আড়ালে ভালোবাসার সংসার

আড়ালে ভালোবাসার সংসার !! Part- 29

বিধানঃ তুমিও বড্ড! ( মাতাল কণ্ঠে)
বিথীঃ আমিও……..
ঠক! ঠক!
বিথীকে বলতে না দিয়েই কে যেনো বাহির থেকে দরজায় নক করলো কিন্তু সে আওয়াজও আজ উপেক্ষিত বিধান-বিথীর রঙিন ভালোবাসার ঘোরে।
বিধানঃ বলো…..তুমিও কি!
বিথীঃ. আমিও অনেক……..
বিধানঃ অনেক!
বিথীঃ ভা………..
ঠক! ঠক!
আরিশাঃ বিথুউউউ! ঘুমাইছিস নাকি!
আয়াশাঃ আম্মুন খুলোওওও!
এদিকে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আয়াশা ও আরিশা বেশ খানিকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও বিধান-বিথীর খবর না পেয়ে বিরক্তবোধ করলো। তাই এবার জোড়ে নক করতে করতে ডাকতে লাগলো। বিধানের ঘোর তারপরও ভাঙেনি তবে বিথীর ঘোর ভেঙে গিয়েছে।
বিথীঃ শুনছেন! ছাড়েন আমাকে কোল থেকে!
বিথী বিধান থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। কিন্তু বিধান তো নাছোড়বান্দা সে বিথীকে তো ছাড়লোই না বরং দুহাত আরও চেপে ধরলো বিথীর নরম পেট।
বিধানঃ নাহহহ! আজ কোনো ছাড়াছাড়ি নয়!
এদিকে আয়াশা ননস্টপ ডেকে যাচ্ছে। আরিশাও ডাকছে তার সাথে তো আছেই আছেই দরজায় ঠকঠক করার আওয়াজ।
ঠক! ঠক!
আয়াশাঃ আব্বুন খুলো! আয়াশা ইজ ক্রাইং তো!
আরিশাঃ বিথী খুলতো তাড়াতাড়ি! কতক্ষণ দাঁড়ায় থাকবে!
বীথী আর না পেরে বিধানের গলায় এক কামড় বসায় দিলো। বিধানও পরিকল্পনা মোতাবেক এক চিৎকার দিয়ে বিথীকে ছেড়ে দিলো কারণ বিথী কামড়টা বেশ জোড়েসোড়েই দিয়েছিলো। বিথী ছাড়া পেয়েই গেট খুলে দিলো।
আর বিধান ওয়াসরুমে চলে গেলো কারণ সে জায়গায় হাত ছুয়িয়ে বুঝতে পেরেছে দাগ বসে গিয়েছে। আর এই অবস্থায় কারো সামনে যাওয়া লজ্জাজনক। বিথী দরজা খুলতেই আয়াশা ও আরিশা ঢুকলো।
আরিশাঃ এতোসময় লাগে!
বিথীঃ আমি গান শুনছিলাম তো হেডফোন লাগিয়ে। আর তোর জিজু ওয়াসরুমে তাই আরকি!
আয়াশাঃ আম্মুন আমাতে তোলে নেউ আমি তায়াড!
বিথীঃ আসো সোনা! ( বলে আয়াশাকে কোলে নিলো) আরিশা তুই কি জন্য আসলি?
আরিশাঃ ছাদে নিতে। দেখ কিছু বলার আগে চিন্তা করিস আপু কত বছর পর দেশে আসছে!
বিথীঃ কিন্তু…..
আরিশাঃ কোনো কিন্তু নয়! ( বলে বিথীকে অনেক বুঝিয়ে রাজি করালো)
বিথীঃ আমি আসছি উনাকে নিয়ে!
আরিশা চলে গেলো তবে আয়াশা বিথীর কোলেই থাকলো। আরিশার বের হওয়ার আভাষ পেতেই বিধান বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে বিথীর দিকে রাগি চোখে তাকালো।
বিথীঃ ক-কি হয়েছে!
বিধানঃ তুমি কি করেছো! এখন আমি সবার সামনে যাবো কি করে?
বিথীঃ ক-খন ক-কি করলাম!
বিধানঃ কখন তাই না? গলায় দাগ বসায় দিছো কামড় দিয়ে। এখন এটা নিয়ে আমি সবার সামনে কি করে যাবো?
বিথীঃ স-সরি!
বিধানঃ তোমার সরির খেতা পুড়ি! তোমাকেও শাস্তি পেতে হবে!
বিথীঃ ক-কি!
বিধান কিছু না বলে ডেভিল হাসি দিয়ে বিথীর দিকে এগুলো আর বিথী পিছনের দিকে।
আয়াশাঃ তোমরা কি ছোঁয়াছুঁয়ি খেলছো?
ঠিক তখনই আয়াশা বারান্দা থেকে বের হয়ে আসলো। বিধান অবাক হয়ে পিছনে তাকালো কারণ সে যখন ওয়াসরুম থেকে বের হয় তখন আয়াশা না থাকায় ভেবেছিলো চলে গিয়েছে।
বিধানঃ আরেহ না মামুনি! কিছু না!
আয়াশাঃ ওহ ছাদে তলো!
বিধানঃ বিথী এটার কি করবো?
বিথী কন্সিলার ও পাউডার এনে দিলো বিধানকে। বিধান সেটা দিয়ে দাগ ঢেকে নিয়ে বিথী ও আয়াশাকে নিয়ে ছাদে চলে গেল।
,
,
,
ছাদে সবাই আবার আড্ডা দেয়া শুরু করলো আগের মতো। আড্ডার এক পর্যায়ে সবাই বলে উঠলো বিথী ও বিধানের কাপল ডান্স দেখবে। বিথীর কথাটা শুনেই কাপাকাপি লেগে গেলো।
আয়ানঃ বিথী তোদের রিসেপশনের ডান্স সেই হয়েছিলো। ভিডিও রেকর্ডিং পাঠিয়ে ছিলো দিপ্ত……….এখন একটু লাইভ ডান্স করো না শালী সাহেবা ও নতুন জামাই! ( দুষ্টু হেসে)
বিধানঃ অবশ্যই!
বিথীঃ এর আগেও তো নেচেছিলাম উনার সাথে তাহলে আজ এতো অস্থির লাগছে কেনো! এই বুকটা এতো ছটফট করছে কেন! (মনে মনে)
বিথীকে ভাবনার সাগরে ডুবে থাকতে দেখে বিধান কিছু না বলেই বিথীকে হ্যাঁচকা টানে উঠিয়ে সামনে নিয়ে এসে নাচতে শুরু করে!
কেহদু তুমহে ইয়াহ চুপ রেহু
দিলমে মেরে আজ কেয়া হে
যো বলু তো জানো
………….
বিধান বিথী একদম প্রফেশনাল ডান্সারের মতো নাচছে। সবাই অবাক চোখে দেখছে তবে একজনের চোখ বারবার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। সে আর কেউ নয় নীলাভ্র। নাচ শেষ হতেই নীলাভ্র করতালি দিয়ে উঠলো।
আয়ানঃ ওয়ান্ডারফুল! বিথী তো নাচে ভালো তা তো জানা কথা তবে তুমিও যে এতোটা ভালো তা জানতাম না!
নীলাভ্র আবার পিছন দিকটায় চলে গেলো। যতোই হোক একজন ছেলে সে লোকচক্ষুর সম্মুখে কাঁদার অধিকার তার কোনোকালেই নেই। দিপ্তও নীলাভ্রুর পিছু পিছু চলে গেলো।
আশাঃ চল এখন খেয়ে নেই!
বিথীঃ দিপ্ত আর নীল ভাই তো ওদিকটায় গেলো। এভাবে তাদের রেখে খাওয়া তো ভালো দেখায় না!
আরিশাঃ আমি দেখে আসি!
বিধানঃ নাহ আমি যাচ্ছি!
বিথীঃ আচ্ছা!
বিধান যেতেই আশা, আরিশা ও বিথী প্লেট, খাবার, পানি গোছানোর কাজে লেগে যায়। আর আয়ান মেয়েকে ঘুম পাড়াতে ব্যস্ত।
,
,,
,
অন্যদিকে দিপ্ত নিলের পিছু যেয়ে দেখে নিলাভ্র বিথীর ছবিটা দেখছে নিঃশব্দ অশ্রুবিসর্জন দিচ্ছে। একটা ছেলে একটা মেয়ে কতটুকু ভালোবাসলে কাঁদতে পারে তাই দিপ্ত ভাবছে। কোথায় সে তো আরিশার জন্য কখনো কাঁদেনি। সে যাই হোক দিপ্ত এতো না ভেবে নীলাভ্রের কাধে হাত রাখে।
দিপ্তঃ এভাবে চললে তো তুই ধুকে ধুকে মরে যাবি! বিথীকে বলে দিলেই পারতি প্রথমে।
নীলাভ্রঃ আমি তো ভেবেছিলাম অতিথি পাখিটা আমার জন্যই এসেছিলো। আমি কি জানতাম সে আরেক জনের পোষা পাখি তাহলে কবেই খাঁচাবন্দী করে ফেলতাম। ( বলেই হাতের পিঠ দিয়ে চোখ মুছে নিয়ে মলিন হাসলো)
দিপ্তঃ বিধানের সাথে দেখলে খুব পুড়ায় তাই না? ছিনিয়ে নিতে ইচ্ছে করে!
নীলাভ্রঃ তা তো করেই কারণ ভালোবাসা মোটেই নিঃস্বার্থ না বড্ড স্বার্থপর…………… সবকিছুর পরিবর্তে হলেও প্রাণ ভ্রমরকে চায়! তবে জানিস ভালোবাসা সেই ভ্রমরের সুখের কাছেও বড্ড দুর্বল তাই তো প্রেয়সীর সুখের জন্য নিজের ভালোবাসা ত্যাগ করে। আমার ভালোবাসার অপূর্ণতায় যে প্রেয়সীর ভালোবাসার পূর্ণতা তাই-ই তো এই দহন সহ্য করে যাই নিরবে। ( বলতে বলতেই দুফোঁটা অবাদ্ধ অশ্রু বেয়ে পড়লো চোখ থেকে।)
বিধান দিপ্তকে ডাকতেই যাচ্ছিলো কিন্তু ওদের কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো। এখন বিধানের নীলাভ্রের উপর রাগ বা হিংসা কাজ করছে না বরং বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার জন্য।
বিধানঃ এতো কষ্ট নিয়ে কি করে আছে ছেলেটা আমি তো হলে মরেই যেতাম! (মনে মনে)
বিধান একটা গলা খাঁকারি দিয়ে আসলো যাতে দিপ্ত ও নীলাভ্র বুঝতে না পারে বিধান সব শুনে ফেলেছে। নীলাভ্র আওয়াজ পেয়ে অন্যদিকে ঘুরে চোখের পানি মুছে নিলো।
দিপ্তঃ জিজু তুমি!
বিধানঃ তোমার বোন ডাকছে!
দিপ্তঃ ওহহহ!
বলে দিপ্ত চলে গেলো সবার কাছে। আর নীলাভ্র বিধানকে দেখে মুচকি হাসলো। হয়তো মনে মনে বললো তার অতিথী পাখির আসল মালিক যে এই লোকটাই!।
নীলাভ্রঃ আই এম সরি আমার উচিত হয়নি আপনার সাথে এভাবে কথা বলা উচিত হয়নি!
বিধানঃ খুব ভালোবাসেন বিথীকে তাইনা?
বিধানের প্রশ্ন হতভম্ব হয়ে তাকালো নীলাভ্র তার দিকে। বিধান তা দেখে মুচকি হাসলো।

বিধানঃ কি হলো বলছেন না কেনো? বিথীকে খুব ভালোবাসেন তাইনা?
নীলাভ্রঃ মা-মানে! ( তুতলিয়ে)
বিধানঃ মানে খুব সহজ আপনি বিথীকে ভালোবাসেন?
নীলাভ্রঃ ক-কি ব-বলছেন!
বিধানঃ দেখুন নীল লুকিয়ে লাভ নেই…………দুর্ভাগ্যবশন আমি আপনার ও দিপ্তের কথা শুনে ফেলেছি যদিও তা ইচ্ছাকৃত শুনা নয়!
