1. নতুন গল্পঃ2. ছোট গল্প গুলোঃলেখাঃ আবির খান

জান্নাত !! লেখাঃ আবির খান !! পর্বঃ 01

জান্নাত !!

আবিদা আজ রুম ডেটে যাবে ওর বয়ফ্রেন্ড এর সাথে। ও ওর বয়ফ্রেন্ড রাসেলের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ও নিজেও জানে না ওকে আজ রুম ডেটে নিয়ে যাবে ওর বিএফ। আবিদা আর রাসেল বাইকে করে পার্কে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রাসেল আবিদাকে নিয়ে ওর বাসায় এসেছে। কারণ রাসেলের বাসা আজ সম্পূর্ণ খালি। রাসেলের পরিবার গ্রামে একটা জরুরি কাজে যাওয়ায় ওর বাসা পুরো খালি। সেই সুযোগেই ওদের ১.৫ বছরের সম্পর্ককে আজ রাসেল অন্তিম রেখা পার করবে। যেটা করার জন্য ও রীতিমতো পাগল হয়ে আছে। আজ ও আবিদাকে সম্পূর্ণ ভোগ করবে। কোন বিরামচিহ্ন থাকবে না এই ভোগে। এতোদিনের মনের খায়েশ আজ পূরণ করবে রাসেল রুম ডেটে।

আবিদা অনেকটা অবাক হয়ে বাইক থেকে নামে। আর বলে,

~ রাসেল আমরা এখানে কেন? এটা তো তোমার বাসা। আমরা না পার্কে যাবো? তাহলে এখানে!

রাসেল হেলমেটটা খুলে বাইকের উপর রেখে আবিদার কাছে এসে হাসতে হাসতে বলে,

– আমার বাসা আজ খালি। কেউ নেই। ৪৮ ঘন্টায়ও কেউ আসবে না। আজ তোমাকে অনেক মজা দিব। চলো।

আবিদা দু’পা পিছিয়ে যায়। আর ভয়াতুর কণ্ঠে বলে,

~ মানে! ছিঃছিঃ রাসেল কি বলছ! বিয়ের আগে এসব বাজে কাজ? অসম্ভব! আমি ওরকম মেয়ে না।

– তোমার মতো মর্ডান মেয়ের মুখে এসব কথা মানায় না। আর রাখো তোমার বিয়ে শাদি৷ আসো তো আর সইছে না৷

~ অসম্ভব। প্লিজ বাবু আমাকে বাসায় দিয়ে আসো। তোমার দুটো পা ধরি। এই সর্বনাশ পাপ কাজ আমি করবো না। প্লিজ আমাকে যেতে দেও। প্লিজ..

(বিঃ দ্রঃ “ মিঃ নিরামিষ !! লেখাঃ আফনান লারা ” গল্পের সবগুলো পর্ব একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন)

– ওই **** *** *** (আবিদা কেঁদে দেয় রাসেলের মুখে বিশ্রী গালি শুনে) প্রেম করস, হাত ধরস, ঘুরতে যাস, রেস্টুরেন্টে কফি খাস আর এখন করতে চাইলেই দোষ? চল আমার সাথে। আজ তোকে তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভোগ করবো। সেতো আরেক মজা।

রাসেলকে এখন একটা পশুর চেয়েও খারাপ লাগছে। বিবেকহীন কুলাঙ্গার ছেলে লাগছে রাসেলকে। আবিদা খুব কান্না করছে। অস্থির হয়ে উঠছে৷ ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ। রাসেল এবার আবিদার সাথে জোরাজোরি শুরু করে। ওর চোখে মুখে কামুকতার উত্তেজনা স্পষ্ট। আবিদার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে রাসেল। আবিদার এই গলির ভিতর আর কাউকে দেখছে না। কাউকে যে একটু সাহায্যের জন্য বলবে তাও পারছে না। সবই ওর পাপের ফল। আজ ও প্রেম ভালবাসা না করলে নিজের বয়ফ্রেন্ড এর কাছেই হয়তো ধর্ষিত হতে হতো না। আবিদাকে প্রায় রাসেল বিল্ডিং এর ভিতর ঢুকিয়ে ফেলেছে। আবিদার চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে। সব আশা ভরসা শেষ। কারণ আবিদা বুঝে গেছে এই রাসেল কখনো ওর হবে না। এতোদিন শুধু ওকে ভোগ করার জন্য ওর সাথে প্রেমের অভিনয় করেছে। আবিদা হারিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই ও দেখে একজন টুপি আর পাঞ্জাবি পরা লোক হেঁটে যাচ্ছে। ও চিৎকার করে বলে,

~ ভাইয়া আমাকে একটু বাঁচান। আমার সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। ভাইয়া আমাকে বাঁচান প্লিজ। ভাইইই…

লোকটা দাঁড়িয়ে যায়। রাসেল আবিদার মুখ চেপে ধরে। ওদের দিকে তাকায়। আবিদা অঝোরে কাঁদছে। লোকটা বলিষ্ঠ এবং বেশ শক্তিশালীও দেখতে। সে রাসেলের দিকে তাকালো। রাসেল চোখ গরম করে বলল,

– এখান থেকে চুপচাপ চলে যা। এটা আমার এলাকা। একদম শেষ করে দিব।

লোকটা সামনে তাকিয়ে মাথা নিচু করে চলে যায়। আবিদার শেষ ভরসাটুকুও শেষ। ও খুব কাঁদছে। রাসেল ওকে ধরে টেনে তিন তলায় ওর রুমের ভিতরে ঢুকায়। ঢুকিয়ে সোজা ওর রুমে নিয়ে আসে। বিছানায় ঠাস করে ফেলে দেয়। রাসেল ওর নিজের জামা খুলতে শুরু করে। আবিদা বিছানায় পড়েই আবার উঠে দৌঁড়ে এক কোণায় গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে জোরে বলে উঠে,

~ রাসেল আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে যেতে দেও। আমার পিরিয়ড চলছে। আমি শেষ হয়ে যাবো।

ওর কোন কথা রাসেলের কানে যাচ্ছে না। রাসেল পাগল হয়ে আছে একটা মেয়েকে ভোগ করার জন্য। পশু, পশুর চেয়েও হিংস্র হয়ে গিয়েছে এখন রাসেল। ওর মাথায় শুধু এখন আবিদাকে ভোগ করা। আবিদা আবার বলে,

~ রাসেল আমার পিরিয়ড। দোহাই লাগে আমাকে যেতে দেও। আমি মারা যাবো।

– চুপ *****। আজ তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। কেউ না।

ইতোমধ্যেই ঠাস করে পিছন থেকে ৫ জন পুলিশ এসে রাসেলকে ধরে কষিয়ে কয়েকটা মাইর দেয়। তারপর আবিদাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

– ভয় পাবেন না। আপনি সেইফ।

এরমধ্যে তাদের পিছন থেকে সেই টুপি আর পাঞ্জাবি পরা লোকটা সামনে আসে। পুলিশ তাকে দেখে বলে,

– ধন্যবাদ আপনাকে। এই ****টাকে হাতেনাতে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।

– সব মহান আল্লাহর ইচ্ছা। ওনার ক্ষতি হতে যাচ্ছিলো আল্লাহ তায়ালা আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছেন। শুকরিয়া তার কাছে।

– জ্বি। আপনি আমাদের সাথে আসুন। রিপোর্ট করতে হবে। (আবিদাকে উদ্দেশ্য করে)

পুলিশগুলো রাসেলকে নিয়ে চলে যায়। আবিদা আর সেই লোকটা আছে। লোকটা যেতে নিলে আবিদা তাকে আস্তে করে ক্লান্ত মাখা কণ্ঠে ডাক দেয়।

~ এই যে শুনুন।

লোকটা অন্যদিকে ফিরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে যায়। মানে সে আবিদাকে দেখতে চায় না। আবিদা ব্যাপারটা বুঝতে পারে। ওর কাছে খারাপ লাগে। ও বলে উঠে,

~ জানি আপনি আমাকে খারাপ মেয়ে ভাবছেন। কিন্তু আমি আসলে খারাপ মেয়ে না। আমাকে খারাপ ভাববেন না প্লিজ। আপনি আমার দিকে তাকাতে পারেন।

লোকটা আস্তে করে অন্যদিকে ফিরেই বলল,

– দুঃখিত, আপনি ভুল ভাবছেন। আমি আসলে কোন মেয়েদের দিকে তাকাই না।

আবিদা বেশ অবাক হয়ে যায়। ও আবার বলে,

~ আচ্ছা আপনি তো নিজেই আমাকে বাঁচাতে পারতেন। তা করলেন না কেন?

– কাউকে মারার অধিকার আমার নেই। তার জন্য যে শাস্তি উপযুক্ত তাই করেছি। তাকে মেরে হয়তো আমি আপনাকে বাঁচাতে পারতাম। কিন্তু এতে করে পরে আপনার ক্ষতি হতো। তাই তাকে তার উপযুক্ত শাস্তিটাই দিয়েছি।

~ বাহ! আপনি খুব ভালো একজন মানুষ। আজ আপনি না থাকলে হয়তো আমার বাঁচাই হতো না। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

– আমি কিছুই না। সব আমার আল্লাহর ইচ্ছা। আপনি বরং তার কাছে শুকরিয়া আদায় করুন।

~ জ্বি।

– আপনার বোধহয় দেরী হচ্ছে। নিচে তারা অপেক্ষা করছে।

~ জ্বি জ্বি।

– অার একটা কথা মনে রাখবেন। আল্লাহ যে জিনিসে মানা করেছে সেটা করা মানেই তাতে আপনি বিপদে পড়বেনই। তাই এসব কাজ থেকে দূরে থাকবেন। চলুন।

লোকটা আবার হাঁটা ধরে বাইরে চলে আসে। সাথে আবিদাও। ও শুধু মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে লোকটার সাথে কথা বলে। একদিকে রাসেলকে দেখলে ছেলেদের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায়। আর অন্যদিকে এই লোকটাকে দেখলে ছেলেদের প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধা হাজার গুন বেড়ে যায়। আবিদা আর কিছু না বলে পুলিশের সাথে চলে যায়। লোকটা একবারও ওর দিকে তাকায় নি। ভুল করেও না। লোকটা দাঁড়িয়ে থাকে। আবিদা চলে যায়। আবিদা লোকটার দিকে তাকিয়ে ছিল। এরকম নূরানী চেহারা ও আগে কখনো দেখেনি। ফর্সা মুখে ঘন কালো দাঁড়ি। খুব শান্ত একটা মুখ।

সন্ধ্যায় আবিদা বাসায় ফিরে আসে। কারো সাথে কোন কথা বলে না। ওর মুড একদম খারাপ। রাতে না খেয়েই চুপচাপ শুয়ে পড়ে। কিন্তু ঘুমতো আসে না। খুব কান্না আসে ওর। নিজেকে আটকে রাখতে পারে না। কান্নায় ভেঙে পড়ে। ও এরকম একটা পশুকে এতোদিন ভালবেসে এসেছে তা ও জানতোই না। কান্না করতে করতে ওর সেই লোকটার কথা মনে পড়ে। লোকটার কথা মনে পড়তেই ওর কেন জানি নিজের উপর ঘৃনা কাজ করে। আদিবা নিজেকে আয়নায় গিয়ে দেখে। মর্ডান মেয়ে বলে যাকে সেই রকমই ওকে লাগছে। চুলে কালার করা, নখে নেলপলিশ, চোখে লেন্স, টাইট জামা আরো কতো কি। এই মর্ডান হওয়াই আজ ওকে শেষ করে দিচ্ছিলো। কিন্তু সেই ভদ্রলোক আজ না আসলে হয়তো ওকে আর খুঁজেও পাওয়া যেত না। হয়তো কাল সকালে কোন নর্দমায় ওর লাশ পড়ে থাকতো।

আবিদার নামাজ, রোজা কোন কিছুর সাথেই ওর সম্পর্ক নেই। বাবা-মা তাদের চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ুয়া আবিদা এতোটা বছর মর্ডান হয়েই কাটিয়েছে। ইসলামিক নিয়মকানুন সম্পর্কে ওর কোন ধারণাই নেই। কিন্তু কেন জানি এখন ওর শুধু ঘৃনাই হচ্ছে নিজের উপর। অবাধ মিলামিশা, ঘুরাঘুরি, আড্ডাবাজি এসব ওর জীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওর আর কিছুই ভালো লাগছে না। মরে যেতে ইচ্ছা করছে। রাসেলের মতো একটা ছেলেকে ও কীভাবে ভালবাসলো! আবিদা কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু ওর মনের মধ্যে সেই লোকটাকে আর একবার দেখা করার জন্য ইচ্ছা হয়। অনিশ্চিত এই ইচ্ছা নিয়েই আবিদা ঘুমিয়ে পড়ে।

এরপর কয়েকদিন চলে যায়। আবিদা নিজেকে রুমের ভিতর বন্দী করে ফেলে। ওর বাবা-মা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ওকে প্রেসার দিয়ে সবটা জানে। ওর বাবা সিদ্ধান্ত নেয় ওকে খুব দ্রুত বিয়ে দিয়ে দিবে। তার এক বন্ধুর ছেলের সাথে আবিদার বিয়ে দিতে চাচ্ছে। আবিদা ওর বাবাকে বলে কিছুটা সময় নেয়। কারণ ও সেই লোকটার সাথে একটু দেখা করতে চায়। লোকটার প্রতি কেন জানি ও আকর্ষিত হচ্ছে। ওর মনে শান্তি পাচ্ছে না। আবিদা এতোদিন বাসা থেকে বের হয়নি। আজ বের হয়েছে ভার্সিটি যাবে বলে। ও গেইট থেকে বের হলেই পাশের বাসার গেইট থেকে সেই লোকটা বের হয়। আবিদা পুরো অবাক। ও দৌঁড়ে সেই লোকের কাছে যায় অার বলে,

~ আপনি এখানে?

আবিদা গেইট থেকে বের হলেই পাশের বাসার গেইট থেকে সেই লোকটা বের হয়। আবিদা তাকে দেখে পুরো অবাক! ও দৌঁড়ে সেই লোকটার কাছে যায়। খুব দামী কাপড়ের লম্বা সাদা পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরা। মাথায় একটা সাদা টুপি। আর আতরের তীব্র ঘ্রাণ আসছে তার কাছ থেকে। আবিদা আশ্চর্য হয়ে দ্রুত বলে,

~ আপনি এখানে!

লোকটা থমকে যায়। আজও সে অন্যদিকে ফিরে তাকিয়ে আছে। আবিদার দিকে তাকায় নি। সে আস্তে করে বলে,

– দুঃখিত আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।

~ পারবেনও বা কীভাবে, আমার দিকে একবার তাকালে না চিনবেন। আচ্ছা যাই হোক আমিই বলছি। আমি সেই মেয়েটা যাকে আপনি একটা খারাপ ছেলের হাত থেকে বাচিঁয়েছিলেন। পুলিশে দিয়েছিলেন। মনে পড়েছে?

– জ্বি পড়েছে। আপনি এখন ভালো আছেনতো?
~ জ্বি আছি। আমি এখন খুব খুশী জানেন?
– না কেন?
~ আসলে আপনাকেই খুঁজছিলাম। এভাবে দেখা হবে ভাবিনি। আপনি কী এই বাড়িতে থাকেন?
– আজ সকালে এসেছি।
~ বাহ! এটা আমাদের বাড়ি। আপনার আর আমার বাসা একদম পাশাপাশি।
– ওহ! আচ্ছা ভালো থাকবেন আমি আসি একটু কাজ আছে৷
~ আরে দাঁড়ান দাঁড়ান, আপনার নামটাই তো জানা হলো না। আপনার নাম কী?
– জ্বি সাদমান আহমেদ।
~ বাহ! খুব সুন্দর নাম। আমি আবিদা চৌধুরী।
– আচ্ছা। তাহলে আসি আমি ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
~ অলাইকুম আসসাল….

সাদমান চলে যায়। রীতিমতো ভাগে আরকি। আবিদা ঠিক বুঝতে পারছে সাদমান ওর সাথে কথা বলতে কম্ফোর্ট বোধ করে না। আবিদা সাদমানের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। নূরানী চেহারার এই লোকটাকে দেখলে আবিদা কেন জানি সব ভুলে যায়। এরকম পরহেজগার লোকের সংস্পর্শে আবিদা কখনো আসে নি। আতরের তীব্র ঘ্রাণটা এখনো ওর নাকে লেগে আছে। এ যেন মন ভোলানো ঘ্রাণ। আবিদা এরপর ভার্সিটিতে চলে আসে।

ভার্সিটিতে,

আবিদার বেস্ট ফ্রেন্ড মহিমা আবিদাকে দেখে দ্রুত ওর কাছে ছুটে আসে আর অস্থির হয়ে বলে,

~ দোস্ত তুই কই ছিল? ফেইসবুক, ফোন সব অফ! আর শুনলাম রাসেল নাকি থানায়। তুই ভালো আছিস তো?

~ ক্যানটিনে চল। বসে সব বলছি।

~ আচ্ছা চল চল।

এরপর আবিদা মহিমাকে সব খুলে বলে। মহিমা সব শুনে রাগী ভাবে বলে,

~ বেশ হয়েছে। বাস্টার্ডটাকে বেস্ট পানিশমেন্ট দিয়েছিস।

~ আমিতো দেইনি। উনি দিয়েছে রে৷
~ খুব ভালো করেছে। ইসসস উনি অনেক ভালো রে। অনেক বুদ্ধিমান সে।
~ শুধু বুদ্ধিমান না রে আল্লাহ যেন তার আপন বন্ধু। খুব পরহেজগার সে৷ আমি মুগ্ধ তাকে দেখে। সে যেন একজন সত্যিকারের পুরুষ।
~ ইসসস এরপর একজন যদি জীবন সঙ্গী হতোরে জীবনটা ভালো হয়ে যেত তাইনা দোস্ত?
~ জানি নারে। রাসেলের মতো ছেলেও এই দুনিয়াতে আছে আবার উনার মতো মহৎ মানুষও আছে। সত্যিই উনি ওইদিন না থাকলে আমি শেষ হয়ে যেতাম।
~ বাদ দে ওই বাস্টার্ডটার কথা। চল ক্লাস করবি। কতদিন হলো ক্লাস করিয়স না। চল।
~ হুম চল। ভালো লাগে না আর এই জীবনটা কোথাও যেন কোন শান্তি পাচ্ছিনা বুঝলি। বাবা আমার বিয়ে দিয়ে দিবে হয়তো খুব তাড়াতাড়ি।
~ সেতো আরো ভালো। হাসবেন্ডকে নিয়ে ঘুরাঘুরি মজা করবি।
~ ভালো লাগে না দোস্ত। জীবনের যেন কোন মানে খুঁজে পাচ্ছি না। খুব খারাপ মনে হয় নিজেকে।
~ আহ! বাদ দে তো সব। চিল কর৷ আড্ডা মাস্তি কর ভালো লাগবে। আজ রোহানের জন্মদিন উপলক্ষে পার্টি আছে। আমাদের সবাইকে ইনভাইট করেছে। তোকেও যেতে বলেছে। তুই আর আমি যাচ্ছি ওকে?
~ ভালো লাগে না দোস্ত।
~ না তোকে যেতেই হবে। নাহলে আমি যাবো না।
~ আচ্ছা যা যাবো নে৷
~ থ্যাঙ্কিউ। চল ক্লাসে যাই।
~ হুম।

