ক্যাকটাস

ক্যাকটাস !! Part- 06

শেষরাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে খালা বেঘরে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। আমি শিওরে বসে তাকে দেখছি। কী নিষ্পাপ মানবী মুখ অথচ একটু আগেই বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিল। খালা যা বললো সেসবের কী আদৌ কোনো ভিত্তি আছে? নাকি সব তার মাথা খারাপের বহিঃপ্রকাশ! আহনাফের সাথে তার সম্পর্ক স্বাভাবিক। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে বাদ বাকি সবার সাথেও। তবে এমন কেন বললো খালা? এমনিতেই শরীর বেজায় খারাপ। তারউপর এতো চিন্তা নিতে পারছি না। মাথার ব্যাকসাইড মনে হয় কেউ খামচি দিয়ে ধরেছে এমন অনুভূত হচ্ছে। বাইরে বেরিয়ে ওয়াশরুমে এলাম৷ শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম কতক্ষণ হুশ নেই। যখন সেন্স ফিরল বাথরুমের এককোনে পড়ে আছি কাকভেজা হয়ে। বহুকষ্টে নিজেকে দাঁড় করিয়ে রুমে চলে এলাম। কাপড় ছেড়ে শুয়ে রইলাম খালার পাশে।
কখন ভোর গড়িয়ে দুপুর হলো টেরও পেলাম না। খালা স্বাভাবিক মুখে বসে আছেন শিওরে। আমাকে চোখ খুলতে দেখে বললেন,
” নীরা, এই নীরা, কেমন ঠেকছে এহন?”
” ভালো না খালা। চোখের সামনে আজরাইল দেখছি। মরার আগে একবার মাকে দেখতে ইচ্ছা করছে খুব। মা কী আসবে খালা?” মৃদু স্বরে বললাম। খালার শীতল কোমল হাতটা আমার কপালে রাখল। বললো,
” সব ঠিক হইয়া যাইব। কান্দিস না। তোর মা বাপে কেমনে আইব? এরা তো হুমকি দিছে তোর লগে যোগাযোগ করলে তোরে মাইরা ফেলব। তোর মায়ে পরশুদিন আমার হাত ধইরা কী কান্দন! তোর বাপটাও শুকাইয়া গেছে চিন্তায় চিন্তায়। তুই এমনে ভাইঙ্গা পড়লে তাগো কী হইব? জোর রাখ মনে ছেরি। সময় ঠিক ঘুরব দেখিস। সেদিন চলনের লাইগা তো জোর লাগব নাকি? ওঠ কিছু খাইয়্যা ল।”
” আমার কিছুই ভালো লাগে না খালা। মরে যেতে ইচ্ছা করে। তুমি ঠিক বলছিলে খালা। আমার আর কিছুই নাই অবশিষ্ট। আমি কী নিয়ে বাঁচব বলো? আমার মরাই উচিত খালা। মরাই উচিত।” অসুস্থ আমি টেনে টেনে বললাম কান্নার সংমিশ্রণে। খালা ধমক দিল এবার। বললো,” আমার কী মাথা ঠিক থাকে সবসময়? কী বলতে কী বইল্যা ফেলছি। সেটাই মনে ধইরে আছিস। কী নাই তোর? মনে জোর ছাড়া সবই আছে তোর। এতো ছোট ভাবোস কেন নিজেরে তুই? ফারদার এমন কথা মুখে আনবি তো চোপার মধ্যে দিমু একটা। উইঠা ব। খাওন লইয়া আইতাছি।”
খালা উঠে গিয়ে খাবার নিয়ে আসে আমার জন্য। আমি কিছুই খেতে পারলাম না। তরকারির গন্ধে বমি করে দিলাম। খালা উপায়ন্তর না দেখে ভাতে পানি মিশিয়ে চটকে মুখে তুলে দিল। এবার জোর করে কিছুটা খেয়ে নিলাম আমি। তবুও দুই গালের বেশি খেতেই পারলাম না। খালা বমি পরিষ্কার করে খাবার প্লেট উঠিয়ে চলে যাবে তখনই বললাম।

” গতকাল রাতে কী হয়েছিল তোমার খালা?”
