ঝরা ফুলের বাসর

ঝরা ফুলের বাসর !! Part- 21

স্যার জড়িয়ে ধরে ডাকছে আপুকে।আপু নড়ে উঠলে সোফায় আপুর মাথাটা ঠেকিয়ে রেখে উঠে দাড়ালেন স্যার।মুখটা ঘুরিয়ে নিলেন আপুর দিক থেকে।আপু মাথাটা চেপে ধরে উঠে বসলো।হাত বারিয়ে স্যারকে ডেকে বলল প্লিজ মেঘ আমাকে তুই অবহেলা করিস না।আমি যতোটা খারাপই হই না কেন এটা সত্যি তোকে আমি ভালোবাসি।তাই তো তোকে বিয়ে করলাম। তুই আমায় দূরে ঠেলে দিস না।

স্যার কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই আপুর চেম্বারে আবির চৌধুরী ঢুকলো।রাগি দৃষ্টিতে তাকালো আপুর দিকে।মাম্মাম এসে আপুর হাত ধরে টেনে নিচে নামিয়ে দাড় করালো।আপুর গালে চড় মেরে বলল আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে তুই আমার মেয়ে। ফুলের সাথে তুই যা কিছু করেছিস তারপর তোকে ক্ষমা করা যায় না।আমি ভুলে যাবো নূর নামের আমার কোনো মেয়ে ছিলো।আজ থেকে শুধু আমার একটাই মেয়ে ফুল।
মাম্মামের কথা শুনে আপু দু’পা পিছিয়ে গেলো।মেঘ স্যারের দিকে তাকালো।স্যার জানে আপু এখানে থাকলে এখন অনেক অপমানিত হবে।তাই মাম্মামকে বলল আপনার মেয়েকে এখান থেকে নিয়ে যান।বাড়িতে গিয়ে যা ইচ্ছা বলেন।স্যারের মুখ থেকে এমন কথা শুনে আপুর খুব কস্ট লাগছে।আপু কেঁদে উঠতেই আবির চৌধুরী মেঘ স্যারকে বলল পুলিশে ফোন করতে।স্যার অসহায় দৃষ্টিতে উনার বাবার দিকে তাকালো।স্যারের চোখে তার বাবা আপুর প্রতি ভালোবাসা দেখে স্যারের হাত ধরে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে বলল তুমি কি ডা.নূরকে ভালোবাসো? স্যার নিশ্চুপ হয়ে আছে। উনার আর বুঝতে বাকি নেই কিছু।স্যারকে বললেন এতোগুলো অপরাধ করেছে দিনেরপর দিন ডা.নূর।এরপরও তুমি ওকে ভালোবাসো? স্যারের মুখে কোনো কথা নেই তার বাবা বলল ঠিক আছে পুলিশে দেবো না।তবে আমার একটা স্বর্ত্ব আছে।সঙ্গে সঙ্গে স্যার চোখ তুলে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল কি স্বর্ত্ব বাবা? উনি বললেন ডা.নূরকে তোমার ডিভোর্স দিতে হবে।আর ঠিক যতোটা অপমান ও তোমাকে করেছে ততোটা অপমান করে এই হসপিটাল থেকে এই মুহূর্তে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ওকে বের করতে হবে পারবা? স্যার কিছুক্ষণ ভেবে বলে উঠলো পারবো।এতে যদি আমার নূরকে জেলে যেতে না হয় তাহলে তাই হবে।

স্যার এসে আপুর হাতটা ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে আসলো।সকলের সামনে ধাক্কা দিয়ে হসপিটালের গেইট থেকে বের করে আপুর মুখের সামনে আঙুল উঁচিয়ে বলল তোকে যেন এই হসপিটালে আর কখনো না দেখি।যতো দ্রুত সম্ভব ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দেবো সিগনেচার করে দিস।কথাটা বলে চোখের পানি স্যার আর আটকে রাখতে পারছে না।মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। আর আপু সেখানে দাড়িয়ে থেকে স্যারের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে।কাকিমণি গিয়ে আপুর কাঁধে হাত রেখে বলেন বাড়িতে যাওয়ার কথা তখন আপুর ধ্যান ফেরে।চিৎকার করে কেঁদে উঠে কাকি মণিকে জড়িয়ে ধরে বলে মেঘ আর কখনো আমাকে ভালোবাসবে না।মাম্মাম কখনো আমাকে ক্ষমা করবে না।কাকিমণি আপুকে শান্ত করে সব ঠিক হয়ে যাবে বুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসে।
হসপিটালে ভোটের রেজাল্টে হৃদ আর স্যারের মধ্যে স্যার বিজয়ী হয়।আর স্টুডেন্টের মধ্যে থেকে আমার নাম ঘোষণা করা হয়।স্যারের বাবা খুশি হয়ে মিস্টি হাতে স্যারের চেম্বারের দিকে যায় অভিনন্দন জানাতে। ঠিক তখনি হুড়োহুড়িয়ে প্রিয়া স্যারের চেম্বারে ঢোকে।দরজার সামনে দাড়িয়ে আবির চৌধুরী দেখতে পান প্রিয়া স্যারের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। আর খুব হাসি মুখে স্যারকে সামলাচ্ছে। স্যারকে বোঝাচ্ছে কাউকে ভালোবাসলে তার জন্য নিজেকে কস্ট দিতে হয় না।না হলে সে জানতে পারলে আপনার থেকে আরও বেশি কস্ট পাবে।
আবির চৌধুরীর মাথায় আসলো এই মেয়েটার সাথে স্যারের বিয়ে দিলে স্যার আপুকে ভুলে যাবে।তাই প্রিয়া বের হয়ে যেতেই স্যারকে বলল প্রিয়াকে বিয়ে করার কথা।যেটা শুনে স্যার খুব রেগে গেলো।তার বাবার সাথে খুব খারাপ ব্যাবহার করবো।বাবাকে বলল তোমাকে আমি বলেছি নূরকে ডিভোর্স দেবো কিন্তু এটা বলিনি অন্য কাউকে বিয়ে করবো।আমি সারাটা জীবন একা থাকতে পারবো কিন্তু নূরের জায়গা কাউকে দিতে পারবো না।
আবির চৌধুরী স্যারকে বোঝাতে ব্যার্থ হয়ে প্রিয়ার কাছে আসলো।আর প্রিয়াকে প্রস্তাব দিয়ে অনেক অনুরোধ করে বলল রাজি হয়ে যেতে।আপুর মতো একটা মেয়ের সাথে নিজের ছেলেকে কখনো সে দেখতে পারবে না।সব শুনে প্রিয়া হ্যাঁ বলে দিলো।

বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। স্যার জানে না তার বাবা প্রিয়াকে কি কথা দিয়েছে। স্যারের কাছে প্রিয়া একটা মজার মানুষ। যার কথা শুনলেই শুধু হাসি পাই।এদিকে হৃদের জোড়াজুড়িতে বাড়িতে এসেছি আজ আমি।একটার পর একটা সারপ্রাইজ দিয়ে চলেছে বাড়ির সকলে আমাকে।হৃদের রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।রাতে আমার রুম থেকে জোড় করে হৃদ নিজের রুমে উঠিয়ে নিয়ে আসে আমাকে।তারপর ব্যাপারটা বুঝতে পারি।আমি হৃদকে না বোঝার ভান করো জিজ্ঞেসা করি রুমটা কি জন্য সাজিয়েছো? হৃদ মুখে কোনো কথা বলে না লাইট অফ করেই শুরু করে দেয় রোমান্স।সকালে ব্রেকফাস্ট করার সময় টেবিলে বসে সবাইকে দেখে খেয়াল আসলো আপুর কথা।অনেকগুলো দিন আপুকে দেখি না।মাম্মামকে জিজ্ঞাসা করলাম কোনো উত্তর পেলাম না।কাকিমণি বলল নূর খুব অসুস্থ। মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পরে তাই রুমেই সবসময় রেস্ট নেই।কাল জোড় করে ওর এক ফ্রেন্ডকে বলে তার হসপিটালে পাঠিয়েছিলাম।আজ রিপোর্ট আনতে আবার হসপিটালে গিয়েছে।
কাকিমণির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মাম্মাম বলতে শুরু করল অসুস্থ না অভিনয়।হবে এটাও কোনো সড়যন্ত্র।তোর কাকি মণি কেন যে ওকে এতো বিশ্বাস করে প্রশয় দেয় বুঝি না।কথাটা শেষ হতেই দরজার দিকে তাকায় মাম্মাম।আপু রিপোর্টটা পিছনে লুকানোর চেস্টা করে।এগিয়ে এসে মাম্মামের সামনে দাড়িয়ে ছলছল চোখে মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে আমি সত্যিই খুব অভিনয় করি মাম্মাম।অনেক মিথ্যাও বলি নিজের মানুষদের সাথে।আপুর চোখমুখ দেখে সত্যি খুব অসুস্থ মনে হচ্ছে।চোখের নিচের কালো দাগটাও স্পষ্ঠ।যেন অনেকদিন ঘুমাই না।ঠিক মতো খাই না।নিজের যত্নও নেয় না।

মাম্মাম রেগে আপুকে অনেক কিছু শুনিয়ে দেয়। আর আপু নিরবে শুধু হাসতে থাকে।আজকের মতো এতো শান্ত আগে আপুকে কখনো দেখি নি।কাকিমণি মাম্মামকে চুপ করাতে না পেরে আপুকে ধরে রুমে নিয়ে যায়। আমি উঠে আপুর রুমের দিকে যেতে লাগলে মাম্মাম আমার হাতটা ধরে বসে বলে ব্রেকফাস্ট শেষ করে উঠতে।আমি হাত ছাড়িয়ে কোনো কথা না বলেই চলে আসলাম।আপুর রুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে দেখলাম আপু রিপোর্টটা আলমারিতে রেখে বিছানায় এসে কাকিমণিকে বলছে কিচ্ছু হয় নি আমার শুধু শুধুই চিন্তা করছিলে তুমি।কাকিমণি আর আমি নিশ্চিত হলাম।আমি আপুর রুমের মধ্যে যাবো তখনই হৃদ এসে আমাকে টেনে আনলো।আমাকে বলল নূর আপুকে ওর একটুও পছন্দ না।আপু যা করেছে তারপর হৃদ চাই না আমি কখনো আপুর আসেপাশেও থাকি।হৃদের কথা শুনে আমি যতটুকু বুঝলাম তাতে কাকিমণি ছাড়া এবাড়িতে কেউ আপুকে পছন্দ করে না।
চলবে,,,,,,