ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 26

মেঘ স্যার খুব ভেঙে পরেছে।আবির চৌধুরী নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।আমরা অনেক খুঁজেছি কিন্তু আপুকে কোথাও পাই নি।নিজেকে বন্দী করে রেখেছে মেঘ স্যার।কারও সাথে কথা বলে না।কোথাও যায় না।শুধুই আপুর কথা ভাবে।এভাবে কিছুদিন চলতে থাকলো।কিছুদিন পর জানতে পারলাম আমি প্রেগনেন্ট।আপুর চিন্তায় নিজেকে নিয়ে ভাবতেই ভুলে গিয়েছিলাম।হৃদ আমার যত্ন নিতো।সবসময় হাসিখুশি রাখার চেস্টা করতো।আমায় মাঝে মাঝে বকতো আর বলতো বেবিটার জন্য সময়মতো খেতে হবে।হসপিটালের সব দায়িত্বও হৃদ একা হাতে সামলাচ্ছিলো।আমি যখন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা তখন মাম্মাম আর কাকিমণির অনুরোধে ইচ্ছা না থাকা সত্বেও হৃদ আমাকে নিয়ে দূরে কোথায় ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।এই সময়ে কোথাও যেতে আমিও রাজি হয় নি।কিন্তু মাম্মাম আর কাকিমণি অনেক উৎসাহ নিয়ে বলল অনেক দিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না।তাই তাদের খুশির জন্য রাজি হয়ে গেলাম।

আমরা সকলে মিলে কক্সবাজার এলাম।এখানে একটা হোটেলে এসে উঠলাম এক সপ্তাহের জন্য। প্রথম ছয়দিন খুব সুন্দর কাটলেও।শেষের দিনটায় ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন।ফিরে আসার জন্য টিকিট কাটতে গিয়েছিলো হৃদ।আর আমি বেবিটার কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম।ঘুম ভাঙতেই ফোনটা বেজে উঠলো।রিসিভ করে জয়েন কলে মিনি, নিশি আর প্রিয়ার সাথে অনেক কথা বললাম। হসপিটালের খোঁজ খবর নিলাম।শুনতে পেলাম নিশি আর প্রিয়া দুইজনের বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। ওদের হবু বরদের নিয়ে মিনি আর আমি অনেক মজা করলাম। মিনির বিয়ের কথা উঠলে ও বলল এই মুহূর্তে বিয়ের জন্য ও প্রস্তুত না।দুদিন পর ফাইনাল ইয়ারের রেজাল্ট দেবে।ওকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে আর অনেক বড় ডাক্তার হতে হবে।ওদের সাথে কথা শেষ করলাম। ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ বসে আছি।তাকিয়ে দেখলাম হৃদের ফোনটা বালিশের উপরে পরে আছে।ফোন সাথে করে না নিয়েই গিয়েছে হৃদ। রুমের মধ্যে একা একা লাগছে।হৃদকে খুঁজতে বাইরে এসেছিলাম। মাম্মাম আর কাকিমণির রুমটা উপরে।এতোগুলো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার শক্তি নেই এই সময়টাতে।হোটেলের থেকে বেড়িয়ে বাইরে আসলাম। রাস্তার মাঝে চোখ যেতেই দেখতে পেলাম চার পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে গুটি গুটি পায়ে হেটে চলেছে।খুব সামনে থেকে একটা ট্রাক আসছে দ্রুত গতিতে। আমি কোনো মতে ছুটে গিয়ে বাচ্চাটাকে উঠিয়ে রাস্তার মাঝখান থেকে সরে আনতেই পা পিছলে পাশের ড্রেনে পরে গেলাম।বাচ্চাটাকে তার মা এসে কোলে তুলে নিলো।আর কয়েকজন লোক এসে আমাকে টেনে তুললো। উপরে উঠে আসতেই আমার পেট এসে একটা ইটের উপর পরল।আমি চিৎকার দিতেই কোথা থেকে যেন হৃদ ছুটে আমার কাছে এলো।ওর মুখটা দেখা মাত্র আমার চোখদুটো বন্ধ হয়ে গেলো।

হৃদ আমাকে ডেকে সাড়া না পেয়ে পাশের একটা হসপিটালে নিয়ে আসলো।হৃদ বলেছিলো সে একজন ডাক্তার। কিন্তু প্রুফ না থাকায় হসপিটাল কতৃপক্ষ অপারেশন থিয়েটারে এলাউ করল না।আমার জ্ঞান ফিরলো।আমি একটা মৃত সন্তান প্রসব করলাম।বাচ্চাটার কান্নার শব্দ আমার কানে এলো না।অনেকক্ষণ হয়ে গেলো।ডাক্তার যখন বলল আমার সন্তান মৃত ধাক্কা সামলাতে না পেরে আমি আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।আমার পাশে পর্দার ওপাশে নূর আপু ছিলো।আপুর কিছুক্ষণ আগে টুইন বেবি হয়েছে।সেদিন আপু আমাদের ছেড়ে চলে আসার পর তার বান্ধবীর সাহায্যে এখানে এসে এই হসপিটালে জয়েন করে।
আপুকে এসে তার বান্ধবী বলল তোর টুইন বেবি হয়েছে আর ওখানে একটা মেয়ের মৃত সন্তান হয়েছে।আপু ডাক্তার হিসেবেই পর্দাটা সড়ালো।আর আমার মুখটা দেখতে পেয়ে কেঁপে উঠলো।

আপু উঠতে চাইলো তার বান্ধবী জিজ্ঞাসা করলো আমাকে চেনা কিনা।আপু বলল আমি আপুর ছোট বোন।আপুকে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসলো।আমাকে দেখে আপু মনে মনে কিছু একটা ভাবলো।আর তার বান্ধবীকে বলল একটা সন্তান আমাকে দিয়ে দিতে।সে কিছুতেই রাজি হলো না।আপু তাকে বলল আমার সাথে অনেক অন্যায় করেছে।আজ সুযোগ পেয়েছে তাই আজ আমার জন্য এতটুকু করতে চাই।আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কিছুক্ষণ পর নিজের একটা সন্তানকে উঠিয়ে এনে আমার হাতের উপরে শুইয়ে দিলো।আর অন্য সন্তানকে নিয়ে নিজেকে আড়াল করে বান্ধবীর সাহায্য চলে গেলো হসপিটাল থেকে।
আমার জ্ঞান ফিরলে ডাক্তার বলল মেয়ে হয়েছে।প্রথমে খুশি হলেও পরে আমার মনে পরল আমি তো মৃত সন্তান প্রসব করেছিলাম।মেয়েটাকে কোলে নিয়ে আপনত্বের একটা টান পেলেও মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন আসছিলো তখন কি আমি ভুল শুনেছিলাম?
অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলাম।হৃদ, মাম্মাম আর কাকিমণিকে দেখতে পেলাম। সবাই খুব খুশী। কিন্তু আমি কেন যেন খুশি হতে পারছি না।মা হবার পরও কেন আমার নিজেকে এতোটা নিরুপায় আর শূন্য মনে হচ্ছে বুঝতে পারছি না।

আমাকে কেবিনে শিফট করা হলো।হৃদ আমার পাশে এসে বসলো।মেয়েটাকে নিয়ে হাত পা ছুড়িয়ে খেলা করতে করতে বলল ভবিষ্যৎ প্ল্যানের কথা।সামনে মেয়েটা বড় হলে কি কি করবে সেইসব ভাবছে।
চলবে,,,,