এরপর আবিদা ক্লাসে চলে যায়। কিন্তু ক্লাসের লেকচার যেন ওর মাথায় ঢুকে না। সাদমানের কথাই কেন জানি ওর মাথায় ঘুরছে। তার ভিতর মহিমার একটা কথা ওকে কেমন জানি অবচেতন করে দিচ্ছে। মহিমা বলেছিল, সাদমানের মতো কেউ যদি জীবন সঙ্গী হতো। কথাটা আবিদাকে খুব ভাবাচ্ছে। সত্যিইই সাদমান এমন একজন পুরুষ যাকে দেখলে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য। কিন্তু পরক্ষণেই আবিদার অপরূপ মায়াবী মুখখানায় অন্ধকার নেমে আসে। কারণ ও ভাবে সাদমান কখনো ওকে তার জীবন সঙ্গী করবে না। সাদমানের চোখে ও খুব খারাপ একটা মেয়ে। আবিদা এসব ভেবে ভেবে অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে। মহিমার ধাক্কায় ওর হুশ হয়।

~ কিরে উঠ ক্লাস শেষ তো। এভাবে অন্যমনস্ক হয়ে আছিস কেন?

~ না কিছু না চল।

এরপর আবিদা বাসায় চলে আসে। খেয়ে দেয়ে রেস্ট নিয়ে মহিমার জোরাজোরিতে রোহানের বার্থে পার্টিতে যায়। পার্টি শেষে আবিদা আগেই বেড়িয়ে আসে। ও গাড়িতে উঠতে যাবে ওমনি দেখে সাদমানকে। আবিদা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই স্তব্ধতা মুগ্ধতার। আবিদা দেখে সাদমান একটা বয়স্ক লোককে ধরে রাস্তা পার করে দিচ্ছে। এরপর আবিদা আরো আশ্চর্য হলো। কারণ সাদমান লোকটার হাতে ভালোই টাকা দিল। লোকটা নিতে চায় নি তাও দিল। বৃদ্ধ লোকটা সাদমানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে খুব খুশী হয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে চলে গেল। আবিদার বুঝতে বাকি নেই বৃদ্ধ লোকটা অসহায় গরীব একজন মানুষ। আবিদার চোখে সাদমানের জন্য সম্মান শ্রদ্ধা আর অনেক ভালো লাগা বেড়ে গেল। আবিদা আড়ালে সরে দাঁড়ায়। সাদমান একটা রিকশা নিয়ে চলে যায়। আবিদাও একটা হাসি দিয়ে গাড়িতে করে চলে আসে। বাসায় আসার পুরোটা সময় আবিদা শুধু সাদমানের কথাই ভাবছিল। ভাবতে ভাবতে অতল বিষন্নতায় হারিয়ে যাচ্ছিল। আবিদার মন চায় ওর এই সময় যদি সাদমানের মতো বা ঠিক সাদমানই যদি ওর হাতটা ধরতো সারা জীবনের জন্য। আবিদা শুধু ভাবছে আর ভাবছে। এভাবে সেদিন বাসায় পৌঁছে ওর রাতটাও সাদমানের কথা ভেবেই কেটে যায়।

পরদিন খুব ভোরে,

হঠাৎই আবিদার ঘুম ভেঙে যায়। চোখে মেলে তাকিয়ে দেখে অন্ধকার। তবে দিনের আলো বের হবে হবে বলে। আবিদার যে ঘুম ভাঙলো ও তার উৎস খুঁজতে লাগলো। অসম্ভব সুন্দর মন মুগ্ধকর সুরেলা কণ্ঠে কেউ কুরআন তিলোয়াত করছে। তার সুরের জোরেই আবিদার ঘুম ভাঙলো। আবিদা এই মধুর তিলোয়াত কে করছে খুঁজে দেখে ওর পাশের বাসার ঠিক ওর জানালার সামনে সাদমান তার রুমে বসে কুরআন শরীফ তিলোয়াত করছে। আবিদা পর্দা সরিয়ে জানালা একটু ফাঁকা করে সাদমানকে কুরআন পড়তে দেখছে আর শুনছে। সাদমানের প্রতি টানে যেন আবিদার বুক ফাটিয়ে দিচ্ছে। আবিদার চোখ দিয়ে কেন জানি টপটপ টপটপ করে অশ্রু ঝরছে। আবিদা কাঁদছে আর সাদমানের কুরআন তিলোয়াত শুনছে। এতো মধুর তিলোয়াত যে আবিদার মন প্রাণ সব শান্ত হয়ে গিয়েছে। এভাবে প্রায় ৫/৬ দিন চলে যায়। আবিদা খুব ভোরে উঠে জানালার পাশে বসে সাদমানের কুরআন তিলোয়াত শুনে। ও যেন এই মধুর সুরের মায়ায় পড়ে গিয়েছে। সাদমানের এই মধুর তিলোয়াত না শুনলে আবিদার ভালো লাগে না। সব কিছু কেমন জানি লাগে। এভাবেই আবিদার দিন যাচ্ছিলো আর ও সাদমানের প্রতি ক্রমশ দুর্বল হচ্ছিলো। ভালো লাগা ভালবাসায় আর অনেক সম্মানে পরিণত হচ্ছিলো।