নীলাভ্রঃ দেখো বিধান বিথী এসবের কিছুই জানে না……..প্লিজ তুমি ওকে ভুল বুঝো না! (আকুতিভরা কণ্ঠে)
বিধানঃ আমি জানি বিথী আপনাকে ভালোবাসে না………….তবে আপনি তো বাসেন এটা যে আমাকে বড্ড পোড়ায়! (অন্যদিকে তাকিয়ে)
নীলাভ্রঃ মনের উপর কি আমাদের বশ আছে! ভুলে যেতেই তো চাই সব কিন্তু ভুলা কি এতোই সহজ…………এই মনের খাঁচা যে শুধু এক পাখিকেই বন্দী করতে পারে! (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
বিধানঃ জানি তো………বিথীকে প্রথম দেখায় ওর বাচ্চামির প্রেমে পড়েছিলাম……….আস্তে আস্তে ওর বিষয়ে জানতে জানতে ওর প্রতিটি অভ্যাসের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। যখন বিয়েতে মানা করেছিলো তখন এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমি তাকে হারিয়ে ফেলেছি। দমবন্ধ হয়ে আসছিলো………মনে হচ্ছিলো মারা যাবো……….কিন্তু মেয়েটার নেশা এতোটাই প্রখর ছিলো যা পাগলামি-জোরজবরদোস্তি করেও নিজের করেছি তাকে।
নীলাভ্রঃ তাহলে চিন্তা করো তোমার কিছুদিনের ভালোবাসায় বিরহ সহ্য করতে পারলে না…………আমি তাহলে কি করে নিজের প্রাণ ভ্রমরকে অন্যের হতে সহ্য করলাম। অবশ্য এর কারণও একটাই……….তোমার ভালোবাসায় পাগলামি ছিলো……….আমার ভালোবাসায় তার বড্ড কমতি ছিলো হয়তো।
বিধানঃ হয়তো।
নীলাভ্রঃ তোমার কাছে একটাই ওয়াদা চাই……..ভ্রমরটাকে আগলে রেখো সবসময়।
বিধানঃ তার বদলে আমিও একটা ওয়াদা চাই!
নীলাভ্রঃ কি!
বিধানঃ আগামী ছয় মাসের মধ্যে বিয়ে করে বউ ঘরে তুলবেন। (অন্যদিকে তাকিয়ে)
নীলাভ্রঃ কিহহহহহ! (অবাক হয়ে)
বিধানঃ হ্যাঁ। বললেন না আমাএ ভালোবাসায় পাগলামো আছে………..সেই পাগলামোটা অনেক বিথীর জন্য…….জানেন আপনি যখন বিথীর সাথে কথা বলেন বুকটা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায় ওকে হারানোর ভয়ে………ওকে হারানোর ভয়ে পাগলামো বেড়ে বিথীর কি অবস্থা হয় তা তো দেখলেনই।
নীলাভ্রঃ কিন্তু…….
বিধানঃ কোনো কিন্তু নয় যদি আসলেই বিথীকে ভালো থাকতে দেখতে চান তাহলে আশা করি কথাটা শুনবেন।
কথাটা শেষ করতে না করতেই বিথী বিধানকে ডাকতে ডাকতে আসলো। তাই তারা দুজনই চুপ হয়ে গেলো।
বিথীঃ বিধান! বিধান শুনছেন! কি করেন এতক্ষণ লাগিয়ে! ( বলতে বলতে ছাদের ওই পাশটায় আসলো)
বিধানঃ নিশ্চুপ।
বিথীঃ চুপ করে আছেন কেনো। কম করে হলেও আধা ঘন্টা হবে…………(বলতে বলতেই পাশে তাকিয়ে দেখে নীল ভাই তাই কিছুটা লজ্জাবোধ কতে নীলের ভাইয়ের সামনে বিধানকে ধমকানোতে)
বিধানঃ এই তো তোমার নীল ভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম।
বিথীঃ ওহ। নীল ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন আপনার সাথে এভাবে কথা বলা উচিত হয়নি! (মাথা নিচু করে)
নীলাভ্রঃ নাহ আমি সরি…….. আমিই আসলে ওভার রিয়েক্ট করে ফেলেছিলাম। আমারই উচিত হয়নি তোমাদের মধ্যে কথা বলার।
বিথীঃ তবুও আপনি বড়……….
বিথীকে বলতে না দিয়ে বিধান বলে উঠলো, বিথী আমার এসিডিটি হচ্ছে…….. পিলস নেয়ার টাইম হয়ে গিয়েছে তো।
বিথীঃ হায় আল্লাহ! কি করে ভুললাম………চলেন খেয়ে নিন আআগে। (বলে বিধানের হাত ধরে নিয়ে গেলো)
,
,
,
বিথীর ঘুম ভাঙলো পর্দার চোখ ফাঁকি দিয়ে আসা এক ফালি রোদের আগমনে। বিথী মিটমিট করে চোখ খুলতেই বিধানকে দেখতে পায়। ছেলেটা একদম শান্ত হয়ে বিথীর কাধে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছে। বিথী পরম যত্নে বিধানের মাথাটা আলতো করে বালিশে রাখে। এতোটাই আলতো করে যেনো মোমেরপুতুল একটু জোরে ধরলেই ভেঙে গুড়ো হয়ে যাবে। বিথী বিধানের কপালে চুমু দিয়ে আনমনেই বলে উঠলো,
মিশে যাচ্ছেন আপনি আমাতে না চাইতেই
হয়ে যাচ্ছি সম্পূর্ণ আপনার অজান্তেই
অনুভব করছি অধিকার না নিয়েই
ডুবে যাচ্ছি আপনাতেই ধীরেধীরে
তাহলে কি প্রেমে পড়ে যাচ্ছি আপনার নিজের আড়ালেই!
বিথী আর কিছু না ভেবেই উঠে চলে গেলো ওয়াসরুমে। ফ্রেশ হয়ে বিধানকে উঠিয়ে দুজন খেয়েদেয়ে বিদায় নিলো আব্বি-আম্মির বাসা থেকে।
বিধানঃ আব্বি-আম্মি আমরা যাচ্ছি……….আপনারা আসবেন কিন্তু বাড়িতে শীঘ্রই।
আব্বিঃ তা তো অবশ্যই তবে আমার মেয়েটাকে আগলে রেখে বাবা! (বিনীতভাবে)
বিথীঃ উফফফ! আব্বি আমার যত্ন আমি একাই নিতে পারি!
বিধানঃ এই জন্যই তো কারে উঠলো সিট বেল্টটাও মনে করে লাগায় না।
বিধানের কথায় সবাই হেসে দিলো আর বিথী মুখ ফুলিয়ে রাখলো। বিধান বিথীর দিকে তাকাতেই বিথী সবসময়ের মতো তার দিকে তাকিয়ে ভেঙচি কাটলো। ঠিক তখনই আশা-আয়ান এলো
আশাঃ বিথী তোরা কি চলে যাচ্ছিস?
বিথীঃ হ্যাঁ আশাপু!
আয়ানঃ না তা হবে না। বিধান আমি আর তোমার বড় আপু এক সপ্তাহ পর সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার যাওয়ার প্লান করেছি। তোমরাও যাচ্ছো ফুল এন্ড ফাইনাল।
বিধানঃ ওকে যাবো কিন্তু আমার কিছু ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে যেগুলো এখন সামলাতে হবে……….সমস্যা নাই এক সপ্তাহের মধ্যে আমি সব ক্লিয়ার করে নিবো। ততদিনের জন্য নাহয় বিদায়! (মুচকি হেসে)
আশাঃ তাহলে বিধান তুমি যাও বিথী নাহয় থেকে যাক।
বিধানঃ (নাহ বিথীকে ছাড়া আমি এক মুহূর্তও থাকতে পারবো না- মনে মনে) না! নাহ আপু! বিথী থাকতে পারবে না এখানে!
বিথীঃ কেনো! আমি থাকবো। (মুখ ফুলিয়ে)
বিধানঃ কেনো মানে বলছি না থাকতে পারবে না………আমি থাকবো কি করে ভাবছো একবার! (রেগে)
বিধান রাগের মাথায় কি বলছে ওর নিজেরই খেয়াল নেই কিন্তু বিথীর তো লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। কারণ বিধানের কথা শুনে মুখ টিপে হাসলেও আরিশা বেশ জোরেই বলে, কি ভালোবাসা! (হুহা করে হেসে)
বিধানেরও আরিশার কথায় ধ্যান আসে যে সে কি বলছে। একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে। আর আব্বি-আম্মির দিকে বিধান একবার তাকাতেই তারা মুখ লুকিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো।
বিধানঃ আ_আসলে আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে আমার খাওয়া-দাওয়ার খেয়াল কে রাখবে…….ওই তো সব করে।
আয়ানঃ থাক বিধান! তোমার বউকে তুমি নিয়ে যাও আমরাও বিবাহিত কষ্ট বুঝি! (মুখ টিপে হেসে)
বিধানঃ চলো বিথী!
বিথীঃ হুমমম।
বিধান-বিথী বের হবে এমন সময় নীলাভ্র তাদের ডাক দেয় তাই তারা দাঁড়িয়ে যায়।
নীলাভ্রঃ বিধান-বিথী একটু দাঁড়াও!
বিথীঃ হুমমম নীল ভাই!
নীলাভ্রঃ তোমার বিয়েতে তো আমি ছিলাম না তাই এই ছোট্ট একটা গিফট দিলাম সবসময় নিজের কাছে রাখবে। ( বলে বিথীকে একটা ডায়মন্ড পেন্ডেন্টের বক্স দিলো)
বিথীঃ অবশ্যই ভাইয়া! (বলে মুচকি হেসে পেন্ডেন্টটা গলায় পড়ে নিলো)
বিধান এটা দেখে রাগ উঠলেও নিজেকে শান্ত রাখলো। বিদায় দেয়ার জন্য বিধান ও নীলাভ্র একে অপরকে জড়িয়ে ধরতেই বিধান ফিসফিস করে বলল, ওয়াদা মনে রাখবেন!
বিধান-বিথী কার নিয়ে বেরিয়ে পড়লো কিন্তু বিধান তার আগে কাকে জানি কি মেসেজ করলো। বিধান হঠাৎ অনেক জোরে কার ব্রেক করায় বিথী অবাক হয়ে বিধানের দিকে তাকালো কারণ এভাবে ব্রেক করার কোনো কারণ ছিলো না। তাছাড়া তারা এখনো বাড়িতে পৌছায়নি বরং এই জায়গাটা অনেক নির্জন। বিধান গাড়ি থামানো র কিছুক্ষণ পরই বাইক দিয়ে একজন এসে একটা পার্সেল দিয়ে গেলো। পার্সেলটার ভিতর থাকা বক্স থেকে একটা ডায়মন্ডের পেন্ডেন্টে বের করলো। পেন্ডেন্টের ডিজাইনটা স্পষ্ট বি-এর পাশে লাভ দেয়া। বিথী আজ হিজাব পড়েনি শুধু একটা নীল সুতি শাড়ি পড়নে। তাই বিধান বিথীকে নিজের কোলে করে বাইরে এনে গাড়ির সাথে চেপে দাঁড় করিয়ে একটানে পেন্ডেন্টটা খুলে ফেলে।
বিথীঃ আহহহহ! (ব্যথা পেয়ে)
বিধান বিথী ঠোঁট নিজের বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে চেপে ধরে। বিথীর গলায় ছোট ছোট চুমু দিতে লাগে বিথী আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেলে। বিধান বিথীর গলায় আলতো কামড় দিয়ে বিথীর বুকে মাথা রাখে।
বিধানঃ এই গলাটা আমার বুঝেছো…….গলা কি সম্পূর্ণ তুমিটাই আমার। তাই এখানের অন্যের অনুভূতি বা তার ছোঁয়া থাকে কিছু কি করে থাকতে পারে! যেখানে কারো চোখ তুলে তাকানোই আমার পছন্দ না……তাই সেটা খুলে ফেলেছি। আমার অনুভূতি তোমার সাথে জুড়ে দিচ্ছি এই চেইনটা দ্বারা। (মাতাল কণ্ঠে)
বলে বিথীর গলায় আবার একটা চুমু দেয় এবং বিথী কেপে উঠে বিধানকে খামচে ধরে। বিধান বিথীকে পিছন ঘুরিয়ে চুল সরিয়ে চেইনটা পড়িয়ে চেইনের লক লাগিয়ে দেয়।

চলবে,,,,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *