জুনিয়র বর

জুনিয়র বর—— পর্ব -০৮

পরদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। কারণ সকাল
সাতটা চল্লিশ মিনিটে অভির বাস আছে। এরপর অভি
চলে গেলো। যাওয়ার আগে ও আমাকে জড়িয়ে
ধরে মেয়ে মানুষের মতো কাঁদতে লাগলো।
আমি ওকে কি সান্তনা দিবো, আমার চোখ ও তো
মানছিলো না। ওকে ছাড়তে চাচ্ছিলো না আমার
আমি।
ওর ও একই অবস্থা। ও যে ওই মুহুর্তে কতশত বার
আমাকে চুমু দিয়েছে সেটা বলতে পারবোনা।
বাহির থেকে শ্বশুরমশাই তাড়া দিচ্ছিলো, গাড়ি আসার
সময় হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
যাওয়ার সময় ও বললো কোনো চিন্তা করবেনা।
প্রতি ঘন্টায় আমাদের কথা হবে।
আর পরিক্ষা শেষে তোমাকে ঢাকায় নিয়ে
আসবো। এ বিষয়ে আব্বু আম্মুর সাথে কথা
বলবো। তোমাকে ছেড়ে থাকাটা খুবই কষ্টের
হবে।
না চাইতেও আমাদের এ বিচ্ছেদ টা মেনে নিতে
হলো।
এরপর শুরু হলো অভিহীন জীবন যাপন।
এভাবে নিজেকে বোঝাতে পারছিলাম না।যদিও ওর
সাথে দিনে প্রতি ঘন্টায় কথা হয় তারপর ও কোথাও
না কোথাও অতৃপ্ততা থেকেই যেতো। মন
ভরতোনা আমার এ কথায়। দিনগুলি যেন খুবই ধীর
গতিতে যাচ্ছিলো। প্রথম দিকে স্বাভাবিক ভাবে কথা
বললেও পরে আর স্বাভাবিক থাকতে পারলাম না। কথা
হলেই কান্না আসতো চোখ জুড়ে।
সবসময় আমার দৃষ্টি ফোনের মাঝেই থাকতো।
কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগতো না। সব
সময় যেন অভির জন্যই নির্ধারিত ছিলো।
জানিনা এতো গভীর ভালোবাসা কিভাবে হলো
আমার জুনিয়র বরের প্রতি।
ইদানীং অভিকে ছেড়ে থাকাটা খুবই ডিফিকাল্ট হয়ে
পড়েছে।
এক দিনের ঘটনা, দিনটি ছিলো শুক্রবার। দুদিন বাদে
অভির এক্সাম শুরু হবে। হঠাৎ অভি বলে উঠলো
আজ সাড়াটা দিন ও সাড়াটা রাত তোমার জন্য।
আমি ওকে বারণ করে দেই ওর পরিক্ষার কথা
ভেবে। কিন্তু আমার বর সেটায় খুব মাইন্ড করে।
বুঝতে পারিনি ওর মাইন্ড এতো বেশী।
সাড়া দিনে একবারও কথা বলেনি। আমি বেশ
কয়েকবার কল দিলাম। কিন্তু ওর কোনই উত্তর
নেই। ওর এমন আচরণে তো আমি অস্থির হয়ে
পড়ি। খুবই আজেবাজে চিন্তা হচ্ছিলো ওর জন্য।
চোখ বেয়ে অঝোরে পানি পড়ছিল।
এরপর ও রাত দুটোয় ফোন দেয়। ওর ফোন
পেয়ে মনে হয় আমি সর্গ হাতে পেলাম। সাথে
সাথেই রিসিভ করি,,
আমি ওকে অভিমানি সুরে বললাম এতোক্ষন কেন
কথা বলোনি,,কি করছিলে,,?
— ও বললো যেটা করেছি সেটা বলা যাবেনা।
— কেনো বলা যাবেনা,,? আলবৎ বলা যাবে। তুমি
বলো নইলে কি করবো নিজেও জানিনা,,,,,
— বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছি। তুমি তো
বলেছিলে আমার সাথে কথা বলবেনা।
— এবার নিজেকে সামলাতে না পেরে কেঁদে
কেঁদে বললাম তোমার সাথে তো কথা বলতে
সবসময়ই ইচ্ছা করে।কিন্তু তোমার পরিক্ষার কথা
ভেবেই তো এ কথা বলেছি।
— এতোসব তোমাকে ভাবতে কে বলেছে হু?
আমি কি কখনো বলেছি আমাকে নিয়ে তুমি
এতোসব ভাবো? এতো বেশি বুঝো কেনো?
আমি কিছু বলতে চাইলাম কিন্তু পারলাম না। এতো কান্না
যে কই থেকে এলো,,,
ও আবারো বলা শুরু করলো তোমার এই বেশি
বোঝার কারনে আজ সারাটা দিন আমার কতো
কষ্টে কেটেছে সেটা কি তুমি আন্দাজ করতে
পারবে?
পারবেনা তো,, কারণ তোমার তো সেটা বোঝার
অনুভুতি এখনো তোমার মাঝে জন্মই নেয় নি।আর
নিবেই বা কিভাবে, আমি ভুলেই গেছিলাম, তুমি তো
আমার সিনিয়র বউ।
এ কথাগুলো বলেই ও ফোন কেটে দিলো।
ওর শেষের কথাটি আমার কানে বিষের মতো
শোনালো। কেনো এভাবে ও বললো,,
হু বুঝতে পেরেছি ও আমার উপর রাগ করেছে,,
তাই এ কথা বলতে হবে,,?
ও তো একাই কষ্ট পায়নি আমিও তো কষ্ট
পেয়েছি।
এরপর কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি
বুঝতে পারিনি।
পরদিন ঘুম ভাংলো সকাল দশটায়।ঘুম থেকে উঠে
দেখি আমার ফোন বন্ধ হয়ে আছে। অভি বুঝি
আমাকে কল দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেছে।
এরপর ফোন চার্জে লাগিয়ে ফ্রেশ হতে
গেলাম। এসে ফোন অন করতেই অভির দেয়া
অনেক টেক্সট এসে জমা হলো ইনবক্স এ।
ও অনেকভাবে আমাকে স্যরি বলেছে।
পাগল ছেলে একটা।
,,,,,,,,,,,,,চলবে,,,,,,,,,