জীবনের গল্প

জীবনের গল্প !! Part- 05

নিব্রাস ডুবে যাচ্ছে একটা হাত উঁচু করে জাস্ট আমাকে ইশারা দিচ্ছে,
বলতে চাইছে,
-তিয়াসা আমাকে বাঁচা প্লিজ।আমাকে বাঁচা…
আমি এখন কি করবো,আমি কোন দিক না ভেবে নিজেই নদীতে নেমে যাই।
আমার মাথায় তখন এই চিন্তা ছিলোনা যে আমি নিজেই বাঁচবো নাকি মরবো।
শুধু মাথায় একটাই চিন্তা ছিলো ওকে বাঁচাতে হবে।নিব্রাসকে বাঁচাতে হবে।
কিন্তু আল্লাহর ই রহমত আমি নদীর কিনারায় নামতে না নামতেই নিব্রাস নদীর কিনারায় এসে পড়ে।
তারপর আমি ওর দিকে হাত বাড়াই আর ও আমার হাত ধরে উঠে আসে।
তত ক্ষণে অনেকেই অখানে জড় হয়।
নীল আর তিয়ারা গিয়েছিলো হালকা খাবার কিনতে।
এসে দেখে আমরা দুজন ভিজে একাকার হয়ে আছি।
নিব্রাস আমার কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে।
আমি ওর গালে দুই হাত দিয়ে হালকা ভাবে বার বার থাপ্পড় দিয়ে বলছি,কিচ্ছু হয়নি।কিচ্ছুনা।
সব ঠিক আছে।সব ঠিক হয়ে যাবে।
আসলে নিব্রাস খুব ভয় পেয়েছে।
নিস্তব্ধ হয়ে গেছে।
পরে ওরা নীল আর তিয়ারা সব শোনে।
আর সাথে সাথে আমাদের নিয়ে বাসায় চলে আসে।
রাস্তায় নিব্রাসকে বলে যে হসপিটালে নিয়ে যাই।
কিন্তু ও না করায় আর বাসায় যেতে চাওয়ায় ওকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।
বাসায় যেতেই সবাই আমাদের মুখ দেখে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে।
পরে নীল সবাইকে সব খুলে বলে।
নীলের মা কাঁদতে শুরু করে।
তারপর ড্রেস চেঞ্জ করে নিব্রাসকে রেস্ট নিতে বলে।
সব রুমে মানুষ জন আর ঝামেলা থাকায় নিব্রাস আমার রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে।
আমি একটা ড্রেস নিয়ে আম্মুর রুমে চলে আসি।
পরে সবাই নিব্রাসের কাছে গিয়ে বসে।
আর নিব্রাস সবাইকে চলে যেতে বলে।
কিছু ক্ষণ পর আমি জানালার কাছে গিয়ে ওর দিকে তাকাই।
দেখি ও চোখ মেলেই তাকিয়ে আছে উপরের দিকে চেয়ে।
আমাকে ও দেখে ফেলায়,রুমে আসতে বলে।
আমি রুমে ঢুকি।
খাটে গিয়ে বসি ওর পাশে।ও শুয়ে আছে।
-ঠিক আছিস তুই?
-হুম।

-চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।খুব ভয় পেয়েছিস না?
নিব্রাস আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে পড়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে।
আর জোরে জোরে কাঁদতে থাকে।
-আরে পাগল,এভাবে কাঁদছিস কেন?
কিছু হয়নিতো।এই যে তুই ঠিক আছিস।
-আজ আমি মরে যেতাম তাইনারে?
আর সাথে তুইও।
-কি বলিস এসব?
-তুই কেন আমাকে বাঁচানোর জন্য নামতে গেলি?
তুই নিজেও তো সাঁতার জানিস না।
যদি তোর কিছু হয়ে যেতো।
-চুপ করবি?
কারো কিছু হয়নিতো দেখ।
তুই কান্না বন্ধ কর।
নিব্রাস তবুও কাঁদতে থাকে।
আসলে মরণের পথ থেকে ফিরে আসার পর মানুষের অনুভূতি হয়তো এমনই হয়।
ভয়টা খুব কাজ করে।
হঠাৎ নীল জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে নিব্রাস আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।আর দেখেই ও রুমে চলে আসে আর নিব্রাসকে টেনে ওর বুকে জড়িয়ে ধরে।
বলে,কাঁদিস না ছোট।
কিছু হয়নি।কিচ্ছু হয়নি।
আর কেন যেন আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে।
অথচ ওর তো আমার দিকে নরম ভাবে তাকানো উচিৎ। যেহেতু ওর ভাইয়ের জান বাঁচলো আমার উছিলায়।
কিন্তু ও কেন আমার দিকে এমন গরুর চোখ করে তাকিয়েছে।
যাইহোক,
কিছু ক্ষণ পর আম্মু সবাইকে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকে।
নিব্রাস টেবিলে যেতে চায়না।
আম্মু আমাকে বলে ওর খাবার টা রুমে দিয়ে দিতে।
আমি নিব্রাসের খাবার রুমে নিয়ে যাই।
-এই নে খেয়ে নে।ওঠ,
বস।
-আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা।খাবার নিয়ে যা প্লিজ।
-খেতে ইচ্ছে করছেনা,নাকি পানি খেয়ে পেট ভরে গেছে?হি হি।
নে খেয়ে নে বলছি।
-তুই তো খেয়ে খেয়ে টমেটোর মত হচ্ছিস।
আমাকেও কি তাই হতে বলিস নাকি?
বছর কয়েক আগেও কত সুন্দর ছিলি।
এলাকার সব থেকে সুন্দর মেয়ে ছিলি।এখনো আছিস।তবে একটু মোটা হয়ে গেছিস।যার জন্য তোর সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে যাছে এই মোটার আড়ালে।
আসলে আমি অফিসে জয়েন করার পর থেকে সারাদিন অফিসে বসে থাকতে থাকতে কখন যে মুটিয়ে গেছি তা খেয়ালই করিনি।
যার জন্য আমার সৌন্দর্য এখন মোটার আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে।
-তুই কি খাবি এখন নাকি আমার মোটাপা নিয়ে তামাশা করবি?
এই মোটা হওয়া নিয়ে কত যে কথা শুনি প্রতিদিন।
-রাগ করলি?আমি কিন্তু তোকে কষ্ট দেয়ার জন্য বলিনি।
আমি তোকে সব অবস্থাতেই বিয়ে করতে রাজি।
তুই আমার কাছে সব অবস্থাতেই সুন্দর গলুমলু সুন্দরি।
-কানের নিচে মারবো একটা?
নে খাবার খেয়ে নে।
-খাইয়ে দিবি একটু?
সত্যিই খেতে ইচ্ছে করছেনা।
-নে হা কর।
আমি নিব্রাসকে নিজ হাতে খাইয়ে দেই।
ছেলেটা আমার সম বয়সী হলেও মনে হচ্ছে ছোট একটা বাচ্চা ছেলেকে আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
এত মাসুমিয়াত ওর মুখে।
সন্ধ্যায় নিব্রাস আমাকে ডেকে বলে,
আমাকে একটু ছাদে নিয়ে যাবি?
-ছাদে কি করবি?

-ভালো লাগছেনা তাই একটু যাবো।
-তাহলে যা।আমাকে নিয়ে যেতে হবে কেন?
-সত্যি বলবো?
আমার না ভয় করছে।
মনে হয়,যদি ছাদ থেকে পড়ে যাই।
-পাগল একটা।
চল হাত ধর আমার।
আমি হাত ধরে নিব্রাসকে ছাদে নিয়ে যাই।
নীল আমাদের ফলো করতে করতে আমাদের পেছন পেছন আসে।
যেটা নিব্রাস খেয়াল না করলেও আমি ঠিকই করেছি।
নিব্রাস আর আমি ছাদে বসে আছি।
-তোদের ছাদ থেকে বাইরের দৃশ্য দেখতে খুব সুন্দর লাগে।
-হুম জানি।
তাইতো যখন ছুটি পাই তখন বাসায় এসে বেশির ভাগ সময় ছাদেই বসে থাকি।
-আচ্ছা,তুই কেন জব করিস বলতো?
টাকা পয়সার তো অভাব নেই।
যদি শখের বশেই করিস তাহলে এখন কেন?
পড়াশোনা শেষ করে তারপরই করতি।
এটাই তো অনার্স লাস্ট ইয়ার।
তাহলে সামনে আর এক বছর।
মাস্টার্স শেষ করেই জবে ঢুকতি।তাহলে আর বাবা বাড়ী ছেড়ে দূরেও থাকতে হতোনা।
বিয়ের পর তো এমনিতেও বাবার বাড়ী ছেড়ে দূরে থাকতে হবে।কয়টা বছর নিজের বাড়ী থেকেই যেতি।
কেন ঢুকলি এত তাড়াতাড়ি জবে?
-অতীত ভুলতে।
অতীত টা খুব বেশি আঘাত করতো তো।তাই কাজে ডুবে থাকতে চেয়েছি।
-পেরেছিস ভুলতে?
-পারলাম আর কই,
সারাদিন ব্যস্ত থাকলেও রাতে যে মনে পড়েই।
-যাইহোক,অতীত ভেবে মন খারাপ করিস না।
যা হবার তা তো হয়েই গেছে।এবার বর্তমান নিয়ে ভাব,আমাকে নিয়ে ভাব।
-দিবো এক ধাক্কা,
বড় বোনকে এসব বলতে লজ্জা করেনা?
আমি না তোর ১২ দিনের বড়?
-এমন ভাবে বলিস,যেন তুই আমার ১২ দিনের না।
১২ বছরের বড়।
-আচ্ছা তুই কাউকে কোন দিন ভালবেসেছিস?
-সত্যি বলবো?
-তোকে কি মিথ্যা বলতে বলেছি?
-হুম বেসেছি এবং বাসি।
বল না নাম কি তার?
বাসায় বলেছিস?কত দিনের রিলেশন হুম?ও হো,এবার তো তাহলে তোর পালা।তোর লাইন ক্লিয়ারও বটে।
বিয়ে কবে করছিস শুনি?
মেয়েটার ছবি আছে কোনো?
দেখা না,দেখি।
তুই এত সুন্দর।না জানি তোর ভালবাসার মানুষটা কত্ত সুন্দর।
-হুম খুব সুন্দর ও।
ওর চোখ দুটো মায়ায় ভরা,যে কেউ ওর চোখের মায়ায় পড়ে যাবে এক মিনিটেই।
ওর হাসি,উড়ন্ত চুল,গোলাপি ঠোঁট।
গালে ছোট্ট একটা তিল।
-ওর গালেও তিল আছে বুঝি?
বাহ্।
তবে নিশ্চয়ই আমার মত মুটি না।হি হি হি।
ছবি দেখা তাড়াতাড়ি।
নিব্রাস ওর মোবাইল ফোন টা আমার মুখের সামনে ধরে।
আমি স্ক্রিনে তাকাতেই বৈদ্যুতিক শক খাওয়ার মত ধাক্কা খাই।
এ যে আমারই ছবি।
-নিব্রাস,
আমার সাথে ফাজলামো করছিস তুই?
-কেন সুন্দর না আমার অপ্সরী?আমি ওকে খুব ভালবাসি।খুব।
ছোট বেলার ভালো লাগা,ঝগড়া মারামারি,বড় বেলায় এসে যে ভালবাসায় রুপান্তরিত হবে তা আমি বুঝতে পারিনি।
যখন আম্মু বল্লো নীলাদ্রীসের সাথে তিয়ারার বিয়ে।তখন আমি ভুল করে তিয়াসা শুনেছিলাম।আর সাথে সাথে বুকের ভেতর এক চিনচিনে অদ্ভুত ব্যথা অনুভব করি।
ভালো করে আম্মুকে জিজ্ঞেস করি,
কার সাথে নীলাদ্রীসের বিয়ে?
তখন আম্মু উত্তর দেয় তিয়ারা।
আর তখনই যেন আমি আমার প্রাণ টা ফিরে পাই।তারপর আম্মুকে তোর কথা জিজ্ঞেস করি,তোর কি বিয়ে ঠিক বা কিছু কিনা।
আম্মু বলে তুই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তারপর বিয়ে করবি।
কথা টা শুনে শান্তি পাই।
আর মনে মনে ভাবতে থাকি
আমিও অনার্সটা শেষ করেই একটা জব ধরবো।
তারপর তোকে আমার ভালবাসার কথা বলবো।
আর তোর কোন আপত্তি না থাকলে আমরা বিয়ে করে নিবো।
আর মাস্টার্স টা এক সাথেই করবো।
আই লাভ ইউ তিয়াসা।
আমি তোকে ভালবাসি।
হবি আমার বউ?
করবি আমায় বিয়ে?
আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়াই।
আমি এত দিন নিব্রাসের কথা গুলো জাস্ট ফান হিসেবে নিয়েছি।কিন্তু ও যে সত্যি সত্যিই বলছিলো সব আমি তা ভুলেও বুঝতে পারিনি।
এ কি বলছে নিব্রাস,এ যে কোন দিনও সম্ভব না।কোন দিন না।
-এ সম্ভব না নিব্রাস।
এটা কোন দিনও সম্ভব না।
-কেন সম্ভব না?
কি কমতি আমার?

-তোর কোন কমতি নেই।
কিন্তু আমি পারবোনা তোকে বিয়ে করতে।
তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস।
-কেন পারবিনা?
কারণ বল আমায়।
-কারণ?কয়টা কারণ বলবো আমি তোকে?কারণ যে একটা না কারণ যে হাজার টা।
তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস প্লিজ।
ক্ষমা করে দিস।
আমি নিব্রাসকে রেখেই চলে আসি নিচে,
আর আসার সময় দেখি নীল সিড়িতে দাঁড়ানো।
ও সব কথা শোনে আমাদের।
আর আমি যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম,
তখন নীল আমাকে একটা কথাই বলে,
-আমি চাইনা তুমি ওর প্রস্তাবে রাজি হও।
আশা করি আমার সব ইচ্ছের মত এই ইচ্ছেটারও মূল্য তুমি দিবে।
চলবে..