খালা সচকিত হয়ে আমার দিকে তাকাল। আমি দূর্বলতায় ভালো করে তাকাতেও পারলাম না খালার দিকে। তবুও বুঝলাম খালা রেগে গেছে আমার কথা শুনে৷ খালা যেতে যেতে কঠিন গলায় ছোট্ট করে জবাব দিল,
” কিছুই না।”
রাফসান একহাতে সিগারেট অন্য হাতে ভার্জিনিয়া উলফের লেখা মিসেস ডালওয়ে নভেলটা পড়ছিল। গভীর মনোযোগে সাথে বইটি পড়ছিল রাফসান। সিগারেট পুড়ে পুড়ে অর্ধেক, তখন টেনে নিল এক নিঃশ্বাসে। নাসিক্যছিদ্র হয়ে ধোঁয়া কুন্ডলী পাকিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। সম্পূর্ণ ডুবে গিয়েছিল বইয়ের পাতায়। রাফসানের মনোযোগ ভঙ্গ হলো মায়ের আগমনে।
” কী করছিস বাবু?”
” তেমন কিছুই না মা। এই একটা বই পড়ছিলাম। বসো।” বইটা একপাশে রেখে মা’কে বসতে বললো রাফসান। ততক্ষণে সিগারেটের শেষ অংশটুকু ফুঁকে অ্যাশট্রেতে ঠেঁসে নিভিয়ে ফেললো সে। রাহেলা বানু চোখ কপালে তুলে অ্যাশট্রের দিকে তাকিয়ে বললো,
” এতো সিগারেট খেয়েছিস তুই? এতো কেউ খায়?”
রাফসান জবাব দিল না। শুধু একচিলতে হেঁসে মায়ের কোলে মাথা রাখল। মায়ের হাতটা মাথার উপর রেখে বললো,
” একটা কথা বলি মা!”
” বল।” ছেলের চুলে বিলি কাটতে কাটতে জবাব দিলেন রাহেলা।
” আমরা কালই চলে যাব এখান থেকে।”
” কেন? কিছু হয়েছে কী?”
রাফসান বললো,

” আমার এদের একটুও পছন্দ হয় না। একপ্রকার ঘৃণা হয় সবগুলোকে দেখলে। প্লীজ মা! চলো কালই চলে যাব। তুমি ফুপিকে কিছু একটা বুঝিয়ে বলো।”
” আচ্ছা ঠিক আছে। আমি বলব আঞ্জুকে। তার আগে আমাকে এটা বল। কাল সারাদিন কিছু খেলি না কেন?”
” খেয়েছি তো। বাইরে খেয়েছি।”
” কেন? বাইরে খেলি কী কারনে ? কতো যোগাড়জান্তি করেছিল তোর জন্য। অথচ তুই ছিলিই না। রাতেও খেয়ে এলি।পছন্দ করিস না ভালো কথা। সেটা বুঝানোর প্রয়োজন কী। হাজারহোক মুরুব্বি তো? এমন করাটা উচিত হয়নি তোর।” রাহেলা বানু গম্ভীরমুখে বললেন।
রাফসান এবারও জবাব দিল না। দু’হাতে মাকে জড়িয়ে মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে নিল। রাহেলা ছেলের নিরুত্তরে মনে মনে রাগ করলেন। তিনি জানেন রাফসান যা বলতে চাইবে না। হাজার জোর করলেও সে বলবে না। মাঝে মাঝে ছেলের এমন ঘার ত্যাড়ামি স্বভাবে দারুন বিরক্ত হোন তিনি। অনেক সময় রাগ প্রকাশ করলেও এখন করলেন না। চুপ রইল মা ছেলে দু’জনই।
আজ যেতে চেয়েও যাওয়া হলো না রাফসানের। সকাল থেকেই ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। রাফসান করিডোরে হেলান দিয়ে সিগারেট টানছিল। সেই সময় একটা বাইক এসে থামল বাড়ি সংলগ্ন সরু রাস্তাটায়।কালো,নীল মিশেলের বাইকটা রাফসান আগেও দেখেছে। হ্যাঁ এ সেই অগ্নিশিখা মুগ্ধ কন্যার বাইক। কিন্তু এখানে থামল কেন?
মেহের গোপন সূত্রে অবশেষে জানতে পেয়েছে মেয়েটির ঠিকানা। এই সেই বাড়ি! প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে এসেছে সে এই বাড়িতে। আজই ভেতরে যাবে না। আগে শিওর হতে হবে তাকে। এই বাড়িই সেই বাড়ি কিনা! হেলমেট খুলে পড়নের ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেটের হুডি পড়ে নিল মেহের। প্রচন্ড বৃষ্টি মাথায় করে বাইক থেকে নামল। সতর্কতার সাথে ঘুরে ঘুরে দেখছিল প্রাচীরে ঘেরা বাড়িটি। তখনই চোখে পড়ল দোতলায় দাঁড়ানো পুরুষটিকে। বৃষ্টি তোড়ে দূরের মানুষটাকে ঠিকমতো দেখতে পেল না মেহের। লোকটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। পাছে সকল শ্রম পন্ডুর হবে ভেবে দ্রুত চলে যাওয়ার মনস্থির করল সে। বাইক দাঁড় করিয়ে অনেকটা দূর চলে এসেছিল মেহের। দ্রুত পা চালিয়ে বাইকের কাছে এসে, ফের বৃষ্টি মধ্যে পিটপিটিয়ে উপরে তাকায় মেহের। না লোকটি সেখানে আর নেই। যাক বাবা! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাইকে চড়ে বসল মেহের। নেক্সট টাইম আরেকটু প্রস্তুতি নিয়ে আসতে হবে এখানে।
” হ্যাঁলো মিস লেডি জেমস বন্ড। এই তো এলেন। এখনই চলে যাচ্ছেন যে?”
সবেমাত্র বাইক স্ট্রার্ট দেবে তখনই পেছন থেকে সেই লোকটি কথা বলে উঠল। মেহের ভয় না পেলেও ঘটনার আকস্মিকতায় ঘাবড়ে গেল। একটু অদূরে ছাতা মাথায় দাঁড়ানো পুরুষটির আপাদমস্তক দেখে নিল এক লহমায়। সুপুরুষ বলতে যা বোঝায় লোকটা তাই। বাহ্যিক রূপের এমন অনেক সুপুরুষই মেহের দেখেছে জীবনে। যাদের বাহ্যিক রূপটাই শুধু সুন্দর। ভেতরটা ভয়ংকর অসুন্দরে ভরা। আর কে জানে এই সেই রেপিষ্ট হয়তো! মেহের রাফসানকে অগ্রাহ্য করে বাইক স্ট্রার্ট দিল। বাইকের ভটভট শব্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রাফসান ছাতা মাথায় করে একদম বাইকের সম্মুখে দাঁড়িয়েছে। ঠোঁটে তার ভুবন ভোলানো মুচকি হাসি। ভুবন ভুললেও মেহের এই মুহূর্তে ভুললো না। বেশ রাগী গলায় বললো,
” সমস্যা কী আপনা? পথ আগলে দাঁড়িয়েছেন কেন?”
” ভয় পেলেন নাকি?” রাফসান বললো
” মেহের কাওকে ভয় টয় পায় না। পথ ছাড়ুন।”
” রেগে গেলেন দেখছি।”

” রাগার কথায় নয় কি? ওহ! আপনার কী ধারণা ছিল আমি লালালালা করব আপনার প্রেমে পড়ে। বিমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকব আপনার দিকে। তারপর আমাদের মধ্যে হিহি হাহা হবে আর সবশেষে ভালোবাসা কাছে আসা তাই না?” মেহের কটমট করে তাকায়। রাফসানের খুব হাসি পেল এবার। কোনোমতে হাসি সংবরন করে বললো,
” এমনটা হলে কী দোষের কিছু হবে?”
” ঐ মিয়া ফাজলামি করেন ? সরুন বলছি নয়ত মেরে মুখের নকশা পাল্টে দেব। ক্যারাটেতে ব্লাক বেল্টধারি আমি৷ সো ভালোই ভালোই সটকে পড়ুন।” মেহের বাইকের সামনের চাকা এঁকেবেকে রাফসানের পায়ের উপর উঠিয়ে দিয়েছিল প্রায়। রাফসান চট করে পিছিয়ে বলে,
” আরে আরে করছেন কী? আমি জাস্ট ফান করছিলাম। রিলাক্স মিস লেডি জেমস বন্ড। রিলাক্স। ”
” রিলাক্স মাই গাড়ির চাকা। ঐ মিয়া কে আপনি? বিয়াই না আমার দুলাভাই?”
