একঝাঁক জোনাকির আলো

একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 27

২৭.
_________________________________________
— “দেখেন আপনি যদি ভূত হয়ে থাকেন তাহলে দূরে যান তো।আচ্ছা আপনি কি সত্যিই ভূত???”
— “তুমি মজাও বুঝনা।স্টুপিড গার্ল।ভূত বলতে কিছু আছে নাকি??এবার বলো আমার রুমে কি করছিলে।কিডনি চুরি করতে এসেছ মনে হয়??”
— “আমি কিডনি দিয়ে কি করবো??আমার কাছে দুইটা আছে।আর লাগবে না।”
— “আইফোন কিনতে তো লাগতে পারে??”
— “আপনি হসপিটালের কথা বলে আমাকে অপদস্থ করতে পারেন না??”
—- “আচ্ছা করবো না যাও।তবে তুমি রুমে কি করছিলে??এসেছ যখন ল্যাবে কি করছিলে??”
সাফা এবার ভারী অবাক।চারপাশে চোখ বুলিয়ে সে বলে……..
—– “আপনি নিজের রুমে ল্যাব কেনো রেখেছেন??তাও ভয়ঙ্কর যন্ত্রপাতি মানে কিডনি টিডনি আবার মানুষের কংকাল!!”
—“আমি ডাক্তার সে হিসেবে এগুলো থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার।তুমি উপরে আর উঠবে না।সামান্য কংকাল দেখেও সেন্সলেস হওয়া লাগে??”
—“তো কি করবো??কিভাবে ঝুলে গায়ে পরেছে আমি আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না।আর ওই হৃৎপিন্ড সব কেমন কেমন কাঁচা কাঁচা।
নিভ্র কঠিন চাহনি দিয়ে সাফার দিকে তাকায়।সাফা চোখ ছোট করে।কাঁচা কাঁচা মানে কি??হৃৎপিন্ড কি শাকসবজি বা ফলমূল নাকি যে কাঁচা পাঁকা হবে??নিভ্র উঠে দাঁড়ায়। হাতের গ্লাসটা বেড সাইড টেবিলে রেখে দেয়।নিভ্র নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বিছানায় বসে পরে।সাফা অবাক হয়।তাকে কিছু না বলেই চুপ হয়ে গেলো কেনো??সাফা এদিক সেদিক হাঁটে।রুমটা পর্যবেক্ষন করছে গভীর ভাবে।আগেও দেখেছে তবুও ভালো লাগছে তার।রুমে একটা সুন্দর মিষ্টি গন্ধ বিরাজ করছে।সাফা সোফায় বসে।নিভ্র ল্যাপটপে কাজ করতে করতেই একবার তাকায়।আড়চোখে তাকিয়ে ভাবে মেয়েটা ফাউল কথা বেশি বলে।এর সাথে থাকতে থাকতে সে নিজেও বেশি কথা বলে এখন।নিভ্র আবার মনযোগী হয়।এক সাপ্তাহের ছুটি নিয়েছে সে।যদিও সিলেটে তাদের হসপিটাল আছে সেখানে মাঝে মাঝে যাবে।তবুও বোনের বিয়ে বলে কথা ছুটি নেওয়ার প্রয়োজন। সাফা বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ইদানিং লোকটা তাকে বকে না।ফলে সে বিরক্ত। এই বিরক্তি নামক জিনিসেও সে বিরক্ত। সাফা উঠে বারান্দার দিকে যায়।বারান্দায় একগাদা গোলাপের গাছ দেখে খুশিতে তার মন বাকবাকুম করে উঠে।সাফা ধীর পায়ে এগিয়ে যায় গাছ গুলোর দিকে।ফুল সহ গাছ কিনেছে মনে হয়।তা না হলে এত ফুল একসাথে ধরার কথা না।সাফার আর বুঝতে অসুবিধা হয় না মিষ্টি ঘ্রাণের উৎস কোথায়।সাফা ফুলগুলোর সামনে বসে নাক টেনে ঘ্রাণ নেয়।মিষ্টি মধুর গন্ধ।মুচকি হাঁসে সে।
.
.
নিভ্রর মোবাইলে আরিফ কল করেছে।নিভ্র এতে বিরক্ত। কারন সে লুকিয়ে লুকিয়ে সাফার কার্যকলাপ দিখছিলো।এখন ফোন করায় তার কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।নিভ্র কপাট রাগ নিয়ে ফোন কানে দিয়ে আরিফ কিছু বলার আগেই সে বলে…….
—-“যা বলার পরে বলবে এখন রাখো।”
আরিফ চেঁচিয়ে বলে…..
—-“স্যার রাখবেন না। একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ।
নিভ্র বিরক্তির শ্বাস নেয়।তারপর বারান্দার দরজা থেকে সরে এসে গম্ভীর গলায় বলে……
—-“বলো কি বলবে??”
—-“স্যার আমাকে কি আপনি কালকে সিলেট নিবেন??”
নিভ্র অবাক।সে একটা সিরিয়েস ভাব নিয়ে কথাটা শুনছিলো।বুঝতেই পারেনি আরিফ এই ধরনের একটা কথা বলতে পারে।নিভ্র রেগে গেলো।ঝাঁঝালো গলায় বললো…….
—-“এটা তোমার গুরুত্বপূর্ণ কথা আরিফ??”
—-“হুম স্যার। আসলে আমি সিলেট আপনার সাথেই গেছিলাম তখন তেমন ঘুড়া হয় নি তাই এবার ঘুড়বো। আর বিয়েতেও যাবো।মানে বুঝতে পারছেন??সুন্দর সুন্দর মেয়েদের দেখে একটা পছন্দ করে নিবো।বিয়ের অনুষ্ঠানইত একটা বিরাট সুযোগ এক সাথে অনেক মেয়ে দেখার।তাই স্যার আপনি যদি একটু নিতেন??আঙ্কেল আর দাদাও আমাকে ইনভাইটেশন দিয়েছে।তাই নিতেই পারেন।আপনার লাইন তো ঠিক হয়ে গেছে হকস্টিকের বারি খেয়ে কিন্তু আমাকে তো কেউ এভাবে মারবেও না আর এভাবে প্রেমেও পড়া হবে না তাই বলছিলাম কি আমিও তো বিয়ে করবো নাকি স্যার?? তাই যদি……
—-“শেট আপ আরিফ।এগুলো কেমন কথা??এই ফাউল কথা বলার জন্য তুমি আমাকে কল করেছো??আর বলছো গুরুত্বপূর্ণ কথা??”
আরিফের হাসি হাসি মুখ মলিন হয়ে এলো।তার মানে কি স্যার তাকে নিবে না??তার ছোট হয়েও স্যার বিয়ে করে ফেলবে আর সে এভাবেই থেকে যাবে??আহ কি কপাল তার।নিভ্র এবার গম্ভীর হয়ে বলে……
—-“কাল বিকেলে যাতে বাসায় দেখি ৫.০০ মধ্যে।তা নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।এখন রাখো স্টুপিড ”
—-ধন্যবাদ স্যার। আপনি আমাকে কত ভালোবাসেন আমি বুঝে গেছি।আই লাভ ইউ টু স্যার।
—-“হোয়াট???
.
নিভ্রর চিৎকার আরিফের কানে আসার আগেই সে কল কেটেঁ সেই একটা নাচ দিলো।শত হোক এবার একটা মেয়ে ঠিক করে ফেলবে।আহ স্যার তাকে কত ভালোবাসে।সেও স্যারকে ভালোবাসে।নিভ্র ফোনের দিকে তাকিয়ে হতবাক। প্রেমে পড়েছে সে আর তাকে পাগল করছে মানুষ।আজব দুনিয়া।
.
.
