গল্প- ফাঁদ

গল্প- ফাঁদ !! Part- 02

সকালে ঘুম ভাঙলে আহেলী কে আগের মতোই পড়ে থাকতে দেখে আদিত্যর মাথাটা খুব গরম হয়ে যায়। ঠিক একি ভাবে পড়ে আছে। কাছে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসে নাকের কাছে হাত দিয়ে দেখলো নিঃশ্বাস পড়ছে। উঠে চলে গেলো ওয়াশরুমে। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে চুলের পানি মুছতে মুছতে আহেলীর কাছে এলো।

” আহেলী,,,এই আহেলী,, ঘুম কি ভাঙছে না? কি হলো কি? আরে এইই,,, ”

কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে বেডের সাইড টেবিল থেকে পানির জারটা তুলে নিয়ে পুরো জারের পানিটাই ওর মুখে ফেলে দিলো আদিত্য। আহেলীর জ্ঞান ফিরতে চোখটা আস্তে আস্তে খুললো। আদিত্য কে জার হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে একপ্রকার ভয় পেয়ে গেলো। আবার মারবে না তো! একরকম ভয় পেয়েই উঠতে গেলো কিন্তু মাথাটা ভীষণ ভারী লাগছে। এক হাতে মাথা ধরে আর এক হাত চাপ দিয়ে উঠতে গেলে কোমরে ব্যথা পেলো। সামান্য চিৎকার করেই আবার ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো।

আদিত্য এতোক্ষণ রেডী হতে হতে সব কিছুই দেখছিল। গায়ে মেরুন কালারের ব্লেজার পরে হাতে মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে গেলো,,,

“যত্তোসব নাটক”

এইকথা শুনে আহেলী শব্দ করেই কেঁদে ফেলে। কিছুক্ষন কাঁদার পর আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করে বেড সাইডে টেবিলে চাপ দিয়ে ওঠে।সোজা হয়ে দাঁড়াতে অনেক কষ্ট হয়। কোমরে অসহ্য ব্যথা অনুভব করছে। ওইভাবে বেড থেকে টেনে ফেলায় হয়তো কোমরে লেগেছে। ওর মনে ভয় হয় কোমরটা ভেঙ্গে যায় নি তো? আবার নিজের মনেই ভাবে ভাঙ্গলে তো যন্ত্রণা হতো! মনে হয় মোচড় লেগেছে তাই ব্যথা করছে। আর তাছাড়া সারা শরীর তো অবশ হয়ে আছে। মাথাটা ঝিমঝিম করছে। খুব দুর্বল লাগছে নিজেকে ওর। সারা শরীর যে জরে পুড়ে যাচ্ছে তা বুঝতে বাকি নেই আহেলীর। গুটি গুটি পায়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ট্যাপ ছেড়ে দিয়ে তার তলায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে।

” আমি কি কাল থেকেই ঘুমিয়ে ছিলাম! আমার এমন কষ্ট হচ্ছে কেনো! আমাকে এতো মারলো কেনো! আমি কি দোষ করেছি! ”

নিজের সাথেই কথা বলে আবার মুচকি হেসে বললো

” আমি বেঁচে আছি ! আমি তো ভেবেছিলাম ওই লোকটা আমাকে মেরেই ফেলবে। ভালোই হতো যদি মেরে ফেলতো,,, তাহলে তো আমাকে আর রোজ রোজ মার খেতে হতো না। এই হাতের দাগ গুলো উঠছে না কেনো! দাগগুলো দেখতে ভালো লাগছে না তো। ”

হাত দিয়ে ঘষা দিয়ে তুলতে থাকে। হঠাৎ ওর মনে পড়ে যায় দাদীকে সকালের নাস্তা দিতে হবে তো। দেরী হলে তো আবার ওকে মার খেতে হবে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।

” ওহ দাদী তো চলে গেছে। আর তার জন্যই তো,,, ”

আহেলীর চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে। বেডে শরীর এলিয়ে দেয়। খুব কষ্ট হচ্ছে। সারা শরীরে ব্যথা। হঠাৎ চোখ যায় সেফটি বক্সের দিকে। বক্স খুলে একটা প্যারাসিটামল হাতে নেয়। কিন্তু ও যে কাল থেকে কিছু খায়নি। ওকে তো খেতে হবে না কিছু খেয়ে খেলে মাথা ঘুরবে। কিচেনরুমে গিয়ে একটা বিস্কেট খেয়ে প্যারাসিটামল টা খেয়ে নেয়।একটু ঘুমাতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো। কিন্তু অনেক কাজ পড়ে আছে ঘুমালে চলবে না। শুয়ে শুয়ে ভাবলেও উঠতে পারে না মুখে বললেও মন সায় দেয় না যে। শুয়ে থাকতে থাকতে চোখের পাতা বুজিয়ে আসে।

/
/
/
/
/
/

“কি বলছেন আহী এইসব কথা বলেছে?? আমার আহী!! বিশ্বাস করুন আফা আমার মেয়েকে এমন শিক্ষা দিইনি যে সে বয়স্কদের সাথে এমন আচরণ করবে। ”

আহেলীর মা আদিত্যর ফুফুকে কথাটি বলে উঠে দাঁড়ায়।

” আরে থামুন তো কি শিক্ষা দিয়েছেন জানা আছে হু। আমাকে বোঝাতে আসবেন না। আপনার মেয়ে যে কিরকম তা আমাদের সকলেরই জানা আছে। এই তো শিক্ষা দিয়েছেন মেয়েকে। দেখলে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না কিন্তু ভেতরে ভেতরে বদের হাড্ডি। প্রথমে আমার ছেলেকে ফাঁসালো তারপর আমার ভাইয়ার ছেলেকে বিয়ে করলো। এই তো আপনার মেয়ের চরিত্র। বাচাল মেয়ে মানুষ কোথাকার। ”

“দোহাই আফা এমন কথা বলবেন না,, চুপ করুন আপনি।”

আহেলীর মা দু হাত দিয়ে কান চেপে ধরে কথা গুলো বলে। তা দেখে আহেলীর চাচী এগিয়ে আসে।

“উনি কি আর মিথ্যা কথা বলছেন আহী নিশ্চয়ই এমন কিছু করেছে তাই উনি বলছেন। আফা তুমি আহীর সাথে কথা বলো। আর উনি তো ঠিক কথায় বলেছেন। আমাদের আহীর যেভাবে বিয়ে হয়েছে…. ”

আহেলীর মা চোখ রাঙিয়ে আহেলীর চাচীর দিকে তাকাতেই চাচী চুপ করে যায়।

” আচ্ছা আসি তাহলে। ”

আদিত্যর ফুফু চলে গেলে। আহেলীর মা সোফায় থপাস করে বসে পড়ে। আহেলীর চাচী বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,,

” কথাটি কিন্তু সত্য বলেছে। এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করেছে আহী। একটা লটারীর টিকিট কেটে দুটো পেয়ে গেলো। এলেম আছে আহীর বলতে হবে। আর কটা মেয়েই এমন পায় দেখোতো! একটা ভাইকে ভালোবেসে আর এক কে বিয়ে,,, আরে গিনিস বুকে নাম ওঠা উচিৎ আমাদের আহীর”।

আহেলীর চাচীর কথাগুলো আহেলীর মায়ের তীরের মত বুকে এসে বিঁধলো। চিৎকার করেই বললো।

” তোমার কাছে আমি কিছু শুনতে চাই না। তুমি যাও এখান থেকে। ”

” যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি হু,, যে যার মেয়ে সে তার বুঝবে আমার কি বাবা,,, এমনিতেই তোমার ওই মেয়ের জন্য কম অপমানিত হতে হয়নি। লজ্জায় মাথা কাটা যায়। এখনো অপমানিত হতে হয়। আত্মীয় স্বজন মহল্লায় সব জায়গায় কথা শুনতে হয়। কি মেয়ে জন্ম দিয়েছো। আমার মেয়ে হলে গলা টিপে শেষ করে ফেলতাম। আর তুমি যে ওই মেয়ের জন্য কথা বলছো তোমার স্বামী তো ওই মেয়েকে মৃত মনে করেছেন। তারপরেও যেখানে বাবাই মেয়ের সাথে সম্পর্ক রাখে না সেখানে,,,। তুমি যা ভালো বোঝ তাই করো হু।

আহেলীর চাচী চলে গেলে আহেলীর মায়ের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। হাতের সামনে থাকা ফোনের রিসিবার তুলে কল দেয়,, দু চার বার রিং হয়।

“হ্যালো ”
“কে,, মা,, আমার মা,, কতো মাস পর তোমার গলা শুনলাম মা! তুমি কল দিয়েছো! কেমন আছো মা?”
“খবরদার মা বলে ডাকবি না আমায়। আমি কারো মা নই।”
“তুমি রাগ করে আছো মা! মা কেমন আছো তুমি? মা আমার বাবা কেমন আছে?
“তোর জন্য এতো জলতে হয় কেন বলতে পারিস? মরণ হয় না তোর? মরতে পারিস না? এতো লোকে তো মরে.. তুই কেন মরিস না,,, মর না মরে যা বাঁচতে দে আমায়,,।
” মা মা গো তুমি এভাবে বলছো কেনো। তোমাকে কতো দিন দেখিনা মা,, তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করে “আহেলীর মা ঝট করে লাইন টা কেটে দেন। আর আহেলী হতভম্ব হয়ে যায়।

” মা কলটা কেটে দিলে কেন? আমার যে তোমার সাথে অ,,নেক,, অনেক কথা ছিল। মা তুমি আমাকে মরে যেতে বললে! তুমি আমার মৃত্যু কামনা করলে!”

নিজের সাথেই কথা গুলো বলে আহেলী ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। মায়ের বলা কথা গুলো শুনে তার বুকের ভিতর টা মোচড় দিয়ে উঠছে তাতে করে শরীর এর ব্যথা কিছু না। ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা হয়েছে,, ও যে সেই সকালে ঘুমিয়েছে ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙলো। ভাগ্যিস মা ফোন করেছিল তা না হলে তো ও এখনো ঘুমাতে। চোখের পানি মুছে নেয়,, কপালে মুখে বিন্দু বিন্দু ঘাম দিচ্ছে হয়তো ওষুধ টা কাজ করেছে হ্যা মাথাটা অনেক হালকা লাগছে। ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে চোখ যায় দেওয়াল ঘড়ির দিকে।

“সাতটা তিরিশ বাজে,,, ওনার তো আসার সময় হয়ে গেলো। এবার কি হবে! সময়ে যদি ওনাকে খাবার না দিতে পারি! ”

এই বলে তোয়ালে টা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে কিচেন রুমে চলে এলো। তাড়াতাড়ি করে সব্জী কেটে রান্না করতে লাগলো। কিছুসময় পরেই গাড়ির আওয়াজ পেয়ে বুঝতে বাকি রইল না। হাত পা আরো বেশী ঠান্ডা হয়ে গেলো।কিছু সময় পর গুটিগুটি পায়ে কাঁপা কাঁপা হাতে চায়ের কাপ নিয়ে রুমে ঢুকলো আহেলী। আদিত্য তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছ ছিল। বেডের সাইড টেবিলে চা এর কাপটা নামিয়ে রাখলো।

“আপনার চা”।

বলেই চলে আসতে গেলে আদিত্য হাত ধরে আহেলীকে আটকে নেয়। নিজের সাথে মিশিয়ে এক আঙুল দিয়ে গাল স্পর্শ করে ঠোঁটের কাটা জায়গায় চেপে ধরে। আহেলী ব্যথায় চিৎকার করে ওঠে……….

.
.
.
.
.
.
চলবে…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *