উপন্যাস- রাত

উপন্যাস- রাত ! পর্ব- ১৯ ও শেষ

এয়ারপোর্ট এ রোজ গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।
ওকে আসতে আমি মানা করে দিয়েছিলাম।
ড্রাইভ করছি আর রাত্রি পাশে ঘুমাচ্ছে।
বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। চাদ টাও মেঘে ঢাকা।
গাড়ি বাসার সামনে থামল।রাত্রি ঘুমিয়ে আছে। তাই ডাক
দিলাম না।
গাড়ি থেকে কোলে নিয়ে ওকে রুমে শুইয়ে
দিলাম।
উঠে আসার সময় খেয়াল করলাম ও আমার জামা শক্ত
করে ধরে আছে।
ছাড়াতেই রাত্রির ঘুম ভেংগে গেলো।

রাত্রি- আমরা এসে গেছি?? কখন! ? কিছুই ত টের
পেলাম না।

প্রহর – আপনি ঘুমাচ্ছিলেন ম্যাম।

রাত্রি- প্রহরের বুকে মাথা রাখলাম। আচ্ছা একটা কথা
বল” তোমার বুকে মাথা রাখলে তোমার হার্টবিট শুনা
যায় না কেন? ??”

প্রহর – ওকে বুকে থেকে সরিয়ে দিলাম।
তুমি ঘুমাও। আমি খুব ক্লান্ত। আমিও একটু রেস্ট
নেই।

রাত্রি- যাহ বাবা চলে গেলো!? দুর।
ভাল্লাগেনা।

প্রহর – রাত্রি আজ সন্দেহ না করলেও ব্যপার টা
খেয়াল করেছে।
ওকে ত আর দুরে সরিয়ে রাখা যাবেনা।কাছে
আসতে চাইলে আমি কি করে আটকাবো???কিং এর
কাছে গেলাম।

কিং- আমার কি মনে হয় জানো??

প্রহর – কি! ?

কিং- ওকে সত্যি টা বলে দেওয়া দরকার।
ওকে একা রাখা এইভাবে ঠিক না।
হয়ত সত্যি টা ও এক্সেপ্ট প্রথম এ করবেনা পরে
ঠিক হয়ে যাবে।

প্রহর – না না এটা কি বলছেন?

কিং- আমি আমার মেয়ে কে হারিয়েছি।
ওকে হারাতে চাইনা।
নাইট যখন জেনে গেছে তখন রাত্রি কে ও ওর
বানিয়েই ছাড়বে।
পৃথিবীর যে কোনায় ই ওকে পাঠিয়ে দেইনা
কেন।
এর থেকে ভালো ও ওর আসল পরিচয় পেয়ে
যাক।
দরকার হলে ওকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়ে দিব।

প্রহর – আপনি যা চাইবেন তাই হবে।
কিন্তু আপনি আরেকবার ভেবে দেখুন।

রাত্রি- এই ছেলে কোথায় উধাও হয়ে যায় বার বার।
সকাল সকাল কোথায় গিয়েছে কে জানে।?
।আজ আমি ওর জন্য নিজের হাতে ব্রেকফাস্ট
বানাবো।

প্রহর – ঘরে ঢুকতে ই মনে হল রান্না ঘরে
কেউ।আমি রান্না ঘরে গেলাম।
রাত্রিকে দেখলাম।ওকে জিজ্ঞেস করলাম ” তুমি
রান্না করছ।”

রাত্রি- চেষ্টা করছি।ও কথার উত্তর দিতে যেয়ে
চাকু দিয়ে আংগুল কিছুটা কেটে রক্ত পড়া শুরু হল।

প্রহর – আমি রক্তের দিকে তাকিয়ে আছি।
হাত টা খপ করে ধরলাম।আংগুল টা মুখে নিয়ে নিলাম।

রাত্রি- আরে কি… কি … কি করছ!?? মনে হচ্ছে
আংগুল ই খেয়ে ফেলবে।

প্রহর – অনেক দিন পর কোনো মানুষ এর রক্ত
খেয়েছি।
নেশা লেগে গেছে।
আমি ওর সামনে যেয়ে দাড়িয়ে কাধ থেকে চুল
সরালাম।
রাত্রি- আমি শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছি চোখ বন্ধ
করে।

প্রহর – নিজের সাথে লড়াই করে ওকে সরিয়ে
চলে এলাম।
না হলে কামোড় বসিয়ে দিতেও পারি।

রাত্রি – ওর এমন কাজে কিছুটা অবাক হলাম।
এত কাছে এসেও আবার চলে গেলো? ?

