001. নতুন গল্পঃ3. রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প গুলোঃলেখাঃ সারা মেহেক

এই সাঁঝবেলাতে তুমি আমি !! লেখাঃ সারা মেহেক

এই সাঁঝবেলাতে তুমি আমি

এক বালতি বরফ ঠান্ডা পানি দিয়ে যে কেউ এভাবে ওয়েলকাম করবে তা হয়তো স্বপ্নেও ভাবেনি আকাশ আর আফনান।এমন ধরনের ওয়েলকামে আকাশ আর আফনানের যেনো রাগের জাহাজ এসে পৌছিয়েছে মাথায়।
এতো বছর পর আমেরিকা থেকে দুজন দেশে ফিরেছে,ভেবেছিলো খুব সুন্দরভাবে তাদের ওয়েলকাম জানাবে।কিন্তু এখানে এসে এমনভাবে তারা সাদরে আমন্ত্রিত জানানো হলো যে রাগ মাথায় না চড়ে থাকতে পারলো না।
এদিকে মুসকান তো উপর থেকে সেই হাসি দিচ্ছে। হাসতে হাসতে রীতিমত গড়াগড়ি খাওয়া অবস্থা।কিন্তু সুমনার কথা শুনে মুখ থেকে হাসি এমনিই উবে গেলো।সুমনা বললো,
“মুসকান, তুই ভুল মানুষদের ওয়েলকাম জানালি। দেখ,বেয়াইরা তো সব কেবল এখানে পৌছালো। এখনো গেটের বাইরেই তারা।”
মুসকান ভয়ে পেয়ে বললো,
“লেও ঠ্যালা। তাহলে এরা কারা!!!”
“কি জানি।মনে হয় অন্য মেহমান।যদি বড় কারোর পরিচিত হয় তাহলে আজকে নিশ্চিত তুই গিয়েছিস।”
মুসকান দাঁত দিয়ে নখ কামড়ে বলে,
“এসব খারাপ কথা বলিস না। বি পজিটিভ ইয়ার। কিছুই হবে না। আমি আছি তো।”
তখনই সুমনার চোখ গেলো নিচের দিকে।সে দেখলো নিচে থাকা ছেলে দুটো মানে আকাশ আর আফনান চোখ মুছে উপরের দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে।
সুমনা এ দেখে সাথে সাথে মুসকানকে বললো,
“এখনই চল এখান থেকে। ছেলে দুটো উপরে তাকানোর চেষ্টা করছে।”
মুসকান কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুমনা তাকে সেখান তেকে টেনে নিয়ে চলে গেলো।
আকাশ আর আফনান উপরে তাকিয়ে দেখতে পেলো একটা ছোটো বাচ্চা মেয়ে দাড়ীঁয়ে আছে।এ দেখে তারা কিছু না বলে বাড়ীর ভিতরে প্রবেশ করলো। (এই সাঁঝবেলাতে তুমি আমি)

কিছুক্ষণ আগে,
মুসকানের বড় বোন মাহিরার বিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই। বাড়ীতে এ নিয়ে প্রচুর হইহুল্লর। হবেই না বা কেনো,কাজিনের অভাব নেই মুসকানের।আর সব কাজিন একসাথে হলে তো এমনিই চিৎকার চেঁচামেচিঁ হয়।
মাহিরার কিছু দেবর আর মাহিরার বর শাওনের কিছু ফ্রেন্ড জিদ ধরেছে যে বিয়ের আগে তারা তাদের ভাবিকে একবার দেখবেই। তাই তারা সবাই আজকে এ বাড়ীতে আসবে।যেহেতু ছেলেপক্ষ থেকে মানুষজন আসবে তাই বাড়ীর বড়রা ব্যস্ত।
আর ছোটোরা ব্যস্ত কিভাবে তাদের আমন্ত্রণ জানাবে।
মুসকানের উপর এ মহান দায়িত্ব অর্পণ করা হলো। আর সে অতি সুন্দর একটা আইডিয়াও বের করলো।কিন্তু প্রয়োগ হলো অন্য মানুষের উপর।
যাই হোক,মুসকান ভাবলো যে এক বালতি বরফ ঠান্ডা পানির মধ্যে উপটান আর গোলাপের পাপড়ি মিশিয়ে দোতালা বাড়ীর ছাদ থেকে সব বেয়াইদের মাথার উপর ঢালবে।যেই ভাবা সেই কাজ।সব কিছু রেডি।কিছু কাজিন ছাদে মুসকানের সাথে আছে,আর কিছু কাজিন গেটের বাইরে,কারন তারা বলবে যে কখন বেয়াই সাহেবরা সব আসছে।
অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর গেটের বাইরে থাকা কাজিনগুলো মুসকানের ফোনে ফোন দিয়ে বললো,
“শিকার আসছে, মুসকান।আমাদের শিকারী রেডি তো?”
মুসকান জবাব দিলো,
“ইয়েস বস,আমি রেডি।”
এদিকে আকাশ আর আফনান দীর্ঘ ১০বছর পর দেশে আসছে।এর আগেও অবশ্য এসেছে কিন্তু তিন চারদিনের জন্য।এবার একেবারের জন্যই দেশে চলে এসেছে তারা।আকাশ আর আফনানের বন্ধুত্ব ছোটোবেলা থেকেই।আমেরিকায় একসাথে থাকতো তারা।মাহিরার বিয়ে উপলক্ষে এয়ারপোর্ট থেকে আফনানের বাবা মায়ের সাথে দেখা করে সোজা মুসকানদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
বাড়ীর সামনে এসে গাড়ী থেকে নেমে সোজা গেটের ভিতরে ঢুকে আকাশ আর আফনান।
তাদের দেখে গেটে থাকা ছেলেমেয়েরা মুসকানকে বলে,
“মুসকান এখানে তে মাত্র দুজন মানুষ।দুজন তে হওয়ার কথা না।আরো অনেক মানুষ আসবে তো।”
মুসকান চিন্তিত কণ্ঠে বলে, (এই সাঁঝবেলাতে তুমি আমি)
“সেটাই তো।দুজন কেনো??
আচ্ছা যাই হোক।এক বালতি এদের উপর ঢালি আর আরেক বালতি রেডি করে এর পরে যারা আসবে তাদের উপর ঢালবো।”
ওপাশ থেকে বলে,
“ওকে।”
বাড়ীর মেইন দরজার কাছাকাছি আসতেই আকাশ আর আফনানের মাথায় সেই বালতির পানি ঢেলে দেয় মুসকান আর সুমনা মিলে।এরপরের কাহিনি তে সবারই জানা।

বাড়ীর ভিতরে ঢুকলো আকাশ আর আফনান।সাথে নিয়ে ঢুকলো চরম রাগ আর বিরক্তি।
এদিকে পিছে পিছে মাহিরার সব দেবর রাও ঢুকলো।আকাশ আর আফনানকে এভাবে দেখে একটা ছেলে তো বলেই ফেললো,
“এমন উদ্ভট সাজে আর উদ্ভট গন্ধ নিয়ে দাঁড়ীয়ে আছে কেনো এই ছেলেগুলো!!”
আরেকজন জবাব দিলো,
“এরাই জানে।”
এদের এ কথাগুলো আকাশের কানে গেলো। এটা শুনে আকাশ আরে রাগে ফুঁসছে।
রান্নাঘর থেকে একটা মহিলা এসে দেখলো যে মাহিরার সব দেবর রা চলে এসেছে।তিনি ওদের বসতে বলে আবার রান্নাঘরের দিকে যাওয়ার আগে আকাশ আর আফনানের দিকে নজর গেলো। তিনি এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
“তোমরা কারা বাবা?”
আফনান এদিক ওদিক দেখছিলো।হঠাৎ একজনের কন্ঠ শুনে সে সামনে তাকিয়ে দেখলো আকাশের মা দাঁড়ীয়ে আছে। আকাশের মা কে দেখে আফনান তৎক্ষনাৎ জবাব দিলো, (এই সাঁঝবেলাতে তুমি আমি)
“আন্টী,এটা আপনার সোনার ছেলে আর আমি আফনান।”
আকাশের মা নাসরিন বেগম এটা শুনে হাসতে হাসতে বললে,
“তা আমার সোনার ছেলে দুটোকে এভাবে সোনা দিয়ে গোছল কে করিয়েছে?”
আকাশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই নাসরিন বেগমের ডাক পরে রান্নাঘরে। এতে তিনি তাড়াতাড়ি চলে যান।
এদিকে আকাশ আর আফনান হ্যাবলার মতো দাঁড়ীয়ে আছে। নিজেদের সার্কাসের জোকারের থেকে কম কিছু মনে হচ্ছে না।কারন আশেপাশে দিয়ে যেই যাচ্ছে সেই হেসে দিচ্ছে। আকাশ আর আফনানের কিছু করার ও নেই। কারন এ বাড়ীর কিছুই মনে নেই তাদের।এসেছিলো তো অনেক আগে,সেই ছোটোবেলায়।
মুসকান সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে দেখে তাদের ভুল টার্গেট দুজন নিচে দাঁড়ীয়ে আছে। মানে আকাশ আর আফনান। তাদের অবস্থা দেখে মুসকানের এতো হাসি পাচ্ছে,বলার বাইরে কিন্তু অনেক কষ্টে হাসি কন্ট্রোল করে আছে। সুমনাকে সে বলে,
“আমার মা অনেক হাসি পাচ্ছে রে সুমনা।”
সুমনা ধীরে বলে,
“চুপ।একটুও হাসা যাবে না। হাসি তো ফাসি।”
মুসকান “হুম” বলে নিচে নেমে দাঁড়ীয়ে থাকে।
মুসকান কোনোমতেই নিজের হাসি আটকে রাখতে পারছে না।শেষপর্যন্ত ফিক করে হেসে দিলো সে।আকাশের কানে হাসির শব্দ পৌঁছালে সে মুসকানের দিকে তাকায়।কারন আশেপাশে সবাই কাজে ব্যস্ত।মেহমানদের খাবার দিচ্ছে অনেকে। এদের মধ্য মুসকানকে সন্দেহজনক মনে করে সে মুসকানের দিকে তাকায়।আকাশ আফনানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“দেখ দোস্ত,ঐ মেয়েটাকে।”
আফনান বিরক্তি নিয়ে বললো,
“ঐ,তুই এই অবস্থায় মেয়ে মেয়ে করছিস কেনো?”
“আরে ঐ মেয়েটাকে দেখে আমার সন্দেহ হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমাদের এমন অবস্থা এই মেয়েই করেছে।”
আফনান মুসকানের দিকে লক্ষ করে দেখলো আসলেই এই মেয়েটাকে সন্দেহজনক লাগছে।
মুসকান তার ৫বছর বয়সী ছোটো চাচাতো বোন মিরা কে কানে কানে কিছু একটা বললো।
এরপর মিরা আকাশ আর আফনানের সামনে গিয়ে নাকে হাত দিয়ে বললো,
“ইউ ছি।….গন্ধ.”বলেই দৌড়ে চলে যায় সেখান থেকে।এটা শুনার পর আকাশ আর আফনানের মুখের অবস্থা দেখার মতো ছিলো।মুসকান তো এ দেখে সেই হাসছে।
হঠাৎ করে মুসকানের কান চেপে ধরলো তার ফুপি।আর জিজ্ঞাসা করলো,
“এসব তুই করেছিস তাইনা?অনেকক্ষন ধরে খেয়াল করছি তো সব।যা গিয়ে সরি বলে আয়।”
মুসকান বললো,
“বলবো না সরি।”
এটা শুনে মুসকানের ফুপি আরো জোরে কানমলা দিয়ে বললো,
“এখনি যা বলছি।”
“আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি।”
এরপর মুসকান আকাশ আর আফনানের সামনে গিয়ে বললো,
“সরি ফর দ্যাট।”
এটা শুনে আকাশ বললো,
“আমি তাহলে ঠিকই সন্দেহ করেছিলাম।”
সাথে আফনান যোগ দিলো,
“এই মেয়ে এমন কেনো করেছো হুম?”
মুসকান ভেংচি কেটে জবাব দিলো,
“বেশ করেছি।আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই করেছি।সরি বলছি একসেপ্ট করলে করুন নাহলে ভাগুন এখান থেকে।”
আকাশ বললো,

“আমরা এখানে থাকতে এসেছি।সো এখান থেকে যাবো না।আর ভুল করেও এতো বড় বড় কথা বলো কোন সাহসে?”
মুসকানের রাগ উঠে গেলো।তাদেরই বাড়ীতে দাঁড়ীয়ে তাকেই কথা শুনানো হচ্ছে!!সে বললো,
“হেই ইউ মিস্টার খাটাশ খাম্বা কোথাকার।আমাদরে বাড়ীতে দাঁড়ীয়ে আমাকেই কথা শুনাচ্ছেন কোন সাহসে সেটা আগে বলুন।”
আফনান বললো,
“এই মেয়ে, তুমি এসব উল্টাপাল্টা কাজ করবে,আর আমরা বললেই দোষ!!”
এতোক্ষন বাড়ীর বড়রা চলে এসেছে।আর মাহিরার দেবররাও হা করে দেখছে সব।
মুসকান জবাব দিলো,
“হ্যাঁ দোষ,হলুদ হনুমান কোথাকার।আস্ত একটা বান্দরের চেয়ে কম লাগছে না। স্যুট বুট পরা বান্দর দুইটা।আর এগুলো আপনাদের জন্য ছিলো না ছিলো আপুর দেবরদের জন্য। ওয়ান টাইপ অফ ওয়েলকাম ড্রিংক তাদের জন্য।”বলে মুসকান চলে যাচ্ছিলো,কিন্তু মাহিরার দেবরের মধ্যে একজন বলে উঠলো,
“কি ডেনজারাস মেয়েরে বাবা!!!”
মুসকান তৎক্ষণাৎ ঘাড় ঘুড়িয়ে জবাব দিলো,
“ইয়েস আই এম ডেন্জারাস, টু মাচ ডেনজারাস দ্যান ইউ থট।মাইন্ড ইট,বিয়ের পরে যদি আপনার ভাইজান,আমার আপুকে কষ্ট দিছে তাহলে আপনাদের উপর এর শোধ তুলবো।”বলেই মুসকান চলে গেলো।
উপস্থিত সবার যেনো চোখ বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম।
আফনান অস্ফুট স্বরে বললো,
“সি ইজ কোয়াইট ইন্টারেস্টিং। ”
(এবার আসুন ছোটো করে পরিচয় দিয়ে নেই।
মুসকান।পড়ে অনার্স প্রথম বর্ষে।বয়স ২০বছর।স্বভাবে খুবই চঞ্চল। স্থির থাকার মানুষ সে না।ওরা দুইবোন। ও ছোটো।ওর বড় বোনের নাম মাহিরা।তারই বিয়ে।
আকাশ আর আফনান।দুজন ছোটো থেকে বন্ধু আমেরিকা থেকে পড়াশুনা করে এসেছে। তাদের ইচ্ছা দেশে এসে নিজেদের একটা বিজনেস শুরু করবে।দেশে তো আসতো আরো পরে।কিন্তু মাহিরার বিয়ের জন্য আগেই চলে এসেছে।
মুসকানের বাবা আর আকাশের বাবা দুজনেই খুব ভালো বন্ধু। পাশাপাশি দুজনেই দোতালা বাড়ী বানিয়েছে।
আফনান আগে থেকেই আকাশের বাসায় আসতো।সেই সুবাদে মুসকানকে সে ও চিনে।কিন্তু ছোটোবেলায় দেখা হওয়াতে না আকাশ আর না আফনান মুসকানকে চিনতে পেরেছে।মুসকানও তাদের চিনে নি।)

বিঃ দ্রঃ একটু নিচে ভালো করে লক্ষ করুন পরবর্তী পর্বের লিংক দেয়া আছে

বিঃ দ্রঃ “ লেখাঃ সারা মেহেক ” লেখকের লেখা অন্য গল্প গুলো পড়তে এখানে ক্লিক করুন !!

👉 এক পলকে দেখে নিন সহজে গল্প খুঁজে পাওয়ার সুবিধার্থে দেওয়া হল