জুনিয়র বর

জুনিয়র বর—— পর্ব -০২

এরপর অভি আমাকে বললো সত্যি করে
বলো তুমি কি ভাইয়াকে পছন্দ করতে,,?
— আজব তো, এসব কথা এখন কেনো হচ্ছে
— হু এখনি। হ্যাঁ নাকি না,,তাড়াতাড়ি
বলো। আমার জবাব চাই।
— অভির এমন কথায় মেজাজ খারাপ হয়ে
গেলো। এ জন্যই জুনিয়র ছেলেকে বিয়ে
করতে নেই। এরা এক কলম বেশি বোঝে।
আমি বললাম এসব ফালতু প্রশ্নের জবাব
আমি দিতে পারবোনা।
আমার কথা শুনে অভি রুম থেকে হনহন করে
বেড়িয়ে গেলো।
এবার খারাপ টা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে
গেলো। কেনো খারাপ লাগছে,,?
অভির জন্য,,? এভাবে ওকে বলাটা বুঝি
ঠিক হয়নি ।
পরে ক্ষমা চেয়ে নিবো। আর তাছাড়া
আমি তো জটিল কিছু বলিনি।
এরপর দুপুরে শ্বশুরবাবা ডেকে পাঠালেন।
একসাথে লাঞ্চ করার জন্য।
ডাইনিং রুমে এসে দেখি সবাই বসেছে।
আমি একটু লেট করেছি।
শ্বশুরবাবা আমাকে তার পাশে বসালেন।
অভিও খেতে বসেছে। ওর চেহারায়
কেমন জানি রাগী রাগী ভাব। আমার
দিকে একবারের জন্য ও তাকাচ্ছেনা।
আমি ওর দিকে কতোবার তাকাচ্ছি
কিন্তু অভি সেটা কি বুঝতে পারছে,,?
গর্দভ একটি।
শাশুড়ি মা আমাকে সযত্নে খাবার
পরিবেশন করছে। ভালোই লাগছে
অনিকের বউ এর দিকে দেখে। একবারের
জন্য ও কেউ ওর খাবারের দিকে লক্ষ
করছেনা। অনিক এটা সেটা উঠিয়ে
দিচ্ছে ওর বউকে।
আমাকে নিয়ে এতো আদিখ্যেতা বুঝি
মেয়েটির পছন্দ হচ্ছেনা। তাই সে
বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে।
একবার ও তাকাতেই আমি বললাম
ভাবিজী আপনার কিছু লাগবে কি?
ও মাথা নেড়ে না বললো।
একি! অভি অল্প কিছু খেয়ে উঠে যাচ্ছে
যে,, আমি ওকে চিল্লায়ে বললাম ওই
অভি না খেয়েই উঠছো যে,,
আমার কথা বুঝি ওর কানেই গেলোনা।
ও ওর মতো চলে গেলো।
সবাই খাওয়া বাদ দিয়ে আমার দিকে
চেয়ে আছে, আমি ভুল কিছু করলাম
নাতো,,?
আমতাআমতা করে বললাম সবাই যে
এভাবে চেয়ে আছেন,,
শ্বশুরবাবা বললেন কিছু না। তুমি খেয়ে
নাও।
এরপর আমি পেট ভরে খেয়ে নিলাম।
তারপর সারাদিন অভির দেখা আর
মিললোনা।ভাবলাম রাতে তাড়াতাড়ি
আসবে।
অনিক তো সারাক্ষণ ওর বউ এর আচলপুরেই
থাকলো। আর আমার বর, সে একটা আনারস।
রাত এগারোটা বাজে।সবার সাথে আড্ডা
দিয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।
কিন্তু এখনো অভি ফেরেনি। আমি অনেক
ক্লান্ত থাকায় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে
পড়লাম।
কিসের একটা গন্ধে নিশ্বাস নিতে কষ্ট
হচ্ছিলো। ঘুম ভেঙে গেলো।
সিগারেটের গন্ধ,, এটার সহ্যক্ষমতা একদমই
কম। কে খায় সিগারেট?
কাউকে তো দেখতে পাচ্ছিনা।
অভি কই, ও আসেনি এখনো?
নাহ রুমে তো নেই।
ঘড়িতে দেখি একটা বেজে বায়ান্ন
মিনিট। এখনো ও আসেনি কেনো?
ও কি আমাকে নিয়ে ডিপ্রেশন এ ভুগছে,?
বউ হিসেবে হয়তো মানতে পারেনি।
হয়ত ও অন্য কাউকে অনিকের মতো
ভালোবাসে।
কেনো যে এসব বোঝেনা গার্ডিয়ানরা।
জোরপূর্বক বিয়েটা দিলেন। এখন
ভোগান্তি কার হচ্ছে,,?
আমার ধারনা যদি সত্য হয় তাহলে কি
হবে?
অভির সাথে কথা বলতে হবে এসব
বিষয়ে।
কিন্তু তার আগে এই সিগারেটের
উৎপত্তিস্থল খুঁজে বের করতে হবে। নইলে
এর গন্ধে বমি হয়ে যাবে।
আমি নাকে শাড়ির আচল চেপে বের
হলাম। ড্রয়িংরুম থেকে গন্ধটা আসছে।
ড্রয়িংরুম আমার রুমের পাশেই।তাই
গন্ধটা ভালোভাবেই টের পেয়েছি।
রুমের লাইট অন করা আছে। আমি
চুপিসারে দেখার চেষ্টা করছি রুমের
ভিতর কে আছে। আর এতো রাতে ঘুমানো
বাদ দিয়ে কি হচ্ছে এসব।
তারপর দরজার পর্দা সরাতেই দেখি অভি
চোখ বন্ধ করে বিরতিহীন ভাবে
সিগারেট টেনে যাচ্ছে।
আমি ভিতরে এসে সিগারেট ওর কাছ
থেকে কেড়ে নিয়ে জানালা দিয়ে
বাহিরে ছুড়ে ফেললাম।
ও লাফ দিয়ে উঠে বসলো। আমাকে বললো
কেনো করলে এমন
— যা করেছি বেশ করেছি।
— একদম ঠিক করনি
— তুমি কোনটা ঠিক করেছো হু,
— কোনটা মানে?
— আমার সাথে এমন করলে কেনো
— আমি আবার কি করলাম। করলে তো
তুমি। আমার মুখের খাবার ছুড়ে মারলে
— ওইটা খাবার ছিলো?
— নয়তো কি?
— ওইটা বিশ ছিলো।
অভি এসব বিষয়ে কথা বলতে ভালো
লাগছেনা। এবার সত্যি করে বলতো, তুমি
কি অন্য কাউকে পছন্দ করো?
কোনো ভণিতা ছাড়াই বলবে।
— এমন কথা কই থেকে আসলো
— তোমার এড়িয়ে যাওয়া আমার কাছ
থেকে, সবসময় রাগী চেহার করে থাকা
— স্টপ স্টপ স্টপ,, এসব কিছুই না। চলো
ঘুমোবো।
তারপর,,,,