প্রহর – সারাদিন পরে বাসায় এসে আমি রাত্রির রুমে
গেলাম।
কিন্তু ও নেই।ফোন দিচ্ছি কিন্তু ফোন তুলছেনা।

রোজ- সর্বনাশ হয়ে গেছে।
রাত্রিকে ওরা নিয়ে গেছে।

প্রহর – কে?
রোজ- কাব্য. আমি ওকে নিজের চোখে
দেখেছি।
বাসায় এসে ওকে নিয়ে গেছে মিথ্যে বলে।
তুমি কোথায় ছিলে সারাদিন।
প্রহর – সেসব কথা পরে হবে। আগে চল কিং এর
কাছে।কিং এর কাছে গিয়ে সবাই একত্রিত হলাম।

রোজ- আমি জানি ওর আস্তানা কোথায়।
আমি ওর পিছু নিয়েছিলাম।

প্রহর – চল তাহলে।
সবাই মিলে রৌনা দিলাম।গভির
জংগল এ যেতেই দেখি নাইট এর দলবল দাড়িয়ে
আছে।
আমরাও ঝাঁপিয়ে পড়লাম।

রোজ- আমরা এইদিক সামলাই তুমি আর লাইট রাত্রির
কাছে যাও।
আমারা পিছে পিছে আসছি।

প্রহর – আমি, লাইট আর কয়েক জন ভ্যাম্পায়ার
প্রাসাদের দিকে গেলাম।
ওরা পিছনের দিক দিয়ে প্রবেশ করল।
আমি অন্য দিক দিয়ে প্রবেশ করলাম।
রাত্রির গায়ের স্মেল আমি পাচ্ছি।
একটা রুমে ঢুকলাম।

রাত্রি- কিছুর আওয়াজ হল।ভয়ে কেপে উঠলাম।
অনেক অন্ধকার।কিছুই দেখা যাচ্ছেনা।
আমি চিতকার করে বললাম ” তুমি কাব্য হউ আর যাই হউ
আমার কাছ এ কি চাও তুমি!???”

প্রহর – আমি রাত্রিকে ডাক দিলাম।

রাত্রি- প্রহর! ? তুমি তুমি এসেছ।
দৌড় এ গেলাম ওর কাছে।
জরিয়ে ধরলাম।

নাইট – ওয়েল ওয়েল।
আমি তোমাকেই আশা করছিলাম প্রহর।

রাত্রি- প্রহর ও কিন্তু মানুষ না।
আমি জানি তুমি বিশ্বাস করবেনা
কিন্তু এটা সত্যি।
বিলিভ মি।

প্রহর – আমি বিলিভ করি তোমাকে।

রাত্রি- ……
নাইট – বিলিভ ত করতেই হবে।তুমি কি জানো প্রহর
কি? ?
রাত্রি- ও কি মানে!? ও আমার মত ….
নাইট – হাহাহা। তোমার মত!?
প্রহর আমার মত।

রাত্রি- প্রহর ও কি বলছে!??? তুমি চুপ করে আছো
কেন! ???
কিছু বল।
নাইট – ও আর কি বলবে? ?? তুমি কি ওকে খেতে
দেখেছ কখনও? ? অথবা ঘুমাতে! !?? কখনও ওর
হার্টবিট? ? ওর গায়ের ক্ষত নিমিশেই গায়েব হয়ে
যায় কিভাবে কখনও ভেবেছ!?
। রাত্রি- তোমার কথা আমি মানিনা।প্রহর তুমি বল।ও কি
বলছে?
প্রহর – ও ঠিক বলছে.

রাত্রি- তুমি! ?? তুমি ও!!!!

প্রহর – রাত্রি আই কেন এক্সপ্লেন।
তার আগে তুমি আমার সাথে চল।

নাইট – নোট সো ফাস্ট।
আমি যেতে দিলে ত।

রাত্রি- আমি ওইখান থেকে বেরিয়ে এলাম।
সব জায়গায় সবাই মারামারি করছে।
আমি আর নিতে পারছিনা।
রোজ- তুমি এইখানে কি করছ! ? চল আমার সাথে।

রাত্রি- তুমিও কি প্রহরের মত।

রোজ- সব কথা পরে হবে।
এখন চল।

প্রহর – নাইট পালিয়েছে।
অন্য ভ্যাম্পায়ার দের মাঝে রেখে আমাকে।
আমি জানি ও রাত্রির কাছেই গেছে।
আমি যতক্ষণ এ নাইট এর কাছে গেলাম।
ততক্ষনে দেখি রোজ আর রাত্রি আহত হয়ে
পরে আছে।

নাইট – আমি রাত্রিকে ভ্যাম্পায়ার বানিয়েই ছাড়ব।
কারন যদি ওকে বেচে থাকতে দেখতে চাও
ওকে ভ্যাম্পায়ার বানাতেই হবে।
না হলে ও বাঁচবে না।
হাহাহা।
আর আমি ওকে আমার ই বানিয়ে ছাড়ব।
আর কারও না।

রোজ- প্রহর রাত্রিকে বাঁচানোর আর উপায় নেই।
নাইট এর আগে তুমিই……..

কিং- আমি নাইট এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
প্রহর আমি তোমাকে বলছি।তুমি ওকে ভ্যাম্পায়ার
বানিয়ে ফেলো।

প্রহর -আমি কি করব বুঝতে পারছিনা।
শুধু রোজ আর কিং এর কথা মাথায় ঘুড়ছে।
কিং- প্রহর হারি আপ।

প্রহর – রাত্রির গলায় কামড় বসিয়ে দিলাম।

রাত্রি- ব্যথায় আমি প্রহরের চুল শক্ত করে ধরলাম।
মনে হচ্ছে কেউ আমার রক্ত সব চুষে বের
করে দিচ্ছে।
প্র….হ…..র।

প্রহর – রাত্রি নিস্তেজ হয়ে গেলো।
ওর সমস্ত শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে।
কোলে তুলে নিলাম ওকে।
এইদিকে কিং নাইট কে মেরে দিয়েছে।
আমাদের অনেক ভ্যাম্পায়ার মারা গেছে।
আর সাথে নাইটের ও।

কিং- ওকে আমাদের প্রাসাদে নিয়ে চল প্রহর।

প্রহর – রাত্রিকে প্রাসাদে নিয়ে এলাম।
শুইয়ে দিলাম ওর মায়ের যে রুম টা ছিল সেটাতে।
১ঘন্টা ২ঘন্টা করে করে অনেক সময় পার হয়ে
গেলো।
কিন্তু রাত্রি নড়ছেও না।
খুব ভয় লাগছে।
ও কি উঠবে? ও কি জাগবে? আর যদি জাগে কি রুপে
জাগবে?? ও কি মেনে নিবে আমাদের???
কি বুঝবে সব কথা!? ও যদি ভ্যাম্পায়ার হয় তাহলে এটাই
ওর শেষ ঘুম।
কারন ভ্যাম্পায়ার রা কখনও ঘুমায়না।ওদের খাবারের
প্রয়োজন নেই।
শুধু প্রয়োজনন রক্তের।
ও কি পারবে রক্তের নেশা কন্ট্রোল করতে??
অনেক টা সময় পার হয়ে গেছে।
আমাদের চিন্তা ও তার সাথে বেড়ে চলেছে।

কিং- চিন্তা করোনা প্রহর।
আমি জানি তোমার চিন্তা আমাদের থেকেও বেশি
হচ্ছে।
আমি জানি তুমি ওকে খুব ভালবাসো।
আর তোমার থেকে বেশি ওকে কেউ
ভালোবাসতে পারবেনা।
আমি চাই তুমিই ওকে সব সময় সামলাও।
তুমিই পারবে ওকে সামলাতে।

রোজ – কিং, প্রহর ….. রাত্রি! !!!!

কিং- কি হয়েছে! ?

প্রহর – সবাই গোল হয়ে দাড়িয়ে আছে রাত্রির
বিছানা র পাশে।
রাত্রির হাত নড়ছে,
মানে ওর জ্ঞান একটু একটু করে আসছে।
আমরা রাত্রির চোখ খোলার অপেক্ষা করছি।
হঠাত রাত্রি চোখ খুলে উঠে বসল।
চোখ লাল হয়ে আছে।
মানে রাত্রি ভ্যাম্পায়ার এ পরিনত হয়েছে।

কিং- ওকে সামলানো র কাজ তোমার প্রহর।

প্রহর – কিং ইশারা করতেই বাকি সবাই কিং এর সাথে বের
হয়ে গেলো।
।আমি রাত্রির কাছে গিয়ে দাড়ালাম।
রাত্রি উঠে দাড়ালো।
আমি ওর গালে হাত দিলাম।

রাত্রি- প্রহর আমার খুব পিপাসা পেয়েছে।
কিন্তু কিসের পিপাসা বুঝতে পারছিনা।

প্রহর – আমি জানি কিসের পিপাসা পেয়েছে।
রাত্রি ছটফট করতে শুরু করে দিল।
আমি ওকে খুব সামলানোর চেস্টা করছি।
নতুন নতুন রক্তের নেশা সামলানো খুব কস্টের
আমি জানি।
কি করব বুঝতে পারছিনা।
রক্তের জন্য ও এখন মানুষ ও মেরে দিতে
পারে। যা আমরা চাইনা।
রাত্রিকে শক্ত করে ধরলাম।নিচে ওকে নিয়ে
বসলাম।
নিজের হাতে কামোড় দিয়ে আগের মত রক্ত
চুষে নিলাম।
আগের মত করে রাত্রিকে রক্ত খাইয়ে দিলাম।ও
সব রক্ত খেয়ে নিচ্ছে।
রক্তের পিপাসা যেনো মিটছেনা ওর।
হঠাত ও নিজের হাতে মুখে রক্ত দেখে চিতকার
করে উঠল।বলতে শুরু করল””” এসব কি? ? আমি
আমিও কি তোমাদের মত? ? এসব কি হচ্ছে আমার
সাথে? তুমি তুমি ত মানুষ না?? আমি আমি …..????”””আমি
রাত্রিকে শান্ত করার চেস্টা করলাম।
পানি দিয়ে মুখ ধুইয়ে দিলাম।
তারপর কিং এর কাছে নিয়ে গেলাম।

রাত্রি- আমি নানু কে দেখে অনেক অবাক হলাম।
আমি বললাম ” না না এটা আমার নানু না।
আমার নানু ত মারা গেছে।
এটা কে? ??”

কিং- আমি ই তোমার নানু ই আমার লিটল প্রিন্সেস।
।।
রাত্রি- এটা ত আমার নানু বলত আমাকে তুমি কি করে
জানলে।

প্রহর – উনিই তোমার নানু।

রাত্রি- কিন্তু তোমরা ত মানুষ না।
কিং- তুমিও মানুষ নেই আর।

রাত্রি- মানে? ?

কিং- সব কিছু খুলে বললাম।
ওর মা বাবার কথা, আমার কথা, ওর ভ্যাম্পায়ার হওয়ার কথা
সব।
রাত্রির এসব মানতে খুব কস্ট হচ্ছিল।
তার সাথে ওর রক্তের নেশা রাত্রি পাগল হয়ে
যাচ্ছিল।
আস্তে আস্তে যত দিন যাচ্ছিল প্রহরের ভালবাসা
রাত্রিকে বাধ্য করছিল সব কিছু ওকে মেনে নিতে।
আর রাত্রি আস্তে আস্তে রক্তের নেশাও
কোন্ট্রল করতে পারছিল।
রাত্রি আর প্রহর রাত্রির বাসাতেই থাকে।
হাজারো মানুষ এর সাথে চলে।
কিন্তু তাদের পরিচয় কেউ জানেনা।
জানবেনা।
তাদের সত্যি র সাক্ষি শুধু # রাত
আর রাতের আধার।
রাতের আধারের এমন অনেক গল্প থাকে যা
ভোরের আলোর সাথে মিশে যায়।
সাবধান হয়ত রাত আপনার জন্য বয়ে আনতে পারে
নতুন কোনো গল্প।
রাত এর গল্প শেষ হয়েও হলোনা শেষ।
ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *