অঙ্ক টিচার

গল্প ¦ অঙ্ক টিচার— পর্বঃ- ৫

শার‌মিন আক্তার
—তনয়া লিমা‌কে প্রথম দে‌খেই চি‌নে ফেল‌লো।
তারপর ম‌নে ম‌নে বল‌ছে কি ক‌রে ভুল‌বো? এই শয়তা‌নি‌কে? আমার অঙ্ক স্যারটাকে আমার কাছে থে‌কে চু‌রি ক‌রে নি‌য়ে গে‌লো। চু‌ন্নি কোথাকার! কিন্তু চু‌ন্নিটার সা‌থে কে? আয়াত স্যার এর মত‌ তো লাগ‌ছে না?
যাই একটু দে‌খে আসি আর জ্বালা‌ইয়েও আসি।
তনয়া ওর বান্ধু‌দের বল‌লো তোরা খাবার অর্ডার দে আমি এখ‌নি আস‌তে‌ছি।
তনয়া লিমার সাম‌নে গি‌য়ে দা‌ড়ি‌য়ে বল‌লো—-
তনয়াঃ হাই লিমা আপু!
‌লিমাঃ হাই। (একটু অচেনা ভ‌ঙি‌তে)
তনয়াঃ আমা‌কে চিন‌তে পে‌রে‌ছেন?
‌লিমাঃ কিছুক্ষন তা‌কি‌য়ে থে‌কে বল‌লো তু‌মি তনয়া না?
তনয়াঃ জ্বি আপু কেমন আছেন?
‌লিমাঃ ভা‌লো তু‌মি?
তনয়াঃ জ্বি ভা‌লো।
তারপর তনয়া লিমার পা‌শে বসা লোক দি‌কে তাকা‌লো। নাহ এতো আয়াত স্যার নয়! তাহ‌লে কে? একবার জান‌তে চাই‌বো? নাহ থাক য‌দি কিছু ম‌নে করে? আবার জি‌গেস না কর‌লে যে কন‌ফিসন থে‌কে যা‌বে? কি ক‌রি?
‌লিমাঃ তা এখা‌নে কি কর‌তে?
তনয়াঃ বন্ধু‌দের সা‌থে । আচ্ছা আপু আপনার সা‌থে ইনি কে?
‌লিমাঃ ইনি আমার ———-
কথাটা বল‌তে যা‌বে এর ম‌ধ্যে লিমা‌কে কে যে‌নো ফোন কর‌লো। লিমা ফোনটা রি‌সিভ ক‌রেই বল‌লো হ্যা আয়াত বল? আর কথা বল‌তে বল‌তে একটু দূ‌রে চ‌লে গে‌লো।
তনয়া বুঝ‌লো ফোনটা আয়াত ক‌রে‌ছে। তাই কিছু না ব‌লে মন খারাপ ক‌রে বন্ধু‌দের কা‌ছে এসে বল‌লো
তনয়াঃ মা ফোন ক‌রে‌ছি‌লো। এখ‌নি বাসায় যে‌তে বল‌লো। তোরা আড্ডা দে আমি প‌রে এক‌দিন তো‌দের সা‌থে আড্ডা দি‌বো।
‌নেহাঃ এ কেমন কথা তনয়া?
তনয়াঃ না‌রে ম‌নে হয় খুব জরু‌রি নয়‌তো মা এভা‌বে কখ‌নো ডা‌কে না। যাই । বাই।
‌রেস্টু‌রেন্ট থে‌কে বের হ‌য়ে রিক্সা না নি‌য়ে সোজা হাটা ধর‌লো। আজ কেন যে‌নো তনুর খুব কষ্ট হ‌চ্ছে। ম‌নে হচ্ছে বুকটা ফে‌টে যা‌বে। ভিষন কান্না পা‌চ্ছে।
‌কেন আমি আমি আয়াত স্যার‌কে ভা‌লোবাসলাম? আর কেনইবা এতটা কষ্ট হ‌চ্ছে?
এ‌দি‌কে লিমার ফো‌নে কথা বলা শেষ হ‌লে তনয়া‌কে খুজ‌তে খুজ‌তে ওর বন্ধু‌দের কাছে গি‌য়ে তনয়ার কথা জান‌তে চাই‌লো। তারপর ওকে না পে‌য়ে নেহার কাছ থে‌কে তনয়ার ফোন নাম্বার নেয়। এবং লিমারটা নেহার কা‌ছে দি‌য়ে আসে। আর ব‌লে অবশ্যই যে‌নো ফোন ক‌রে।
এ‌দি‌কে তনয়া হাট‌তে হাট‌তে প্রায় বা‌ড়ির কা‌ছে চলে আসে। ওদের বা‌ড়ি থে‌কে কিছু দূ‌রে ছোট একটা পার্ক। এই সেই পার্ক যেখা‌নে দা‌ড়ি‌য়ে আয়াত ওকে চড় মে‌রে‌ছি‌লো।
এখা‌নে বিকা‌লে অনে‌কে ব্যায়াম ক‌রে। কেউ গল্প গুজব ক‌রে। তনয়া পা‌র্কে ডু‌কে নদীর ধা‌রে একটা বে‌ঞ্চে বস‌লো।
‌কেন যে‌নো খ‌ুব কান্না পা‌চ্ছে। আর ম‌নে ম‌নে নি‌জে নিজে বল‌ছে। স্যা‌রের কা‌ছে আমার ভা‌লোবাসাটা নেহাৎ ছে‌লেমানু‌ষি ছাড়া আর কিছু না। কিন্তু আমার ক‌া‌ছে কেন সেটা ম‌নে হয়‌না। আমার ছে‌লে মানু‌ষি ম‌নের ম‌ধ্যে যে ছোট্ট একটা ভা‌লোবাসার মত হৃদয় আছে সেটা‌কি স্যার দেখ‌তে পায় না? না‌কি বুঝ‌তে পা‌রে না?
হুম পার‌বেই বা কি ক‌রে স্যার তো আমায় না লিমা‌কে ভা‌লোবা‌সে। এদি‌কে তনয়ার ফোনটা বে‌জেই চ‌লে‌ছে। ফো‌নে অচেনা নাম্বার দে‌খে রি‌সিভ কর‌লো না। কিন্তু বার বার রিং হ‌চ্ছে ব‌লে তাই এবার রি‌সিভ কর‌লো।
এপাশ থে‌কে বল‌লো হ্যা‌লো তনয়া আমি লিমা।
তনয়া চম‌কে উঠ‌লো। আর ভাব‌ছে এই চু‌ন্নি কেন আমা‌কে ফোন কর‌লো? তারপর বল‌লো___
তনয়াঃ হ্যা বলুন আপু?
‌লিমাঃ তনয়া তু‌মি কোথায়?
তনয়াঃ পা‌র্কে ব‌সে আছি।
‌লিমাঃ কোন পা‌র্কে?
তনয়াঃ যে পা‌র্কে ব‌সে আপনার বয়‌ফ্রেন্ড আমা‌কে চড় মে‌রে‌ছি‌লো।
‌লিমাঃ ওখা‌নেই বসো। আমি দশ মি‌নি‌টের ম‌ধ্যে আস‌ছি।
তনয়া কিছু বলার আগেই ফোনটা কে‌টে গে‌লো। ।
তনয়া ভাব‌ছে ওনি কেন এখা‌নে আস‌বে?
‌কিছুক্ষ‌নের ম‌ধ্যেই লিমা চ‌লে আস‌লো?
তনয়াঃ হ্যা আপু ব‌লেন? কি বল‌বেন?
‌লিমাঃ তু‌মি কিছু না ব‌লে চ‌লে আসলা কেন?
তনয়াঃ এম‌নিতেই ভা‌লো লাগ‌তে ছি‌লো না আপু!
‌লিমাঃ ভা‌লো লাগতে ছি‌লো না না‌কি আয়াত আমা‌কে ফোন ক‌রে ছি‌লো তাই?
তনয়া অবাক চো‌খে লিমার তি‌কে তাকা‌লো।
তনয়াঃ আমতা আমতা ক‌রে তেমন কিছু না।
‌লিমাঃ সুইট হার্ট তোমার বয়সটা আমিও পে‌রি‌য়ে এসে‌ছি। সো আমার কা‌ছে লু‌কি‌য়ে লাভ নাই ডিয়ার। আচ্ছা তু‌মি তখন জান‌তে চাই‌লে না আমার পা‌শের লোক‌টি কে?
তনয়াঃ হুমমম
‌লিমাঃ হি ইজ মাই হ্যাজ‌বেন্ড।
তনয়াঃ অব‌াক চো‌খে লিমার দিকে তা‌কি‌য়ে বল‌লো কি? তাহ‌লে আয়াত স্যার যে সে‌দিন বল‌লো?
‌লিমাঃ ওটা আয়াত সে‌দিন তোমা‌কে শুনা‌নোর জন্য ব‌লে‌ছি‌লো যা‌তে তু‌মি পাগলা‌মি না ক‌রো!
তনয়াঃ তাহলে তার সা‌থে আপনার কি সম্পর্ক?
‌লিমাঃ (কিছুটা হে‌সে) আয়াত আমার খালা‌তো ভাই। আমরা দুজন একই বয়‌সি। এক ক্লা‌সে প‌ড়ি যার কার‌নে আমরা খুব ভা‌লো বন্ধু। শুধু বন্ধু অন্য কিছু না বুঝলা পাগ‌লি মে‌য়ে।
তনয়াঃ তাহ‌লে আয়াত স্যার সে‌দিন মিথ্যা কথা কেন বল‌লো?
‌লিমাঃ হুম সেটা ঠিক। সে‌দিন তু‌মি যাবার পর আমি আয়াত‌কে একই প্রশ্ন করে‌ছিলাম। আর ও ব‌লে‌ছি‌লো ওর একটা অনেক বড় সমস্যা আছে যার কারনে চাই‌লেও ও তোমার সা‌থে রি‌লেশ‌নে জড়া‌তে পার‌বে না।
‌কিন্তু একটা বিষয় কি জা‌নো ? যখনই আয়া‌তের সা‌থে কথা ব‌লি আয়াত য‌দি দশটা কথা ব‌লে তার নয়টা কথাই তোম‌া‌কে নি‌য়ে ব‌লে। তনয়া এরকম ওরকম সেরকম আরো কত কত কথা ! ম‌নে হয় যে‌নো তু‌মি ওর নিঃশ্বা‌সের সা‌থে মি‌শে গে‌ছো।
তনয়াঃ ঠোট বা‌কি‌য়ে তাহ‌লে আমা‌কে ব‌লে না কেন?
‌লিমাঃ সে‌দিন আমি আয়াত‌কে বললাম যে আয়াত তোর প্র‌ত্যেকটা কথায়‌ আ‌মি তনয়ার জন্য গভীর ভা‌লোবাসা অনুভব ক‌রি। আর যতদূর জা‌নি তনয়াও তো‌কে পাগ‌লের মত ভা‌লোবা‌সে তাহ‌লে তুই মে‌য়েটাকে ব‌লে দে? মে‌য়েটা‌কে আর কষ্ট দিসনা।
আয়াত তখন কি বল‌লো জানো?
তনয়াঃ তখন কাঁদ‌ছে কান্নার স্ব‌রেই ফু‌ঁপি‌য়ে ফু‌ঁপি‌য়ে বল‌লো কি বল‌ছে?
‌লিমাঃ আয়াত বল‌লো সেটা সম্ভব না‌রে লিমু! তাহ‌লে সব সম্পর্কগু‌লো অগোছা‌লো হ‌য়ে যা‌বে! আমি একটা সম্পর্ক‌ের জন্য অন্য গু‌লো ভাঙতে পার‌বো না! হ্যা আমি তনয়া‌কে———- তারপর আর কিছু ব‌লে‌নি।
তনয়াঃ আমার জন্য কেন অন্য সম্পর্ক ভে‌ঙে যা‌বে? আমি কি এতটা খারাপ? আর তার কি এমন সমস্যা যার কার‌নে আমার সা‌থে এমন কর‌ছে?
‌লিমাঃ সেটা আমি জা‌নি না‌রে? অনেক জানার চেষ্টা ক‌রে‌ছি কিন্তু সব বারই ব্যার্থ হ‌য়ে‌ছি। এখন ত‌ুমি চেষ্টা ক‌রে দেখ‌তে পা‌রো?
তনয়া অঝো‌ড়ে কাঁদ‌ছে।
‌লিমাঃ এই পাগ‌লি মে‌য়ে ‌প্লিজ কেঁ‌দো না। দে‌খো আমি তোমা‌কে এ কথা গু‌লো আগে বল‌তে পারতাম কিন্তু তু‌মি তখন খুব ছোট ছিলা। আর তারপর আমার বি‌য়ে হ‌য়ে যায়। বি‌য়ের পর আমি চট্রগ্রাম ছিলাম। তখন চে‌য়েও তোমার সা‌থে যোগা‌যোগ কর‌তে পা‌রি নি।
তনয়াঃ স্য‌রি আপু!
‌লিমাঃ কেন?
তনয়াঃ আয়াত স্যা‌রের গার্লফ্রেন্ড ভে‌বে তোমা‌কে ম‌নে ম‌নে অনেক বকা দি‌য়ে‌ছিলাম।
‌লিমা তনয়ার কথা শু‌নে হে‌সে ফেল‌লো। আর বল‌লো
‌লিমাঃ পাগ‌লি মে‌য়ে। ইট’স ওকে। আচ্ছা শোন তু‌মি এসব নি‌য়ে চিন্তা ক‌রো না। দেখ‌বে আল্লাহ চাই‌লে তু‌মি তোমার অঙ্ক টিচার‌কে পে‌য়ে যা‌বে!
তনয়াঃ য‌দি আল্লাহ না চায়?
‌লিমাঃ তাহ‌লে পা‌বে না!
‌লিমার কথা শু‌নে তনয়া ভ্যা ভ্যা ক‌রে বাচ্চা‌দের মত কেঁ‌দে ফেল‌লো।
‌লিমাঃ প্লিজ এভা‌বে কেঁ‌দো না। আয়াত কিন্তু ছিছকাঁদু‌নে মে‌য়ে‌দের একদম পছন্দ ক‌রে না।
তনয়া সা‌থে কাঁন্না থা‌মি‌য়ে ফেল‌লো। আর ফোপা‌চ্ছে।
‌সেটা দে‌খে লিমা হেসে বল‌লো এই পি‌চ্চি মি‌য়েটার ম‌নে তার অঙ্ক টিচার মা‌নে আয়া‌তের জন্য এত ভা‌লোবাসা লুকি‌য়ে আছে?
আচ্ছা শোন আয়াত দশ মি‌নি‌টের ম‌ধ্যে এখা‌নে আস‌বে।
তনয়াঃ কেন?
‌লিমাঃ আমি আস‌তে ব‌লে‌ছি!
তনয়াঃ কেন?
‌লিমাঃ তুই স‌ত্যিই মাথা‌মোটা! আমি এখন চ‌লে যা‌বো তারপর আয়াত‌কে ফোন ক‌রে ব‌লে দেবো জরু‌রি কা‌জে চ‌লে গে‌ছি। তখন তোরা গল্প ক‌রিস।
তনয়া লজ্জা পে‌য়ে মাথা নিচু ক‌রে ফেল‌লো।
‌লিমাঃ ও বাবা এ মে‌য়ে‌তো লজ্জাও পায়!
তনয়াঃ ধন্যবাদ আপু ব‌লে লিমা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লো।
‌লিমাঃ শোন রোজ ফোন কর‌বি আমা‌কে ওকে! আর শোন আমি তো‌কে যা বললাম আয়াত‌কে বল‌বি না। ভা‌লো থা‌কিস বাই।
তনয়াঃ তু‌মিও ভা‌লো থে‌কো বাই।
‌লিমা চ‌লে গে‌লো তার কিছুক্ষন পর আয়াত আস‌লো। আয়াত এসে লিমা‌কে না পে‌য়ে চ‌লে যা‌বে এমন সময় দেখ‌লো তনয়া চুপচাপ ব‌সে কাঁদ‌ছে।
আয়াতঃ তনয়া তু‌মি এখা‌নে?
আয়াত‌কে দে‌খে তনয়ার আরো বে‌শি কান্না এসে গে‌লো। তাই কোন কিছু না ভেবেই আয়াত‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কান্না কর‌তে থা‌কে।
আয়াত কিছুটা অপ্রস্তুত হ‌য়ে গে‌লো ঘটনা‌টি‌তে। ‌কিন্তু তনয়ার কান্না দে‌খে ওর বু‌কের ভিতর মোচর দি‌য়ে উঠ‌লো। তারপরও বল‌লো
আয়াতঃ কি হ‌য়ে‌ছে তনয়া? কেউ কিছু ব‌লে‌ছে? প্লিজ কিছু ব‌লো। এভা‌বে কেঁ‌দো না প্লিজ। কিছু ব‌লো?
তনয়া কিছু বল‌ছে না শুধু আয়াত‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কান্না কর‌ছে।
আয়াত এর মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে দি‌চ্ছে আর বল‌ছে প্লিজ কিছু‌তো ব‌লো তনয়া?
তনয়া নি‌জেকে আয়া‌তের থে‌কে ছা‌ড়ি‌য়ে কিছু না ব‌লে কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে চ‌লে গেলো।
আয়াত বোকার মত ওর যাওয়ার পা‌নে তা‌কি‌য়ে রই‌লো।
প‌রে ক‌য়েক বার তনয়ার কা‌ছে এ বিষ‌য়ে আয়াত জান‌তে চে‌য়ে‌ছে? কিন্তু সবসময়ই তনয়া ব্যাপারটা এড়ি‌য়ে গে‌ছে।
তিন মাস পর———
ঠাসসসস——
আজ আয়াত তনয়া‌কে সর্বসম্মু‌খে আবার একটা চড় মার‌লো।
‌কিন্তু কেন? —-
প‌রের প‌র্বে সেটা জানবেন?——
চল‌বে——–