কিন্তু হঠাৎ একদিন,

– আবিদা অনেক দিন হয়েছে আর না। কাল আমার বন্ধুর ছেলে তোকে দেখতে আসবে। তুই রেডি থাকিস।

আবিদা মুহূর্তেই যেন আকাশ থেকে পড়ে। তাহলে সাদমান! ওতো সাদমানকে ছাড়া থাকতে পারবে না। অসম্ভব! আবিদা ওর বাবার কাছে গিয়ে অসহায় ভাবে বলে,

~ বাবা আমি তোমাকে অনেক সম্মান করি এবং ভালবাসি। কিন্তু আমি তোমার বন্ধুর ছেলেকে বিয়ে করতে পারবোনা।

– কিহহ! কেন? (রাগী কণ্ঠে)

~ কারণ আমি একজনকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি। এবার আমি কোন খারাপ ছেলেকে ভালবাসিনি। বাবা আমি তাকে ছাড়া বাঁচবো না। আমার তাকে চাই ই চাই। সারা জীবন এর জন্য।

– আবিদা, আমার মান সম্মান সব তোর উপর। তুই কি বলছিস! আমি আমার বন্ধুকে কথা দিয়েছি। আর তুই এরমধ্যে কাকে ভালবেসেছিস? (অনেক রেগে গিয়ে)

~ আহ! শান্ত হও আবিদার বাবা।

~ বাবা তুমি যদি তাকে একবার দেখো তুমি চোখ সরাতে পারবে না। মা সে এত্তো পরহেজগার, সে যেন আল্লাহর খুব কাছের। আমি তার সাথে আমার জীবনটা জড়াতে চাই। তার আলোতে আমার অন্ধকার জীবনকে আলোকিত করতে চাই। আমাকে একটা সুযোগ দেও। একবার তার সাথে আমার কথা বলো। আমি তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা। কখনো না৷

– এটা কি তোর শেষ কথা আবিদা?

~ হ্যাঁ।

– তাহলে জোর করেও হলেও আমি আমার বন্ধুর ছেলের সাথে তোর বিয়ে দিব।

~ তাহলে আমিও আমার জীবন দিয়ে দিব। হয় উনি নাহয় কেউ না।

– আবিদা….(চিৎকার করে)

~ আহ! তোমরা শান্ত হও৷ কি বলছিস আবিদা এসব! আচ্ছা যা তোর পছন্দের ছেলের সাথেই তোর বিয়ে হবে।

– আবিদার মা…!

~ দেখো মেয়ে যেখানে খুশী থাকবে সেখানেই ওর বিয়ে দিতে হবে। ওর মতের বাইরে বিয়ে দিলে ও কখনো শান্তি পাবে না।

– আমার কোন মূল্যই নেই তোমাদের কাছে।

~ বাবা আছে। কোটি কোটি বার আছে। বাবা প্লিজ একবার দেখা করো।

– আচ্ছা বল কে?

~ আমাদের পাশের বিল্ডিং এ মানে হাবিব আঙ্কেলের বাড়িতে একজন হুজুরটাইপ ছেলেকে দেখেছো? সবসময় পাঞ্জাবি টুপি পরে থাকে?

– হ্যাঁ সেতো বেশ এলেমদার। খুব ভালো একটা ছেলে। সেদিন আমাকে সালাম দিয়েছে। ওর চেহারায় নূরানী একটা ভাব আছে। খুব শান্তি পেয়েছি ওর সাথে একটু কথা বলে। তাহলে ওই এলেমদার ছেলেকে তুই পছন্দ করিস?

~ হ্যাঁ বাবা৷

– তাহলে আর চিন্তা করিস না। ওর সাথেই তোর বিয়ে হবে। আজ রাতে আমি আর তোর মা ওর বাসায় যাবো। দেখি ওর বাবা মা কি বলে। আশা করি না করবে না৷

~ থ্যাঙ্কিউ থ্যাঙ্কিউ থ্যাঙ্কিউ থ্যাঙ্কিউ সো মাচ বাবা। (অনেক খুশী হয়ে)

– হয়েছে যা।

~ তোমরা বাবা মেয়েরা পারও। (মা)

রাতে,

আবিদা অধীর আগ্রহে বসে আছে সোফাতে। সেই ৮ টায় গিয়েছে ওর বাবা-মা এখন ১০ টা বাজে। কিন্তু এখনো আসে নি তারা৷ আবিদা অস্থির হয়ে আছে। কেমন এক আশ্চর্য উত্তেজনা কাজ করছে। আবিদা এদিক ওদিক হাঁটাহাঁটি করছে। হঠাৎই কলিং বেল বেজে ওঠে। আবিদা দৌঁড়ে দরজা খুলে। আবিদা দেখে ওর বাবা-মার মুখে কোন হাসি নেই। একদম ফ্যাকাসে হয়ে আছে। আবিদার হৃদস্পন্দন ক্রমশ বেড়েই চলছে অজানা এক ভয়ে। ওর বাবা-মা সোফায় এসে দুম করে বসে পড়ে৷ আবিদা দরজা দিয়ে দ্রুত তাদের সামনে এসে কিছু বলবে তার আগেই ওর বাবা বলে উঠে,

– দেখ মা তুই সাদমানকে ভুলে যা। কাল আমার বন্ধুর ছেলের সাথে তোর বিয়ে ফাইনাল করে আসবো।

আবিদা স্তব্ধ হয়ে যায়। ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। তাও নিজেকে সামলে বলে,

~ কেন কি হয়েছে? সে না করে দিয়েছে?
– না করার আর কিছু নেই। তুই নিজেই সাদমানকে বিয়ে করতে চাবিনা৷
~ মানে! কি বলছো বাবা? আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
~ মা আবিদা, তুই কি সাদমানের সব জানতি?
~ কি জানবো মা? বলো?… চুপ করে আছো কেন? বলো? বাবা তুমি বলো। প্লিজ চুপ করে থেকো না। বলো…
– সাদমানের ৫ বছরের একটা মেয়ে আছে…(জোরে)
~ কিহহ! (আশ্চর্য হয়ে)

আবিদা ঠাস করে সোফার উপর বসে পড়ে। ওর নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না। ওকি ঠিক শুনলো? সাদমানের একটা মেয়ে আছে! তাও ৫ বছরের!

– সাদমানের ৫ বছরের একটা মেয়ে আছে…(জোরে)
~ কিহহ! (আশ্চর্য হয়ে)

আবিদা ঠাস করে সোফার উপর বসে পড়ে। ওর নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না। ওকি ঠিক শুনলো? সাদমানের একটা মেয়ে আছে! তাও ৫ বছরের! আবিদার মা উঠে এসে আবিদার পাশে বসে। ওর মাথায় আস্তে করে হাত বুলিয়ে দেয়। আবিদা কাঁদছে। নিঃশব্দে কাঁদছে। আবিদার মা বলে,

~ সাদমান আজ থেকে ৬ বছর আগে বিয়ে করে। ওর স্ত্রী বাবুকে জন্ম দেওয়ার সময় খুব অসুস্থ হয়ে পরে৷ এতোটা অসুস্থ হয়ে পরে যে আল্লাহ তাকে নিয়েই যায়। কিন্তু একটা মেয়েকে সাদমানের কোলে দিয়ে যায়।

মায়ের মুখে এ কথা শুনে আবিদা ভীষণ আশ্চর্য হয়ে মায়ের দিকে তাকায়। আর বলে,

~ ওনার স্ত্রী বেঁচে নেই? মেয়েটার কোন মা নেই?

~ নারে মা। কি সুন্দর মেয়েটা৷ অসম্ভব সুন্দর।

আবিদা সোফায় হেলান দিয়ে চোখ অফ করে বসে আছে। ওর বাবা বলে উঠলো,

– তাহলে আমি আমার বন্ধুকে জানিয়ে দি কালকে ওদের বিয়ে হচ্ছে।

~ না বাবা।

– কিহ! মানে?

~ আমি ওনাকেই বিয়ে করবো শুধু। ওনার মেয়ের মা হবো আমি। কি হয়েছে ওনার বিয়ে হয়েছে আগে? আরেকবার করতে সমস্যা নেই। আমি ওনাকেই বিয়ে করবো। আমার ওনাকেই চাই।

– তুই কি বলছিস জানিস? ভেবে চিন্তে বলছিস? সাদমান তোকে কখনো মেনে নিবে না। তোর কি মনে হয় সাদমানকে আমরা সে কথা বলিনি? সাদমানকে বলেছি আমি, যে বাবা এত্তো সুন্দর মেয়েটা তোমার মা ছাড়া এতো বছর ছিল। আমার মেয়েটাকে ওর মা করে দেও। মায়ের আদরে মেয়েটা খুব ভালো থাকবে। কিন্তু সাদমান স্পষ্ট ভাবে বলে দিয়েছে, ও কখনো আর কাউকে বিয়ে করতে পারবে না। ও ওর স্ত্রীকে প্রচন্ড ভালবাসে। দ্বিতীয় কাউকে ভালবাসার প্রশ্নই উঠে না।

আবিদা স্তব্ধ হয়ে আছে৷ কি বলবে আর। অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে আবিদা বলে উঠে,

~ বাবা আমি চেষ্টা করবো। আমি চেষ্টা করতে চাই। ওনার মতো একজন মানুষের স্ত্রী হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমি ওনার স্ত্রী হয়েই ছাড়বো দেখো। শুধু তোমরা একটু সাপোর্ট দিও আর কিছু চাইনা।

~ আমরা দুজন তো সবসময়ই তোর পাশে আছি। দেখ ছেলেটা রাজি হয় কিনা। আমারতো খুব ভালো লেগেছে ছেলেটাকে। কি অমায়িক আচরণ। আহ! এরকম একটা জামাই আমাদের বাড়ির হলে সবার জন্য ভালো।

– হুম ঠিক বলেছো আবিদার মা। আবিদা যা দোয়া করে দিলাম মা তোকে। জিতে আসবি।

~ থ্যাঙ্কিউ বাবা।

পরদিন সাদমানের বাসায়,

(কলিং বেলের শব্দ)

সাদমানের মা দরজা খুলে তাকিয়ে দেখে আবিদা। কিন্তু সে আবিদাকে চিনতে পারেনি। তাই তিনি বললেন,

~ কে তুমি মা? কি দরকার?

~ আন্টি আমি আবিদা। গতকাল আমার বাবা-মা এসেছিল। ভিতরে আসতে পারি?

~ ওমা তাই! হ্যাঁ আসো আসো।

আবিদা ভিতরে আসে। সাদমানের মা আবিদাকে নিয়ে সোফায় বসে। বসে তিনি আবিদাকে ধরে ভালো করে দেখে বলে,

~ ইসস, তুমি তো অনেক সুন্দরী। একদম একটা পরীর মতো। আমার নাতনির মতো তুমি। মাশাল্লাহ।

~ কি যে বলেন না আন্টি। আঙ্কেল বাসায় নেই?

~ তোমার আঙ্কেল তো বেঁচে নেই। সাদমান আমার একমাত্র ছেলে। ওই সব আমার৷ ও আর ওর মেয়ে ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই।

~ কে বলেছে আমিও আছি। আচ্ছা আন্টি না মা বলে ডাকি আপনাকে?

সাদমানের মা অনেক খুশী হন। তিনি আবিদার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে কণ্ঠে বলেন,

~ ডাকো মা ডাকো। কোন সমস্যা নেই।

~ উনি কি বাসায়?

~ না অফিসে গেছে ও। খুব পরিশ্রম করে ছেলেটা।

~ আচ্ছা উনিকি আমাকে মেনে নিবেন না মা? আমি যে ওনাকে অনেক ভালবাসি অনেক পছন্দ করি। ওনার কুরআন তিলোয়াত না শুনলে আমার দিন ভালো যায়না।

~ মা, সত্যি বলতে ছেলেটা আমার অনেক শক্ত। ও রুমিকে প্রচন্ড ভালবাসতো। এখনো বাসে। রুমি ছাড়া ও মনে হয়না আর কাউকে মেনে নিবে। আমি হাজার বার চেষ্টা করেছি আমার নাতনির জন্য একটা মা আনার। কিন্তু ছেলেটা কোনভাবেই মানে নি। তাই এখন হাল ছেড়ে দিয়েছি। ও মনে হয়না দ্বিতীয় বার আর বিয়ে করবে।

আবিদা ভিতর থেকে অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। চারদিক কেমন শূন্য হয়ে আসছে। কোন উপায় কি নেই? আবিদা মাকে অসহায় ভাবে প্রশ্ন করে,

~ মা কোন উপায় কি নেই তার মনে আমার জন্য একটু জায়গা করার? বলুন না প্লিজ।

সাদমানের মা আবিদার অশ্রুসিক্ত নয়নের দিকে তাকিয়ে উজ্জীবিত হয়ে বলে,

~ উপায় একটা আছে।

আবিদা অনেক খুশী হয়ে বলে,

~ কি মা?

~ সাদমানের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো আমার নাতনি। তুমি যদি ওর বন্ধু ওর প্রিয় হতে পারো তাহলেই হয়তো আমার ছেলেটার জীবনে জায়গা করে নিতে পারবে।

~ মা আমি তাহলে তাই করবো। লাগলে আমি কখনো মা হবো না। ওনার মেয়েই হবে আমার মেয়ে। আমার আপন মেয়ে৷ তাও ওনাকে আমার চাই।

~ যাক। তাহলে আমার ছেলেটার একাকিত্বও যাবে আর নাতনিটাও এত্তো সুন্দরী একটা মা পাবে।

~ মা ওনার মেয়ের নাম কি?

~ “জান্নাত” ওর বাবাই রেখেছে।

~ ও কই? জান্নাতের সাথে একটু দেখা করি।

~ ওতো এখন ঘুমাচ্ছে। আসো ওকে দেখবে। একদম পরীর মতো আমার জান্নাত মামনীটা।

সাদমানের মা আবিদাকে নিয়ে জান্নাতের রুমে যায়। গিয়ে তিনি বলেন,

~ ওই যে ঘুমিয়ে আছে আমাদের জান্নাত।

এই গল্পটি লেখক আবির খানের। অন্যকেউ লেখকের নাম ছাড়া তা কপি করে দিলে তার আইডিতে রিপোর্ট করুন। – আবিদা আস্তে আস্তে করে জান্নাতের কাছে যায়৷ আবিদা জান্নাতকে দেখে স্তব্ধ। এ স্তব্ধতা মুগ্ধতার। জান্নাত অসম্ভব সুন্দর একটা মেয়ে। আবিদা ওর জীবনে এরকম অসম্ভব সুন্দর বাচ্চা মেয়ে কখনো দেখেনি। ঘন কালো চুল, বড় বড় পাপড়ি, দুধের মতো গায়ের রং। এ যেন সত্যিই জান্নাত৷ আবিদা অপলক দৃষ্টিতে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে অজান্তেই পানি এসে গেছে৷ প্রচন্ড মায়া হচ্ছে জান্নাতকে দেখে। এটুকু মেয়ে মা ছাড়া ৫ টা বছর পার করেছে। আবিদা কাঁদতে কাঁদতে বলে,

~ মামনি তোমার আম্মু চলে এসেছে। আজ থেকে আমরা মা আর মেয়ে মিলে অনেক মজা করবো। আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না। কেউ না। আল্লাহ আমাকে শুধু তোমার জন্য পাঠিয়েছেন। জান্নাতের পরী তুমি। আমার জান্নাত।

~ আসলেই এই দুধের শিশুটার একটা মায়ের দরকার ছিল রে। আবিদা মা তোকে ওর মা হতেই হবে।

~ মা আমি হবো। ও জান্নাতের টুকরা একটা। দেখেন কি অপরূপ সুন্দরী ও। আমার খুব কান্না পাচ্ছে ওকে দেখে। আমি ওকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। কোথাও না।

~ হ্যাঁ মা যাস না।

এরপর সকাল পেড়িয়ে দুপুর, দুপুর পেড়িয়ে বিকেল আর বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ্যা আসে। সাদমানের আসার সময় হয়েছে। কলিং বেল বাজতেই সাদমানের মা দরজা খুলে দেয়। সাদমান মাকে সালাম দিয়ে সোজা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে মায়ের কাছ থেকে তোয়ালে নিয়ে হাত মুখ মুছে। ও বেকুল হয়ে আছে জান্নাতকে দেখার জন্য।

– জান্নাত কেমন আছে মা? ও তোমার সাথে নেই কেন? ঘুমাচ্ছে?

~ না খোকা, ও ওর মায়ের সাথে খেলা করছে। যা দেখে আয়। মাকে পেয়ে কতো খুশী জান্নাত।

সাদমান আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা। দ্রুত জান্নাতের রুমের কাছে যেতেই জান্নাতের মিষ্টি মধুর খিলখিল হাসির শব্দ সাদমান শুনতে পায়। সাদমান দ্রুত রুমে ঢুকে দেখে আবিদা। সাদমান বাকরুদ্ধ! ও দেখছে জান্নাতের চোখেমুখে উজ্জ্বলতায় ভরা। মেয়েটা যেন সত্যিই মাকে খুঁজে পেয়েছে। আবিদা সাদমানকে দেখে বলে,

~ কি এসেছেন? কেমন আছেন?

সাদমান যথারীতি অন্যদিকে ফিরে তাকায় আর বলে,

– আপনি এখানে?

~ আমি এখানে থাকবো নাতো কে থাকবে? আমিতো জান্নাতের মা। জান্নাত আমার মেয়ে৷ আমার পরী মেয়ে। (জান্নাতকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল)

– এসব কি বলছেন? জান্নাত শুধু আমার আর রুমির মেয়ে। আপনার কেন হতে যাবে।

বলেই জান্নাতকে কোলে তুলে নেয় সাদমান। জান্নাত বাবার কোলে উঠে বলে,

~ আব্বু আমি আম্মুর কাতে যাবো। আমার আম্মু আত্তে৷ আম্মু অনেক ভালো। আম্মুর তাতে খেলবো। নিচে নামাও।

সাদমান অবাক। মেয়েকে নিচে নামিয়ে দেয়। মেয়ে সুন্দর গিয়ে আবিদাকে জড়িয়ে ধরে। আবিদাও জান্নাতকে বুকে জড়িয়ে ধরে। আর সাদমানের দিয়ে তাকিয়ে হাসে আর বলে,

~ এই দুধের শিশুটার মায়ের প্রয়োজন। মায়ের ভালবাসা, আদর, স্নেহের প্রয়োজন। ওকে এ থেকে আলাদা করবেন না। আর কান খুলে শুনে রাখুন ও আমারও মেয়ে আজ থেকে। আমি আপনাকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবো না। আর জান্নাতকেও আমি কখনো ছাড়বো না৷ এখন আপনি ভাবুন, জান্নাতকে কষ্ট দিবেন নাকি আমাকে বিয়ে করবেন?

সাদমান কি করবে? কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। সাদমান বলে উঠে,

– জান্নাত মা এদিকে আসো। উনি তোমার আম্মু না। আব্বুর কাছে আসো মা। আব্বুকে আদর দেও।

~ না এতা আমাল আম্মু। আম্মুর সাতে খেলবো তুমি যাওতো।

সাদমান বিশ্বাস করতে পারছে না। কিন্তু ও এও বুঝতে পারছে যে সারাদিন একা থাকা মেয়েটা আবিদাকে পেয়ে অনেক খুশী। আবিদা জান্নাতের সাথে খেলা করছে মজা করছে। জান্নাত খিলখিল করে হাসছে। সাদমান নিরাশ হয়ে বাইরে ড্রয়িং রুমে এসে সোফায় বসে৷ সাদমানের মা একগ্লাস পানি ওর হাতে দিয়ে ওর সামনে এসে বসে বলে,

~ আবিদা সত্যি জান্নাতের মায়ের যোগ্য বাবা। জান্নাতকে মা হারা করিস না। মেয়েটা মাকে পেয়ে অনেক খুশী। মন থেকে শোনে দেখ কি সুন্দর খিলখিল করে হাসছে৷ জান্নাতকে কখনো এতো হাসিখুশি দেখিনি। সাদমান আর জিদ করিস না বাবা। মেয়েটাকে একটু মায়ের আদর ভালবাসা দে। নাহলে মেয়েটা বড় হয়ে অন্যরকম হয়ে যাবে। এবার সাদমান বলে,

– মা বিষয়টা আমার। আমি রুমিকে ভালবাসি। ওকে ছাড়া আমি কীভাবে অন্য একটা মেয়েকে মেনে নিব তাকে কীভাবে ভালবাসবো? সংসারটা সুখের হবে বলো? আবিদা কি শুধু জান্নাতকে নিয়ে খুশী হবে যদি স্বামীর ভালবাসা না পায়? আমিতো পারবোনা রুমি ছাড়া অন্যকাউকে মেনে নিতে। পারবো না মা।

~ দেখ বাবা আমি শুধু একটা কথা বলবো, রুমি কখনো চাবে না জান্নাত মা ছাড়া বড় হোক। বাকিটা তুই বুঝিস ভালো। আমি খাবার দিচ্ছি আয় খাবি।

– জান্নাত খাবে না?

~ আবিদা খাইয়েছে। মেয়েটা আজ খাওয়া নিয়ে একটুও কান্নাকাটি করেনি। পেট ভরে খেয়েছে ওর মায়ের হাতে৷ দাদির হাতে খেয়ে মেয়েটা এতোদিন শান্তি পায়নি। আজ শান্তি মতো খেয়েছে। তুইও আয় মায়ের হাতের খাবার খাবি।

– হুম।

এরপর সাদমান খেয়ে একটু বিশ্রাম নেয়। তারপর এশার নামাজ পড়তে চলে যায়। আসার সময় সিঁড়িতে আবিদার সাথে দেখা হয়। সাদমান অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আবিদা জোর গলায় বলে,

~ জান্নাত আমারও মেয়ে। ওকে আমি কখনো আমার থেকে আলাদা করবো না। আর কাউকে করতেও দিব না। আসি।

সাদমান অবাক হয়ে যায় আবিদার কথা শুনে। ও ভেবেই পাচ্ছে না এসব কি হছে৷ কিন্তু ওর বিরক্ত লাগছে খুব। সাদমান জান্নাত আর রুমির মাঝে আর কাউকে আনতে চায়না৷ রুমি সবসময় ওর মনে ভিতরে থাকে। রুমি ছাড়া ও কাউকে মেনে নিতে পারবে না। কিন্তু জান্নাতের কথা ভাবলে সাদমান দুর্বল হয়ে যায়। ওর চিন্তা শক্তি লোপ পায়৷ এভাবে আরো ছয়দিন চলে যায়৷ জান্নাত এখন আবিদাকে আম্মুই বলে ডাকে৷ সারাদিন আম্মু আর আম্মু। সাদমানের চেয়ে পরী জান্নাত এখন তার আম্মুকেই বেশি ভালবাসে৷ সাদমান কেন জানি মানতে পারছে না। ও খুব বিরক্ত হয়ে উঠেছে৷ আর পারছেই না। তাই,

– এই যে শোনেন আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে। (অন্যদিকে ফিরে)

আবিদা জান্নাতকে ঘুম পড়িয়ে দিয়ে চলেই যাচ্ছিলো ওমনি সাদমান ওকে ডাক দিল। আবিদাতো বেজায় খুশী। ও ভাবছে সাদমান বোধহয় এবার ওকে মেনে নিবে। আবিদা খুশি হয়ে বলে,

~ জ্বি জ্বি বলুন।

– আপনি কাল থেকে আর আমার বাসায় আসবেন না দয়া করে। জান্নাতের মা শুধু রুমি আর কেউ না। আপনি রুমির জায়গা কখনো নিতে পারবেন না। আপনাকে আমি আর আমার বাসায় দেখতে চাই না। আর কখনো আসবেন না৷ আর যদি আসেন আমি এ বাসা ছেড়ে দিবো।

এ কথা শুনে আবিদা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। কান্নায় ভেঙে পড়ে। সাদমানের মাও পিছনে দাঁড়িয়ে সব শোনে। আবিদা কাঁদতে কাঁদতে বলে,

~ ঠিক আছে৷ আর কখনো আপনি আমাকে দেখতে পাবেন না। চলে যাচ্ছি।

বলেই কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল আবিদা।

.

.

.

চলবে………… জান্নাত, জান্নাত, জান্নাত,জান্নাত জান্নাত, জান্নাত

 

বিঃ দ্রঃ ” লেখাঃ সাজনা আক্তার ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন…………

👉আমাদের ফেসবুক পেজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *