একঝাঁক জোনাকির আলো

একঝাঁক জোনাকির আলো !! Part 16

১৬.
সাফা দুঃখী দুঃখী ভঙ্গিতে আরিফের দিকে তাকায়।বেচারারও দুঃখ লাগছে।সে আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে নিভ্রর দিকে তাকাচ্ছে।সাফা হতাশ কন্ঠ বলে………
—–“আরে ক্যাবলাকান্ত আপনি এখানে কেনো??”
আরিফ রেগে তাকায় সাফার দিকে।এত হেন্ডস্যাম একটা ছেলেকে এই মেয়ে ক্যাবলাকান্ত কিভাবে বলতে পারে।হাউ?আরিফ রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিভ্র এগিয়ে আসে।বলে…….
—-“সাফা গাড়িতে উঠে বসো।”
—-“না বসবো না।আপনার মত লোকের সাথে আমি যাবো না।আমার আইসক্রিম কেনো ফেলেছেন?? ”
—-“আচ্ছা আবার কিনে দিবো এবার চলো”
সাফা খুশিতে গদগদ হয়।নিভ্রর দিকে মুখ ঘুড়িয়ে দাড়ায় সে।চিৎকার করে বলে উঠে…….
—–“সত্যিই?? ”
—-“হুম।আর আরিফ গার্ডস নিয়ে এখান থেকে যাও আমি বাসায় যাবো।”
সাফা নিভ্রর গাড়িতে উঠে বসে।নিভ্র ভাবতে পাড়ছেনা একটা মেয়ে আইসক্রিমের জন্য এত পাগল হতে পারে।অবাক লাগছে তার কাছে ব্যাপারটা। আরিফ হা করে তাকিয়ে আছে।তার মাথায় ডুকছে না।নিভ্রনীল এই মেয়ের জন্য এতটা চিন্তিত কিভাবে।আরিফের মনে হচ্ছে তার নিভ্রকে নিভাতে কেউ সত্যিই চলে এসেছে।আরিফ হাসে।গার্ডসদের গাড়িতে উঠে বসে।জানালা দিয়ে একবার নিভ্রকে দেখে।সাফাকে সামলাতে বেচারার অবস্থা খারাপ।
.
নিভ্র ড্রাইভিং সিটে বসে পরে।পিছন থেকে একটা ব্যাগ নিয়ে সাফার হাতে দেয়।সাফা ব্যাগটা দেখেই চিনতে পারে এটা তার নিজের ব্যাগ।কিন্তু জোনাকির বক্সটা কই??সাফা চারদিকে একবার খুঁজে।না পেয়ে নিভ্রর দিকে তাকায়।প্রশ্ন করে……
—-“আমার জোনাকি??”
—“এখন আমার হয়ে গেছে”💕
.
নিভ্র মুচকি হাসল।সাফা থ মেরে ভাবতে থাকে কি বুঝাতে চেয়েছে নিভ্র।আর তার জোনাকি নিয়ে নিভ্র কি করবে??এটা ভেবেই পাচ্ছে না সে।সাফা নিভ্রর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।আজ নিভ্র কালো শার্ট পরেছে তার উপড় নীল ব্লেজার।সাফা নিজের জামা একবার দেখে তো নিভ্রর জামা একবার দেখে।মিলটা দেখে নিজেই হাসে।নিভ্র চুলগুলো চোখের উপড় থেকে সরিয়ে দিয়ে একবার আড়চোখে সাফাকে দেখে।মেয়েটা পাগলের মত নিজে নিজেও হাসে।অদ্ভুত। নিভ্রের গালের দু’পাশ মেয়েদের মত লাল। খোঁচা দাড়ি গুলোর একটু উপরের লাল আভা দেখেও সাফা হাসে।হুট করেই সাফা নিভ্রের দিকে ঝুঁকে তার গাল টেনে দেয়।আকর্ষীক এমন কান্ডে নিভ্র ভিষম খায়।সে বড় বড় চোখ করে সাফাকে দেখছে।সাফা খিলখিল করে হেঁসে দিয়ে সামনে তাকিয়েই চিৎকার করে…..
—-“ডাক্তার সাহেব।সামনে তাকান???
নিভ্র সামনে তাকিয়ে গাড়ি কন্ট্রোলে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেয়।সাফা ভয়ে একটু চুপসে যায়।তাই বাইরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ নিরবতা থাকে।হঠাৎ সাফা চেঁচিয়ে উঠে……..
—-“গাড়ি থামান, গাড়ি থামন
.
নিভ্র দ্রুত ব্রেক করে।সাফা গাড়ি খুলতে চায়।নিভ্র তার হাত ধরে বলে……
—-“কি হয়েছে আগে বলো??”
—-“মিষ্টি মিষ্টি কিউটি মেঘ খাবো”।
.
নিভ্রর এবার পাগল হওয়ার উপক্রম। এই মেয়ের জন্য এখন কি তাকে আকাশ থেকে মেঘ নিয়ে আসতে হবে নাকি??কিন্তু আকাশ ছুঁয়ে দেখবে কিভাবে??নিভ্রর যেনো হীতাহীত চিন্তা চেতনা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।তার নিজেকে সত্যিই অসহায় লাগছে।একটু ক্লান্ত চোখে সাফার দিকে তাকায়।সাফা ঠোঁটজোড়া একসাথে করে হেঁসে বলে……
—-“চলেন না।আচ্ছা আপনাকে যেতে হবে না আমি যাবো।”
—-“দাড়ায়ও। তুমি কি পাগল সাফা??”(ধমক দিয়ে বলে নিভ্র)
—“কেনো??(ভ্রুকুঁচকে গম্ভীর ভাব নিয়ে বলে সাফা)
নিভ্র মনে মনে বলে ভাবখানা এমন যেনো আমি পাগল।তারপর ডান হাতে চুল ঠিক করে চোখের সানগ্লাস নামিয়ে বলে…….
—-“মেঘ কি গাছে ধরে নাকি বাজারে পাওয়া যায়??হুম??এমন আজব জিনিস তোমার মাথায় আসাই সম্ভব।এসব পাগলামি ছাড়ো।আর বসে পরো আমি আইসক্রিম পার্লারে নিয়ে যাবো।তখন মন ভরে আইসক্রিম খেয়ে নিয়ো।”
—-“আরে আপনি বুঝতে পারছেন না আমি ওই মিষ্টি মিষ্টি মেঘের কথা বলছি”(সাফা হাত দিয়ে রাস্তার পাশে ইশারা করে)
.
নিভ্র সামনে তাকিয়ে থ মেরে যায়।একবার সাফার দিকে তাকিয়ে দু’হাতে নিজের চুল টানে।তারপর একটা বোকার মত হাসি দেয়।নিজেকে তার নিজেরই পাগল মনে হচ্ছে। নিভ্র হেঁসে হেঁসে সাফাকে বলে……
—-“ওটার নাম তুমি জানো না??ওটা মিষ্টি মেঘ না ওটা হাওয়াই মিঠাই।এতটা বোকা তুমি???
.
বলেই নিভ্র হাঁসে। সাফা গাল ফুলিয়ে নিচের দিকে তাকায়।তার চোখ থেকে কয়েক ফোটা পানি অনায়াসে গড়িয়ে পরে।নিভ্র অবাক হয়।সে নিজের মনে আউড়ায় সে কি এমন বলেছে??তার কথায় কি সাথা রাগ করেছে??তার এভাবে সাফাকে নিয়ে হাসা ঠিক হয়নি।নিভ্র অনুশোচনার ভঙ্গিতে বলল……..
—-“স্যরি আমি জাস্ট মজা করেছি।আম স্যরি।
সাফা নিভ্রর দিকে তাকায়।নিজের চোখের পানি মুছে বলে……
—-“আম্মু আমাকে এগুলো কিনে দেওয়ার সময় নাম জিগ্যেস করতাম ওনি হাওয়াই মিঠাই বলতো।তখন খুব ছোট ছিলাম তাই উচ্চারণ করতে পারতাম না। তাই আম্মু এটার নাম পরিবর্তন করে এই মিষ্টি মিষ্টি কিউট মেঘ নাম দিয়েছে।যদিও আমি তখন মিতি মেল বলতাম।”
.
সাফা কথাটা বলেই হেঁসে দেয়।নিভ্র একদৃষ্টিতে সে হাসি দেখে।সাফা আবার বলে…..
—-“কিছু মানুষ আমাদের কাছে থাকলে আমরা তার গুরুত্ব বুঝিনা দূরে গেলেই আসল গুরুত্ব অনুভব হয়।মা বাবাও তেমনই।কাছে থাকলে যতটা না ভালোবাসা মনে জাগে দূরে গেলে তার চেয়ে হাজার গুন বেড়ে যায়।”
.
নিভ্র মুগ্ধ হয়ে সাফার কথা শুনে।মেয়েটা মাঝে মাঝে কেমন বড়দের মত কথা বলে আবার মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মত কথা বলে।নিভ্রর বুকে ব্যাথা হয়।মনে হারানোর ভয় জাগে।তার নিজের মায়ের কথা খুব করে মনে পরছে।কত দিন বললে ভুল হবে কত বছর কথা বলে না, জড়িয়ে ধরে না।নিভ্রর হঠাৎই কেমন যেনো লাগছে।মাকে হারিয়ে যদি সে তার মর্ম বুঝে তবে কি আদো লাভ হবে।নিভ্রর মাথায় ঘাম জমে।সাফা নিভ্রর হাত ঝাঁকিয়ে বলে……
—-“চলেন না।আমি অনেক দিন খাই না।”
.
নিভ্র গাড়ির দরজা খুলে দিলো।সাফা লাফিয়ে বেড়িয়ে পরে।নিভ্র মুচকি হাসল।নিজের ব্লেজার খুলে পিছনে রেখে দেয়।হাতা ভাঁজ করে নেয় কনুই পর্যন্ত। মাথার চুলগুলো পিছনে সেট করে গোল ক্যাপ পরে নেয়।মুখে মাক্স লাগিয়ে নেয়।নিজের পাশের দরজাটা খুলে সাফার পিছন পিছন যায়।সাফা সাদা হাওয়াই মিঠাই দুই হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে যাবে তার আগেই নিভ্র দিয়ে দেয়।সাফা অবাক হয়।তবে কিছু বলে না।নিভ্র এখন পকেট ব্যাগে টাকা রাখে।কেনো যেনো সেদিনের পর থেকে তার মনে হয়েছে রাখা প্রয়োজন। সাফা একটা পেকেট এগিয়ে বলে……
—-“টাকা দিলেন ভাগ নিবেন না??”
—“না আমার ভাগের সব তোমায় দিলাম”💕
.
কথাটা সাফার কলিজায় বারি খায়।সাফা নীলাভ চোখ উপড়ে তুলে নিভ্রকে দেখে।নিভ্রর চোখে কেমন যেনো এক প্রশান্তি কাজ করছে।কাথাটা বলতে পেরে সে সত্যিই নিজেকে হালকা ফিল করছে।সাফার কানে সেই কথাটাই বাজে।হৃদয়ে দোল খায়।শরীরে এক অদ্ভুত ভালো লাগার শিহরণ বয়ে যায়।চোখে মুখে স্নিগ্ধতা ছেঁয়ে যায়।সাফা চোখ নামিয়ে নেয়।নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। নিভ্র প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়…..
—-“কি ভাবছ??”
—“হৃদয়ের একপাশের কথা।”
.
নিভ্র অবাক হয়।এতটা আবেগ দিয়ে কথা বলতে সে আগে কখনো সাফাকে দেখেনি।তবে কি সাফার মনে কেউ আছে।নিভ্র চকিতেই নিজের চোখ নামায়।কেমন যেনো আজেবাজে ভাবনারা তাকে ঘিড়ে ধরছে।সাফা নিভ্রর দিকে তাকায়।সামনে তাকিয়ে ইশারা করে বলে…….
—-“চলেন ওই দিকে যাই।”
.
বেলা ৫টা ছুঁই ছুঁই গোধূলি বেলা।সূর্য নিজের গতি পথ পরিবর্তন করছে।পিছঢালা রাস্তাটা থেকে গরম উত্তাপ বের হচ্ছে। ভেপসা গরম পরছে।সূর্য নিজের কড়া রোদ সরিয়ে নিতেই এই ভেপসা গরমের আগমন।রাস্তার দু’পাশে বড় বড় গাছ।কিছু গাছের আড়ালে সূর্যকে লুকাতে দেখা যাচ্ছে। নিভ্র হাঁটছে তার পাশেই সাফা।নিভ্রর রাস্তায় হাটাঁর তেমন অভিজ্ঞাতা নেই বললেই চলে।তবে সাফার তো দাড়ুন লাগে।সাফা মনের খুশিতে নিভ্রর এক হাত চেঁপে আর এক হাতে স্টিক সহ তার কিউট মেঘ খেতে ব্যস্ত। নিভ্রর এক হাত সাফার কাছে আর এক হাতে সাফার আরো দুইটি মেঘ নিয়ে ধরে রেখেছে।সাথে সাফার ব্যাগ।নিভ্র মনে মনে বলে…..
যার জন্য সব জায়গায় মানুষ রাখা হয় তার জিনিস ধরে রাখার জন্য সে কিনা আজ রাস্তার পাশে এই সব জিনিস ধরে রেখেছে আর হাঁটছে। সবই কপাল।
কথাটা ভেবেই মুচকি হাসল নিভ্র। পৃথিবীর সবচাইতে স্পেশাল মানুষ,সেলিব্রেটি, বড় মাফের মানুষ সে যেই হোক না, সবাই তাকে মাথায় করে রাখলেও বা তার সবকিছু স্পেশাল হলেও তার সমাপ্তি থাকে নিজের প্রিয়জনের কাছেই।সেই দিকে মেয়েরা লাকি।বাবা প্রেসিডেন্ট হলেও মেয়ের কাছে বাবা।হ্যাজবেন্ট সুপার হিরো হলেও তার দশটা বডি গার্ডস থাকলেও সে নিজেই বডি গার্ড তার ওয়াইফের।তার ব্যাগ বহন করার দশজন কাজের লোক থাকলেও ওয়াইফেরটা সে খুশি মনেই বহন করতে পারে।এটাই মেয়েদের পাওয়ার। যা আল্লাহ স্পেশাল ভাবে মেয়েদেরকে দিয়েছে।🤭
.
.
নিভ্র হেঁটে চলেছে সাথে বহন করছে সাফাকে এবং তার মালপত্রকে।নিভ্র বুঝতে পাড়ছে না সাফা কোথায় যেতে চাচ্ছে। তবে সে বিরক্তও হচ্ছে না।নিভ্র অবাক তার এই ব্যাপারটা দেখে।সে ভাবতেও পাড়ছে না।যে নিভ্রর নারীসঙ্গ ভালো লাগতো না,পছন্দ ছিলো না,গাড়িতে কিছুক্ষণ বসে থাকাও যার ভালো লাগতো না সে কিনা একটা মেয়ের সাথে হেঁটে হেঁটে রাস্তা পার করছে।সাফা নিভ্রর দিকে একবার তাকিয়ে হাতের আঙ্গুলে ছিঁড়ে নেওয়া হাওয়াই মিঠাই দেখিয়ে ইশারা করে খাবে কি না??নিভ্র মাথা নাড়ায় খাবে না।সাফা সামনে তাকায়।সামনে বিরাট মেলা বসেছে।সাফা যেনো চাঁদ হাতে পেয়েছে।নিভ্রর হাত ঝাঁকিয়ে বলে……
—-“মেলে!!চলেন মেলায় যাই।”
—“হোয়াট?? (চেঁচিয়ে বলে নিভ্র)
সাফা রাগি চোখে তাকিয়ে বলে……
—–“এমন ভাবে কেনো বলছেন মনে হয় আমি আপনার বউ নিয়ে পালাবো বলেছি।এমন করেন কেনো?? চলেন না।
.
সাফার এমন কাঁদোকাঁদো মুখ দেখে নিষেধ করার ক্ষমতা নিভ্র সেই নীল শাড়ি পড়া গালে টোল নিয়ে জবা ফুল মাথায় থাকা অবস্থায়ই হারিয়েছে।নিভ্র চোখ ছোট করে বলে…….
—“গাড়ি নিয়ে আসি??”
—“না কেনো??একটুই তো পথ।হেঁটেই চলেন।
—“আচ্ছা ”
.
সাফা খুশিতে নিভ্রর হাত খামছে ধরে।নিভ্রের তেমন কিছু হয় না।সে হাটাঁ দেয়।তার আজ নিজেকে সবচাইতে বাদ্ধ ছেলে মনে হচ্ছে।সাফার তো মন খুশিতে নেঁচে নেঁচে উঠে।গেটের কাছে এসে নিভ্র থমকায়।এত মানুষের গিজগিজ অবস্থা দেখে নিভ্রর ভিতরে যেতে মোটেও ইচ্ছে করছে না।সাফা নিভ্রকে টানে।নিভ্রর চেহারায় এক করুন ভাব ফুটে উঠে।এই ভিড়ে ডুকলে ধাক্কা ধাক্কি খেয়ে এমনেই শহীদ হয়ে যাবে।তাই নিভ্র সাফার দিকে করুন চোখে তাকায়।কন্ঠ নরম করে বলে……..
—-“সাফা দেখো অনেক ভিড়।মেলায় তুমি কি করবে যেয়ে??”
—-“অনেক কিছু করবো।অনেক জিনিস কিনবো আপনি জানেন কত কিছু পাওয়া যায় মেলায়।তার উপড় ফুচকা, ঝালমুড়ি ইশশশ্ না আমি যাবো। ভিড় হয়েছে তো কি হয়েছে মেলায় এমন ভিড় হয়।চলেন..
—-“আচ্ছা আমরা না হয় শপিং মলে যাই ওখানেও সব পাওয়া যায় এমন কি বেটার পাওয়া যায় চলো।সবচাইতে ভালো মলে যাবো।ওকে??”
—-“না আমি মেলায় যাবো প্লিজজজজ প্লিজজজজ প্লিজজজ ডাক্তার সাহেব!!”
.
নিভ্র হাসলো।মেয়েটা এমন কেনো যা করতে ইচ্ছে হয় তাই করবে।নিভ্র নিজের হাতা আরো উঠিয়ে নেয়।সাফার ব্যাগ কলেজ ব্যাগ।তাই নিভ্র ব্যাগটা পিঠে নিয়ে ঝুলিয়ে দেয়।সাফার দিকে তাকিয়ে বলে…..
—-“তুমি মেলায় যেতে যাও ভালো।কিন্তু আমি যা যা করবো চেঁচাতে পারবে না।রাজি থাকলে বলো??হারি আপ??
.
সাফা কিছুক্ষণ ভাবে তারপর বলে….
—“ঠিক আছে।
.
নিভ্র এবার সাফার হাত ধরে।সাফা অবাক হয়।নিভ্র সাফাকে টেনে ভিতরে নিয়ে আসে।এত এত লোক, গায়ের সাথে লেগে আছে সব।নিভ্রর সারা জীবন আরাম আয়েশে থাকা শরীর এসব নিতে পারছে না।তবুও সে রিক্স নিচ্ছে। দম আটকে আসছে ঘামের গন্ধে।সাফাকে টেনে নিজের বুকের দিকে ফেলে সে।তারপর হাত দিয়ে ঘুড়িয়ে সাফার দু’পাশে দুই হাত প্রশারিত করে দেয়।সাফা যেনো অবাকের উপড় অবাক।সে বাকরুদ্দ। নিভ্রর হাতের সাথে সবাই বারি খাচ্ছে কিন্তু সাফার গায়ে তো দুর কাছেও কেউ নেই।সাফা নিভ্রর দিকে ঘুরে তাকিয়ে আছে অপলক। এমন একটা মানুষইত চাই জীবনে। তার বাবাও তার মাকে বা তাকে ভিড়ের ধাক্কা থেকে বাঁচাতে এভাবেই রাখতো।পৃথিবীর সব মেয়েই জীবন সঙ্গী হিসেবে বাবার মত কেয়ারিং টাইপের কাউকে চায়।সাফার মনে হচ্ছে তার জীবনের এই লোকটাই সে।নিভ্র বিরক্তি নিয়ে সাফার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে।কিন্তু সাফা এখনো তাকিয়ে আছে নিভ্রর দিকে।নিভ্র একটু ঝুঁকে বলে….
—-“সামনে হাঁটো সাফা।”
.
সাফার হুশ ফিড়ে।সে সামনে তাকায়।সন্ধ্যা নেমে এসেছে প্রায়।তাই লাইট জ্বলছে চারপাশে।চারপাশে দোকান আর দোকান।সাফা হাঁটছে নিভ্র দু’হাত দিয়ে তাকে প্রটেক্ট করছে।সাফার নিজেকে কেমন সেফ সেফ লাগছে।এত লোক ধাক্কা ধাক্কি করছে কিন্তু কেউ তার গায়ে লাগছে না।নিভ্রর অবস্থা করুন।এ এদিক দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছে আর ও ওদিক দিয়ে দিচ্ছে। নিভ্রনীল সাখাওত চৌধুরীর এমন অবস্থাও হতে পারে এটা জীবনে সে নিজেই কল্পনা করেনি।ঘামে তার শার্ট ভিজেঁ গেছে।কপাল থেকে টপ টপ করে ঘাম পড়ছে। সাফা একটা দোকানের সামনে দাঁড়ায়।এখানে একজন মহিলা কানের গালার বিভিন্ন গহনা বিক্রি করে।সাফা একটা কানের দুল তুলে নিভ্রর দিকে ঘুড়ে দাড়ায়।নিভ্র ভ্রু কুঁচকে তাকায়।সাফা কানের দুল কানে ধরে নিভ্রকে জিগ্যেস করে….
—-“কেমন লাগছে??”
.
নিভ্র মাথা নাড়ায়। যার অর্থ পছন্দ হয়নি।সাফা আবার কানের দুল কানে ধরে।এভাবে একটা একটা করে দেখায়।কিন্তু নিভ্রর পছন্দ হলো না।সাফারও নিতে হচ্ছে করছে না।নিভ্র বলল…..
—“তোমার পছন্দ হলে নেও।আমাকে দেখিয়ে কি লাভ।আমি মেয়েদের জিনিস তেমন চিনি না।”
—-“আমিও পছন্দ করতে পারিনা।আব্বু আর আম্মুই পছন্দ করে দেয় সব।এই যে জামাটা এটাও আব্বুর পছন্দের।”
.
নিভ্র অবাক হয়।এখনকার মেয়ে হয়েও এই মেয়ে কিভাবে তার বাবা মায়ের পছন্দের জামা কাপড় পরে।ব্যাপারটা তার কাছে ভারী অদ্ভুত মনে হয়।নিভ্র চোখ বুলায় দোকানের সবগুলো জিনিসে।তারপর কর্নার থেকে একটা দুল বের করে সাফার কানে ধরে।ঝুমকার নিচে রংবেরং এর পাথর ঝুলছে।দোকানী হেঁসে বলে…….
—-“আপনার বউকে খুব সুন্দর মানিয়েছে।আপনার পছন্দ ভালো।আর আপনার বউও খুব সুন্দর মাসআল্লাহ্।
.
সাফা চকিতেই তাকায়।চোখ বড় বড় করে দোকানীর দিকে তাকায়।বউ কথাটা সাফার মনে এক শীতল বাতাস বহমান করেছে।সাথে তাকে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।লজ্জা নিয়ে সাফা নিচের দিকে তাকায়।নিভ্র সে মুখ দেখে। তার মনে হয় যেনো প্রথমবার নিজেকে কারো লজ্জায় ডুবিয়েছে। নিভ্র কিছুক্ষণ তাকিয়ে আনমনেই বিড়বিড় করে বলে…..
—–“হুম সত্যিই।
—“কিছু বললেন আপনি??”(সাফা প্রশ্ন করে)
—“না (নিজেকে সামলে বলে নিভ্র)
—এটা পেকেট করেন সাথে এগুলোও।
.
বলেই নিভ্র একটা একটা করে কানের দুল গলার মালা পছন্দ করতে শুরু করে।সাফা হা করে সব দেখে।একটা ছেলের পছন্দ এত সুন্দর হয় কি করে।নিভ্র একটা একটা করে পছন্দ করছে।আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে দেখছে।সবাই অবাক তার পছন্দ দেখে।সাফা মাঝ খানে বলে উঠে…..
—-“সবগুলো ছয়টা ছয়টা করে দিবেন।রং ভিন্ন হলেও সমস্য নেই।”
.
নিভ্র ভাবে এতগুলো নিয়ে কি করবে।তবে প্রশ্নটা করে না।এই দোকান থেকে সরে আর একটা দোকানে যায়।এটা চুড়ির দোকান।সাফা তো খুশিতে পাগল হয়ে যাবে মনে হয়।এত সুন্দর চুড়ি দেখে তার সব নিতে ইচ্ছে করছে।ঝুড়ি ভর্তি চুড়ি।নিভ্র সাফার খুশি দেখে বুঝতে পারে।চুড়ি সাফার খুব প্রিয়।হঠাৎ করেই তার স্বপ্নের কথা মনে পরে।সবুজ চুড়ির কথা।নিভ্র চুড়িরওয়ালা ছেলেটাকে বলে…….
—–“সম্পূর্ণ ঝুড়ি দিয়ে দেও।”আর তোমার আমাদের সাথে থাকতে হবে মানে এই জিনিস গুলো বহন করতে হবে।যদি পারো আলাদা টাকা দেওয়া হবে।
—“ঠিক আছে স্যার।(খুশি হয়ে বলে)
.
সাফা অবাক হয়ে বলে…..
—-” সবগুলো চুড়ি কেনো??
নিভ্র কথাঘুড়ায়।বলে….
—“আরে চুড়ি পছন্দ করা এখন ঝামেলার হবে তাই।সবই নিয়ে নিলাম।”
.
সাফা তো খুশিতে বাকবাকুম হয়ে চুড়ি গুলো একবার ছুঁয়ে দেখে।নিভ্রর অবস্থা এবার খারাপ।সে আর পারছে না।তবুও হাত সরাচ্ছে না।হঠাৎ সাফা একটু ছুটে একটা দোকানের সামনে দাঁড়ায় এখানে নাকফুল আর পায়েল নুপুর বিক্রি করে।নিভ্র সবাইকে ঠেকে সাফার পিছনে দাঁড়ায় সাফা একটা নাকফুল নিয়ে নিজের নাকে ধরে।কিন্তু দুঃখের ব্যাপার তার নাক ফোড়ানো হয়নি।তাই সে পড়তে পারবে না।তবে কিনবে।সাফা আয়না চায় দোকানীর কাছে।এক হাতে আয়না ধরে নিজের নাকে নাকফুল রাখে।আয়নায় তাকিয়েই নিভ্রর ঘামে ভড়া কপাল আর সবুজ চোখ দেখতে পায়।মুখে মাক্স তাও ভেঁজে গেছে।নিভ্র আয়নার দিকে তাকায়।সে থমকায়।সাফার লাল আভার মুখে সাদা পাথরের নাক ফুল চিক চিক করছে।নিভ্রর পৃথিবী যেনো আটঁকা পরে সেই নাক ফুলে।হৃদয় যেনো হরন হয়েছে তার।পাঁজরে পাঁজরে অদ্ভুত এক ব্যাথা হয়।কেমন যেনো এক শিহরিত অনুভুতিতে সে সিক্ত হয়।সাফা নিভ্রর দু’হাতের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।তার নিজেকে নিরাপদ নিরাপদ লাগছে এই বাহুতে।মনের মাঝে অনুভুতিরা কড়া নাড়ছে।রক্তে রক্তে শিহরণ হচ্ছে। লাইটিং এর আলোতে নিভ্রর চোখ জ্বলজ্বল করছে।মানুষ নিভ্রকে ধাক্কা দিচ্ছে। ধাক্কা খেয়ে সে নড়েচড়ে উঠছে।কিন্তু চোখ আগের জায়গায়। সেদিকে তার পরোয়া নেই।তার সব জুড়ে আঁটকে আছে একটা নাকফুলে মন্ডিত স্নিগ্ধ চেহারায়।
.
.
#চলবে…….🍁

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *