জীবনের গল্প

জীবনের গল্প !! Part- 04

-ভুলে যাস না,
আমি তোর বড় বোন।
পাক্কা ১২ দিনের বড় আমি তোর হুম।
আপু বল এখনি।
-উঁহু বউউউ
-তবে রে,
আমি আর নিব্রাস মিলেই তিয়ারা আর নীলের বাসর ঘর সাজাই।
-ইশ এত সুন্দর বাসর ঘর এই প্রথম দেখছি।ভাইয়ের কি কপাল,এত সুন্দর ফুলের বিছানা পেলো।
আমাদের বিয়ের বাসর ঘর ভাই আর ভাবীকে দিয়ে সাজাবো,আমরা তাদের টা সাজালাম আর তারা আমাদের টা সাজাবেনা?
কি বলিস?
-মারবো কিন্তু নাক বরাবর?
-মার না মার,
তখন কিন্তু সবাই তোকেই বলবে,ইশ রে তিয়াসার বরটা কত্ত সুন্দর।কিন্তু ওই যে নাক টাই যে চ্যাপ্টা।
শেষমেস বেছে বুছে তিয়াসা চ্যাপ্টা নাকওয়ালা ছেলে কে বিয়ে করলো,
ছিঃ ছিঃ ছিঃ।
-উফ তোকে নিয়ে আর পারিনা।
বড্ড ফাজিল হয়েছিস তুই।
তোর ভাইয়ের আগে তোকেই বিয়ে করানো উচিৎ ছিলো।
-যেমন তোর আগে তিয়ারা করে নিলো,তেমনি ভাবে তাইতো?
নিব্রাসের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলাম।
ঘর সাজানো শেষ হলে নিব্রাস আর আমি রুম থেকে বেড়িয়ে যাই।
কিছু ক্ষণ পর তিয়ারা আর নীল আমাদের সাজানো রুমে প্রবেশ করে।
আমি ওই রুম থেকে সোজা ছাদে চলে আসি।
নিব্রাসও আমার পিছু পিছু চলে আসে।
-কিরে,এত রাতে ছাদে আসলি যে?

এমনিই।ভালো লাগছেনা।
-সারারাত গল্প করবি আমার সাথে?
-কথা টা শুনে বুকের ভেতর ধক করে উঠে।
-আজ সারারাত আমরা জেগে জেগে গল্প করি,কেমন?
-আমার ঘুম পাচ্ছে,তুই থাক আমি যাই।
আমি নিব্রাসকে রেখে চলে আসি আমার রুমে।
রুমে এসে দরজা আটকে বালিশে মুখ চেপে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকি।
এক এক করে চোখের সামনে নীল আর আমার সমস্ত স্মৃতি ডানা মেলে উড়তে থাকে।
বুকের ভেতর টা ভেঙেচুড়ে যাচ্ছে।
তবুও মনে একটাই সান্ত্বনা।
আমার বোন আর ভালবাসার মানুষ সুখী হয়েছে তো।
এটাই বা কম কি।
কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়ি তা খেয়াল করিনি।
সকাল বেলা হঠাৎ খেয়াল করি আমার শরীরে যেন কিসে আঘাত করছে।
চোখ খুলে দেখি জানালা দিয়ে নিব্রাস একটা স্কেল নিয়ে আমার গায়ে বারি দিচ্ছে আর বলছে,উঠিস না।উঠ।
সকাল হয়ে গেছে তো।
উঠ।আমি এ বাসায় তুই ছাড়া খুব বোরিং ফীল করি।
সকাল সকাল মেজাজ টাই গেলো বিগড়ে।
তবুও রাগ টাকে কন্ট্রোল করে নিব্রাসকে বললাম,
তুই যা আমি আসছি।
-না এখনই আয়।
-আরে আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
যাতো তুই।
আমি ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে ড্রইং রুমে যাই।
গিয়ে দেখি সবাই সেখানে।শুধু নীল আর তিয়ারাই নেই।
থাকবেই বা কিভাবে।
সারা রাত যে ঘুমায়নি ওরা।
কত গল্প করেছে।
ভালবাসার মানুষ কে পেয়েছে ওরা।সারা রাত জেগে এখন হয়তো ঘুমাচ্ছে।
-তিয়াসা।
-হুম।

-যা তো তাড়াতাড়ি নাস্তা নিয়ে আয়।
আমি নাস্তা করেই তোকে নিয়ে ঘুরতে বের হবো।
-আম্মু ওকে নাস্তা দাও তো।
নাস্তা কর।তবে আমি কোথাও যাবোনা।
-এমন করছিস কেন?যা না।
নিব্রাসের তো পরিচিত কেউই নেই এখানে।তুই সাথে করে নিয়ে যা ওকে।ঘুরে আয়।
আমি দুপুরের খাবার রান্না করে রাখছি।
এসে খাস।
কথা গুলো শুনে সেই পুরনো স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে।
কয়েক বছর আগে ঠিক এই ভাবেই নীলকে নিয়েও ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম।
-ধুর কি ভাবছি এসব,এখন এসব ভাবার সময় না আমার।নীল এখন আমার বোনের বর।ওর কথা ভাবাও অন্যায়।
আচ্ছা খেয়ে নে।
তারপর চল যাবোনে কোথায় যাবি।
-কোথায় যাওয়ার কথা হচ্ছে শুনি?
আমরাও কিন্তু যাবো হুম।(তিয়ারা)
-ওহ এসেছিস,বস।
-হ্যাঁ হ্যাঁ আমরাও যাবো তোমাদের সাথে।
কোথায় যাবে শুনি?

-আরে ভাই,এখানেই ঘুরতে যাবো তিয়াসাকে নিয়ে।তুমি আবার যাবে কেন আমাদের সাথে?
তুমি বরং তিয়ারাকে নিয়ে থুক্কু ভাবীকে নিয়ে বাসায়ই থাকো।
-না না দেবরজি আমরাও যাবো।
-উফফ,আচ্ছা বাবা ঠিকাছে।চার জনই যাবো আমরা।হয়েছে?
এবার নাস্তা করে নে সবাই।
আমরা সবাই নাস্তা করে নিলাম।নাস্তা করা হয়ে গেলে দুটো রিক্সা ডেকে উঠে বসলাম রিক্সায়।
আমিও কি বোকা,
ভুল করে বলে ফেলেছিলাম,তিয়ারা আয় এক সাথে বসি তুই আর আমি।
অথচ মনেই নেই তিয়ারার পাশে যে এখন আমার না,নীলের জায়গা।
তিয়ারা আমার ডাক শুনে মুখটা কালো করে ফেল্লো।
-ওহ আমার তো মনেই নেই,
ধুর।
যা যা নীলাদ্রীসের পাশে বস।
-আর তুই আমার পাশে আয় সুন্দরি।
-কিহ?
-আরে সুন্দরি বলেছি,পেত্নী বলিনি যে এমন রিয়েক্ট করছিস।
-তুই যা হয়েছিস না।
আমি আর নিব্রাস,এক রিক্সায় উঠলাম।
রিক্সা চলছে,
উদ্দেশ্য, আমরা নদীর পাড়ে যাবো।
ওখানে অনেক কাশফুল গাছ রয়েছে।
অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা।
হঠাৎ চলন্ত রিক্সায় নিব্রাস আমার চুলের কাটা টা খুলে ফেলে।
-ওই এটা কি করলি?
-তোর এই সুন্দর চুল কাটায় আটকে থাকার জন্য না।
উড়ে চলার জন্য।উড়তে দে।
-উফফ তুই না।
এখন দেখিস আমার চুল বার বার তোর মুখে গিয়ে উড়ে উড়ে চোখের ভেতর ঢুকবে।
তখন বুঝবি মজা।
-উঁহু,আমি চোখ বন্ধ করে তোর ওই ঢেউ ঢেউ চুলের ঘ্রাণ নিবো।
-আর তুই চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই আমি এক ধাক্কা দিয়ে রিক্সা থেকে তোকে ফেলে দিবো।
উফ সে কি দৃশ্য।
-ওকে দেখা যাক,কে কি করে।
সত্যিই কিছু ক্ষণ পর প্রচন্ড বাতাসে আমার চুল গুলো নিব্রাসের মুখে গিয়ে ঢেউ এর মত আছড়ে পড়ছে।
আর নিব্রাস চোখ বন্ধ করে আছে।
আমি ওর মুখের দিকে এই মাত্রই ভালো করে তাকালাম।
সিল্কি চুল,ফর্সা তার গায়ের রঙ।
ঠোঁট দুটো নজর কাড়া।ভ্রু গুলোর কথা আর কি বলবো।
এমন ছেলে আমাদের এলাকায় আমি আর একটাও দেখিনি।
হঠাৎ করে নিব্রাস মুচকি হেসে উঠলো।
ওর এই চাপা হাসিটাও মারাত্মক।
-কিরে এই ভাবে হাসছিস যে?
-অপেক্ষা করছিলাম তোর ধাক্কা খাওয়ার।
ভাবলাম এই বুঝি ফেলে দিবি,এই বুঝি ফেলে দিবি।কিন্তু কত ক্ষণ হয়ে গেলো ফেললি না।
তাই ভাবলাম,মায়ায় পড়ে গেছিস বোধয় আমার।
-চোখ খোল এবার।
আর রিক্সা থেকে নাম।নদীর পাড়ে এসে গেছি আমরা।
-আমি চোখ বন্ধ করে থাকি,তুই আমার হাত ধরে নামা।
-তুই রিক্সায়ই থাক,আমি চললাম।
ওই দিকে নিব্রাস তিয়ারার হাত ধরে রিক্সা থেকে নামাচ্ছে।
দৃশ্যটা আসলেই সুন্দর।
আর তার থেকেও সুন্দর এই দৃশ্যটা,
যেই দৃশ্যটা আমি রিক্সা থেকে নামার সময় নিব্রাস চোখ বন্ধ করে আমার ওরনার পেছনের পার্ট ধরে ক্রিয়েট করলো।
নাহ এই বাদুড় টাকে নিয়ে আর পারিনা।
-ও সুন্দরি,দাঁড়া দাঁড়া।
করিস না এত তাড়া।
পাবি না যে ছাড়া।
আর হঠাৎ ই চোখ গেলো আমার নীলের দিকে।
নীলের মুখ টা হঠাৎ এমন কালো হয়ে গেলো কেন?
-ওই কি হলো?
-উঁহু কিছুনা।নাম।
আমরা চারজনই নদীর ধারে গেলাম।
জায়গাটা অনেক সুন্দর।
অনেক মানুষই এখানে ঘুরতে আসে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্ধি এই জায়গা প্রায় মানুষে ভরাই থাকে।বিকেলের পর থেকে মানুষ বেশি আসে।
সকালে কমই থাকে মানুষ।
কেউ কেউ এসেই নদীর কিনারায় গিয়ে পা ভেজায়।
খুব ভালো লাগে।
এর আগেও আমি নীলের সাথে এই জায়গাটায় এসেছিলাম।
আমরা পাড় দিয়ে হাঁটছি।
তিয়ারা খুব বায়না করছে নদীর পানিতে পা ভেজাতে।
কিন্তু নীল তা করতে দিচ্ছেনা।
বার বার বলছে,পড়ে গেলে কি হবে ভেবে দেখেছো?
আমিও না করলাম তিয়ারাকে।
তিয়ারা আর নীল দুজন সেল্ফি নিচ্ছে।
আশেপাশে অনেকেই বলে যাচ্ছে ওদের দেখে,
ইশ কি সুন্দর মেয়েটা।আর কি সুরত তার বরের।
একটুও মানায়নি দুজনকে।মেয়েটার বর আরেকটু সুন্দর দরকার ছিলো।
নীল লম্বা,শ্যাম বর্ণের।দেখতে খুব সুন্দরও বলা যায়না,আবার একদম অসুন্দরও বলা যায়না।
মোটামুটি ভালো।তবে ওর চেহারায় একটা মায়া আছে।এই মায়ায়ই তো পড়েছিলাম আমি একদিন।
তিয়ারা ওর থেকে বেশি সুন্দর বলে আজ ওর এই কথা শুনতে হচ্ছে।
আর আমি যত টুকু বুঝেছি নীল তিয়ারার সৌন্দর্যের জন্যই পাগল হয়ে ওকে বিয়ে করেছে।
আশেপাশের দু এক জনের কটু কথা গুলো নীলের মুখ টা ফ্যাকাশে করে দিচ্ছে।
সাথে তিয়ারার মুখও হয়ে যাচ্ছে অন্ধকারাচ্ছন্ন।
আমি শুনেও কিছু না শোনার ভান করে
নিব্রাসের কত গুলো ছবি তুলে দিতে লাগলাম।
নিব্রাস ছবি তোলার জন্য পানির কাছে যেতে যেতে এতই কাছে যায় যে হঠাৎ ওর পা স্লিপ করে ও নদীতে পড়ে যায়।
আমি একটা চিৎকার দিয়ে উঠি,
পেছনে তাকিয়ে দেখি নীল আর তিয়ারাও নেই।
আর এই দিকে আমার চিৎকারে দু এক জন লোক কাছে এগিয়ে আসতে লাগলেও কেউ নিব্রাসকে তুলতে পানিতে নামছেনা।
কারণ কেউ তো জানেনা,নিব্রাস যে সাঁতার জানেনা। আবার হয়তো কেউ নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে চাইছেনা।
আর এই দিকে আমি যে কোন দিন পুকুরেও নামি নি।
সাঁতার জানাতো দূরের কথা।
ওই দিকে নিব্রাস ডুবে যাচ্ছে একটা হাত উঁচু করে জাস্ট আমাকে ইশারা দিচ্ছে,
বলতে চাইছে,
-তিয়াসা আমাকে বাঁচা প্লিজ।আমাকে বাঁচা…
চলবে…