একঝাঁক জোনাকির আলো

একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 47

__________________________
” একটু ছুঁয়ে দেখবো??”
” শুধু একটু খানি??”
” শুধু হালকা ছুঁয়ে অনুভব করবো ভালোবাসা।”
” হাতটা ধরতে দিলেই হবে!!”
” তাও দিতে না চাইলে আঙুল ধরি??”
” তবুও একটু ছঁয়ে দেখি??”
” একটু জড়িয়ে ধরতে দিবে??”
” বেশি বলছি না??”
” খুব কি বেশি বলছি??”
” বড্ড বেশি দাবি করছি না??”
” তবুও লোভ সামলাতে পারছিনা।”
” পারছিনা আবেগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে।
আমি পারছিনা তোমাকে এত কাছে দেখেও একটু না ছুঁয়ে দুরে থাকতে।”
” আমি অসহায়।”
” একটু, একুটু ছুঁয়ে দেখি??”
.
কথাগুলো বলছে আর চোখের বাদ ভাঙা আর্তনাদে ভেঙে পরছে নিভ্র।সে পারছে না নিজেকে আটকাতে। কি বলছে তাও জানে না।সাফাকে একটু ছুঁয়ে দেখার প্রবল ইচ্ছা তার।সাফা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।নিভ্র কান্নায় এবার বসে পরে।সাফা হতভম্ভ হয়ে নিভ্রর কার্য দেখছে।সাফা কাঁপাকাঁপা পায়ে এগিয়ে যায়।নিভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়।নিভ্র লাল লাল ভেজাঁ চোখে তাকায়।একবার সাফার মুখের দিকে একবার তার হাতের দিকে।তাকে দেখে সাফার এখন ক্ষুধার্ত মানুষ মনে হচ্ছে। যে খাবারের জন্য একদম অসহায় হয়ে পরেছে।হুম নিভ্র ক্ষুধার্ত। ভালোবাসার ক্ষুদাটা কয়েকবছরের। দুইটা বছর পরে ভালোবাসার মানুষকে দেখে কিছু না বলতে পারাই তার অসহায়িত্ব।নিভ্র কাপাঁ হাত এগিয়ে দিতেই সাফা ভয়াত্নক চাহনি দিয়ে হাত সরিয়ে ফেলে।নিভ্র অসহায়ের মতো তাকায়।আকাশে বিকট মেঘের গর্জন শুরু হয়।আকাশি আকাশটা কালো মেঘে ডেকে পরে।সাফার নীলাভ চোখে ভর করে পানি।বৃষ্টি ঝড়ার আগেই সাফার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরা শুরু হয়েগেছে। নিভ্র তাকালো। অসহায়ের মতো করুন কন্ঠে বললো……..
—” একটু কি ছুঁতেও দিবে না??”
.
কথাটা সাফার কলিজায় লেগেছে।সে ভেবেছে নিভ্র তাকে কত শাস্তি দিবে।কত বোকবে।কত কইফিয়ত চাইবে।কিন্তু নিভ্র, নিভ্র এভাবে ভেঙে পড়বে এটা সে ভাবতেই পরছেনা।তার মতে নিভ্র কঠোর মানুষ।কঠিন তার ভাব।এটেটিউড, পার্সোনালিটি সব একদম শক্ত মনের।কিন্তু নিভ্রর এমন আবেগি কথা।এতটা কষ্টে সাফা বাকরূদ্ধ।তার সারা শরীর কেঁপে উঠেছে কথাটা শুনে।শরীরের খাঁজে খাঁজে দ্রুত রক্ত প্রবাহ হচ্ছে। মনে হয় সেকেন্ডেই এর গতি বারছে।হাড়ে হাড়ে কাঁপন ধরছে।সাফা আবার একবার সাহস নিয়ে নিভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে পরে।হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি নামে।চারদিক বিদ্যুৎ চমকে উঠে।কালো মেঘে ডাকা আকাশ হঠাৎ হঠাৎ ফর্সা হয়ে উঠছে।সেই ফর্সা আলোতে নিভ্রর লাল হয়ে আসা চেহারাটা দেখা যাচ্ছে। সাফা কাঁপা গলায়।কান্নায় জড়িয়ে আসা সুরে বলে উঠে……………
—” আ আপ আপনার হাতে কি হয়েছে??এভ এভাবে কাঁটলো কি ক করে??”
নিভ্র চকিতেই তাকালো।চোখে মুখে অদ্ভুত চাহনি।মনের মাঝে ধুকপুকানি বেড়েই চলেছে।স্বপ্ন দেখছে না তো??সাফাই দাঁড়িয়ে আছে??নিভ্র সকল প্রশ্নকে উপেক্ষা করে নিজের সেলাইনের নল ছিড়ার সময় কাটাঁ হাতে জোড়ে একটা চাপ দেয়।নিভ্রর ব্যথার অনুভুতির আগেই সাফা চিৎকার দিয়ে বলে…….
—” কি করছেন কি পাগল হলেন নাকি??এখনই আবার রক্ত বের হবে।কিছুক্ষন আগের ঘা।এখনো শুকোই নি??”
.
বলেই নিভ্রর সামনে হাটুগেড়ে বসে পরে।নিভ্র অপলক দেখছে।এই মেঘে ডাকা পরিবেশেও মেয়েটাকে কত সুন্দর লাগছে।কিভাবে কারো রূপ এতটা স্নিগ্ধ হতে পারে??কিভাবে এত মায়ায় কারো চেহারা হতে পারে??সাফাকে এতো উত্তেজিত হতে দেখে নিভ্র অবাক হলো।মেয়েটা তো তাকে ছেড়েই এসেছে।তবুও এত দরদ কিভাবে?? এটা কি দয়া??নাকি অনুভুতির বহিরপ্রকাশ??নিভ্র বুজলো না।শুধু তাকিয়ে আছে সে।সাফার মুখ বেয়ে পানি পড়ছে। নিভ্র সেই দৃশ্যও মুগ্ধ হয়ে দেখছে।যেনো কত সুন্দর এই দৃশ্য!!সাফা এবার কান্নায় ভেঙে পড়েছে।কান্না জোড়িতো চোখে নিভ্রর দিকে তাকায়।কত দিন পরে লোকটাকে সামনে থেকে দেখছে।কত কত দিন পরে।লোভ হচ্ছে একবার জাপ্টে জড়িয়ে ধরতে।কিন্তু সে তো অপরাধী। এটা কি সে করতে পারবে??নিভ্র কি তাকে ক্ষমা করবে??কাপাঁ হাতে নিভ্রর রক্ত ঝড়া হাত নিজের কোলে নেয় সাফা।তারপর সেই হাত আবার নিজের হাতের ভাঁজে নিয়ে গালে রাখে।সাফা হাত গালে রেখেই চোখবুজে।সারা মন জুড়ে যেনো শিহরণ বইছে।রঞ্জে রঞ্জে বহমান ব্যথার জেনো অবসান হচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত কলিজায় জেনো কেউ মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। চোখ দিয়ে যেনো বৃষ্টির চাইতেও বেশি পানি ঝড়ছে।নিভ্রর চোখবুজে আসছে।তবুও চোখজোড়া খুলে রেখেছে।সাফার চোখবুজে থাকা স্নিগ্ধা চেহারাটাই তার ভালো গালছে।আর কোনো ভাবেই সাফার ছোঁয়া গুলো মিস করতে চায় না।চোখবুজলেই যদি সব স্বপ্ন হয়??না সে চোখ বন্ধ করবে না।কিছুতেই না।নিভ্র হাটুতে ভর দিয়ে এগিয়ে গেলো।সাফার সামনে আর একটু এগিয়ে গেলো।পিছঢালা রাস্তা নিজের রং পরিবর্ত করছে।দু’টি বিরহে কাতর মনও নিজেদের সাথে আলাপ করছে।তবে বুহু দুরে তারা।।সাফা চোখ খুলছে না।নিভ্রর একটু দেখতে ইচ্ছে করছে সাফার নীলাভ চোখ জোড়া।কিন্তু দেখতে পারছে না।সাফা এবার কাঁপছে।নিভ্রর চোখও ঝাপসা হয়ে আসছে।সাফা পানির ঝাপটা গুলো গায়ে মাখছে।চোখের পাপড়ি বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।সাফা এবার চোখ খলে তাকালো।নিভ্রকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠে……
—” আপনি এখানে কি করছেন??আর আপনার গায়ে হসপিটালের জামা কেনো??”
নিভ্র কথা বলছে না।শুধু তাকিয়ে আছে।কান্না থেমে গেছে।কথা গলায় আঁটকে আছে।শুধু চোখ ভরে দেখছে।নিভ্রর মনে হচ্ছে জীবনটা এখানেই থেমে গেলে কত ভালো হতো।ইশশশ্।নিভ্র সব মুহূর্তকে থমকে দিতে চায়।সাফা নিভ্রর চোখের দিকে তাকাচ্ছে না।এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।নিভ্রর মুখের জামার চারপাশে তার চোখ বিচরন করছে।কিন্তু সে কিছু বলছেনা কেনো??সাফা কাপাঁ গলায় বলে,
—” কি হয়েছে আপনার প্লিজজ কিছু বলেন??এখানে এই সময়ে আপনি কি করছেন??”
—” তোমাকে খুজঁছি সাফারানী।”
সাফা আঁৎকে উঠে।কত দিন পড়ে এই কথাটা শুনেছে।এই নামে সে আবার ডেকেছে।সাফার শরীর কাপঁছে। কম্পোনের ঝঙ্কার তার সম্পূর্নময় ছড়িয়ে পড়ছে। নিভ্র কিছু বলছে না।তার কিছু মনেই পড়ছে না।কি বলবে কিছু খুঁজে পাচ্ছে না।শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।শুধু দেখতে ইচ্ছে করছে।আর কিছুতেই তার মন নেই।
_________________________
অভ্রর ঘুম ভাঙ্গতেই সে বেডের দিকে তাকায়।নিভ্রকে না দেখেই সে লাফিয়ে উঠে বসে।নিভ্র কোথায়??অভ্র বিস্মিত হয়ে এদিক ওদিক তাকায়।আরিফ আর সাখাওত চৌধুরী এখনো ঘুমাচ্ছে।অভ্র ছন্নছাড়ার মত চারদিকে খুঁজতে শুরু করে।কয়েকবার,
—” নিভ্র, নিভ্র
করেও চেঁচিয়েছে।অভ্রর চেঁচামেচিতে সবাই উঠে পড়েছে।তারাও হন্তদন্ত হয়ে নিভ্রকে খুঁজা শুরু করে।অভ্র আরিফকে চেঁচিয়ে বলে,
—” ঘুমাচ্ছো কেনো??আর আমাকে ডেকে তারপর ঘুমাতে পারতে??এখন নিভ্রকে কথায় খুঁজবো??আজ ওর টেস্ট করানোর কথা।এখনি ডাক্তার ডাকবে বোদ হয়।খুঁজো তাড়াতাড়ি। ”
সম্পূর্ন হসপিটাল তনতন করে খুঁজা হয়েগেছে কিন্তু নিভ্রকে পাওয়া গেলো না।অভ্র মাথায় হাত দিয়ে বসে পরে ফ্লোরে।আরিফ পাশে বসে।হঠাৎ করেই আরিফ বললো,
—” সাফার খোঁজে গেলো না তো আবার??”
অভ্র মাথা তুলে তাকায়।কেবিনে দৌড়ে যায়।নিজের গাড়ির চাবি খুঁজে।চাবি নাই।তারমানে নিভ্রই নিয়েছে।আরিফের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করে,
—” সাফার বাড়ি কই??”
—” সেখানে সাফা নামের কেউ নেই ভাই??”
—” আরে না থাকলে নাই। সাফার সে নকল বাড়িতেই নিভ্র গেছে। চলো তাড়াতাড়ি আমাকে নিয়ে চলো।”
—” আচ্ছা ভাই।”
__________________________
—” আমি তোমাকে ভালোবাসি সাফারানী।”
সাফা অবাক।এতসময় থেকে এত প্রশ্ন করছে কিছুর উত্তর না দিয়ে সোজা ভালোবাসিতে চলে গেছে।সাফার চোখের পানিতে আর বৃষ্টির পানিতে মিশে এক হয়ে যাচ্ছে।নিভ্র তাকে এত ভালোবাসে??কিন্তু সে তার ভালোবাসার গভীরতাই বুঝতে পারে নাই।সাফা হতভম্ভ হয়ে বসে আছে।দৃষ্টি জোড়া নিভ্রর দিকে।নিভ্র বসে আছে সেই ভাবেই।রাস্তা ফাঁকা।দারোয়ান উঁকি দিয়ে দেখছে আর অবাক হচ্ছে। নিভ্রনীল এভাবে এই মেয়েকে খুঁজে বেড়াচ্ছে??কেনো??সে জানে না।তবে ভালোবাসার মামলা এটা বুঝে গেছে।নিভ্রর হাতে বৃষ্টির পানি পড়ে রক্তগুলো মেশে গেছে।নিভ্রর সবুজ চোখ ঘোলাটে হয়েগেছে। নিভ্র আবার বলে,
—” আমি ভালোবাসি তোমাকে।”
সাফা কিছু বলছে না।শুধু কাঁদছে।সত্যিই নিজেকে অপরাধী লাগছে।নিভ্র এবার আর বেশি কিছু বলতে পারলো না।খুব সাবধানে চোখবুজে সাফার বুকের উপড় পরে যায়।সাফার হৃৎপিন্ডের শব্দ বেড়ে যায় হাজার গুনে।নিভ্রর দুই’বাহু ধরে সাফা উত্তেজিত হয়ে বললো,
—” ডাক্তার কি হয়েছে আপনার??ডাক্তার!!ডাক্তার!!”
নিভ্র নিশ্চুপ। সাফা ডেকেই চলেছে।গাড়িটা তাদের পাশেই ব্রেক করে।সাফা এক হাতে চোখ ডাকে।অভ্রকে নেমে আসতে দেখেই সাফার অবাক লাগছে।অভ্র এখানে??অভ্র সাফার দিকে তাকানোর সময় পেলো না।দ্রুত দৌড়ে নিভ্রকে টেনে নিজের বহুতে নেয়।উত্তেজিত হয়ে নিভ্রকে গাড়িতে উঠায়।তাকে কোনো অংশে পাগলের চেয়ে কম লাগছে না।আরিফ হা করে সাফাকে দেখছে।সাফা বসে আছে।আরিফের এত এত রাগ উঠছে তার ইচ্ছে করছে সাফার সব চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে।কিন্তু সে এমন কিছুই করলো না।সাফার উড়না টেনে তাকে দাড় করালো।আর নিভ্রর পাশেই টেনে বসিয়ে দিলো।সাফা হতভম্ভ হয়েই আছে তার সাথে কি হচ্ছে সেদিকে তার খবর নাই।আরিফ নিজে থেকেই বললো,
—” যদি স্যারের মাথা কোল থেকে নামও না! তাহলে এই ক্যাবলাকান্ত কি করতে পারে দেখাবো।
সাফা কিছুই বললো না।সে আকর্ষীক ভাবে শক্ট হয়ে আছে।কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই তার মাথায় নেই।
_______________________
সাফাকে দেখে বাড়ির প্রতিটা মানুষ অবাক।কিন্তু কেউই তাকে কিছু করলো না।কিছু বললো না।উল্টা তাকে জড়িয়ে কেঁদে চলেছে।সাফা কিছু বলছে না।তার মাথায় কিছুই নেই।সে শূন্য হয়ে চার দিকে তাকাচ্ছে।চোখের পানি আপনাআপনি পড়ছে।সে কাদঁছে না তবুও পড়ছে।সে বুঝতেই পাড়ছে না।তার সাথে হচ্ছে কি??সাফাকে একটা চেয়ার টেনে ইফতেখার বসিয়ে দিয়েছে।সাফা অবাক হলো না তার বাবা আর ঝুমাকে দেখে।আর সে এটাও জানে সবাই সব যেনে গেছে।কেনো সে চেলে গেছে?? কেনো এত লুকুচুরি?? কেনো এত পালিয়ে বেড়ানো??ইফতেখার সাফার পাশে বসে।রাফা অপরাধীর মাত সাফার এক হাত ধরে ক্ষমা চাচ্ছে।কিন্তু সাফা এটাই বুঝতে পারছেনা সবাই ক্ষমা কেনো চাচ্ছে।যেখানে এটা তার চাওয়া উঁচিত।সবার কথা ফেলে সাফা জোড়ে একটা কথায় জিজ্ঞেস করলো,
—” ডাক্তার সাহেবের কি হয়েছে??”
সবাই চুপ।চারদিকে পিনপিনে নিরবতা। সাফা সবার দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকায়।কেউ কিছু বলে না।বলছে না কে??সাফা গলার স্বর উঁচু করে বলে,
—” কি হয়েছে উনার??কেউ বলছেন না কেনো??”
সবাই কাদঁছে। মোহনা কেঁদে কেঁদে এই দুইবছর পাঁচ মাসের ঘটনা বর্ননা করেছে।সাফা হিতাহিত জ্ঞান শূন্যের মত সবার দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলছে সবাই??এতটা কষ্ট সে কি করে সবাইকে দিলো??আর নিভ্র??সাফা আর ভাবতে পারলো না।চিৎকার করে কেঁদে উঠে।সে কি করে এতটা কষ্ট দিলো নিভ্রকে??সবার কথা ভেবেছে।কিন্ত একবারো নিভ্রর কথা কেনো ভাবলো না??কেনো নিভ্রর কি হবে এটা ভাবে নি??নিভ্রর ভালোবাসার গভীরতাও সে উপলব্ধ করতে পারেনি।কেনো??এতটা নির্বোধ সে??সাফার বাঁধভাঙা কান্নায় সবাই অস্থির হয়ে তাকে থামাতে চাচ্ছে।কিন্তু পারছে না।এত দিনের জমানো সব কান্না সে ঢেলে দিচ্ছে আজ।নিজেকে উজার করে কাদঁছে সে।সে কি করে পারলো নিভ্রকে এভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিতে??এটা কি তার ভালোবাসা??তার ভালোবাসা তো নিভ্রর কাছে কিছুই না??সে নিভ্রর এত ভালোবাসার যোগ্য না।এতটা কেউ কিভাবে ভালোবাসতে পারে??কিভাবে??সাফার মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। দু’হাতে মাথা চেঁপে সে ফ্লোরে বসে পড়ে।ভিজা জামা, ভিঁজা শরীর সব কাপঁছে। হসপিটালের সবাই এই দৃশ্য অদ্ভুত ভাবে দেখছে।তারাও ভাবছে এতটা ভালোবাসা কি যায়??সাফার কান্নার গতি কমছেনা।সে নিভ্রর কাছে চরম অপরাধী। নিভ্র কি তাকে ক্ষমা করবে??করাও উচিঁত না।ক্ষমা করলেও সে নিজেকে করবে না।দোষি সে।পরিবারের কথা ভেবেছে,কিন্তু একবারো নিভ্রর তাকে ছাড়া কি হবে তা ভাবে নি??নিভ্রর কথাই সে ভাবে নি।কি করে পাড়লো!!
সবাই পরিস্থিতির শিকার।অভ্র নিজেকে আড়ালে রাখতে চাচ্ছে।নিজেকে সে ও ক্ষমা করতে পারছেনা।কিভাবে ভাইয়ের সাথে চোখ মিলাবে তাই ভাবছে সে।কিন্তু তারও দোষ নেই।কেউই দোষিনা নিজ জায়গায় সবার এমনটাই হওয়া উঁচিত ছিলো।কিন্তু নিভ্র??সে সব দিক থেকে কষ্টের শিকার।কোনো দোষ না করেও সে কষ্ট পাচ্ছে।সবচাইতে বড় ক্ষতি তারিই হয়েছে।কথাগুলো এক মনে ভাবছে আরিফ।সবার জীবন একজনকে ঘিড়ে।একটা জিনিসকে ঘিরে তা হলো ভালোবাসা।সাফা পরিবারকে ভালোবাসেছে তাই সেক্রিফাইজ করেছে।অভ্র সাফাকে ভালোবাসেছে সাথে তার ভাইকে ভাইকে সে বেশি ভালোবাসেছে তাই তার জন্য সে নিজের ফিলিংস গোপন রাখতে চেয়েছে।আর বাকি রইলো নিভ্র।যে সবচাইতে হতবাগা।সে নিজের সব উজার করে ভালোবাসেছে সাফাকে।কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতি তাকে কত কষ্ট দিয়েছে।কত দুঃখ দিয়েছে।যা তার প্রাপ্য ছিলো না।ভাগ্য বলে একটা ব্যাপার আছে।যা সত্য।নিভ্রর ভাগ্যও তেমনটাই করেছে তার সাথে।
________________________
নিভ্রকে বেডে দেওয়া হয়েছে।তার জ্ঞান আছে।এবং মোটামুটি সুস্থ ফিল করছে।প্রকৃত পক্ষে তার মনটা বেশ ভালো এখন।সাফাকে তার মনের রানীকে পেয়েগেছে বলে কথা।নিভ্র বেডের বালিশে ঠেসস দিয়ে বসে আছে।পরিবারের সবাই এমন কি সাফার বাবা ঝুমা সবাই তার সাথে দেখা করেছে কিন্তু যাকে দেখার জন্য তার মন মরিয়া সে কোথায়??নিভ্র এদিক ওদিক চোখ বুলায়।কিন্তু সাফা কই??আরিফ হালকা হেঁসে বলে,
—” স্যার দরজার দিকে তাকান।”
নিভ্র দ্রুত তাকালো।সাফার চোখমুখ সব ফুলে আছে।কতটা কেঁদেছে নিভ্র না দেখলেও ঠিকই বুঝতে পেরেছে।সাফা এখনো ভিজাঁ জামা পড়ে আছে।নিভ্রর মেজাজ গরম হয়।তার সব টেস্ট করাতে কম করে হলেও চারপাঁচ ঘন্টা লেগেছে।আর এখন রাত বারোটার কাছাকাছি বাজে।নিভ্রর মনে হচ্ছে দুইবছরের সব কষ্ট সে ভুলেগেছে।সব স্বাভাবিক লাগছে তার।সাফার মাথায় হেজাব।এটা দেখে নিভ্রর কেনো যেনো খুব ভালো লাগছে।তার থেকে পালাতে নয় অন্য কারনে এই হেজাব পড়েছে সে।তা নিভ্র চট করেই ধরে ফেলেছে।আরিফ একটা ছোট কাশি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে।সাফা এগিয়ে আসছে না।সাহস হচ্ছে না নিভ্রর পাশে বসার, চোখে চোখ রাখার।নিভ্র চোখ সরিয়ে সামনে তাকায়।তারপর বললো,
—” ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি??”
সাফা চট করে মাথা তুলে তাকায়।আপনি করে কেনো বলছে নিভ্র??তবুও সাফা এগিয়ে গেলো।নিভ্রর পাশে দাড়ালো।বুকটা কাপঁছে। কত দিন কত বছর পড়ে ভালোবাসার মানুষটাকে দেখছে।সেই চেনা মুখ,চিরচেনা সেই সবুজ চোখ আর সেই ভালোবাসা ভরা চাহনি।সাফার কান্না ধিরে ধিরে বাড়ে।নিভ্র একবার তাকিয়েই চোখ সরিয়ে ফেলে।সাফার চোখ ভরা কান্না তার কখনোই ভালো লাগতো না।আর এখন তো আরো ভালো লাগছে না।মনে হয় মুহূর্তেই বুকে ব্যথা হয়।সাফা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাদঁছে। নিভ্র ধমকের সুরে বলে,
—” বসার জন্য কি ইনভাইটেশন দিতে হবে??”
সাফা বসে পরে।কান্না থামনে না।
নিভ্র বলে,
—” তুমি আগের থেকে খুব সুন্দর হয়েগেছো।
সাফা নিভ্রর দিকে একবার তাকিয়ে আবার কান্নায় মন দেয়।
নিভ্র নিজের মত বলে,
—” হেজাবে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।আচ্ছা হেজাব কেনো পড়ো??”
সাফা অবাক নিভ্রর কথা শুনে।লোকটা কি এত কষ্ট এত কিছু সব ভুলেগেলো নাকি।তা না হলে এত স্বাভাবিক কেনো??নিভ্র নিজের মতই বলছে,
—“আমার কাছ থেকে পালাতে চাও তাই।নাকি তোমার চুল আমি ছাড়া কাউকে আর দেখাতে চাও না??কোনটা??”
সাফার কান্নার বেগ আরো বাড়ে।নিভ্রর বিরক্ত লাগছে সাফার কান্না।এত কষ্টের ফল সে।এভাবে কান্না দেখার জন্য তো মরার মত খুজে নাই।ভালোবাসার জন্য খুঁজেছে। আর সাফা সেই কেঁদে চলেছে।নিভ্র সাফাকে দেখিয়ে সিগারেটের পেকেট থেকে একটা নিয়ে ধরায়।সাফার কান্না থেমে গিয়ে চোখ বড় বড় হয়েগেছে। নিভ্র মনে মনে হাঁসে। সাফারও একটু দেখা উঁচিত সে কেমন বিরহে কাতর ছিলো??নিভ্র সিগারেটে ফু দিয়ে উপড়ে ধোঁয়া উড়াতেই সাফা দ্রুত বললো,
—” আপনি সিগারেট খান??এগুলো আপনার হার্ডের জন্য ক্ষতিকর।ফেলেদেন!!”
নিভ্র কিছু বলেনা।সে ফুকিয়ে চলেছে।সাফা এবার সিগারেট টেনে ফেলেদেয়।কান্নায় ভেঙে পড়ে বলে,
—” আমার জন্য আপনার এই অবস্থা।সব দোষ আমার।আমি আপনার যোগ্য না।কিছুতেই না।”
নিভ্রর যেনো রাগটা হঠাৎ করেই বেড়ে গেলো।কোথায় জড়িয়ে ধরবে,ভালোবাসার কথা বলবে তা না যোগ্য অযোগ্য নিয়ে পড়ে আছে।নিভ্র উঠে বসে।সাফা নিচের দিকে তাকিয়ে বলতেই থাকে,
—” আপনি আমাকে শুধু ভালোবেসেই গেছেন বিনিময়ে শুধু কষ্ট আর কষ্ট পেয়েছেন।আমি আপনার পাশে বেমানান। আপনার আমাকে ভুলেগিয়ে নিজের মত করে নতুন জীবন শুরু করা উচিঁত।আমি আপনাদের জীবনে না এলেই ভালো হতো।আমি একটা অভিশাপ পৃষ্ঠা আপনার জীবনের।কত এলোমেলো করে দিলাম আপনাকে।জানি এটার ক্ষমা নেই।আমি ক্ষমা চাইও না।শাস্তি দেন।তা না হলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।আপনার মত মানুষের পাশে আমার অস্তত্ব নেই।আপনার ভালোবাসার গভীরতা আমি বুঝলাম না।সব দোষ আমার।”
সাফা আর্তনাদ করে কেঁদে উঠে।বাঁধভাঙা কান্নার স্রোতে সে ভেঙে পড়ে।নিজেকে বড্ড অপরাধী লাগছে।বড্ড বড্ড বেশি।
.
#চলবে________________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *