জুনিয়র বর

জুনিয়র বর—— পর্ব -০৭

পরদিন হরতাল থাকায় অভি ঢাকা যেতে পারলোনা।
আমার যে কি আনন্দ লাগছিলো বুঝাতে পারবোনা।
সারাটা দিন ও বাসায় থাকলো। এক মুহুর্তের জন্য ও
আমাকে ছেড়ে বাহিরে গেলোনা।
হঠাৎ করে ও বললো তোমার জন্য গতকাল একটা
নীল শাড়ি এনেছিলাম। তুমি কি ওইটা পরে আমাকে
দেখাবে,,?
আমি বললাম হুম, কেনো পরবোনা,,
এই প্রথম আমার বর আমার জন্য কিছু এনেছে।
একশো বার পরবো।
আজ আমি ভীষণ খুশি।
এরপর ওই নীল শাড়িটা পরলাম, কপালে বড় একটি নিল
টিপ দিলাম। দু হাত ভর্তি নীল রেশমি চুড়ি পড়লাম।
ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ও চোখে কাজল দিলাম।
এরপর রুমে এসে অভিকে বললাম চোখ বন্ধ
করো। যতক্ষণ না আমি বলবো ততোক্ষণ
খুলবেনা।
ও বললো কেনো,,?
আমি বললাম যেটা বলেছি সেটা করো।
আমার কথামতো ও চোখ বন্ধ করলো।
এরপর আমি বিছানায় গিয়ে লম্বা ঘোমটা টেনে
বসে পড়লাম।
এবার অভিকে চোখ খুলতে বললাম।
ও আমার এই রুপ দেখে অবাক হইছে বুঝি।
তাই ও বিড়বিড় করে বললো আমি ঠিক এমনটিই
দেখতে চেয়েছিলাম।
এরপর ও আমার ঘোমটা সরিয়ে দিলো। আমি মাথা নিচু
করে থাকলাম।অভি আমার মুখটি উঁচু করে ধরলো।
লজ্জায় আমি চোখ বন্ধ করলাম।
তারপর কপালে চুমু দিয়ে বললো, ভেবেছিলাম
এক্সাম এর পর আসলে আমাদের বিয়েটা পুর্ণরুপ
পাবে, কিন্তু তোমাকে যে এতোটা মায়াবী
দেখাবে বুঝতে পারিনি। পারছিনা তো নদী চোখ
ফিরিয়ে নিতে।
সত্যিই বুঝি তোমার প্রেমে পড়ে গেলাম।
তোমাকে ছেড়ে থাকাটা অনেক কষ্টের হবে।
আজ সারাদিন তুমি শুধুই আমার।
আমি বললাম এভাবে ঘরে বসে থাকাটা খারাপ দেখায়।
ও বললো এসব কিছুই আমি বুঝি না। তুমি থাকবে
বুঝেছো,,?
এরপরে ও ওর গিটার বাজিয়ে আমাকে রোমান্টিক
গান শোনালো। তারপর আমার কোলে মাথা
রেখে অনেক গল্প করলো। এরমাঝে এ কথাও
বললো, ছোট থেকেই ও নাকি আমাকে পছন্দ
করত। কিন্তু সেটা ভালোবাসা ছিলো কিনা বুঝতে
পারতনা।
ছোটবেলায় আমরা প্রচুর ঝগড়া করতাম। ওই সময় ও
মাঝেমাঝে বলতো তোমাকে বউ বানায়ে নিয়ে
গিয়ে অনেক পিটাবো। হাহাহা, ছোটবেলার
সৃতিগুলো খুব মধুর হয়।
তারপর কথায় কথায় ও বললো,ওর এক বান্ধবী, নাম
তার সেতু। সে মেয়েটি ওকে স্কুল জীবন
থেকেই ভালোবাসে।কিছুদিন আগেও নাকি ওর
সাথে দেখা হয়েছিলো। সেদিন ও মেয়েটি ওর
কাছ থেকে নাকি উত্তর চেয়েছিলো।ও নাকি
হাসিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলো।
ওই মেয়ের কথা শুনে তো হিংসায় জ্বলেপুড়ে
যাচ্ছি।
আমি বললাম তুমি কি ওর প্রতি দুর্বল ছিলে নাকি,,?
ও বললো, ভেবেছিলাম মেয়েটাকে এবার হ্যাঁ
বলে দিবো। ও দেখতে সুন্দর।উত্তম চরিত্রের
অধিকারী, এবং অনেক বুদ্ধিমতী।
আমি বললাম, কি ভেবেছিলে হু,, তোমার সাথে
আমার আর কথা নেই।আমি রাগ করে শাশুড়ি মার কাছে
গেলাম।আমি গিয়ে দেখি উনি বিছানায় পা ছেড়ে
বসে আছেন।
আমি কিছু না ভেবে উনার কোলে মাথা রেখে
শুয়ে পড়লাম।
উনি আমার চুলে বিলি কেটে বললেন মায়ের কথা
মনে পড়েছে বুঝি,,?
— আমি বললাম না।
— তবে কি বাসার অন্যদের কথা,,,?
— না
— তবে কি হইছে
— আপনার ছেলের সাথে ঝগড়া হইছে।ও নাকি
সেতু নামে একটি মেয়েকে বিয়ে করতে
চেয়েছিলো।
— বলিস কি,,? খাড়া,ওকে পিটুনি দিয়ে ওর আক্কেল
ঠিকানায় আনতে হবে।
আমি বললাম থাক মা, এসব করেন না। দেখি ও কি
করে।
মা বললেন কোনো সমস্যা হইলে আমাকে জানাবি।
আমি মাথা নেরে হ্যাঁ বললাম।
এরপর ডিনার শেষে শাশুড়ি মার ঘরে এসে শুয়ে
পড়লাম।
খানিকবাদে দেখছি ও এসে উঁকিঝুঁকি মারছে। এটা
লক্ষ করে শাশুড়ি মা বাহিরে গেলেন।
এরপর অভি এসে আমাকে বললো চলো
ঘুমোবো।
—আমি বললাম আমি এখানে ঘুমোবো।
—- এসব ফালতু কথা বাদ দাও। এখন বলো, তুমি
সেচ্ছায় যাবে নাকি জোর করে নিয়ে যাবো,,?
— বলেছি তো,,যাবোনা। শুনতে পারোনি,,?
এরপর আমি বুঝে উঠার আগেই ও আমাকে
পাঁজাকোলা করে উঠিয়ে নিয়ে ঘরে আসলো।
আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম।
ও আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।
চোখ খুলে দেখি ঘর অন্ধকার। ঘরের কোনায়
কয়েকটা মোমবাতি টিপটিপ করে জ্বলছে।
রজনীগন্ধা আর গাঁদা ফুলের সুবাসে ঘরটা মৌ মৌ
করছে।
সব মিলিয়ে রোমান্টিক ঘন পরিবেশ।
একটু পর ঘারে তপ্ত নিশ্বাস অনুভব করলাম।এইটুকুন
সময়ের মধ্যে অভি উন্মাদ হয়ে গেছে।
আমাকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিলো।
চলবে,,,