আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 34 (Last Part)

দুইবছর পর,
বিধানঃ দিশু তুই রেডি তো বরযাত্রী এসেছে!
দিশুঃ ইয়াহ আ’ম রেডি বিধু!
বিধানঃ তুই খুশি তো?
দিশাঃ অবশ্যই! কত বছরের অপেক্ষার পর নিজের ভালোবাসা পেতে যাচ্ছি।
বিধানঃ হি ডাজেন্ট লাভ ইউ!
দিশাঃ সো হোয়াট! তোরা এতো ভাবছিস কেন………শেষ পর্যন্ত তোর বউ মুক্তি পাচ্ছে আমার থেকে!

বলেই দিশা তাচ্ছিল্যের হাসি দেয় আর বিধান আবার হতাশার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। এর মধ্যেই কোথা থেকে বিধী ও বিহান এসে দিশাকে জড়িয়ে ধরে। দিশাও ভারি লেহাংগা নিয়ে হাটু গেড়ে বসে দুজনকে জড়িয়ে ধরে।
বিধীঃ ফুপি তোমাতে তো পুলো বউ ডল লাগতে।
বিহানঃ হ্যাঁ সুন্দল সুন্দল লাগতে।
দিশাঃ ওহহ মাই বেবিস! তোমাদের অনেক কিউট লাগছে পুরোই এঞ্জেলদের মতো!
বিধী ও বিহানঃ সত্তিই!
দিশাঃ হুমমম বেবিস! বাট বিধী তুমি জুতো চেঞ্জ করো নাই যে!
বিধীঃ ওহ ভুলে গেতি তো কলে আতি হ্যাঁ!
দিশাঃ ওকে সোনারা।
বিধানঃ বিথীকে কি ক্ষমা করা যায় না?
দিশা কিছু না বলে পার্লারের মেয়েদের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো এমন ভাবে যেনো বিধানের কথাটা তার শুনাই হয়নি। বিধানও কিছু না বলে নিচে চলে গেলো।

বিধী ও বিহান চলে গেলো বিথীর কাছে। বিথী আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে ও কক্সবাজারে যাওয়ার আগের কথাগুলো ভাবছে। বিধানের ছোট ছোট দুষ্টুমি ভালোবাসাগুলোকে ভেবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে তখনই পেটে কারো নরম নরম হাত জোড়ার আভাষ পায়। সে জানে এটা তার ছোট্ট পরীর হাত জোড়া আর এটাও ভাবো এই রাজকন্যা ও রাজপুত্রের জন্যই তার সংসারটা টিকে আছে নাহলে কবে কাঁচের আয়নার মতো ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যেতো।

আড়ালে চোখের পানিগুলো মুছে পিছন ঘুরে বিধীকে কোলে তুলে জিজ্ঞেস করে, কি হয়েছে মামুনি?
বিধী মুচকি হেসে বলে, মাম্মা আমাল নুতুন জুতু তোথায়?
বিথী বিধীকে খাটে বসিয়ে বলে, এই তো মাম্মা পড়িয়ে দিচ্ছি!
বিধী বিথীর উড়না নিয়ে খেলতে খেলতে বলে, আত্তা।
বিথী জুতো পড়াতে পড়াতে জানতে চায়, ভাই কোথায় মামুনি?
বিধী কনফিউজ হয়ে বলে, তি দানি তোথায় দেলো আমার তাথেই তো তিলো।
বিথী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, নিচে গিয়েছে বোধহয়।

বিধী নিচে চলে যায় দাদির কাছে এবং ঠিক তখনই বিধান ঘরে আসে। বিথীকে না দেখার ভান করে ওয়াসরুমে চলে যায় যা দেখে বিথী হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে আমাকে কী একটুও ক্ষমা করা যায় না সেদিনের ভুলটার জন্য। (বলেই অতিতে ডুব দেয়)

দুই বছর আগে দিশার জ্ঞান ফিরেছিলো তবে এক্সিডেন্টে তলপেটে ইন্টারনাল ইঞ্জুরির জন্য দিশা বাচ্চা হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলো। ডক্টোর বলেছিলো প্রেগন্যান্ট হওয়ার চান্স মাত্র দশ শতাংশ তবে আল্লাহ চাইলে সবই সম্ভব। দিশা কথাটা শুনে কতটা অসহায় অনুভব করে হাউমাউ করে কেঁদেছিল তা শুধু দিশাই জানে। বিথী নিজের অপরাধবোধে দিশার সাথে চোখ মিলাতে পারছিলো না।

তবে দিশা উঠে গিয়ে বিথীর হাত ধরে শুধু একটা কথাই বলেছিলো, আচ্ছা ভাবি একটা কথা বলো তো আমাকে কি আডৌ কখনো বিধানের সাথে অতিরিক্ত ঘেঁষাঘেঁষি করতে দেখেছো……..বা কখনো আমার তরফ থেকে কোনো এমন আচারন পেয়েছো যা থেকে মনে হবে আমি আর বিধু……… থাক তাও বাদ দিলাম যদি আমি বিধানকে পছন্দ করতাম তাহলে এট লিস্ট তোমাকে সহ্য করতে পারতাম না……..তোমার সাথে কোনোদিন মিসবিহেভ করেছি?

বিথী অনেক ইচ্ছে করছে দিশার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কিন্তু কথাগুলো কেনো জানি মুখ দয়ে বের হচ্ছে না। মনে হচ্ছে মুখে সত্যিই কুলুপ এটেছে তাই শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।

দিশা আবার বলতে শুরু করলো, জানো ভাবি ছোটবেলা থেকে অপয়া, অপবিত্র, অলক্ষী, জারজ শুনতে শুনতে বড় হয়েছি তাই এতোটা ডিপ্রেশনে থাকতাম কোনোদিন কারো সাথে মিশতেই পারিনি………..না ছিল বাবামায়ের স্নেহশীল ছায়াতল না ছিলো মনের কথা খুলে বলার মতো বন্ধু। এই অন্ধকার জীবনে বড়আম্মু আর বিধু ছিলো একটুকরো আশা, ভালোবাসা ও আনন্দের আলো কিন্তু যদি জানতাম এই আলোই জীবনকে আরো অন্ধকার করে দিবে তাহলে……….. একমাত্র বিধুর কাছেই মনের সব কথা তুলে ধরতে পারতাম কারণ তাকেই একমাত্র আপন লাগতো আমার হাসি, মজা, দুষ্টুমি সবই তার কাছে। নিজের আপন ভাইয়ের থেকেও নিরাপদ লাগতো তার ছায়াতলে……….চাচাতো ভাই তো কি হয়েছে আমার সব ইচ্ছে, খুশি, দুষ্টুমি তার কাছেই যেমন আমার বড় ভাই থাকলে হতো কিন্তু জানতাম না আমার সবচেয়ে বড় ক্ষতির কারণ সেই-ই হবে…….. (কাঁদতে কথাগুলো বললেও হঠাৎই চোখমুখ শক্ত করে ফেলে বলল) কোনোদিন ক্ষমা করবো দোয়া করি সুখ পাখি যেমন আমার খাঁচাবন্দী না তেমন তোমারও না হয়।

দিশা এরপর থেকে বিথী কেনো বিধানকেও এড়িয়ে চলতো। যার কারণে নীলাভ্রই পেশায় ডক্টোর হওয়ায় দিশার সাথে থাকতো, কথা বলতো, হাসিখুশি রাখার চেষ্টায় থাকতো। আর এদিকে এই ঘটনার পর বিধান বিথীর সম্পর্কও শেষ হওয়ার পথে কিন্তু দিশার এক্সিডেন্টের একমাসের পথে তখন সকলে জানতে পারে বিথী প্রেগন্যান্ট তাই বাচ্চার জন্য হলেও বিধান বিথীকে কাছে টেনে নিলেও মনের দিক থেকে তাদের দূরত্ব ছিলো আকাশ-পাতাল।

ওইদিকে দিশা ধিরে ধিরে নীলাভ্রের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো এবং দিশা নীলাভ্রের প্রিয় বেস্টফ্রেন্ড। প্রেম বললেও ভুল হবে সে নীলাভ্রের মাঝে নিরাপদ একটা ছায়াতল খুঁজে পেয়েছিলো যার অভাবে তার জীবন বিষণ্ণ ছিলো। কিন্তু নিজের ক্ষুতের জন্য নীলাভ্রকে কিছু বলতেও পারছিলো না তবে শেষ পর্যন্ত ভাবে যা হবার হবে।

দিশাঃ নীল আই ওয়ান্ট টু কানফেস সামথিং!
নীলাভ্রঃ হুমম বলো।
দিশাঃ আই থিংক আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে আমার লাইফে চাই যে করেই হোক অর ইলজ আই উইল ডাই!
নীলাভ্রঃ কি বলছো তুমি! ইট’স নিট পসিবাল!
দিশাঃ কেনো আমি বন্ধ্যা এজন্য……
নীলাভ্রঃ ছিহ! না দিশা বিকজ আই লাভ সামওয়ান ইলজ।
দিশাঃ ইউ লাভ বিথী আই নো এন্ড আই হ্যাভ নো প্রবলেম উইথ দ্যাট………আই জাস্ট ওয়ান্ট ইউ ইন লাইফ।
নীলাভ্রঃ আই নিড টাইম!
দিশাঃ আই ক্যান ওয়েট ফর দ্যা রেস্ট অফ মাই লাইফ!
নীলাভ্রঃ হুমম

বর্তমানে,
কাবিন শেষ হলো হয়তো নীলাভ্র দিশাকে নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজ বাড়িতে যাবে। এই বিয়েতে বিধান রাজি ছিলো না কারণ জেনে শুনে এমন একজন ছেলের কাছে যে কিনা অন্যকাউকে ভালোবাসে কোন ভাই বিয়ে দিতে চাইবে। কিন্তু সেও শেষ পর্যন্ত হার মানে দিশার জেদে কাছে। এই দুই বছরে বিধানের সাথে দিশার সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হলেও হয়নি স্বাভাবিক বিথীর সাথে কারো সম্পর্ক। দিশা এখনো বিথীকে এড়িয়ে চলে আর বিধানের কাছে বিথী শুধু তার বাচ্চাদের মা তার স্ত্রী নয়। তবে আড়ালের ভালোবাসাটা এখনো আগের মতোই আছে।

মিসেস চৌধুরী কেঁদেই চলেছে এবং বিধানকে বলছে, আজ যদি তোর বোনটা বেঁচে থাকতো তাহলে তো সেও দিশার বয়সের হতো………ধুমধাম করে বিয়ে হতো।

বিধানের অনেক ইচ্ছে করছে তার মাকে ও দিশাকে বলতে, মা দিশাই তো তোমার মেয়ে। কিন্তু নিজের ইচ্ছেকে দাফন দেয় এটা ভেবে যে তার ও বোন মা যদি বাবার দেয়া ধোকাটা জানতে পারে তাহলে হয়তো বাবাকে ক্ষমা করতে পারবে না। হ্যাঁ, এখনো কেউ জানে না দিশার অস্তিত্বের সত্যিটা কারণ সেদিন বিধান আবেগপ্রবণ হয়ে সব সত্য বলে ফেললেও তা কাউকে জানাতে মানা করে দেয়।

দিশা বিদায় নেয়ার সময় বিধানকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে, বিধু আমি তো বিথীকে ক্ষমা করতে পারবো না কারণ আমার ক্ষতিপূরণ সে দিতে পারবে না। তবে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছি কোনো পিছুটান রাখতে চাই না তুই বিথীকে ক্ষমা করে দিস।

তারপর বিধানকে ছেড়ে বিথীর দিকে তাকিয়ে বলে, ক্ষমা করো আজ তোমার স্বামীকে জড়িয়ে ধরলাম আবেগগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পেরে।

বিথী কথাটা শুনে আগের অপরাধবোধের আগুনে আবার জ্বলে উঠলো। তাই কিছু না বলে নিজের বেডরুমে চলে গেলো। দিশাও মিসেস চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানিয়ে গাড়ি করে নতুন জীবনের দিকে অগ্রসর হলো। আর বিধান আগালো নিজের ঘরের দিকে। হয়তো আজ এই গৌধুলি লগ্নে সবার জীবনের গতিবিধি ঘুরতে চলেছে তবে তা দুঃখ না সুখের দিকে তা থেকে যাবে অজানা, আড়ালের ভালোবাসা কি জিতে যাবে না হেরে যাবে কঠিন পরিস্থিতির চাপে তাও থেকে যাবে অজানা। কোনো কোনো সমাপ্তিতেই নতুনের আরম্ভ হয়তো তাই হতে চলেছে।

★(ইন্ডিংটা কিন্তু স্যাড না যারা স্যাড ভাবছেন। ওপেন ইন্ডিং রেখেছি। বিধানকে যেহেতু দিশা বলেছে এবং সে বিথীর পিছুও যাচ্ছে। সে সব ঠিক করে দিতে পারে বিথীর সাথে। অন্য ইন্ডিং চাইলে আমার এক পর্ব বাড়ানো লাগবে সো কমেন্টসে জানান 😒😒😒)

(বিঃদ্রঃ গল্পটার দ্বারা কিছু সামাজিক বিষয় যা ঘটে থাকে তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি তা কতটুকু তুলে ধরতে পেরেছি জানি না তবে লাস্ট বিষয়টা তুলে ধরতে পারিনি মনে হচ্ছে। পরিশেষে এটাই বলবো যে কোনো বিষয়ে পুরোপুরি না জেনে তা বিচার করা একদমই রঙ কারণ আপাত দৃষ্টি মিথ্যেই বেশি দেখায়। এর জন্য একটা রেফারেন্স স্টোরি বলছি ‘ফাগুনী প্রেম বাই অন্না আপু’। এই গল্পটার মেইন থিম এটাই যা মেয়ের পক্ষ থেকে ব্যক্ত করা হয়েছে। আশা করি এই গল্পটা পড়লেও আমার কথাটা বুঝতে পারবেন)

সমাপ্ত

2 thoughts on “আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 34 (Last Part)

  • apo golpo ta aro akto barale balo hoto…plzz

    Reply
  • সোহান

    মনের ভিতর একটা তাগাদ দিচ্ছে বারবারি শেষটা গল্প রূপে দেখার জন্য
    জদিও বোঝা হয়তো ভালো হয়ে তাদের ভালোবাসা টা আবার তো নাও হতে পারে
    তাই গল্প রূপে শেষ্টা দেখতে চাচ্ছিলাম আপু

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *