক্ষন লেকে থাকলাম এরপর রহিম সাহেব যে লোকটির সাথে দেখা করেছে তাকে গিয়ে ধরি এবং তার থেকে জিজ্ঞাসাবাদে অনেক কথা শুনলাম।
সবটা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই,রহিম সাহেব এমন একটি কাজ করে!
ভাবতেই পারছি না।
আসলে রহিম সাহেব অনেক দিন যাবৎ মাদক বিক্রির সাথে জড়িত।
রহিম সাহেবের সম্পর্কে এগুলা শোনার পরে তার প্রতি সন্দেহটা আরো বেড়ে যায়, তাই তাকে কড়া নজরে রাখি সব সময়।
রহিম সাহেব যদি সত্যিই জড়িত থাকে এই খুনের সাথে তাহলে তাকে হাতে নাতে ধরতে হবে, সন্দেহের বসে ধরাটা উচিত হবে না।
কিন্তু রহিম সাহেব এই খুন করবে কি জন্য?
মাদকের ব্যবসার সাথে এই খুনের কি সম্পর্ক? কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারছিনা।
আবার যদি রহিম সাহেবই এই খুনের সাথে জড়িত থাকে তাহলে আমাকেই বা কেন আগে জানাবে। এগুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে পড়লো লাশগুলোর শরীরে তো NND লেখা ছিলো,
এই কোডটাতেই হয়তো কোন ক্লু আছে।
তাই কম্পিউটার এ বসে NND সম্পর্কে জানার জন্য সার্চ করলাম,কিন্তু তেমন কিছু পেলাম না। বিভিন্ন কিছু সার্চ করতে করতে হঠাৎ স্ক্রিনে চলে আসলো”কোড লিখে খুন করলো খুনি”।
এমন শিরোনাম দেখে ক্লিক করে পুরো লেখা পড়লাম,এবং আশ্চর্য হয়ে গেলাম।
এটা কিভাবে সম্ভব?
আসলে ওই খুনটি প্রায় ১৯৭১ সালের দিকে রাজশাহীর কোন এক এলাকায় ঘটেছে।তখন কয়েকটি লাশ পাওয়া গেছে একই জায়গায় এবং সব গুলো লাশই মেয়েদের ছিলো এবং একই ভাবে মেরেছে। মেয়েগুলোর ডান স্তন কাটা, আর লাশগুলোর পিঠে বড় করে লেখা ছিলো NND । তবে লাশগুলোর উপর আর কোন অত্যাচার করা হয়নি।
তাই কিভাবে মেরেছে কেউ আজো তা জানতে পারেনি। কারন তখন দেশে যুদ্ধ চলছিলো, তাই সবাই সন্দেহ করেছিলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হয়তো খুনগুলো করেছে।
তাই তখন ওই কেসটা আর চালানো হয় নি, কিন্তু সেই ১৯৭১ সালের ঘটনা কি আবার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে নাকি?না এটা হওয়ার চান্স নেই।
সেই দিনের খুনিটা কি এখনো বেঁচে আছে নাকি?
আর বেঁচে থাকলেই বা কি। তার তো এখন অনেক বয়স হয়ে হওয়ার কথা।
কিন্তু যে লাশগুলো পাওয়া গেছে গাইবান্ধায় সেগুলো দেখে মনে হয় না একজন বয়স্ক মানুষ মেরেছে। , যে প্ল্যান করে মেয়েগুলোকে মারেছে , এটা একজন বয়স্ক মানুষের পক্ষে অসম্ভব। এই খুনগুলো একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ করেছে। যাই হোক এই NND কোডের সম্পর্কে আরো বেশি গভীর ভাবে জানতে হবে আমাকে ।
কিন্তু এদিকে আমি প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেলো অফিসে যাই না, কারন ১৫ দিনের জন্য সাময়িক বরখাস্ত আছি।
তবে বসে নেই অবশ্য , কারব এই কেসটার শেষটা আমাকে দেখতেই হবে।
এত গুলো মানুষ খুন করলো যে, সে খুনি আইনের হাত থেকে বাঁচতে পারবে না। এভাবে ১৫ দিন কেটে গেলো।
অবাক করার বিষয় হচ্ছে যে দিন আমি বরখাস্ত হই সেই দিনেই ২ টা খুন হয়। কিন্তু আমি বরখাস্ত হবার পর থেকে এখন পযর্ন্ত একটিও খুন হয় নি।
তাহলে খুনি কি আমার সাথেই খেলছে? আমাকে কি কোন ভাবে এই খুন গুলার সাথে রিলেডেট রেখেছে খুনি?
যাই হোক প্রায় ১৫ দিন কেটে যাওয়ার পর আজকে জয়েন করবো অফিসে, তাই তারাতারি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সকাল সকালই চলে গেলাম অফিসে, গিয়ে সবার সাথে দেখা করলাম।
সবার সাথে দেখা হলেও, রহিম সাহেবকে অফিসের কোথাও দেখলাম না।
ভাবলাম হয়তো এখনো আসে নি,আসবে মনে হয় একটু পরেই।
রহিম সাহেব আমাকে রাতে লাশের খবর দেওয়ার পর থেকে আর একবারও ফোন দেয় নি,দেখি আসুক সে তারপর দেখা যাবে কি করা যায়।
এদিকে অফিসে এসে শুনতে পাই যে কেসটার জন্য সাসপেন্ড হয়েছিলাম সেটা অন্য এক CID কর্মকর্তার হাতে দিয়ে দিয়েছে।
যাকেই দিক আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে খুনিকে এবং খুব তারাতারি, নইলে আরো অনেক গুলো প্রান হারাবে আমার গাফলতির জন্য।
অফিসে বসে রহিম সাহেবের জন্য অপেক্ষা করছি, অনেকক্ষন কেটে গেল কিন্তু রহিম সাহেব আসছে না,তাই কল দিলাম ।
-হ্যালো, রহিম সাহেব কোথায় আপনি?
গলার স্বর একটু নামিয়ে বললো,
-স্যার আমি তো অসুস্থ। তাই অফিসে যাই নি। আপনি কেমন আছেন?
-হ্যা, আছি ভালো। আচ্ছা ঠিক আছে সুস্থ হয়ে দেখা করেন।
ফোনটা কেটে দিয়ে অফিসের কাজ করতে থাকি। কাজ করা শেষ হলে দুপুরের দিকে বাড়িতে যাই, সেখান থেকে বিকেলের দিকে ডাক্তার অজয় এর কাছে যাই।
গিয়ে লাশ গুলোর রিপোর্ট প্রিন্ট করে ফাইলে রাখি, আর কেসটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করি।
ডাক্তার অজয় এর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসি, এসে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পরি।
ঠিক রাত ১ টার দিকে কে যেন আমাকে ফোন দেয়, ভয় পেয়ে যাই। নিশ্চয় আবার কোনো লাশের সংবাদ দিবে হয়তো কেউ!
ভাবতে ভাবতেই ফোনটা ধরি, ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে,
-স্যার রহিম সাহেব বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছে এত রাতে কোথায় যেন যাচ্ছে আপনি আসেন।
-আচ্ছা তুমি লক্ষ্য রাখো, আমি আসতেছি।
-কোন দিকে যাচ্ছে সে?
-পলাশবাড়ির দিকে যাচ্ছে।
-আচ্ছা আমি আসতেছি।
বিছানা থেকে তারাতারি করে উঠে গাড়ি নিয়ে আমিও রওনা দেই।
যে কল দিয়েছিলো তাকে আমি কয়েক দিন আগে রহিম সাহেবকে নজরে রাখার জন্য নিয়োগ দিয়েছিলাম।
যাই হোক রহিম সাহেব এত রাতে কোথায় যাচ্ছে দেখতে হবে। তার পিছনে পিছনে আমিও গাড়ি নিয়ে এগুচ্ছি।রহিম যেতে যেতে হঠাৎ পলাশবাড়ির ড্রীমল্যান্ড পার্কের ভিতরে ঢুকে যায়,আমিও চুপচাপ পিছনে পিছনে যাই।
অন্ধকার, খুব একটা বোঝা যাচ্ছে না কিছু।তবুও চাঁদের
হালকা আলোয় দেখলাম, রহিম সাহেব দাড়িয়ে আছে। একটি লোক এসে রহিম সাহেবকে একটি বড় ব্রিফকেস হাতে দিয়ে চলে গেলো।
ব্রিফকেসটি নিয়ে রহিম সাহেবও বেরিয়ে আসছে। যখনি ড্রীমল্যান্ডের গেটের কাছাকাছি আসলেন, তখনি পিছন থেকে কে যেন রহিম সাহেবের কলার টা টেনে ধরলো।
আমি গেটের পিছনে থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, দুইজন ধাক্কা-ধাক্কি করছে, এমন সময় রহিম সাহেব একটি ধারালো চাপাতি বের করে লোকটির গলায় কোপ মারার জন্য তুললো,ঠিক তখনই আমি দৌড়ে এসে তার হাতটা ধরে ফেলি, আর চাপাতিটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে হ্যান্ডক্যাপটা পরিয়ে দেই।
এরপর একটা মুচকি হাসি দিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করি,
-আপনি নাকি অসুস্থ?
– না মানে স্যার আপনি এখানে?
-আমি এখানে কেন। জানতে পারবে থানায় চলো।
রহিমকে গাড়িতে তুলে হাতটা বেঁধে রহিমের ব্রিফকেসটা খুলে দেখি পুরাটা টাকায় ভর্তি। যাই হোক রহিমকে থানায় রেখে আমি বাড়িতে চলে আসি। সকালে উঠেই থানায় গিয়ে রহিমের জিজ্ঞাসবাদ শুরু করি,
-আচ্ছা রহিম এতগুলো খুন কিভাবে করলে?
-…
চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *