ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 23

কাশতে কাশতে ঘুম ভেঙে গেলো আপুর।কাকিমণি গ্লাসে পানি ঢেলে আপুর সামনে ধরলো।কাঁপাকাঁপা হাতে আপু গ্লাসটা নিতেই দরজার সামনে চোখ গেলে দেখলো মেঘ স্যার দাড়িয়ে আছে।আপুর হাত থেকে গ্লাসটা নিচে পরে গেলো।কম্বলটা টেনে নিজের মুখটা ঢেকে শুয়ে পরল আপু।কাকিমণি ঘুরে তাকিয়ে মেঘ স্যারকে দেখে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।আর মেঘ স্যার আপুর রুমে এসে আপুর পাশে বসলেন।আপুকে ডাকলেন কিন্তু আপু মুখ তুলে তাকালো না।স্যার জোর করে কম্বলটা টেনে সরিয়ে আপুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন।আপুকে ঝাঁকিয়ে বললেন,
-আমি তোকে ডাকছি তুই কি শুনতে পারছিস না?
আপু আহ্ করে উঠে বলল,
-আমার হাতে ব্যাথা লাগছে মেঘ।

সঙ্গে সঙ্গে স্যার আপুকে ছেড়ে দিলো।কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর আপু উঠে বসলো।স্যার আপুর হাতে একটা প্যাকেট তুলে দিয়ে বলল,
-একটা লাল বেনারসি। তোর জন্য অনেক খুঁজে কিনেছিলাম। ভেবেছিলাম আজই তোকে এটা পড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে যাবো।
আপু প্যাকেটা ছুড়ে নিচে ফেলে দিয়ে বলল,
-কার বাড়ি? কিসের বাড়ি? তোর সাথে কোথাও যাবো না আমি।
কথাটা বলে মুখটা ঘুরিয়ে নিলো আপু।মেঘ স্যার আপুর থুতনিটা ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললেন,
-আমার সাথে আর নাটক করিস না নূর।আজ তুই বললেও তোকে রেখে আমি কোথাও যাবো না।
আপু মেঘ স্যারের কলারটা টেনে ধরে বলল,
-কেন এসেছিস তুই এখন? এতোগুলো দিন কতো অপেক্ষা করেছি তোর জন্য।একটাবার আমার খোঁজ নিয়েছিস? তোর মনে হয় আমি এখন তোর সাথে যাবো? চলে যা এখান থেকে। তোকে আমার এখন প্রয়োজন নেয়।অনেক ভালো আছি আমি।
-সেটা তো দেখতেই পারছি।
-মানে?
-মানেটা পরে বলছি।তার আগে তুই বল সাদা শাড়ি কেন পরেছিস? যানিস সাদা শাড়ি মেয়েরা কখন পড়ে?
আপু একবার শাড়ির দিকে তাকাচ্ছে একবার মেঘ স্যারের দিকে।মেঘ স্যার বলে উঠলো,
-বিধবা হলে।

আপু সঙ্গে সঙ্গে স্যারের মুখটা হাত দিয়ে চেপে ধরলো।কিছুক্ষণ নিরব থেকে ঝাঁপিয়ে স্যারের বুকে এসে কেঁদে উঠলো।স্যারও আপুর চুলের মাঝে হাত ডুবিয়ে মাথাটা শক্ত করে ধরে কাঁদছে।আপুর কাছে জানতে চাইছে,
-ডিভোর্স পেপার কেন পাঠিয়েছিলি?
উত্তরে আপু বলল,
-তুই তো পাঠালি না তাই আমি পাঠিয়েছি।
স্যার আপুকে ছেড়ে দিয়ে প্যাকেটটা নিচের থেকে তুলে এনে বললেন,
-এই সাদা শাড়িটা বদলে লাল বেনারসিটা পরে নে।তোকে আজ আমি বাড়িতে নিয়ে যাবো।
আপু মাথাটা নাড়িয়ে বোঝালো যাবে না।স্যার আপুকে বললেন,
-বেশ এখন থেকে আমি তাহলে এবাড়িতেই থাকবো।তোর সাথে।এক মূহুর্তের জন্যও তোর চোখের আড়াল হবো না।আর কস্ট দেবো না তোকে।শাড়িটা বদলে দিই?
স্যার আপুর শাড়ির আঁচলটা ধরলে আপু নিজের চোখদুটো বন্ধ করে নেই।আঁচলটা সড়িয়ে নিয়ে ব্লাউজের হুক খুলতে গেলে আপুর কিছু একটা মনে হতেই মেঘ স্যারের হাতটা ধরে বসে চোখ তুলে মুখের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,

-আমি পারবো মেঘ।এখন তোর কাঁধে হসপিটালের কতো দায়িত্ব।সব নিজের হাতে সামলাতে হয়।তার উপর একজন ডাক্তার তুই।আমার জন্য তোর সময়টা নস্ট করিস না।তোর বাবা যদি জানতে পারে তুই আমার কাছে এসেছিস।উনি আরও অপমান করবে আমাকে।আমি একটু শান্তিতে জীবনের বাকি সময় গুলো কাটাতে চাই।আমার জন্য তোদের বাবা ছেলের সম্পর্কটা নস্ট হোক সেটা আমি চাই না।তাই প্লিজ তুই চলে যা।
কথাটা বলে আপু উঠে বিছানা থেকে নেমে গেলো।এগিয়ে গিয়ে আলমারি থেকে একটা হালকা বাদামী রংয়ের শাড়ি বের করে সেটা নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে আগাতে লাগলো।মেঘ স্যার উঠে গিয়ে আপুকে ওয়াশরুমে ঢুকার আগেই ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড় করালেন।আপুর ব্লাউজের প্রথম দুইটা হুক খুলে গলায় ও বুকে ভালোবাসার পরস ছুঁইয়ে দিয়ে বললেন,

-একজন ডাক্তার হবার সঙ্গে আমি তোর স্বামীও।কোনো কিছুর ভয়ে আমি নিজের স্ত্রীর এমন একটা পরিস্থিতিতে তাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারি না।বিয়েটা যখন হয়েছে যেভাবেই হোক না কেন তোর প্রতি আমার দায়িত্ব আছে।তাই আমাকে বাঁধা দেওয়ার চেস্টা করিস না।
স্যার জোড় করে আপুকে বিছানায় নিয়ে এসে বসালেন।আপুকে নিজের হাতে লাল বেনারসির সাথে মেচিং ব্লাউজ পড়িয়ে দিলেন।মুখে হালকা সাজ।আর চুলে খোপা করে দিয়ে হাতদুটো চেপে ধরে বললেন,

-সারাটা জীবন তোকে আমি ভালোবেসে এসেছি নূর।একটা মূহুর্তও তোকে ছাড়া ভাবতে পারি না আমি।এই সাজটাই তোকে আমি দেখতে চেয়েছিলাম।তোকে নিয়ে নিজের যৌবনটা পার করতে চেয়ে ছিলাম।একসাথে বৃদ্ধ হতে চেয়েছিলাম।কিন্তু আজ সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো।আমি জানি না সামনে কি হবে।শুধু একটা অপ্রাপ্তি থেকে গেলো আমার ভালোবাসা কখনো পূর্ণতা পেলো না।প্লিজ নূর নিজেকে তুই আজ সর্পে দে আমার কাছে।জীবনে একটাবার আমার ভালোবাসাকে স্বীকৃতি দে।
আপু কিছু বলল না।চোখদুটো বন্ধ করে নিশ্চুপ হয়ে রইলো আর স্যারের কথাগুলো শোনলো।এমন সময় আপুর ফোনটা বেজে উঠলো।স্যার ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখলেন পুরাতন ফ্রেন্ডের নাম্বার ভেসে উঠেছে।কলটা রিসিভ করলেন স্যার।তারপর যেটা শুনলেন সেটা শুনে স্যারের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।কলটা কেটে দিয়ে আপুর দিকে তাকালে দেখতে পেলো আপু কাঁদছে।
চলবে,,,,

মেঘ স্যার আপুর মুখটা আকড়ে ধরে কাছে টেনে নিলেন।কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন,
-প্লিজ কাঁদিস না নূর।তুই জানিস না তোকে এইভাবে কাঁদতে দেখলে আমার কস্ট হয়? কিচ্ছু হয়নি তোর।রিপোর্টটা শুধু ভুল ছিলো।অন্য কারও রিপোর্টের সাথে বদলে গিয়েছিলো তোর রিপোর্ট।সেটাই ফোন করে বলল রুসা।তোর এই অসুস্থতা ভুল ওষুধ নেওয়ার কারণে হয়েছে। তুই সুস্থ।
কথাটা শুনে আপুর যেন বিশ্বাস হলো না।আপু মাথা নাড়িয়ে স্যারের শার্টের কলারটা মুঠোয় নিয়ে টেনে ধরে বলল,
-মিথ্যা বলছিস কেন তুই?
স্যার আপুর ফোন থেকে তাদের ফ্রেন্ড রুসাকে কল দিলেন রিসিভ করতেই আপুর কাছে দিয়ে বললেন তুই নিজে জিজ্ঞাসা কর জানতে পারবি সত্যিটা।আপু কথা বলে জানতে পারলো স্যার সত্যি বলছে।
স্যার চিৎকার করে আমার নাম ধরে ডাকলেন।বাড়িতে উপস্থিত সকলে স্যারের ডাকে ছুটে আপুর রুমে আসলাম।দেখলাম স্যার আর আপু খুব খুশি। তাদের খুশির কারণটা যখন আমরা জানতে পারলাম তখন আমরাও খুশি হলাম।
স্যারের বাবার বন্ধু খুব অসুস্থ।সেখানে গিয়েছেন সে।দু’দিনের মধ্যেই চলে আসবে।তার অনুপস্থিতিতে স্যার আপুকে অনেক বুঝিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বলে আজ থেকে এই রুমটা তোরও। স্যার যানে হসপিটালের ওই পরিবেশটা আপু খুব ভালোবাসে।তাই আপু না চাওয়া স্বত্বেও আপুকে হসপিটালে নিয়ে আসেন।তার বাবার অনুপস্থিতিতে নিজের চেয়ারটাই আপুকে বসিয়ে দেন।সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন এতো কাজ আমি একা হাতে করতে পারবো না শুধু ডাক্তার হয়েই ঠিক আছি।এতোগুলো বছর নূর যেমন ভাবে সবকিছু নিজের হাতে সামলেছে।তেমন ভাবে এখনও করবে। এই চেয়ারটার যোগ্য শুধুই নূর।
কেউ মুখে কিছু না বললেও মনে মনে রাগ পুষে রেখেছে।কেউ চাই না আপু এই চেয়ারটাই বসুক।কারণ আপু যা অন্যায়গুলো করেছে তা অতন্ত্য জঘন্য।সকলে আপুকে অপছন্দ করলেও প্রিয়া আপুকে ঘৃণা করে।ওর চোখে মেঘ স্যার একজন ভালো মানুষ। তাকে পাওয়া যোগ্যতা আপুর নেই।প্রিয়া যখন আমাকে এসে বলল আমার আপু খুব স্বার্থবাদী।এসেই হসপিটাল থেকে স্যারের পজিশনটা কেড়ে নিয়েছে।তখন পাশ থেকে আপুর এক ফ্রেন্ড কথাটা শুনে নিলো আর আপুকে গিয়ে বলল।আপু কথাটা শুনে স্যারকে অনেক বোঝানোর চেস্টা করে। কিন্তু স্যার বোঝে না।শুধু বলেন তোর খুশির কাছে আমার জীবনে সব কিছু তুচ্ছ। এই চেয়ারটা তোর ছিলো তোরই আছে।আমি শুধু তোকে নিয়ে সারাটা জীবন সুখে থাকতে চাই।আর কিচ্ছু চাই না।
চলবে,,,,,