2. ছোট গল্প গুলোঃলেখাঃ নাজনীন সুলতানা রিমি

কালো মেয়ে !! লেখাঃ নাজনীন সুলতানা রিমি

এতোগুলো বিয়ের সমন্ধ এলো,
কারোরই নাকি মায়াকে পছন্দ হয় না কেননা, মায়ার গায়ের রংটা কালো।
রাস্তার মানুষ মায়াকে যখন রাস্তায় চলতে পিরতে দেখে কতো নানান কথা বলে,,,
এই মেয়ে দেখতে কি কুসচিৎ কি কালো এই মেয়েকে কে বিয়ে করবে আরো কতো কথা রোজ রোজ মায়া শুনে।
সে কি নিজে থেকে কালো হয়েছে, সে কি নিজে নিজেকে তৈরি করেছে নাকি উপর ওয়ালা তাকে সৃষ্টি করেছে,,,
মানুষ যদি নিজে নিজেই সৃষ্টি হতে পারতো, নিজেকে গড়তে পারতো তাহলে সে নিজের মতো সুন্দর করে তার মনের মতো করে নিজেকে তৈরি করতো।
ভার্সিটিতে যেতে পারেনা মায়া তার সমবয়সীরা একই কথা বলে তোর মতো “কালো মেয়ে “এখানে কি করে রে, বাড়িতে বসে থাকতে পারিস না। তোর দিকে তো কোনো ছেলেও পিরে তাকায় না কেনো আসিস ভার্সিটিতে,,
কিছুই বলে না মায়া মাথা নিচু করে সব শুনে চলে আসে,,

 

 

বাড়িতে এসে মন খারাপ করে চোখের পানি দিয়ে মাথার নিচের বালিশটি ভিজায় ……
বাড়িতেও তার নেই কোনো শান্তি বাবা ও কতো কথা বলে,, বলে এই মেয়েকে আমার জন্ম দেখয়াটাই ভুল এতো কালো একটা মেয়ে হবে আমি কখনোই ভাবতে পারিনি আর যদি জানতাম তাহলে এই পৃথিবীতে আসার আগেই মেরে দিতাম।
.
নিজের বাবা যদি এমন কথা বলে কার মন চাইবে এই পৃথিবীতে থাকতে আর বাবাই বা কি করবে বয়স হয়েছে মেয়েকে বিয়ে দিবে এই দুনিয়া থেকে যাওয়ার আগে মেয়ের সুখ দেখে যাবে কোন বাবাই না চায় এমনটা।
আর মায়ার বাবাওও তার মেয়ের জন্য তাই চেয়েছিল, কিন্তু রাস্তার, বাড়ির প্রতিবেশীরা যদি রোজ রোজ নিজের মেয়ের নামে এমন কথা বলতে থাকে কার ই বা ভালো লাগে।
আবার কতো গুলো বিয়ের সমন্ধ ও ভেঙেছে।
মায়া নিজেকে শেষ করতে চেয়েছিল কয়েকবার পারেনি নিজের মায়ের কথা ভেবে।
ও যদি নিজেই চলে যায় তার মা বাবার কে খেয়াল রাখবে,,
কে তাদের দেখবে,,
লোকের নানান কথা শুনা থেকে বাচার জন্য আজ বোরকা পড়ে গেলো ভার্সিটিতে,,
আনমনে হাটছে মায়া,,

 

নিস্তব্ধ রাস্তা নেই কোনো লোকজন, কয়েকটা গাড়ি চলছে ………
কিছু ভাবতে ভাবতে হাটছে মায়া আশে পাশে যে গাড়ি চলছে সেই দিকে কোনো হুস নেই।
হঠাৎই কোনো এক গাড়ি আচমকা তাকে ধাক্কা দেয়,,
কিন্তু, ধাক্কাটা লাগেনি সামান্য একটু লেগেছিল যার কারনে সে রাস্তায় পড়ে যায় হাতে একটু ব্যথা পায়।
স্পর্শ :সরি, সরি আমি দেখিনি (গাড়ি থেকে দৌড়ে নেমে এসে মায়াকে উঠিয়ে বলল)
আপনার কিছু হয়নি তো, লাগেনি তো। আসলে গাড়িটা ব্রেক চাপতে গিয়ে আপনার গায়ে ধাক্কা লাগে যার জন্য আমি খুবই দুঃখিত।
আমাকে মাফ করে দিবেন প্লিজ,,
মায়া :না, আমার কিছুই হয়নি। আপনি মাফ চাচ্ছেন কেনো? রাস্তা দিয়ে আমিই খেয়াল করে হাঁটিনি তাই ধাক্কাটা লেগেছে। এতে আপনার কোনো দোষ নেই।
স্পর্শ অবাক হয়ে গেল, গাড়ি থেকে ধাক্কাটা ওর কারনেই লেগেছে আর এই মেয়ে বলে কিনা তার নিজের কারনেই এইসব হয়েছে।
.
স্পর্শ মায়ার হাতের দিকে চোখ যেতেই দেখলো যে অনেকটা কেটে গেছে হাত মায়ার।
স্পর্শ :এমা আপনার হাত তো দেখি কেটে গেছে,,,
চলুন আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাই আসুন আমার সাথে,,
মায়া :এইটুকুতে কিছুই হবে না, হসপিটালেও যেতে হবে না। সেরে যাবে ………
স্পর্শ :না, আমি বললাম না আপনাকে আমার সাথে যেতে (এক প্রকার রাগ দেখিয়ে বললো)
মায়া :আমি বললাম তো…………
স্পর্শ :আমি বলছি আমার সাথে যেতে,,

 

স্পর্শ জোর করে মায়াকে তার সাথে হসপিটালে নিয়ে যায়। মায়াও কোনো কথা বারায়নি ভদ্র মেয়ের মতো চলে গেল। আর, স্পর্শ যেভাবে বললো না যেয়েও পারছে না।
মায়াকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে হাতে বেন্ডেস করিয়ে দিলো নার্স।
স্পর্শ :আচ্ছা, আপনার নাম কি?
মায়া :আমার নাম মায়া,
স্পর্শ :মায়া, অনেক সুন্দর একটা নাম তো। আপনার মা -বাবা অনেক ভালো একটা নাম রেখেছে আপনার, আপনার কথা গুলো ও না অনেক মায়া মায়া জানেন কি।
.
মায়া এই প্রথম কারো কাছে তার একটু সুনাম শুনলো। মনটা খুব হালকা ও লাগছে কারো মুখে শুনে।
মায়া :ধন্যবাদ, আপনার নাম?
স্পর্শ :জ্বি, আমি স্পর্শ চৌধুরী।
মায়া :আপনার নামটাও অনেক সুন্দর,,
স্পর্শ :হুম, ধন্যবাদ।
কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি আপনাকে?
মায়া :হ্যাঁ বলেন?
স্পর্শ :আপনি বোরকা পড়ে আছেন কেনো? I mean এখনকার যুগের মেয়েরা তো বোরকা পড়ে না। কতো স্টাইলিশ ভাবে চলে আপনি এভাবে,,,
মায়া কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,,
মায়া :আমি ওইসব পছন্দ করি না।
একজন মুসলিম মেয়ে হিসেবে আমার এভাবেই চলা পেরা করা উচিত তাই আমি।
স্পর্শ :গুড।
আচ্ছা, চলেন যাই আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসি,,
মায়া :চলেন?
.
স্পর্শ আজ প্রথম কোনো মেয়েকে দেখলো এমন আন -স্টাইলিশ ভাবে মায়ার কথা শুনে তার খুব ভালোও লাগছিল।
স্পর্শ তার জিবনে খুব ভালো নম্র -ভদ্র, লজ্জাশীল, পর্দা কারিনি মেয়ে চেয়েছিল।
সে যেমনই হোক না কেনো সে স্পর্শকে খুব ভালো বাসবে, তার পরিবারের সবাইকে ভালোবাসবে। নিজের সংসারের মতো তার সংসারটাকে গুছিয়ে রাখবে এমনটাই চেয়েছিল সে।
আর আজ হয়তো মায়াকে তার সেই মেয়েটার মতোইই মনে হলো।
স্পর্শ মায়াকে বাসায় ছেড়ে দিলো।
কেনো জানি তার খালি মায়ার কথাগুলো কানে বাজছে, প্রতিটা কথার শব্দ, তার কণ্ঠ টা বেশ সুন্দর মিষ্টি।
একদিন স্পর্শ হঠাৎ করেই মায়ার ভার্সিটিতে গিয়ে উঠে,,
গিয়ে যা দেখলো,,,
ভার্সিটির এক মেয়ে :কিরে মায়া তোকে কতো বারন করলাম ভার্সিটিতে না আসতে বাড়িতে থাকতে, তুই জানিস না তোর মতো “কালো মেয়েকে কেউ দেখতে পারে না। তাও কেন আসিস?
মায়া :আচ্ছা, তোমার পছন্দের রং কি গো?
ভার্সিটির একমেয়ে :কেনো, কালো আর সাদা।
মায়া :তোমার পছন্দের রং কালো, অথচ তুমি কালো মানুষকেই দেখতে পারো না। এ কেমন পছন্দ তোমার, আচ্ছা আমি কালো এটা কি আমার দোষ নাকি আল্লাহ তার নিজের সুন্দর সৃষ্টি দিয়ে আমাকে তোমাকে তৈরি করেছে।
সৃষ্টির সেরা জীব তো মানুষ তাই না,, তাহলে সেরা জীবকে কেনো অপছন্দ করো কেন তাদের ঘৃনা করো।
আমি কালো মেয়ে, তুমি যদি এখন আমার যায়গায় থাকতে তোমাকে যদি কেউ এভাবে বলতো তাহলে তোমার কেমন লাগতো বলো তো। নিশ্চয়ই খুব কষ্ট, নিজের কথা ভেবে, নিজেকে বললে তোমার কাছে কেমন লাগবে তারপর না হয় অন্য মানুষটিকে বলতে আসবে।
অবশেষে, একটা কথা বলি ……
রাতের আধার কালো, তোমার চুল কালো, কুরআন শরিফের অক্ষর কালো তো মানুষ কালো হবে তাতে সমস্যা কোথায়। আর কিছুই বলবো না যাই আমি ভালো থেকো।
মেয়েটি হা করেই থাকলো ঠিক কথাই বলে গেছে মায়া।
স্পর্শ :আপনার কোনো তুলোনা হয় না সত্যি খুব ভালো আপনি,,
আপনাকে একটা কথা বলবো?
মায়া :হ্যাঁ বলুন?
স্পর্শ নিচে হাঁটু গেড়ে বসে,,
মায়ার একটু হাত নিজের হাতে নিয়ে,,
স্পর্শ :আমি ঠিক তোমার মতো একটা মেয়ে আমার জিবনে চেয়েছিলাম, চেয়েছিলাম তার মনে থাকবে না কোনো ঘৃনা না থাকবে হিংসা। যা আপনার মধ্যে আছে,,
আমি নিশ্চিত আপনাকে আমার জিবনে পেলে আমি ধন্য খুবই বড় একজন মানুষ হবো।
হবেন কি আপনি আমার জিবন সঙ্গী?
মায়া চোখের পানির জন্য কথা বলতে পারছে না, এই প্রথম কোনো ছেলে তাকে ভালোবাসার কথা বললো। নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না,,
মায়া :ছেড়েদিন এইসব আপনি আমাকে পছন্দ করলেও আপনার পরিবার কখনো আমাকে পছন্দ করবে না,,
স্পর্শ :কে বললো আমার পরিবারের সকল সদস্য তোমার বাড়িতে আমাদের বিয়ের ডেট পিক্স করতে গেছে। আমার পছন্দই তাদের পছন্দ,, বিয়ে করে আমি তোমাকে নিয়ে সুখে সংসার করবো তারা না তো তাহলে কেনো এতো কথা হচ্ছে …………..
মায়া :সত্যি ভালোবাসেন আমায়?
স্পর্শ :হ্যাঁ নিজের থেকেও বেশি, প্রথম তোমার কথা শুনেই তো প্রেমে পরলাম,,
মায়া :আমি ও ভালোবাসি আপনাকে,,
দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরলো,,
স্পর্শ :কোনো দিন এই #কালো_মেয়ে কে কেউ কিছুই বলতে পারবে না তার স্পর্শ এসে গেছে।
“সমাপ্ত ”
[অবশেষে দুটি কথা বলি,,
১/কালো মানুষকে কখনো নিদ্রা করবেন না, কেননা তাদের মন মসজিদের চেয়েও পবিত্র, তাদের মধ্য থাকে না কোনো হিংসা।এখন কার যুগে কালো মানুষের কোনো দামই নেই,ছেলেরা তো স্টাইলিশ সুন্দরী মেয়ে খুজে। আবার কিছু ছেলে মেয়েদের বলে ময়দা সুন্দরী ওরা কেনো ময়দা মাখে ওটা জানতে চাননা আপনারা ছেলেরা, আপনাদের জন্যই তো ওরা ময়দা মাখতে বাধ্য হয় কেননা আপনারা সুন্দরী মেয়ে খুঁজেন আর তারা ও সুন্দরী হতে গিয়ে মাখে।
২/ কালো মানুষ খুবই ভালো স্বাভের তারা মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করে,তাদের ভালোবাসতে শিখুন বুঝতে শিখুন দেখবেন তাহলে কেমন তারা,সবাইকে আবার বলছি না যে আপনারা কালো মানুষ অপছন্দ করেন না সবাই করেনা কিছু মানুষ আছে স্পর্শের মতো যারা মায়ার মতো মানুষ চায়,
এই গল্পটা লিখলাম আজ একজন মানুষের কালো মেয়েদের নিয়ে কিছু বলতে।
বিঃদ্রঃ দয়া করে ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ]

👉আরো দেখে নিন