” কোনোটাই না।”
” তাহলে ফান করতে আসেন কোন অধিকারে? নাকি মেয়ে মানুষ দেখলে ফান করতে মন চায়। আপনার তো চারিত্রিক সমস্যা আছে দেখছি।”
” আপনি দেখছি মিসানড্রিস্ট। এতোটাও পুরুষ বিদ্বেষী হওয়া উচিত নয় ম্যাডাম। আর সবাইকে এক কাতারে তুলে ভুল বুঝাটাও ভারি অন্যায়।
” কোনো ভুলটুল বুঝছি না। আপনি মিয়া সুযোগবাদী নারী শিকারী। পথ ছাড়ুন। নয়ত একদম।” মেহের রেগে ঘুষি তুলে বলে। রাফসান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কপাল চুলকে বলে,
” আপনি দেখছি সাংঘাতিক ডেঞ্জারাস মেয়ে। আচ্ছা যা হোক। যেটা জিজ্ঞেস করতে এসেছি করে ফেলি। নয়ত ঘুষি টুষি মেরেও দিতে পারেন৷”
” দ্রুত বলুন।”
” মেয়েটিকে খুঁজে পেয়েছেন? ”
রাফসানের প্রশ্ন শুনে মেহের চমকে যায়। ভ্রুকুটি করে বলে,
” কোন মেয়ে?”
” ঐ যে ঐদিন থানায় যার ঠিকানা খুঁজতে গিয়েছিলেন। কনস্টেবলের সাথে তর্ক করতে দেখেছিলাম সেদিন আপনাকে মেয়েটার ব্যাপারটা নিয়ে। আর আজ এখানে দেখলাম। ভাবলাম জিজ্ঞেস করি মেয়েটার ব্যাপারে। বাই দ্য ওয়ে আমি মোটেও খারাপ প্রকৃতির পুরুষ নই। আমি রাফসান আহমেদ। পেশায় একজন ব্যারিস্টার। থাকি চিটাগং আর এটা হলো আমার ফুপার বাড়ি। এখনও নিশ্চয়ই আগের ধারণাটাই পোষন করবেন না আমার সম্পর্কে আশা করি। নাকি করবেন?” রাফসান ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহের কিছুটা বিব্রতবোধ করল। হাসার বৃথা চেষ্টা করে বললো,
” আ’ম সরি। বাট দোষটা কিন্তু আপনারই ছিল। ওভাবে মজা কেন করলেন? আসলে আমার পেশাটায় এমন যে সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখি। তারউপর আজকাল কী হচ্ছে মেয়েদের সাথে নিশ্চয়ই জ্ঞান রাখেন?”
” ইটস ওকে। আ’ম সরি অলসো। আসলে আপনার পার্সোনালিটি প্রথমবার দেখেই মুগ্ধ আমি। কারণ আপনার মতো স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড কিছুটা আমিও। নিজের মতো একজনকে দেখে পরিচিত হওয়ার লোভ দমন করে রাখতে পারলাম না। সেদিন মিস করলেও আজ আবার আপনাকে চোখের সামনে পেয়ে কথা না বলে ছাড়তে ইচ্ছা করল না। তাই মজাচ্ছলে পরিচিত হতে চাইলাম৷ এটা নিশ্চয়ই দোষের নয়।” রাফসান চোখ ছোট করে বলে। মেহের ঠোঁট টিপে হেঁসে বলে,
” দোষের আবার দোষের না।”
” সেটা কেমন?” মেহের কিছু বলবে তার আগেই রাফসান বলে,
” এই যা! এমন ঝুম বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে রেখেছি আপনাকে। যদি কিছু মনে না করেন তো প্লীজ কাম ইনসাইড। ভয় নেই বাড়িসুদ্ধ লোক আছে৷ যদিও জানি ভয় টয় মিস লেডি জেমস বন্ড মোটেও পায় না।” রাফসান মেহের চোখাচোখি করে সশব্দে হেঁসে ওঠে। মেহের হাসতে হাসতেই বলে,
” আপনার মতো স্পেশাল ব্যারিস্টার সাহেবের আতিথ্য বাতিল করে পরে আফসোস করতে চাই না। চলুন যাওয়া যাক।” রাফসান ছাতাটা এগিয়ে নিয়ে পাশাপাশি হাঁটছে মেহেরের। যেতে যেতেই রাফসান জিজ্ঞেস করল,
” মেয়েটার কী কোনো খোঁজ পেলেন?”
মেহের সত্যিটা বললো না। সে নিজে এতোসহজে রাফসানের আতিথ্য গ্রহণ করেছে শুধুমাত্র এ বাড়ির সত্যটা জানতে। রাফসান সেধে এসে পরিচয় হয়ে ভালোই হয়েছে। তবে কিছু কনফিউশনও কাজ করছে মেহেরের ভেতর। নিজের ভাবনা চিন্তা একপাশ করে রাফসানকে জবাবের অপেক্ষায় না রেখে মেহের বললো,
” না পাই নি। তবে খোঁজ চলছে।”
” হেল্প লাগলে বলবেন। আসলে আপনার সাথে যেচে পরিচিত হওয়ার এটাও একটা কারণ। মেয়েটার জন্য কেন যেন প্রচন্ড খারাপ লাগা অনুভব করছি সেদিন বিষয়টা জানার পর থেকে।” রাফসানকে গম্ভীর দেখাল এই মুহূর্তে।
” আমি তো ভেবেছিলাম আমার উপর ইম্প্রেস হয়ে পরিচিত হয়েছেন বুঝি৷ এখন দেখছি ব্যাপারটা ভিন্ন। ” মেহের কিছুটা মজা করে বললো।
” ব্যাপারটা তেমন হলে কী খুশি হতেন?”
” খুশি আর হতে পারলাম কই? আপনি তো সব খুশি মাটি করে দিলেন। ”
” ভারি হিংসুটে মেয়ে দেখছি আপনি।”
” তাই নাকি?” মেহের চমকিত হওয়ার ভান করল।
” অবশ্যই।” রাফসান হেসে বললো।

” হবোই বা না কেন বলেন? নারী বলে কথা। নারী কখনোই আপন ভালোবাসার পুরুষের ভাগ দেয় না।”
” আফসোস তেমন নারীর ভালোবাসা হতে পারলাম না এখন পর্যন্তও।”
” এখন পর্যন্তও?” মেহের চোখ ছোট করে তাকিয়ে মুচকি হাসে। রাফসান দৃষ্টি সামনে রেখে বলে,
” বললাম তো ওটা জাস্ট ইমপ্রেস। ইমপ্রেস আর প্রেমে পড়া কিন্তু এক নয় ম্যাডাম। দু’টো ভিন্ন।”
” ইশশ! ব্যাড লাক।” মেহের আবারও হাসে। রাফসান এবার লজ্জা পায় কিছুটা। দুজনে কথা বলতে বলতে বাড়ির ভেতরে চলে আসে। রাফসান ফুপি এবং মায়ের সাথে মেহেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়। পরিচয় পর্বে রাফসান মেহেরকে ফ্রেন্ড বলে পরিচয় দেয় সবার সামনে। মেহেরও নির্দিধায় স্বীকার করে রাফসানের বন্ধুত্ব। রাফসানকে এইটুকু সময়েই দারুন লেগেছে তার। বন্ধুত্ব অস্বীকার করার প্রশ্নই ওঠে না। তার উপর কথা বলতে বলতে জানতে পেরেছে মেহের রাফসানের কলেজ ফ্রেন্ডের কাজিন৷ বয়সের দিক দিয়েও অনেকটা কাছাকাছি এজে তারা। সুতরাং অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হলো দুজনের মধ্যে।
রাহেলা বানু আড়াল থেকে একধ্যানে দেখে যাচ্ছে মেহেরকে। মেয়েটাকে তার বেশ মনে ধরেছে। তারউপর তার ছেলে যেভাবে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে, তার পোক্ত বিশ্বাস তার ছেলেও এই মেয়েকে পছন্দ করেছে। রাহেলা বানুর আনন্দ দেখে কে আর! তার ছেলে অবশেষে সংসারি হবে। নাতি পুতিতে ঘর ভরে যাবে। তার সকল আশা পূর্ণ হতে যাচ্ছে অতি শীঘ্রই বুঝি।
চলবে,,,