ইফতেখার এশার নামাজ পড়ে বিছানায় বসে পড়ে।সাখাওত একটু অবাক।কারন তার বিবি জান এত তাড়াতাড়ি বিছানায় বসে না।তিনি সম্পূর্ন ঘরে হাঁটে নানা কাজ করে।একদম খাওয়া দাওয়া করে সে বিছানায় আসে।কিন্তু আজ এত তাড়াতাড়ি নিশ্চুই এর মাঝে বিস্তর কিছু গাফলা আছে।মহিলারা নিয়মের বাহিরে কিছু করলেই বুঝা উঁচিত নিয়মের বাহিরে কিছু একটা হবে।সাখাওত ল্যাপটপে মুখ রেখে আড়চোখে নিজের বউকে দেখছে।ইফতেখার শাড়ির আচঁল তুলে এবার সাখাওতের মুখ বরাবর বসে।তারপর কথা বলার প্রস্তুতি নিতে থাকে।সাখাওত বুঝতে পেরেছে আজকে গুরুতর কিছু বলবে তার বউ তাই নিজের ল্যাপটপ পাশে রেখে ইফতেখারের বরাবর তাকিয়ে বসে।ইফতেখার এবার একটু জোর লাগিয়ে বলে…….
—–“সাফাকে তোমার কেমন লাগে???”
সাখাওত ভ্রু তুলে তাকায়।কথার আগা নেই গোড়া নেই মাঝে থেকে বললে কিভাবে বুঝবে সে।তবুও মুখে বলে……
—–“অনেক ভালো।
ইফতেখার তৃপ্তির হাসি দেয়।সাখাওত চোখ ছোট করে বলে………
—–“এই তুমি কি ওকে আবার দত্তক নিতে চাও নাকি?? মেয়ে হিসেবে??ওর বাবা কিন্তু দিবেনা।এটা তার কলিজার টুকরা মেয়ে।দিনে ৫০বার কল করে এবার বুঝ কত ভালোবাসে মেয়েকে।রাত ১টা বাজে কল করে প্রশ্ন করে মেয়ে ঘুমিছে কি না।তাই এসব বাদ দেও।
স্বামীর এমন কথায় ইফতেখার তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলে……..
—–“দত্তক নিবো কেনো??ছেলের বউকে কেউ দত্তক নেয় নাকি??তখন আমার ছেলে নিজের বউকে বোন বলে ডাকবে বুঝি??দিন দিন বয়স বাড়ছে আর সাথে তোমার বোকামি।সহজটা বুঝবে না পেঁচিয়ে বলবে সব সময়।বিরক্ত।
সাখাওত বেক্কেল বনে গেছে।আসলে ইফতেখার মাঝে মাঝেই একটা মেয়ে দেখলেই দত্তকের কথা বলে তাই সে মনে করেছে এমন কিছুই বলবে।আসলেই মেয়েদের মন বুঝা ভয়ঙ্কর বিষয়।সাখাওত হেঁসে বলে…….
—–“ও আচ্ছা এই ব্যাপার।আমি কিভাবে বুঝবো বলো??যাই হোক তোমার ছেলে এটা শুনলে আমাদেরকে ঘর থেকেই বের করে দিবে।এটা তুমি যানো না??
—-“আরে সব মেয়ে সে পছন্দ করেনা জানি।অন্যদের কথা বললে এটা সে করতো কিন্তু সাফাকে সে খুবই পছন্দ করে।তাই বলছিলাম কি তুমি সারিক ভাইয়ের সাথে কথা বলবে বুঝলে??মেয়েটা এসেই আমাদের ঘরে শান্তি সুখ নিয়ে এসেছে।কি মিষ্টি একটা মেয়ে।একটু চঞ্চল।তাতে কি।তোমরা ছেলেরা তো সব বোরিং। থাকুক না একটু চঞ্চল মেয়ে। এতে বাড়িময় আনন্দ বিরাজ করবে।কি হলো তাকিয়ে আছো কেনো??
—–“তুমি শিউর তোমার ছেলের সাফাকে পছন্দ??
—-“অবশ্যই। আমার তো মনে হয় ভালোও বাসে।তবে শিউর না।কিন্তু কত ক্যায়ারি সাফার প্রতি সে।দেখনি তুমি??
—-“হুম দেখছি।কিন্তু তবুও ওকে না জিগ্যেস করে কিছু করা কি ঠিক হবে??
—-“আরে তুমি বেশি বলছো।যা করতে বলছি তাই করবে।রাফার বিয়েটা হোক তারপর। ঠিক আছে।এই কয়েক দিন তুমি না হয় পর্যবেক্ষণ করো।
—-“হুম।
সাখাওত চিন্তায় পড়ে যায়।ছেলেকে সে ভালো করে বুঝে না।এমন কি কেউই বুঝেনা।এর মন মেজাজ কেমন এটাও জানা দায় সবার জন্য।কখন কি করে সে নিজে বাদে দ্বিতীয় কেউ যানা এত সহজ না।তাই তিনি চিন্তিত।
.
.
৫.০০টা ছুঁই ছুঁই। পিকনিক বাস চৌধুরী ভিলার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।নিশানের পরিবার হাজির হয়েছে।গন্তব্য একই জায়গায় তাই সবাই এক সাথে যাবে বলে ঠিক করেছে।অনেক ব্যাগ নিতে হবে তাই পিকনিক বাসে করেই যাবে তারা।বাড়িতে তাদের পর্যাপ্ত গাড়ি আছে।তাই এখান থেকে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।নিভ্র বাসের সাথে ঠেস দিয়ে ফোন টিপছে।আসলে এটা সে দেখাতে চাচ্ছে।তার মনযোগ বিন্দু মাত্রও মোবাইলে নেই বললেই চলে।সে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা কালো গ্রাউনের মেয়েটাকে দেখতে ব্যস্ত।সাফা হাত নাচিয়ে নাচিয়ে রাফার সাথে কথা বলছে।মাঝে মাঝে খিলখিল করে হাসছে।নিভ্র মুগ্ধ হয়ে সে হাসি দেখছে।অভ্রর সাথে তর্ক করছে মাঝে মাঝে সাফা।অভ্র তার প্রতি উত্তরে প্রতিবাদ তুলে না।নিভ্র এটা খেয়াল করে।অভ্র প্রতিবাদী ছেলে।তার সামনে ফাউল কথা বলে এত সহজে পার পাওয়া যায় না।সেখানে সাফা আজেবাজে যুক্তি দিচ্ছে অভ্র মাথা হেলিয়ে মুচকি হেঁসে তা মেনে নিচ্ছে। ব্যাপারটা যতটা সহজ দেখাচ্ছে ততটাও সহজ না নিভ্রর চোখে।সাফা একটু পর পর নিভ্রর দিকে তাকায়।নিভ্র খয়েরি শার্ট পরেছে সাথে কালো প্যান্ট।হাতে কালো ফিতার ঘড়ি।এক হাতের ভাঁজে কালো ব্লেজার। সিল্কি চুলগুলো কপাল ছুঁয়ে আছে।চোখে সানগ্লাস।সবাই এসেগেছে শুধু আরিফ বাদে।নিভ্র আরিফের এমন কাজে প্রচণ্ড বিরক্ত। ছেলেটা টাইম মেন্টেন একদমই করে না।সাফা অভ্রর সাথে তর্ক রেখে এবার ঝগড়া করা শুরু করেছে।ঝগড়ার মূল বিষয় হচ্ছে পরীক্ষার প্রশ্ন।সাফার মতে অভ্র প্রশ্ন কঠিন করে।অভ্র এটা মনতে চাচ্ছে না।তার মতে সে ক্লাস টেস্টের প্রশ্ন তেমন কঠিন করে না।কিন্তু সাফা তো সাফাই তার কথাই হবে।নিশান রাফার কানের কাছে ফিসফিসে বলে………..
——“মেয়েটা সত্যিই মিষ্টির দোকান।কিভাবে মিষ্টি মিষ্টি করে ঝগড়া করে।যেকেউ হারতে রাজি।”
—-“হুম যেমন নিভ্র ভাইয়া।
নিশান অবাক হয়ে বলে…..
—–“মানে??
—-“নিভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাও।দেখে মনে হচ্ছে সে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে আসলে ব্যাপারটা তেমন না।মনে আছে আমাদের বাসায় তুমি যখন আসতে এমনটাই করতে।
নিশান হেঁসে মাথা চুলকায়।ধির পায়ে নিভ্রর পাশ ঘেঁষে দাঁড়ায়। তারপর বিড়বিড় করে বলে…….
—–“কিরে কি দেখস??”
—-“সাফারানী কে।”
নিভ্রর আনমনে বলা কথা নিশান হজম করে নেয়।রাফার দিকে তাকিয়ে বিশাল হাসি দেয়।নিভ্রর পিঠ চাপড়ে বলে………
—–“তোর প্রেমও তোর মত ভয়ঙ্কর।
নিভ্র ভরকে যায়।সোজা হয়ে কঠিন ভাব আনতে চায়।কিন্তু পারছে না।ধরা খেলে যা হয় আর কি।
.
নিভ্র সবার শেষে গাড়িতে উঠে।প্রথম সিট থেকে সে নিজের সিট খুজে।কিন্তু একটা সিটও খালি নেই।নিভ্র অবাক হয়।তার তো অভ্রর সাথে বাসার কথা ছিলো।আর অভ্র কিনা আরিফের পাশে বসে পরেছে??নিভ্র রাগি চোখে তাকায়।রাফা নিভ্রর হাত টেনে তার সিটে বসিয়ে দিয়ে সে আর এক সিটে বসে পরে।তারপর নিভ্রকে বলে…….
—–“এই সিটই তোমার জন্য পারফেক্ট।
নিভ্র পাশে না তাকিয়ে বলে…..
—-“তুই নিশানের পাশে কি করছিস??উঠে আয় আমি ওই সিটে যাই।
—-“তাই নাকি??কিন্তু আমি আমার জামাইয়ের সাথে বসবো তুমি বলার কে??তুমি বরং…
আর বললো না।চোখ ঘুড়িয়ে তাকায় সে।নিভ্র রাফার দৃষ্টি অনুসরণ করে পাশে তাকিয়ে চোখ বড় করে।তার পাশে সাফা বসে আছে।এদিকে তার খেয়াল নেই সে জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে।নিভ্র কিছুক্ষণ নিজের বোনের দিকে তাকিয়ে থাকে।রাফা গান ধরে……
—-দিল চোরায়া তেরে…
কিসনে ও সানাম…
তুনে ওও তুনে…….
নিভ্র চোখ রাঙিয়ে তাকায়।রাফা একটু ভয় পেয়ে বলে…..
—–“আরে তোমাকে কি বলছি নাকি??এটা তো গান একটা।আর নিভ্রনীলের দিল চুরি করা কি এতটাই সহজ নাকি?? ইম্পসিবল…. সাধারন দিল নাকি এটা।নিভ্রনীল সাখাওত চৌধুরীর দিল বলে কথা।বিশাল ব্যাপার।
রাফার এমন কথায় সবাই হেঁসে উঠে।নিভ্র পাশে তাকায়।সাফার তেমন খবর নাই।সে কানে এয়ার ফোন গুঁজে গান শুনতে ব্যস্ত তার পাশে কে বসেছে তার দিকেও তার খবর নেই।নিভ্রর রাগ হচ্ছে। যেখানে সবাই তার কাছে পাত্তা পেতে চায় আর এই মেয়ে তাকেই দেয় না।আসজ্জ কর।নিভ্র রেগে সাফার কান থেকে এয়ার ফোন টেনে খুলে দেয়।সাফা ভূত দেখার মত চমকায়। তারপর বলে…….
—–“আপনি আমার পাশে কি করছেন???
—-“বাসের সিটে বসা ছাড়া আর কিছু করা যায় না।তাই বসে আছি।আর চিৎকার করছো কেনো??কানের পর্দা ফাটানোর ইচ্ছা আছে মনে হয়।
সাফা চোখ ছোট করে তাকিয়ে নিভ্রর হাত থেকে এয়ার ফোনটা নিয়ে ছোট করে বলে……
—–“স্যরি।
.
.
কিছুক্ষণের মাঝে গাড়ি চলা শুরু করে।সাফা মাথা কাত করে জানালার পাশে।চোখ তার জানালার বাহিরে।একবারো সে নিভ্রর সাথে কথা বলছে না।নিভ্র বেশ অবাক।সে তো জানে না সাফা গাড়িতে উঠলে কথা বলে না।বিশেষ করে বাসে।নিভ্র কথা বলতে চায়।কিন্তু কি বলে শুরু করবে তার জানা নেই।সেভাবে কখনো দুজনের মাঝে কথা শুরু হয় নি।তাই নিভ্র থেমে যায়।নিভ্রর মনে হচ্ছে তাকে সাফা ইগ্নোর করছে।ব্যাপারটা তেমন না।বুঝার ভুল মাত্র।বাসে নিরবতা চলছে।কেউ তেমন কথা বলছে না।সিনিয়ার সিটিজেনদের সাথে থাকলে এমনই হয়।আর সবাই যে যার সিটে নিজের কাজে ব্যস্ত।রাফা নিশানের সাথে কথা বলছে।বাকিরা নিজেদের কাজে নিজেদের মত ব্যস্ত।অনেক সময় চলে যায়।দুজনের একজনও কথা বলে না।চুপ করে বসে আছে যে যার জায়গায়।নিভ্র ফোন দেখছে মাঝে মাঝে সাফাকে।সাফা জানালার সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।বাসের হালকা ঝাঁকুনিতে সাফার ঘুম হালকা হয়ে আসে।সে আবার ঘুমে ডোলে পরে।জানালার কাঁচের সাথে সাফা মাথা রেখেছে।তাই মাঝে মাঝে ব্যাথা পাচ্ছে। বিরক্তি নিয়ে মুখ কিঞ্চিত কুঁচকে আসে তার।নিভ্র ব্যাপারটা বুঝতে পারে।সাথে অবাক হয় সাফার ঘুম দেখে।এত অল্প সময়ে সে ঘুমিয়ে পড়েছে??গাড়ি মোড় ঘুড়িয়ে দেয়।সাফা আবার ঝাঁকি খায়।নিভ্র এবার এক হাতে সাফাকে টেনে নিজের কাঁধে সাফার মাথা রাখে।নিভ্র ঘাড় ঘুড়িয়ে সাফার দিকে তাকায়।ছোট ছোট চুলগুলো উড়ে এসে সাফার মুখে পড়ছে।নিভ্র কিছুক্ষণ চুলে মুড়ানো সাফার মুখ দেখে।তারপর ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে অল্প অল্প করে চুলগুলো সরিয়ে দেয়।সাফা ঘুমন্ত মুখ ভেসে উঠে নিভ্রর সবুজ চোখে।নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে সে।ডান পাশের হাতের একটা আঙ্গুল দিয়ে গালের একপাশের কিছু চুল কানে গুঁজে দেয়।মনে মনে বলে….সাফা কি সত্যিই ভয়ঙ্কর রূপের অধিকারি নাকি শুধু তার চোখে এই আশ্চর্য রূপ ধরা খায়।যদি এমন হয় তবে সে চায় সারা জীবন শুধু তার চোখ এই আশ্চর্য রূপ দেখুক।আর কেউ না।সাফার কানের কাছে বিড়বিড় করে নিভ্র বলে….
—–সীমান্তের বাহিরে রূপ তোমার।অসাধারণ ব্যক্তিত্বের নারী তুমি।পাগলামির ভাবসম্প্রসার তুমি।এক চাঞ্চল্যতায় ভরা মন তোমার।পাগলি একটা
.
.
#চলবে_____________________

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *